ফাদার সুনীল রোজারিও। রেডিও জ্যোতি, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
মানুষের জীবনে ধর্মের স্থান অস্বীকার করার উপায় নেই। জীবনে প্রশান্তি ও সমাজ জীবনকে সুশৃঙ্খল বন্ধনে পরিচালিত করা এবং বিশ্ব শান্তি স্থাপনে ধর্মের শিক্ষা ও বিধি বিধান মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। প্রতিটি ধর্মেই বলা হয়েছে- জীবনের জন্যে ধর্মের আবশ্যিকতা। ধর্মকর্ম পালন করা খন্ডকালীন কোনো বিষয় নয়, আপদকালীন কোনো কর্তব্য নয়। সারা জীবনের। ধর্মের শিক্ষা মেনে না চললে, ঈশ্বরের ক্ষোভ-খড়গ, মানুষের উপর- প্রাকৃতিক দুর্যোগ আকারে, কোনো মহামারি আকারে নেমে আসে। আজকের করোনা মহামারি কী- মানবজাতীর জন্য এক নতুন শিক্ষা? পবিত্র বাইবেল- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি সম্পর্কে কী বলে, তার মাত্র কয়েকটি পদ আজকের লেখায় তুলে ধরলাম।
আমরা এখন কী দেখছি? জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ। এক দেশ আর এক দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বিশ্ব যখন আতঙ্কিত, ঠিক তখনই বিশ্বজুড়ে এক মৃত্যু আতঙ্ক মহামারিরূপে হাজির হলো। মানুষ কী ভাবছে ? তাহলে পৃথিবীর শেষদিন কী আসন্ন ? যিশু বললেন, “এক জাতির বিরুদ্ধে অন্য জাতি, এক রাজ্যের বিরুদ্ধে অন্য রাজ্য যুদ্ধ শুরু করে দেবে; প্রচন্ড ভূমিকম্প আর নানা জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দিবে ; আর আকাশের বুকে দেখা যাবে ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য, আশ্চর্য যত অলৌকিক নিদর্শন, (লুক ২১:১০-১১)।”
কিন্তু মানুষ যদি ঈশ্বরের প্রশংসা গান করে- ঈশ্বর তাঁর ভক্তকে শত হাজার মৃত্যুর মধ্য থেকে রক্ষা করবেন। বাইবেলের গীত সংগীতে ঈশ্বর তাঁর ভক্তকে বলেন .“ভয় করবে না, তুমি মড়কের আনাগোনা গোপন আঁধারে, রোগের প্রলয় লীলা খর রৌদ্র দ্বি-প্রহরে- যদিবা তোমার পাশে কখনো লুটিয়ে পড়ে সহস্র মানুষ, তোমার চতুর্দিকে যদিবা লুটিয়ে পড়ে অযুত মানুষ, মড়ক তোমাকে তবু কোনোদিন ছুঁতে পারবে না, ( গীত ৯১:৬-৭)”
ঈশ্বর তাঁর সৃস্ট মানুষকে আশ্বাস দিয়ে আরো বলেন, যারা তাঁর উপর আস্থা রাখে, প্রকৃতির কোনো খড়গ তাদের উপর নেমে আসবে না। তারা আরোগ্যই থাকবে। “আমি যদি আকাশ রুদ্ধ করি, আর বৃষ্টি না হয়, কিংবা দেশ বিনষ্ট করতে পঙ্গপালদের আজ্ঞা করি, অথবা আপন প্রজাদের মধ্যে মহামারি প্রেরণ করি, আমার প্রজারা, যাদের উপরে আমার নাম কীর্তিত হয়েছে, তারা যদি নম্র হয়ে প্রার্থনা করে ও আমার মুখের অন্বেষণ করে এবং নিজেরা কুপথ হতে ফিরে আসে, তবে আমি স্বর্গ হতে তা শুনবো, তাদের পাপ ক্ষমা করবো ও তাদের দেশ আরোগ্য করে তুলবো, (২য় বংশাবলী ৭:১৩-১৪)।”
ঈশ্বর তাঁর মানবকূলকে সঠিক পথ দেখাবার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রবক্তাদের পাঠিয়েছেন। কিন্তু যারা তাঁর প্রবক্তাদের কথায় সৎপথে আসেনি, তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। “আমি যদি সেই দেশে মহামারি প্রেরণ করি এবং সেখানকার মানুষ ও পশু নির্মুল করার জন্য তার উপরে আমার ক্রোধ ঢেলে রক্ত বহাই, অথচ দেশের মধ্যে নোহ, মহর্ষি ডানিয়েল ও ইয়োব থাকেন, সদাপ্রভু বলেন, আমার জীবনের দিব্য, তারাও পুত্র-কন্যাকে উদ্ধার করতে পারবে না। পারবে না, নিজ নিজ ধার্মিমতায় নিজ নিজ প্রাণ রক্ষা করতে, (এজেকিয়েল ১৪:১৯-২০)।”
ঈশ্বরের পথ থেকে যারা সরে যায়, উর্ধ্বলোক যাদের দৃষ্টি থেকে আড়ালে চলে যায়- তখন মৃত্যুলোক তাদের জন্য পথ চেয়ে থাকে। তখন মৃত্যু তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ ও মহামারিরূপে। “আর সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেলাম এক পান্ডুবর্ণ অশ্ব এবং যে ওর উপরে বসে আছেন তার নাম মৃত্যু, আর তার সহচর, সে হচ্ছে মৃত্যুলোক। তখন ওই দুইজনকে দেওয়া হলো পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার। তলোয়ারের আঘাত দিয়ে, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির গ্রাসে ফেলে দিয়ে এবং পৃথিবীর যতো বন্য পশুর মুখে ঠেলে দিয়ে মানুষকে হত্যা করাই হবে ওদের কাজ, (প্রত্যাদেশ ৬:৮)।”
ঈশ্বর তাঁর প্রবক্তাকে পাঠিয়েছিলেন, মানুষকে মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু মানুষ সেই প্রবক্তাদেরও সম্মান করেনি। তাই ঈশ্বর মহামারি দিয়ে আঘাত করে মানুষকে জাগাতে চাইলেন। মানুষে যেনো ফিরে আসে ঈশ্বরের সন্তানরূপে। “তুমি এই জাতির জন্য প্রার্থনা করো না। তারা উপোস করলেও আমি তাদের কাতর আকুতি আর শুনবো না। তারা হোম্ ও নৈবেদ্য উৎসর্গ করলেও আমি তাদের গ্রাহ্য করবো না। কিন্তু আমি খড়গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দিয়ে তাদের উপর আঘাত হানবো। … আর মনে রেখো, আমি তাদের ও তাদের পিতৃপুরুষদের যে ভূমি দেশ দিয়েছি, সেই ভুমি দেশ থেকে তারা যে পযর্ন্ত নিঃশেষে উচ্ছিন্ন না হয়, সে পযর্ন্ত তাদের মধ্যে খড়গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি প্রেরণ করবো, (জেরেমিয়া ১৪:১২, ২৪:১০)।”
তার পরও ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ থেকে ক্ষান্ত হলেন না। প্রবক্তা জেরেমিয়ার মধ্যদিয়ে সদাপ্রভু ঈশ্বর আরোকঠিন শপথ উচ্চারণ করে বললেন …। “আমি এই নগরের মানুষ ও পশুদের সংহার করবো, তারা মহামারিতে মারা পড়বে। সদাপ্রভু বলেন, তারপর আমি যিহুদারাজ সিদিকিয়, তার দাস ও প্রজাদের, এমন কি, এই নগরের যেসব লোক মহামারি, খড়গ ও দুর্ভিক্ষ হতে বেঁচে যাবে, তাদের বাবিলরাজ নবখেদ্নুৎজারের হাতে, তাদের শত্রুদের হাতে ও তাদের প্রাণনাশকারি শত্রুদের হাতে তুলে দিবে। আর সেই রাজা খড়গ দ্বারা তাদের আঘাত করবেন, কোনো মমতা করবেন না, কোনো ক্ষমাও করবেন না, (জেরেমিয়া ২১:৬-৯)।”
ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সর্বশক্তিমান। তাই মানুষ যদি বার বার তার পিতা ঈশ্বরকে ভুলে যায়, তাহলে ঈশ্বরও তাকে বার বার আঘাত করে জাগিয়ে তুলবেন। কারণ তিনি পিতা। “তুমি যদি, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরবান্বিত ও ভয়াবহ নামকে ভয় না করো, তবে সদাপ্রভু তোমাকে ও তোমার বংশকে প্রচন্ডভাবে আঘাত করবেন। বহুকাল স্থায়ী মহাঘাত ও বহুকাল স্থায়ী ব্যাথাজনক রোগ দ্বারা আঘাত করবেন। এইভাবে সদাপ্রভু মহারোগ ও আঘাত দিয়ে, তোমার বিনাশ না হওয়া পযর্ন্ত, তোমার উপর তা নামিয়ে আনবেন। তাতে আকাশের তারার ন্যায় তোমরা যে সংখ্যায় ছিলে, তা হ্রাস পেয়ে অল্পসংখ্যক হবে। কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর ডাকে কর্ণপাত করোনি, (২য় বিবরণ. ২৮:৬০-৬২)।”
কিন্তু মানুষ ঈশ্বরের সন্তান- এই সত্য উপলব্ধি ক’রে মানুষ যখন তাঁর পূণ্যধামে ফিরে আসে- ঈশ্বর তাদের ক্রন্দন শু’নে তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। ঈশ্বরের ধর্মগৃহ, ঈশ্বরের পুণ্যধাম, আবার সঞ্জীবিত করে তুলবে মানুষের জীবনী শক্তি। “এই দেশে তোমার নামের জন্য এক ধর্মগৃহ নির্মাণ করে বলছে, খড়গ, বিচারের দন্ড, কি মহামারি, কি দুর্ভিক্ষসরূপ অমঙ্গল যখন আমাদের প্রতি ঘটবে, তখন আমরা এই ধর্মগৃহের সামনে তোমার নামে এসে দাঁড়াবো। কেনোনা, এই ধর্মগৃহে তোমার নাম রয়েছে এবং আমাদের সংকটে আমরা তোমার কাছে ক্রন্দন করবো। তাতে তুমি আমাদের ক্রন্দন শুনে আমাদের উদ্ধার করবে, (২য় বংশাবলী ২০:৮-৯)।”
সম্মানীত পাঠক, প্রকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি সম্পর্কে বাইবেলের পুরাতন নিয়মে বিভিন্ন প্রবক্তাগণ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। নতুন নিয়মেও এই বিষয়ে বার বার বলা হয়েছে। সে সবের কিছু বাণী এই লেখায় তুলে ধরলাম। সবার মঙ্গল ও সু-স্বাস্থ্য কামনা করছি।