ফাদার সুনীল রোজারিও। রেডিও জ্যোতি, বাংলাদেশ।
সাধু আন্তনীর কাছে কোনো কিছু যাচ্না করলে বিফলে যায় না- যেমন; ভাঙ্গা পা সম্পূর্ণ ভালো হলো, কাঁধের জয়েন্টের ব্যাথা সেরে গেলো, হারানো সন্তানকে ফিরে পাওয়া গেলো, সাধু আন্তনীর অনুগ্রহে খরার সময় বৃষ্টিপাত হলো, হারানো জিনিস ফিরে পাওয়া গেলো, সন্তানের সুস্থতা লাভ করলো, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হলো, বিবাহের বহু বছর পর সন্তানের জন্ম হলো, নিরাপদে সন্তানের জন্ম হলো, আরো কতোভাবে যে আজকাল মানুষ তাঁর কৃপার সাক্ষ্যদান করছে, সাধু আন্তনীর পর্বে এলেই তা বুঝতে পারা যায়। সেই সাথে তীর্থস্থানে গিয়ে ঐশপ্রসাদ ও পুণ্য অর্জনের ব্যাপারে মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি ও আগ্রহ বাড়ছে। মানুষ মনের প্রশান্তি খুঁজে পায় তীর্থভুমে গিয়ে। সেইসব নানাবিধ বিশ্বাস নিয়ে বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে সাধু সাধ্বীর নামে তীর্থভূমি গড়ে উঠছে। তেমন একটি স্থান কাতুলী উপ-ধর্মপল্লী।

বাংলাদেশের রাজশাহী ডাইয়োসিসের অর্ন্তগত সাধ্বী রীতা, মথুরাপুর ধর্মপল্লীর কাতুলী উপ-ধর্মপল্লীতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সাধু আন্তনীর পর্বোৎসব পালিত হয়েছে। সকাল ৯.৩০ মিনিটের দিকে বিশপ জের্ভাস রোজারিও ১৩জন যাজক ও প্রায় তিন হাজার খ্রিস্টভক্তকে নিয়ে শোভাযাত্রা করে মঞ্চে প্রবেশ করেন। শুরু হয় পবিত্র খ্রিস্টাযাগ। বিশপ জের্ভাস তার উপদেশবাণীতে বলেন, ঈশ্বরের প্রতি অগাধ ভালোবাস ও বিশ্বাসের কারণে ঈশ্বর আন্তনীকে আশ্চর্য কাজ করার ক্ষমতা দান করেছেন। কিন্তু তিনি আমাদের মতোই একজন মানুষ ছিলেন। ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে এবং খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে আমাদেরও সেইরূপ ভালোবাস ও বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠতে হয়। আমাদের প্রত্যেককেই ঈশ্বর সমাজের আলো হিসেবে আহ্বান করেছেন। তাই আমাদের সবারই উচিৎ সাধু আন্তনীর মতো সমাজে আলো ছড়ানো। আর তা সার্থকভাবে করতে পারলে, আমাদের জন্য সেটাই হবে সমাজে আশ্চর্য কাজ করা। খ্রিস্টযাগের পর মথুরাপুর ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত দিলীপ এস. কস্তা সবাই তীর্থোৎসবে যোগদান ও নানাভাবে সাহায্য সহযোগীতা করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞপন করেন।
কাতুলী, উত্তরবঙ্গের পাবনা জেলার চাটমোহর ধানার অর্ন্তগত একটি গ্রাম এবং মথুরাপুর, সাধু রীতার ধর্মপল্লীর একটি কেন্দ্র। এখন থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে ঢাকার বৃহত্তর ভাওয়াল থেকে বাঙালি খ্রিস্টান এসে এখানে বসতী গড়তে শুরু করেন। উত্তরবঙ্গের ভাওয়াল জনপদ বরাবর প্রবাহিত বড়াল নদের উত্তরে অবস্থিত উপমহাশের বিখ্যাত চলনবিল আর দক্ষিণে রয়েছে বিল কুড়োল। এই বিল কুড়োল পাড়ি দিয়ে কাতুলী গ্রামের খ্রিস্টভক্তদের যেতে হতো মথুরাপুর গির্জায় এবং স্কুলে। এক সময় কাতুলী গ্রামে তৈরি করা হয় সাধু আন্তনী বিদ্যালয় এবং শুরুর দিকে আন্তনী নামে একজন শিক্ষকও ছিলেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে এখানে সাধু আন্তনীর পর্ব পালিত হয়ে আসছে। পরে ২০১২ খ্রিস্টাব্দে এখানে নির্মাণ করা হয় সাধু আন্তনী গির্জা ঘরটি। বর্তমানে এখানে রয়েছে ৬০টি পরিবার এব যেখানে খ্রিস্টভক্তের সংখ্যা প্রায় ২৫০জন।

Please follow and like us: