ফাদার ফ্রান্সিস এস. রোজারিও
ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস বিগত কয়েকদিনে বিশে^র সকল মানুষকে ও বিশে^র মোড়ল রাষ্ট্রের বিশ^ মোড়লদের কাপিয়ে একটা মরাল মোড়ল শিক্ষা দিয়ে গেল। এই কয়েকদিন আগেও শুনেছি প্রকৃতি ও পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় বিশে^র বড় বড় রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানেরা বিশ^ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রশ্নে বিশ^ মোড়লেরা একমত হতে পারেনি। বিশে^র দরিদ্র দেশগুলো যখন বিশে^র জলবায়ু পরিবর্তন ও আশু ক্ষতি ও দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য উন্নত ও মোড়ল দেশগুলোর কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছে তখন অনেক মোড়ল রাষ্ট্রের মোড়লেরা বা রাষ্ট্র প্রধানেরা উদাসীন থেকেছেন। কারণ এতে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে; রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতা কমে আসবে ! প্রকৃতির প্রতি আধুনিক যুগের মানুষের এ উদাসীনতায় প্রকৃতির অসহিষ্ণুতা যেন প্রকাশ পেয়েছে কবির ভাষায়-
“বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ¦ালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি …।”
তাই বিশে^র ধনী ও উন্নত রাষ্ট্র নেতাদের এ উদাসীনতা ও সিদ্ধান্ত-হীনতায় প্রকৃতি নিজেই তার নিজেকে রক্ষার সিদ্ধান্ত বিশ^বাসী এবং রাষ্ট্রীয় মোড়লদের জানিয়ে দিল। আর প্রকৃতির সিদ্ধান্ত সবচেয়ে কার্যকর ও কঠিন সিদ্ধান্ত। প্রকৃতির এ দৃঢ় ও ইস্পাত কঠিন সিদ্ধান্তে কোন মানুষ বা কোন রাষ্ট্র প্রধানের কোন দ্বি-মত নেই। নেই কোন উদাসীনতা!
তাই মাত্র কয়েকদিনের লকডাউন প্রকৃতিতে এনেছে ব্যাপক উন্নয়ন ও পরিবর্তন। যা বুদ্ধিমান মানুষ এতোদিনে পারেনি করতে; প্রকৃতি তা মাত্র কয়েকদিনে করে দেখালো মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে। বিজ্ঞানীগণ বলছেন, বিগত ৫০ বছরে যে পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব হয়নি, মাত্র কয়েক সপ্তাহে তা সম্ভব হয়েছে। প্রকৃতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তাই প্রকৃতি এক বড় শিক্ষক। কথায় বলে- ‘ঈশ^র ক্ষমা করলেও, প্রকৃতি কখনো ক্ষমা করে না।’ তাই বলা যায়- “সময়ের এক ফোড়, আর অসময়ের দশ ফোড়।” যার মূল্য আজ মানুষকে দিতে হচ্ছে, কষ্ট পেতে হচ্ছে, নির্মল অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালের বেডে শুয়ে জমানো অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। হতে পারে আরো আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে সচেতন হলে আজকের এই খেসারত দিতে হতো না।
হায়রে! বুদ্ধিমান বোকা মানুষ! যে মানুষ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভিনগ্রহে যাবার পরিকল্পনা করছে, প্রকৃতির উপর তার নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করছে, বিজ্ঞানের নানা ধরণের পরীক্ষামূলক সফল পরীক্ষা পরিচালনা করছে; এহেন উন্নত বিজ্ঞান নির্ভর সময়েও মানুষ প্রকৃতির কাছে আজ বড় অসহায়! যে প্রকৃতিকে মানুষ একসময় বেড়ি পরাতে চাইছে, নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে, তখন প্রকৃতি-ই আজ মানুষকে বেড়ি পড়িয়ে ঘরে, কর্মস্থলে ও হাসপাতালে বন্দি করে রাখছে! একজন থেকে আরেকজনকে আলাদা করে রাখছে! যে অর্থনৈতিক স্বার্থ চিন্তায় বিশ^ মোড়লেরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি; আজ সেই বিশ^ অর্থনীতি স্থবির ও অচল হয়ে পড়েছে! যে রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতা খাটিয়ে যখন বিশ^ মোড়ল রাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত গরীব ও কম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আজ তারাই নিজের দেশে নিজের মানুষকে বাঁচাবার জন্য হিমশিম খাচ্ছে! তাই সময় এখন-ই। সময় থাকতে সচেতন হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার; যেন ভবিষ্যতে হাজারো মানুষের জীবনের বিনিময়ে এমন আর কোন খেসারত দিতে না হয়। এছাড়া যেন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারি। তাই আসুন, প্রকৃতিকে ভালবেসে প্রকৃতির যত্ম নেই ও একটি নতুন বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলি সবার প্রচেষ্টায় ও সকলের সহযোগিতায়। যেন বুক ভরে নির্মল বাতাস নিয়ে বলতে পারি- অপূর্ব সুন্দর ধরণী, নির্মল তার প্রকৃতি…।
করোনা ও একটি শিক্ষা
Please follow and like us: