ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
গত ১২ জুন অনিল ইগ্নাসিউস মারান্ডী বিশপ জের্ভাস কর্তৃক ডিকন পদে অভিষিক্ত হয়েছেন। রাজশাহী সিটিতে অবস্থিত খ্রিস্ট জ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র এই অভিষেক খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টার সময় বিশপ জের্ভাস রোজারিও ২৯জন যাজক ও ডিকন অভিষেক প্রার্থীকে নিয়ে শোভাযাত্র করে মূল চার্চ ভবনে প্রবেশ করেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনাড়ম্বরভাবে গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ডিকন অভিষেক অনুষ্ঠানে রয়েছে মোট তিনটি ধাপ, ১. প্রার্থীর সম্মতি প্রকাশ, ২. প্রার্থীকে উপস্থাপন এবং ৩. প্রার্থীর মনোনয়ন। অভিষেক অনুষ্ঠানের শুরুতে যিনি ডিকন বা ধর্মসেবক পদে অভিষিক্ত হবেন, তার নাম ধরে আহ্বান করা হয় এবং তার সম্মতি জানার জন্য প্রশ্ন করা হয়। প্রার্থীর সম্মতির পর একজন যাজক খ্রিস্টমন্ডলির পক্ষ হয়ে বিশপকে অনুরোধ করেন- প্রার্থীকে ডিকন পদে অভিষিক্ত করার জন্য। এরপর বিশপ প্রার্থীকে ডিকন পদে অভিষিক্ত হওয়ার জন্য মনোনীত করেন। ডিকন হলেন যাজকত্বলাভের পূর্ব এবং শেষ ধাপ।
ডিকন পদে অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশপ জের্ভাস তার উপদেশ বাণীতে বলেন, “একজন ডিকনের লক্ষ্য হলো মানব সেবা। ঈশ্বর তাকে আহ্বান করেছেন, তাকে গুণ দিয়েছেন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সেবা করার জন্য। সে যদি তার জীবনে ব্যর্থ হয় তবে এর জন্য মন্ডলি দায়ী নয়, ঈশ্বর দায়ী নন। ব্যর্থতার জন্য নিজেই দায়ী হবেন। একজন ডিকনকে তার কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে, মন্ডলির প্রতি অনুগত থেকে পালকীয় দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে যদি চায় তাহলে কর্তৃপক্ষ, মন্ডলি এবং খ্রিস্টভক্ত তার সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। আর যদি না চায় তবে সে দায়ও তাকে বহন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি একটা ঈশ্বরের আহ্বান। তাই তাকে ঈশ্বরের উপর পুরো আস্থা রেখে এবং মন্ডলির নির্দেশ মেনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
ডিকন অনিল মারান্ডীর সংক্ষপ্তি জীবনী
অনিল ইগ্নাসিউস মারান্ডী ২০.০৮.১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে, কার্তিকপুর গ্রাম, সাধু যোসেফ, রোহনপুর ধর্মপল্লীতে আদিবাসী সান্তাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রোহনপুর ধর্মপল্লী বিভক্ত হওয়ার কারণে বর্তমানে এই গ্রামটি সাধু জন মেরী ভিয়ান্নী, মুন্ডুমালা ধর্মপল্লী, রাজশাহী জেলায় অবস্থিত। বাবা- মৃত: কার্লুস মারান্ডী এবং মা- সোনামণী হাঁসদা। চার ভাই-বোনের মধ্যে অনিল দ্বিতীয় সন্তান। রোহনপুরে অবস্থিত রাঙ্গামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে এ.বি. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি. পাশ করার পর দিনাজপুর সুইহারী অবস্থিত মাইনর সেমিনারিতে প্রবেশ করেন। দিনাজপুর আদর্শ কলেজ থেকে ইন্টার পাস করার পর ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার রমনায় অবস্থিত ইন্টারমিডিয়েট সেমিনারিতে প্রবেশ করেন এবং নটর ডেম কলেজে ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হন। ডিগ্রি শেষ করে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে চার মাসের জন্য বুলাকীপুর যিশু ধ্যানীলয় গৃহে আধ্যাক্তিক কোর্স শেষ করেন এবং পরে ঢাকার বনানীতে অবস্থিত পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারিতে দর্শন ও ঐশতত্ব নিয়ে যাজকীয় বিষয়ে পড়াশুনা করেন। পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে পালকীয় অভিজ্ঞতার জন্য কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন কোর্সে অংশ নিয়েছেন।
বরেন্দ্রদূতের পক্ষ থেকে ডিকন অনিলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, তার যাজকবরণ লাভের পর পালকীয় কাজের বিশেষ লক্ষ্য কীহবে? উত্তরে তিনি বললেন, ভবিষ্যতে যদি সুযোগ আসে তবে তিনি তার যাজকীয়/সাক্রামেন্তীয় কাজের পাশাপাশি তিনটি বিশেষ কাজ করতে চান। ১. জেলখানায় যারা বন্দি, তাদের মধ্যে পালকীয় সেবা কাজ করা। ২. যারা গার্মেন্টস কর্মী তাদের নিয়ে কাজ করা এবং ৩. শিশুদের নিয়ে কাজ করা। চলতি বছরের কোনো এক সময় সে যাজক পদে অভিষিক্ত হবেন। আমরা অনিল ইগ্নাসিউস মারান্ডীর সুন্দর ভবিষ্যৎ ও পালকীয় জীবন কামনা করি।

Please follow and like us: