সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাস যে, মহামারি আকার ধারণ করেছে তা আজ আর কারো অজানা নাই। হাজার হাজার মানুষ ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষ শঙ্কার মধ্যে আছে। এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটি মূল্যবান উপায় বা হাতিয়ার আমাদের হাতে আছে, আর তা হলো প্রার্থনা ও ত্যাগস্বীকার, সচেতনতামূলক কার্য্যক্রম পরিচালনা এবং হত দরিদ্র আক্রান্তদের পাশে দাড়ানো। ইতমধ্যে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ বিশ্ব মণ্ডলির সাথে একাত্ব প্রকাশ করে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে- তা হলোঃ-
(১) ২৫ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে দুপুর ১২:০০ ঘটিকায়: যে যেখানে আছে সেখানে থেকেই একসাথে “প্রভুর প্রার্থনাটি” ভক্তিসহকারে আবৃতি করছে। মূলত প্রতিটি ধর্মপল্লীতে তা করার জন্য পুরোহিতদের মাধ্যমে ভক্তজনগণকে অবহিত করে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে পুণ্যপিতার সাথে প্রর্থনায় একাত্ব হতে বলেন- যাতে পৃথিবীর সকল মানুষ করোনা ভাইরাসের মারাক্তক আক্রমন থেকে রক্ষা পায়।
(২) ২৭ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানে বিশেষ প্রার্থনা পরিচালনা করবেন এবং রোম নগরী এবং বিশ্বকে আশির্বাদ করবেন। ঐশবাণী পাঠ, উদ্দেশ্য প্রার্থনা এবং পবিত্র সাক্রামেন্তের আরাধনা এই প্রার্থনায় অর্ন্তভুক্ত থাকবে। পোপের এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে ইতালির সময় সন্ধ্যা ৬:০০ ঘটিকায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা)। যারা যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা দেখবেন এবং আধ্যাত্মিকভাবে অংশগ্রহণ করে আশির্বাদ নিবেন এবং তারা দন্ডমোচন লাভ করবেন। তাই এই বিষয় সম্পর্কে ফাদারদের মাধ্যমে ভক্তজনদের অবহিতত করা এবং আধ্যাত্মিকভাবে অংশগ্রহনের নিদের্শনা দেয়া হয়।
পোপের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আগে প্রতিটি গির্জায় একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে যেখানে থাকবে ঐশবাণী পাঠ, উদ্দেশ্য প্রার্থনা এবং পবিত্র সাক্রামেন্তের আরাধনা।
(৩) করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ মরণঘাতি সংক্রমণ থেকে বিশে^র সকল মানুষের মুক্তির উদ্দেশ্যে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ ও পুরোহিতগণ ২৪ ঘন্টা পর্যায়ক্রমে ২৪টা খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- যা আগামী ২৮ মার্চ সকাল হতে ২৯ মার্চ সকাল পর্যন্ত এবং ২৫তম ঘন্টায় প্রতিটি ধর্মপল্লীর ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সকল পুরোহিত নিজ নিজ স্থানে থেকে সকাল ৭টার সময় একযোগে খ্রিস্টযাগ উৎসগ করবেন। যেন সকল মানুষ যীশুর জীবনদায়ী আত্মোৎসর্গের মধ্য দিয়ে রক্ষা পায় এবং সেই সাথে আধ্যাত্মিক শক্তি ও মুক্তি পায়।
৪। করোনা ভাইরাসের কারণে যেহেতু ভক্তজনগণ গির্জায় যেতে পারে না, তাই তাদের জন্য বিশপ মহোদয়ের পরামর্শক্রমে কোন কোন ধর্মপল্লী বা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেসবুকে খ্রিস্টযাগ লাইভ দেয়া হচ্ছে।
৫। এছাড়াও সরকারি বিজ্ঞপ্তিসমূহ প্রতিটি ধর্মপল্লীতে প্রেরণের মধ্য দিয়ে জনসচেনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের সাথে ঐক্যমত হয়ে করোনা মেকাবেলার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
রাজশাহী কারিতাস অঞ্চলের করোনা ভাইরাস মোকাবলায় যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা হলোঃ-
কারিতাস বাংলাদেশ, রাজশাহী অঞ্চল করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে এবং জনসচেনতার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে এবং হাতে নিয়েছে। তারমধ্যে অত্র অঞ্চলের আওতাভুক্ত ১৫টি উপজেলার অন্তর্গত ৫০টি স্থানীয় কার্যালয়ে এবং রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ২৬টি ধর্মপল্লী ও উপ-ধর্মপল্লী পর্যায়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকারে সম্ভাব্য পদক্ষেপসমূহ দিয়ে ডিজিটাল ফেস্টুন তৈরি এবং জনসমাবেশ ঘটে এমন স্থানে টাঙ্গানো হয়েছে। এছাড়া ৭০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এক হাজার মাস্ক, দুই হাজার সাবান ও ১০ লিটার স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের আওতাভুক্ত দুটি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি এবং একটি সিক্ শেল্টারকে অতিদরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে করোনা প্রতিরোধ দ্রব্য বিতরণের জন্য স্বল্প পরিসরে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডে এবং উপজেলা পর্যায়ে জনসমাগম ঘটে এমন স্থানে হাত ধোয়ার কৌশল শেখানো হয়েছে। এছাড়াও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কারিতাসের স্থানীয় দপ্তর ও কর্মীদের মাধ্যমে- লোকদের ঘরে থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।