গত ২৫ জুন রাজশাহী বিশপ ভবনে যাজকবর্গের অধিবেশন শেষে ‘গুরু সাধনা সুরে গানে’ বই-এর মোড়ক উন্মোচন করেন রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তাঁকে সহযোগিতা করেন ভিকার জেনারেল ফাদার পল গমেজ এবং যাজকদের ডিন ফাদার ইম্মানুয়েল কাঁনন রোজারিও। বইটির লেখক ফাদার জয়গুরু। জয়গুরু শব্দটি শুনলেই কমবেশি সবাই বুঝতে পারি, আমরা কার কথা বলতে চাই। তিনি আর কেউ নন আমাদের অতি পরিচিত লেখক ফাদার পৌল ডি’ রোজারিও।
যাকে আমরা সবাই জয়গুরু ফাদার বলেই ডেকে থাকি। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ৩ নভেম্বর, মঠবাড়ি মিশনের বাঁশবাড়ি গ্রামের “তালটিহির বড়বাড়ি ” নামক এক সম্ভ্রন্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। যখন তার বয়স পাঁচ বছর তখন তার পিতামাতা রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের অর্ন্তগত বোর্ণী ধর্মপল্লীর প্রিয়ভাগ গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।
বোর্ণীর সেন্ট মেরীস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন এবং পরে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে দিনাজপুর সেন্ট যোসেফ মাইনর সেমিনারিতে প্রবেশ করেন। মাইনর সেমিনারিতে থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে ডাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ডাকা কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। মেজর সেমিনারিয়ান হিসেবে এক বছর ম্যাথিস হাউজে এবং পরে বনানীতে যাজকত্ব লাভের অধ্যায়ন শেষ করেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ৩ জানুয়ারি নিজ ধর্মপল্লী বোর্ণীতে যাজকপদে অভিষিক্ত হন। ১৯৯২-১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আতেনিও দি ম্যানিলা ইউনিভাসিটি থেকে ম্যাজিষ্ট্রাতুম আর্তিউম মাস্টারস ডিগ্রি লাভ করেন। ৩ জানুয়ারি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি যাজকত্বের ২৫ বছরের জুবিলী পালন করেন। বর্তমানে যাজকত্বের ৩৮ বছর প্লাস চলমান রয়েছে।
তিনি তার দীর্ঘ ৩৮ বছরের যাজকীয় জীবনে বৃহত্তর দিনাজপুর ও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে বহুবিধ সেবা দায়িত্ব পালন করেছেন। ফাদার জয়গুরু ২০ বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে সহকারি পাল-পুরোহিত ও পাল-পুরোহিত হিসেবে এবং সেই সাথে দুই বছর বনপাড়া সাধু ৬ষ্ঠ পল সেমিনারিতে অধ্যাত্মিক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও কাটেখ্রিস্টদের পরিচালক, যুব পরিচালক, আর.ডি.পি.এফ. সভাপতি ও ক্ষুদ্র খ্রিস্ট সমাজ গঠন বিষয়ক আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি অসুস্থ্য হবার আগ পর্যন্ত বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীতে সহকারি পাল-পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এ সমস্ত পালকীয় সেবা দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে তিনি তার সুনিপুন হাতে রচনা করেছের মোট ৮টি বই এবং বহু ধরনের গান, কবিতা ও গল্প। অসুস্থ্য হবার পূর্বে তিনি রচনা করেছেন গুরু সাধনা সুরে গানে বইটি। তার একান্ত ইচ্ছা ছিল যে, বইটি যেন যাজকবর্গের অধিবেশনের মধ্যেই প্রকাশিত হয়। ভাগ্যের কী নিমম পরিহাস তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে আংশিকভাবে। গত ২৫ জুন যাাজক বর্গের অধিবেশনেই তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। তবে তার অসুস্থ্যতার কারণে তিনি নিজে এতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাই বিশপ জেভার্স রোজারিও গুরু সাধনা সুরে গানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করতে গিয়ে বলেন, ফাদার জয়গুরু অুসুস্থ্যতার কারণে যদি আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত হতে নেই- তবে তিনি যে আমাদের ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধরণের কাজ করেছেন, তার সে সমস্ত কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষভাবে তার লেখনীর জন্য এবং আজকে আমরা যে বইটির মোড়ক উন্মোচন করতে যাচ্ছি তার জন্য। আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেই যে, তিনি আমাদেরকে ফাদার জয়গুরুর মত একজন দক্ষ ফাদারকে আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের জন্য দান করেছেন। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ফাদার জয়গুরু উপস্থিত থাকতে না পারলেও তার মনের অভিপ্রায়টি ফাদার ইম্মানুয়েলের কাছে ব্যক্ত করেছিলেন। তাই বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ফাদার ইম্মানুয়েল বলেন, ‘ফাদার জয়গুরু একটি বিশেষ ইচ্ছা ছিল যে তার এই বইটি যেন যাজকবর্গের সভায় উদ্বোধন করা হয় এবং প্রত্যেক যাজককে একটি করে বই উপহার দেয়া হয়।’ বইটির মোড়ক উন্মোচনের পর সকল যাজকের হাতে একটি করে বই উপহার হিসেবে তুলে দেয়া হয়। আমরা ঈশ্বরের কাছে ফাদার জয়গুরুর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
-ফাদার বাবলু কোড়াইয়া