রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পালকীয় সম্মেলনের ২০২০
খ্রিস্টেতে প্রিয় ভাই-বোনেরা,
১। কোভিড-১৯ বা নতুন করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা এখন সকলেই লক-ডাউনের মধ্যে ঘরবন্দী হয়ে আছি। এমন অবস্থা যে ঘর হতে বের হওয়াই কঠিন হয়ে উঠেছে। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, আমরা কাজে যেতে পারিনা, হাটে-বাজারে যেতে পারি না, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু মহলে বা পাড়ায় যেতে পারি না, দূরে বা কাছে কোথাও বেড়াতে যেতে পারি না, এমনকি গীর্জায়ও যেতে পারি না। এই সময় কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারখানা বা হাসপাতালে বিড়ম্বনার শেষ নেই আর মারা গেলে কেউ দেখতে বা কবর দিতেও আসতে চায় না বা পারে না। মানব-ইতিহাসে অনেক মহামারী হয়েছে, অনেক সময় বা অনেক দেশে অনেক মানুষ মারা গেছে মারাত্মক মারাত্মক মহামারীর কারণে; কিন্তু করোনাভাইরাসের মত এমন বৈশিক মহামারী পৃথিবী আর কখনোই দেখেনি। ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই কঠিন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে আর মারাও গেছে। চীন দেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে জগতের ২১২টি দেশে এই মরণ-ভাইরাস একযোগে তান্ডব চালাচ্ছে, প্রায় ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও থামার কোন লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও লক্ষাধিক আক্রান্ত ও দুই শতাধিক ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু এর উৎপত্তির কারণ বা প্রতিকারের কোন ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। হয়তো বা হবে খুব শীঘ্র অথবা দেরীতে; কিন্তু এই করোনা ভাইরাসটি জগতের সকল মানুষের অন্তর-মনে এমন দাগ কেটে যাবে যে তা মানব জাতি সহজে আর বিস্মৃত হতে পারবে না। কিন্তু কেন বা কিভাবে এলো এই ভাইরাস বা বৈশ্বিক মহামারী? জগত সৃষ্টির সময় তো এই ভাইরাস ছিল না! তাহলে কিভাবে এখন এলো? মানুষের বা মানব জাতির কোন দায় এতে নেই তো? আমাদের এতে কোন দায় বা অবহেলা নেই তো?
২। মানুষ সৃষ্টি করে তাদের আশীর্বাদ করে পরমেশ^র বললেন, “ফলবান হও,বংশবৃদ্ধি কর। তোমরা পৃথিবীকে ভরিয়ে তোল, তাকে বশীভুত কর। সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী এবং পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করে যত প্রাণী, তাদের সকলের উপর তোমরা প্রভুত্ব কর” (আদি ১:২৮)। এই আশীর্বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়েই ঈশ^র মানুষের হাতে সমস্ত সৃষ্টিকে সেবার, যত্ন নেবার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বভারটি অর্পণ করেছিলেন। পরমেশ^র আরও বললেন, “শোন, বীজ বহন করে, এমন যে সব উদ্ভিদ সারা পৃথিবীর বুকে আছে, তা সবই আমি তোমাদের হাতে দিচ্ছি। আর দিচ্ছি সেই সব ফলের গাছ, যেগুলির ফল বীজ বহন করে। ওগুলি তোমাদের খাদ্যই হবে। তেমনি সমস্ত বন্যজন্তু, আকাশের সমস্ত পাখি এবং যা-কিছু পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করে, সমস্ত প্রাণীকুলকেই আমি খাদ্যরুপে দিচ্ছি সবরকমের সবুজ উদ্ভিদ” । হল-ও তাই (আদি ১:২৯-৩০)। তবে সব কিছুই ঈশ্বরের মনের মত করে তো মানুষ করেনি! আদম আর হবাকে সৃষ্টি করে ঈশ্বর তাদেরকে রেখেছিলেন ‘এদেন উদ্যানে’। সেখানে “প্রভু পরমেশ্বর ভূমি থেকে এমন সব গাছ উৎপন্ন করলেন, যা দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু; বাগানটির মাঝখানে উৎপন্ন করলেন জীবনবৃক্ষ; মঙ্গল অমঙ্গল জ্ঞানবৃক্ষও উৎপন্ন করলেন … … … প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে নিয়ে এদেন বাগানে রাখলেন যেন সে মাটি চাষ করে ও বাগানের দেখাশোনা (দেওয়ানী বা হেফাজত) করে। তখন প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে এই আজ্ঞা দিলেন, তুমি এই বাগানের ফল যত খুশী স্বাচ্ছন্দে খাও; কিন্তু মঙ্গল-অমঙ্গল জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাবে না, কেননা যেদিন তার ফল খাবে, সেদিন তুমি মরবেই মরবে” (আদি ২:৮-১৭)। কিন্তু আদম আর হবা কি করেছিল তা আমরা সকলেই জানি। মরবে জেনেও তারা নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিল আর অভিশপ্ত ও মরণশীল জীবনের শিকার হয়ে পড়লো (তুলনীয় আদি ৩: ১-২৪)। ঈশ্বর এই বিশ্ব-ব্রম্মান্ড ও বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন এর সব দায়িত্ব মানুষকে দিয়েছেন, যত্ন ও রক্ষণা-বেক্ষণ করতে; আর আমরা তা মানিনি। আমরা পৃথিবীকে সবুজ ও পরিস্কার রাখিনি। শ্ব
৩। গত বছর আমাদের ধর্মপ্রদেশে পালকীয় সম্মেলনের জন্য আমরা যে মূলভাব নিয়ে আলোচনা ও কর্মপরিকল্পনা করেছিলাম তা হল: “সৃষ্টি ও কৃষ্টির মধ্য দিয়ে মঙ্গলবাণী ঘোষণা”। যদিও আমরা সেই মূলভাবের উপর আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে বাহ্যিকভাবে কোন কর্মসূচী পালন করতে পারছিনা, কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে অনুধ্যান করে বুঝতে পারছি যে ঈশ্বর শুধু আমাদের, প্রাণীজগত, গাছপালা, জীব-জন্তু, পশু-পাখী, মাছ-সরিসৃপ, বাতাস, মাটি, পানি, আলো, ইত্যাদিই সৃষ্টি করেছেন, তা নয়। তিনি আমাদের দিয়েছেন প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠির ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য-প্রণালী, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইত্যাদি। এইসব কিছুই আমাদের প্রতি তাঁর দান ও উপহার আমাদেরই স্বকীয়তা ও মঙ্গলের জন্য। এর কোন কিছুই খারাপ নয়। আমরা এইসব কিছুর জন্য ঈশ্বরের প্রশংসা ও গৌরব করি। কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে, এইসব কিছু ব্যবহার, সংরক্ষণ ও উন্নত করার দায়িত্বও ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। আমরা তা করছি তো? আমাদের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি যদি ঈশ্বরই দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি তা আমাদের দিয়েছেন যেন আমরা সেইগুলি ঈশ্বরের গৌরবের জন্যই ব্যবহার করি। কিন্তু আজ তো দেখা যায় কৃষ্টি-সংস্কৃতির অপব্যবহার ও অপব্যখ্যা – কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। অনেক কৃষ্টি-সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ কৃষ্টি-সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আমরা কি করছি? ভাষা ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির ঊন্নয়নের জন্য আমাদের আরও সৃজনশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এই কাজের সঙ্গে অখ্রিস্টানদের কাছে আমরা কিভাবে খ্রিস্টীয় আদর্শ ও নৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করব তাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
৪। তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে ঈশ্বর মানুষকে ভালবেসে যে অনুগ্রহ ও দান দিয়েছেন তা মানুষ নিজের দোষে বা নিজের পাপের কারণে হারিয়েছে। এই পৃথিবীতে সুপ্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নানা ভাবেই ঈশ্বরের এই বদান্যতা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য পায়ে ঠেলেছে, আর ফলশ্রুতিতে বিপদের পড়েছে। ঈশ্বর মানুষকে দিয়েছেন জীবন, এই বিশ্ব-ব্রম্মান্ড, পৃথিবীর যত সৃষ্ট বস্তু ও জীব-জন্তু, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৌল বিষয় মাটি, বাতাস, পানি, আলো, ইত্যাদি। মানুষকে তিনি এইসব কিছু দেখাশোনার ( দেওয়ানী) দায়িত্বও দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ তার দায়িত্ব সঠিকভাবে শুধু পালনই করেনি, বরং উল্টো অপব্যবহার করেছে। মঙ্গল সমাচারে যেমন বলা হয়েছে এক মনিব বিদেশ যাওয়ার সময় তার এক দাসকে দায়িত্ব দিয়ে যান যেন সে বাড়ীর সব কিছু দেখাশোনা করে আর সকলকে খাবার দান করে। কিন্তু সেই দুষ্ট দাস যদি মনে করে, “আমার প্রভু তো বাড়ী ফিরতে বেশ দেরী করছে, আর সে যদি তখন তার সহকর্মীদের মারধর করতে শুরু করে আর যত মাতালের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতে বসে, তাহলে সেই কর্মচারীর মনিব এমনই দিনে এসে পড়বেন, যখন সে তার আসবার কথা ভাবতেও পারেনি; তিনি আসবেন এমন এক সময়ে, যে সময়ের কথা তার জানা ছিল না”। তিনি আসবেন আর তার উপযুক্ত শাস্তি-বিধান করবেন (মথি ২৪: ৪৫-৫১)। পৃথিবীতে এখন যে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বা জলবায়ুতে অতিমাত্রায় পরিবর্তন ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া, অতি-বৃষ্টি বা বৃষ্টিহীনতা, এত বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস, খরা ও মরুয়ায়ন, ঊষ্ণায়ন ও ভূ-গর্ভস্থ পানিশূণ্যতা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, ভূমিকম্প ও সুনামি, নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি, মহামারী, ইত্যাদি মানব সমাজকে ধ্বংসের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে, আসলে তার দায় কার?
৫। পরিবেশ বাঁচাও – পৃথিবী বাঁচাও আন্দোলনের পুরোভাগেই রয়েছে কাথলিক মণ্ডলী যার নেতৃত্বে রয়েছেন মহামান্য পোপগণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও এর বিপর্যয় নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের চেয়ে বেশী সোচ্চার আর কোন বিশ্ব নেতা বা ধর্মীয় নেতাকে দেখা যায়নি। তিনি তাঁর সার্বজনীন পত্র “তোমার প্রশংসা হোক”এর মাধ্যমে বিশে^র সকল জনগণের কাছে আকুতি আবেদন জানিয়েছেন “আমাদের অভিন্ন বসত-বাটী” এই ধরিত্রী মাতার যত্ন করার জন্য (তো.প্র.হো. ২০-২৬)। আমরা তো এই ধরিত্রীকে ও এর পরিবেশকে দায়িত্ব-জ্ঞানহীনভাবে অতিমাত্রায় দূষণ করেছি, এর ভূগর্ভস্থ বা উপরিভাগের সকল সম্পদ ইন্দ্রিয়পরায়ণতাপূর্ণভাবে ও অপরিনামদর্শীভাবে ভোগ করেছি, এর সব কিছুই একতরফা বা স্বার্থপরের ন্যায় ব্যবহার করেছি; অথচ এর কোন যত্ন করার প্রয়োজন মনে করিনি। পৃথিবীকে ভয়াবহভাবে সবুজ-শূণ্য করেছি আর অতিমাত্রায় অপরিচ্ছন্ন করে ফেলেছি। এই পৃথিবীর সম্পদ সবই দিয়েছেন ঈশ্বর, আর তা তিনি দিয়েছেন সকল যুগের, সকল দেশের সকল জাতি-গোষ্ঠী মানুষেরই জন্য। আমরা পৃথিবীর সম্পদ স্বার্থপরের মত শুধু আমরাই ভোগ করেছি – আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সঞ্চয়, রক্ষণা-বেক্ষণ বা বাড়িয়ে তোলার মনোভাব বা আগ্রহ দেখাইনি ( তো.প্র.হো. ২৭-৬১)। এমনকি এই অতিভোগ বা ধরিত্রীর সঙ্গে অপরিনামদর্শী আচরণের প্রতিফল কি হতে পারে তা ভাবারও প্রয়োজন মনে করিনি। আমরা তাহলে কি ভাবে সেবাকারী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক-সেবিকা বা রক্ষক হলাম? প্রকৃতি ও পরিবেশ আমাদের প্রতি ঈশ্বরের দান, আর তা আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। পোপ ফ্রান্সিসের সার্বজনীন পত্র “তোমার প্রশংসা হোক”এর পঞ্চম বর্ষ পূর্তিতে আসুন আমরা এই দায়িত্ব পালনের শপথ নতুন করে গ্রহণ করি।
৬। ঈশ্বরের সৃষ্টিকর্মের নিগূঢ় রহস্য বুঝা বড়ই কঠিন। আজও তো ঈশ্বর সেই কাজ করে যাচ্ছেন সেই রহস্যের আবরণেই। মানুষ ও মানব-সমাজ সেই রহস্যের বাইরে নয়। মানুষের মধ্যে তিনি এমনসব উপাদান রেখেছেন যে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের প্রতি, বিশেষভাবে প্রয়োজনের সময়, অত্যন্ত সংবেদনশীল। মানুষের পারস্পরিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ খুবই স্ভাব বিক বিষয়। বলা হয়ে থাকে, ‘মানুষই মানুষের জন্য’ – কথা যে মিথ্যা নয়, তা আমরা সকলেই জানি বা অনুভব করতে পারি। ঈশ^র মানুষের মধ্য দিয়েই মানব জন্ম ও মানব সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার মানব শিশু জন্মের পর সম্পূর্ণই যে তার মা বাবা, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের উপর নির্ভরশীল। এটাও তো ঈশ^রেরই পরিকল্পনা। ঈশ^র মানুষকেই অন্য মানুষের সেবা-যত্ন, রক্ষণা-বেক্ষণ ও ভালবাসার দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্ব যদি আমরা অবহেলা করি বা স্বার্থপর, ভোগবাদী, হিংসুটে, ঈর্ষাপরায়ণ ও অন্যদের প্রতি হিংস্র হই, তাহলে আমরা ঈশ্বরের দেওয়া মানবীয় গুনাবলী ও অত্যুচ্চ মানব মর্যাদার কথা ভুলে যাই। বাইবেলে কাইনের গল্পে আমরা মানুষের সেই পতনই দেখতে পাই। কাইন তার ভাই আবেলকে রক্ষা না করে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে হত্যা করেছে। অথচ ঈশ্বর তাঁর ভাইকে যত্ন ও রক্ষা করার দায়িত্বই দিয়েছিলেন। আর ঈশ্বর যখন তাকে জিজ্ঞেস করে, তোমার ভাই আবেল কোথায়? তার উত্তর ছিল,“আমি কি আমার ভাইয়ের রক্ষক?” (দ্র: আদি ৪: ১-১৩)।
৭। দুঃখী, অভাবী ও ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতি যীশু সর্বদাই সদয় ছিলেন আর তাই তিনি তাদের কষ্ট লাঘব করে দিতেন। তাই তিনি কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করেছেন (মথি ৮: ১-৪), অসুস্থকে সুস্থ করেছেন (লুক ৪: ৪০), অন্ধকে দৃষ্টি দিয়েছেন (মার্ক ১০: ৪৬-৫২; ৯: ১-১২), ক্ষুধার্তদের খেতে দিয়েছেন (মথি ১৪: ১৩-২১; ১৫: ২৯-৩৯)। আবার তিনি নিজেও চেয়ে নিয়েছেন তৃষ্ণা নিবারণের জল ( যোহন ৪: ৭-১৪)। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা করে, মাদার তেরেজা অবহেলিত দরিদ্র ও রোগ-ক্লীষ্ট মানুষদের সেবা করে, আর অনেক সাধু-সাধ্বীগণ বিভিন্নভাবে কষ্টভোগী মানুষের সেবা করে খ্রিস্টকেই সেবা করেছেন; আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে খ্রিস্টের শিক্ষা ও মঙ্গলসমাচারের আদর্শ নিজ জীবনে বাস্তব করে তুলতে হয়। তাই আমার ভাই-বোনদের ভালবাসা, সেবা-যত্ন করা, তাদের রক্ষণা-বেক্ষণ করা, তাদের বেড়ে উঠতে বা উন্নতি করতে সহায়তা করা, অভাবের সময় তাদের সাহায্য করা, কষ্টের সময় তাদের কষ্ট লাঘব করা, তাদের দুঃখের সময় তাদের কাছে থাকা, তাদের অভাব অনটন মোচন করা, ইত্যাদিভাবেই আমরা আমাদের মানবীয় মূল্য, সম্মান বা মর্যাদা, মূল্যবোধ, স্বভাব ফুটিয়ে তুলি। তা না হলে আমরা আর কিসের “মানুষ”? দয়ালু সামারীয় রাস্তার পাশে ডাকাতের হাতে পড়া আহত লোকটিকে দয়া ও সেবা করেই তার প্রতিবেশী হয়ে উঠেছিল (লুক ১০: ২৫-৩৭)। অন্যদের সেবাকাজে দোষত্রুটি না খুঁজে নিজে কিছু সেবা ও দয়ার কাজ করুন – এটিই যীশু ও মণ্ডলী খ্রিস্টভক্তদের কাছে প্রত্যাশা করে। তাছাড়া আমাদের পরিবার ও সমাজের দিকে তাকানোর প্রয়োজন – যেখানে রয়েছে আমাদের শিশুরা, অসুস্থরা, প্রতিবন্ধীরা, প্রবীনরা, অসহায় মানুষেরা – তাদের দায় বা দায়িত্ব কাদের? তাদের অবস্থা কেমন? যীশু তো এই ক্ষুদ্রতমদের মধ্যেই আমাদের ভালবাসা ও দয়া আশা করছেন (মথি ২৫: ৪০)! অথচ আমরা স্বার্থপর হয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি; আমরা ভোগবাদ, বস্তুবাদ, সুবিধাবাদের মতাদর্শে পথ চলি।
৮। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভ্ইারাসের এই তান্ডবে সারা পৃথিবীর মানুষ অনেক কারণেই কষ্টের মধ্যে আছে – বিপদের মধ্যে আছে। আমরা জানি যারা দরিদ্র, যারা চাকুরিহীন, যারা দিনমজুর শ্রমিক, কলকারখানার ও কৃষি শ্রমিক, ইত্যাদি তাদের ঘরে খাওয়া নেই। যারা বাইরে যেতে বা ব্যবসা করতে পারছেনা বা বেতন পায় না তাদের অভাব ও ক্ষুধা নিবারণ করার উপায় নেই। সব সময়ই দেখা যায় প্রাকৃতিক বা মানব-সৃষ্ট বিপর্যয়ের শিকার ভুক্তভোগীদেরকে অন্যরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। সেইটাই মানবতা এবং বিপন্ন মানুষের ভরসা। এই পান্ডেমিক বা বৈশি^ক করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়ের সময় আমাদের দেশের সরকার ভাল উদ্যোগ নিয়েছে – দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ কার্য পরিচালনা করছে, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে, অনেক বেসরকারী সংস্থা এবং অনেকে আবার ব্যক্তি উদ্যোগেও দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণকার্য পরিচালনা করছে। তবে এর মধ্যে রাজনৈতিক মনোভাব, বাহাদুরী দেখানো বা লোক দেখানো, ত্রাণচুরি, প্রতারণা, ইত্যাদি যে নেই তা আমরা হলফ করে বলতে পারি না। তবে অন্যদের সমালোচনা যারা করে, আগে তাদের নিজেদের প্রশ্ন করে দেখা উচিত – সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তারা কিছু করেছে না কেন, বা তারা নিজেরা কি করছে?
৯। কাথলিক মণ্ডলী বিশ^ব্যাপী দয়া ও সেবাকাজের জন্য সুবিখ্যাত। অথচ আমরা ভুলে যাই যে আমরা সেই মণ্ডলীরই সদস্য। আমরা সুনামের ভাগ চাই, কিন্তু দায়িত্বের ভাগ নেই না। আমরা তো অনেক বা সব কিছুই ঈশ^রের কাছ থেকে পেয়েছি, কিন্তু আমরা ঈশ^রকে কি দেই বা তাঁর জন্য কি করি? আর যদিওবা দেই তা কি আবেলের দান, নাকি কাইনের (দ্র: আদি ৪)। সাধু পল বলেছেন, “এভাবে পরিশ্রম করেই দুর্বলদের সাহায্য করতে হবে – সেই প্রভু যীশুর বাণী মনে রেখে, যিনি নিজে বলেছেন, পাওয়ার চেয়ে দেওয়ার মধ্যে বেশী সুখ” (শিষ্যচরিত ২০: ৩৫)। অথচ আমরা দেখছি যে এখন আমাদের মধ্যে উল্টোটাই ঘটছে, অর্থাৎ “দেওয়ার চেয়ে পাওয়াতেই আনন্দ বেশী”। এটা কিন্তু জগতের রীতি – আমরা জগতের নিয়েমেই বাধাঁ। আমরা তো এখনও কতভাবেই ঈশ^রের কাছ থেকে কত কিছু পেয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা রবিবার দিন খ্রিস্টযাগে আসি শূণ্যহাতে; প্রতিবেশীদের দুরাবস্থা দেখে অন্যদিকে ফিরে থাকি; আমরা বলি আমরা গরীব, আমাদের কিছুই নাই! আমরা আসলে ঈশ^রকে মিথ্যা কথা বলি, কারণ সপ্তাহে আমরা না খেয়ে তো থাকি না! কষ্টকরে হলেও আমরা খাবার পাচ্ছি; ঈশ^রই তা দিচ্ছেন। সেখান থেকে আমাদের চেয়েও যারা বেশী গরীব তাদের কথা ভেবে, মণ্ডলীর প্রেরণ বা মিশনকর্ম ও দয়ার কাজের কথা ভেবে আমরা কিছুই কি দিতে পারি না? আমরা যদি বলি আমরা পারি না, ঈশ্বর জানেন তা সত্য নয়। আসলে আমরা দিতে চাই না, এটাই সত্য।
১০। এইবার করোনা ভাইরাসের ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে ধর্মপ্রদেশ যখন অতিদরিদ্র ও ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোর জন্য বিভিন্ন কাথলিক প্রতিষ্ঠান ও অবস্থাপন্নদের কাছ থেকে দান সংগ্রহ করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে তখই এই মনোভাবটি স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। অথচ মঙ্গলসমাচারের সেই দরিদ্র বিধবার কথা তো আমরা জানি, তার যেটুকু সম্বল ছিল তার সবটুকুই সে দিয়ে গেল (মার্ক ১২: ৪১-৪৪)। যীশু শুধু শুধু এই ঘটনার কথা বলেননি। এই বিধবা গরীব মহিলাকে যে অনুসরণ করতে হবে সেটাও আমাদের বলেছেন। এই করোনার সময় আমরা খবরে দেখেছি বা শুনেছি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর এক ভিক্ষুক তার ঘর ঠিক করার জন্য গত দুই বছরে যে ১০,০০০ টাকা জমিয়েছিল তার সবটুকুই প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণতহবিলে দান করে দিয়েছে। এরূপ আরও অনেকেই করেছে বা করছে – নিজেদের সব কিছু, এমনকি জীবন যৌবনও ঈশ্বরের সেবার কাজে অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কয়জন এইভাবে খ্রিস্টীয় ভালবাসা ও দয়ার সাক্ষ্য দিতে পেরেছি?
১১। মণ্ডলীর প্রেরণকাজ, শিক্ষাবিস্তার, স্বাস্থ্যসেবা, দয়ার কাজ, ইত্যাদি সকল দীক্ষত খ্রিস্টভক্তদের দায়িত্ব, শুধু যাজক বা ব্রতধারীদের নয়। আমরা সকলেই হয়তো টাকা পয়সা দিয়ে মণ্ডলীকে তার মিশন ও দয়ার কাজ করার জন্য সহায়তা দিতে পারব না! কিন্তু অন্যভাবেও তো তা করা যায়; যেমন, মণ্ডলীর কাজে সময় দিয়ে, তালন্ত বা প্রতিভা দিয়ে বা নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা দান করে এবং পরামর্শ দিয়ে। মণ্ডলীর সম্পদ রক্ষণা-বেক্ষণে স্বযত্নে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ও দয়ার কাজে নিঃস্বার্থভাবে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেও মণ্ডলীতে দায়িত্বপূর্ণ সেবকের কাজ করা যেতে পারে। কাথলিক মণ্ডলী কোন টাইথ বা ধর্মীয় কর বা আয়ের দশমাংশ (আদি ৪: ১৭-২০; ২৮: ২২; দ্বিতীয় বিবরণ ১২, ১৪; মথি ২২: ২১; লুক ১১: ৪২) দাবী বা আদায় করে না, কাথলিক মণ্ডলী বরং খ্রিস্টভক্তদের ভালবাসার অনুদানের উপর বেশী নির্ভর করে। ঈশ^রকে ধন্যবাদ যে খ্রিস্টমণ্ডলীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত স্বহৃদয়, স্বদিচ্ছাস্বম্পন্ন ও সদয় খ্রিস্টবিশ^াসীদের অভাব হয়নি। প্রেরিতশিষ্যদের সময়কার মত না হলেও (শিষ্যচরিত ৪: ৩২ – ৬: ৭), উদার খ্রিস্টভক্তদের প্রেমপূর্ণ দানে ও অকুণ্ঠ সমর্থনে খ্রিস্টমণ্ডলী সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়েছে ও মানব সেবা করতে পারছে। আমাদের দেশে বা ধর্মপ্রদেশে খ্রিস্টভক্তদের মধ্যে এখনও আমরা সেই মনোভাব দেখতে পাচ্ছিনা, এটা অবশ্যই আমাদের দেশীয় বা ধর্মপ্রদেশীয় মণ্ডলীর একটি বড় দুর্বল দিক। তাহলে এই মণ্ডলীর ভবিষ্যত কি? বিশ^াস করি ঈশ^র নিজেই চালিয়ে নিবেন এই স্থানীয় মণ্ডলীকে – কিন্তু আমরা ঈশ^রকে কতটুকু ভালবাসা দিতে পারলাম, কতটুকু দায়িত্বশীল সেবক হতে পারলাম সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
১২। নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ^ব্যাপী এক মহা-লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার ঘাট, উপাসনালয়, ইত্যাদি সবই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশের মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডার মত আমাদের সকল গীর্জাও বন্ধ হয়েছে। খ্রিস্টভক্তরা আর কোন উপাসনায় যোগদান করতে পারছেনা। এমনকি ২০২০ খ্রিস্টাব্দের পাস্কা বা পুণরুত্থান পর্বও পার হয়েছে লক-ডাউন অবস্থায়। যদিও যাজকগণ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করছেন, খ্রিস্টভক্তগণ সেখানে যোগদান করতে পারছেন না। অন-লাইন খ্রিস্টযাগ পাওয়া যাচ্ছে বটে, তা সকলের জন্য সহজলভ্য নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এইরকমটি আর কখনোই হয়নি। এই অবস্থায় আমাদের মনের প্রতিক্রিয়া কি? ঈশ^র আমাদের কি বলতে চান? আমাদের বিশ^াসের দায়িত্ব কি আমরা নিব না? আমরা যে খ্রিস্টবিশ^াস লাভ করেছি, সেটার মূল্য ও মর্যাদা আমরা কি বুঝেছি? এই সময় আমাদের বিশ^াস রক্ষা করার জন্য ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রার্থনার গুরুত্ব রয়েছে। আমরা যে ঈশ^রের বাণীর জন্য, আত্মার খাদ্যের জন্য ও ঈশ^রের ঘরে – তাঁর কাছে – যাবার জন্য ক্ষুধা অনুভব করছি, তা আমাদের আত্মার স্বাস্থ্যের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে যদি আমরা আমাদের খ্রিস্টবিশ^াস রক্ষার ও বাড়িয়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং দৃঢ় আশায় নতুন দিনের প্রহর গুনি।
১৩। দায়িত্ব এড়ানোর জন্য আমরা অনেক যুক্তি খুঁজি, আর পেয়েও যাই। বিপন্ন পরিবেশ ও মানুষের বিপর্যয়ের সময় যারা সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে তারা এরূপ কোন খোঁড়া যুক্তি খোঁজে না বা অন্যরা কেন করছে না বা করলেও কেন সঠিকভাবে করছে না সেই প্রশ্ন তোলে না। তারা সত্যিকার অর্থেইে “মানুষের জন্য মানুষ”। ঈশ^র তাদের স্বেচ্ছাসেবা ও দয়ার কাজের (volunteerism and charity) মধ্য দিয়েই তাঁর কাজ করে যান। আমরাও চাইলে ঈশ^রের এই কাজে অংশ নিতে পারি। সকল বিপর্যয়েই মানুষ মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসে বলেই পৃথিবীতে ভালবাসার সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। এই করোনা সংকটের সময় সমস্ত পৃথিবীর এই মারাত্মক ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত রোগীদের যারা জীবন বাজি রেখে ভালবাসাপূর্ণ সেবা দিয়েছে ও তা দিয়ে যাচ্ছে তারা এটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ জেনেও তা করছে – তারা তা কেন করছে, নিজেদের একবার প্রশ্ন করতে পারি। অগণিত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের কর্মীবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী, তাদের সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তারা তো মৃত্যুকে ভয় করে নাই; আমাদের ভয় দূর করার জন্য তারা হয়েছে অকুতভয়। তারা যে মানব প্রেমের মধ্য দিয়ে ঈশ^র প্রেমের কাজ করে যাচ্ছে সেইজন্য, তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ জানাই। তারাই আসল দায়িত্ববান সেবক। আমরা কি তাদের মত করতে পারিনা? চাইলে অবশ্যই পারি!
১৪। আমি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে সেইসব মানুষদের কথা স্মরণ করি যারা বিশ^ব্যাপী মানুষের বিপর্যয়ের সময় অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। যারা খ্রিস্টকে অনুসরণ করে তারাই এমনটি করতে পারে। যীশু নিজেই বলেছেন, “আমি যেমন তোমাদের ভালবেসেছি, তোমরাও তেমনি পরস্পরকে ভালবাস” (যোহন ১৩:৩৪; ১৫: ১২)। যীশুর এই নতুন আদেশ মানলে আমাদের অবশ্যই দুস্থ প্রতিবেশীদের ভালবাসতে হবে, ভালবাসার এক নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের খ্রিস্টভক্তদের অনেকেই যীশুর সেই কথা মেনে চলে, নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আমাদের ধর্মপ্রদেশেও সেইরকম অনেক মানুষ আছে। আমরা তাদের শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন জানাই। করোনা ভাইরাসের এই সংকট কালে আমরা তাদের যথেষ্ঠ সহায়তা পেয়েছি যেন আমরা দরিদ্র দরিদ্রদের পাশে দাড়াতে পারি। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছেন ব্যক্তি মানুষ আবার রয়েছে সম্মিলিত উদ্যোগ বা সংস্থা। এদের মধ্যে আমাদের ধর্মপল্লীর ক্রেডিট ইউনিয়নগুরিও আছে। আমি আমাদের ধর্মপ্রদেশের নামে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি আমাদের পরিবারের মধ্যে, আমাদের সমাজের মধ্যে, আমাদের দেশের মধ্যে, এবং আমাদের মণ্ডলীর মধ্যে আমরা নিশ্চয়ই কোন না কোন কিছু করতে পারি, যার দ্বারা আমরাও সকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বা দায়িত্বশীল সেবাকর্মী হয়ে উঠতে পারি। আসুন আমরা সকলেই ঈশ^রের দায়িত্ববান বা দায়িত্বশীল সেবক-সেবিকা হয়ে উঠি। ঈশ^র আমাদের সকলকে আর্শীবাদ করুন।
খ্রিস্টেতে আপনাদের সেবায়
বিশপ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ

আলোচনার জন্য প্রশ্ন:
১। ঈশ^রের সৃষ্টি মানব-কৃষ্টি যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা কি কি দায়িত্ব পালন করি? কোন কোন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করি না? এখন আমরা কি করব? কিভাবে দায়িত্ববান সেবাকারী হব?
২। মানুষ যখন দরিদ্রতার কারণে, দুর্ঘটনার কারণে, দুর্যোগের কারণে ও মহামারীর কারনে বিপন্ন-বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন আমাদের কেমন লাগে – আমরা সেই সময় কি করি (নিজেরা বিপন্ন হলে বা অন্যরা বিপন্ন হলে)? এই ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে দায়িত্ববান সেবাকারী হব?
৩। মণ্ডলীর বাণীপ্রচার কাজ, শিক্ষাবিস্তার, স্বাস্থ্যসেবা, দয়ার কাজ, ইত্যাদিতে আমরা খ্রিস্টবিশ^াসী হিসাবে কি কি দায়িত্ব পালন করি? কি কি কাজে এবং কিভাবে আমরা সত্যিকারের খ্রিস্টবিশ^াসী ও দায়িত্ববান সেবাকর্মী হতে পারি? খ্রিষ্টের অনুকরণে ভালবাসার সভ্যতা এগিয়ে নিতে ও প্রকৃত সেবাকর্মী হওয়ার জন্য আমরা এখন কি কি করব?

Please follow and like us: