ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী।
পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, পরিবারে পরিকল্পিত ভালোবাসা বিচ্ছিন্নতা দূর করতে পারে। ভাটিকান সিটি থেখে গণমাধ্যম জানাচ্ছে যে, পোপ পরিবারের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা প্রকাশ করে বলেন, “আমি আজকের এই সন্ধায় একটা ভিন্ন পন্থায় আপনাদের পরিবারে প্রবেশ করতে চাই। এই কঠিন ও সংকটকালে যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে কিছু সময় আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই। আমি কল্পনা করতে পারছি, আপনারা এই সংক্রামক মহামারি এড়ানোর জন্য অস্বাভাবিক অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। আমি চপল শিশু ও যুবাদের বিষয়টি ভাবছি, যারা বাইরে যেতে পারছে না, বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না এমনকী তাদের স্বাভাবিক জীবনও তারা উপভোগ করতে পারছে না। আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করছি- যাদের প্রিয়জন অসুস্থ ও যারা করোনা ভাইরাসের কারণে স্বজন হারাণোর শোকে কাতর। আমি তাদের কথাও ভাবছি- যারা একা, ফলে এটা তাদের জন্য কঠিন সময় তারা মোকাবেলা করছেন। এসবের উর্ধ্বে ভাবছি বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য- যারা আমার অত্যন্ত প্রিয়।”
পোপ ফ্রান্সিস বলেন,“আমি তাদের ভুলতে পারছি না- যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং হাসপাতালে রয়েছেন। আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ- যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মহামারিরোধে কাজ করছেন ও প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি ঘন্টায়, প্রতিদিন তাদের বীরত্বের কথা বলা হচ্ছে। আমি মানুষের অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টিও স্মরণ করতে চাই- যারা কাজ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি জেলখানায় বন্দিদের নিয়েও চিন্তিত, যারা নিজেদের কথা ভেবে এবং তাদের প্রিয়জনদের কথা ভেবে ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। আমি তাদের জন্যও চিন্তিত যাদের একটু নিরাপত্তার জন্য ঘরবাড়ি নেই । এটা সবার জন্যই একটা কঠিন সময়।”
পোপ পুরা সময়টি ভালোভাবেই অবগত আছেন। তাই সবাইকে তাঁর হৃদয়ের কাছে রেখে বিষয়গুলো বলতে চান। তিনি বলেন,“ আসুন আমরা সামর্থনুসারে চেষ্টা করি এই সময়টার সুষ্ঠ ব্যবহারের জন্য। আমরা দয়ার বশবর্তী হয়ে প্রতিবেশী ও অন্যদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি, অসহায়দের কথা ভাবতে পারি, এমনকী সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার ক’রে অন্যদের আশার বাণী শুনাতে পারি। এছাড়া বিশ্বে যারা সংকটকালে রয়েছেন তাদের জন্য প্রার্থনাও করতে পারি। আমরা বিচ্ছিন্ন বা আলাদা হয়ে থাকলেও চিন্তা, আত্মায় ও সৃজনশীল ভালোবাসার মধ্যদিয়ে তাদের সাথে একাত্ম হয়ে থাকতে পারি। আজকের এই সময়ে এই সৃজনশীল ভালোবাসা একান্ত প্রয়োজন।”
পোপ, পরিবারের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা পুর্নব্যক্ত ক’রে বলেন, “আমারা একটা অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে পুণ্য সপ্তাহ পালন করছি। এই পুণ্য সপ্তাহের মূল বাণী হলো, মানুষের প্রতি ঈশ্বরের শর্তহীন ভালোবাসা- যা নীরব হয়ে থাকা ভূ-পৃষ্ঠে ধ্বনিত হবে পুনরুত্থানের মঙ্গলবার্তা।” প্রেরিতদূত পল বলেছেন, “খ্রিস্ট সকলের হয়ে মৃত্যুকে এই জন্য বরণ করেছেন, যাতে যারা জীবিত, তারা যেনো নিজেদের জন্যে আর জীবন যাপন না করে, বরং যিনি তাদের হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আর পুনরুত্থান করেছেন, তারা যেনো তাঁরই জন্যে জীবন যাপন করে,” ২ করি ৫:১৫। পোপ বলেন, ”পুনরুত্থিত খ্রিস্টে, জীবন মৃত্যু থেকে জয়ী হয়েছে। পুনরুত্থানের এই বিশ্বাস আমাদের আশাকে জাগিয়ে রাখে। এই আশার সময়টাই আমি উপযুক্ত সময় মনে ক’রে আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই- একদিন এই মহামারির মন্দতা থেকে আমরা মুক্ত হবো। আশা আমাদের আশাহত করে না, এটা কোনো স্বপ্নও নয়- শুধুই আশা।” পোপ ফ্রান্সিস পরিবার নিয়ে তাঁর অনুধ্যানের উপসংহারে বলেন, “আমরা ভালোবাসা ও সংযম দিয়ে এখন একটা সুন্দর কাল তৈরি করতে পারি। আর তা হলো, যারা রোগে আক্রান্ত, যারা আমাদের সন্তান এবং বয়স্কদের যেনো প্রতি হৃদ্যতা নিয়ে আচরণ করি। সুতরাং সবাইকে বলে দিন যে, পোপ প্রার্থনায় আপনাদের সাথে রয়েছেন- যেনো ঈশ্বর অতি সত্বর এই মন্দ প্রভাব থেকে আমাদের মুক্ত করেন। আমার জন্যও প্রার্থনা করুন। আপনাদের সাথে অতি সত্বর দেখা হবে।”
পরিবারে সৃজনশীল ভালোবাসা বিচ্ছিন্নতা কমাতে পারে- পোপ ফ্রান্সিস
Please follow and like us: