(প্রয়াত ফ্রান্সিস গমেজ-এর কথা ও ম্যাথিউ দীপক বোস-এর সুরে গীতবলীর ১২৫০ নম্বর গান “একদিন আমি স্বপ্নে দেখেছি” গানের অবলম্বনে গীতিনাট্য)

সাগর কোড়াইয়া

১ম দৃশ্য
(রাতের দৃশ্য। মঞ্চে হালকা আলো থাকবে। চারিদিক নীরব নিস্তব্দ। ঘর্মাক্ত অবস্থায় জয়ন্ত ক্লান্ত-অবসন্ন শরীরে মঞ্চে প্রবেশ করবে)
জয়ন্ত: উহু…আজ কি খাঁটনিটাই না গেল। ভাল্ লাগে না আর। এভাবে আর জীবন চলে? ভোরে ঘুম থেকে উঠে দানাপানি কিছু একটা পেটে ফেলে অফিসে দৌঁড়াও। সারাদিন গাধার খাঁটনি খাটো। তারপর রাতে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরো। আর উপরি পাওনা হিসাবে অফিসের বসের রাগানি তো রয়েছেই। না ভাল্ লাগে না আর। চাকুরীটা ছেড়ে দিয়ে পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকাটাই শ্রেয়।
(চিন্তিত হয়ে) না, সেটা করা যাবে না। চাকুরীর যে বাজার। আরেকটি চাকুরী জোগাড় করতে জুতার তলি ক্ষয় করে ফেলতে হবে। তবুও চাকুরী পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। আর মাসে মাসে পরিবারে টাকা পাঠাতে তো হবেই। উহু… আমার জন্মটাই বুঝি হয়েছে শুধু কাজের জন্য। যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। কেন যে মরা এই পৃথিবীতে জন্মাতে গেলাম?
এতো ভেবে কাজ নেই। (পেটে হাত বুলিয়ে) যাক্ আজ রাতের খাবার বন্ধুর ভাগ থেকে হয়ে গিয়েছে। এখন ঘুমানোর চিন্তা করি। (ধীরে ধীরে প্রস্থান- আলো নিভে যাবে)

২য় দৃশ্য

(মঞ্চের পেছনে রাতের মিউজিক বেজে উঠবে। জয়ন্ত অন্ধকারে মঞ্চে এসে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। এ সময় বাহিরে গান শোনা যাবে। “একদিন আমি স্বপ্নে দেখেছি…। ধীরে ধীরে মঞ্চের আলো জ্বলে উঠবে)
(মঞ্চে যীশুর প্রবেশ। গান থেমে যাবে)
যীশু: জয়ন্ত, জয়ন্ত…। (জয়ন্ত…ডাক শুনে আনন্দিত মনে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে যীশুর হাত ধরবে)
জয়ন্ত: তুমি এসেছ যীশু? তোমাকে কতদিন ধরে খুঁজছি। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি।
যীশু: তোমাকে দেখতে এসেছি জয়ন্ত………….(সমুদ্রের গর্জনের মিউজিক বেজে উঠবে)………………. শুনতে পাচ্ছ সমুদ্রের গর্জন?
জয়ন্ত: হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি যীশু।
যীশু: চল সমুদ্রপাড় ধরে হাঁটা যাক্। তোমার ক্লান্ত-অবসন্ন শরীর জুড়িয়ে যাবে সমুদ্রের বাতাসে। তুমি তোমাকে নতুনভাবে আবিস্কার করবে।
(যীশু আর জয়ন্ত সমুদ্র তীর ধরে হাঁটতে থাকবে। এই সময় আবার গানের পরের অংশ বেজে উঠবে। (আকাশের বুকে আমার জীবনের ছবি একে একে ভেসে উঠেছে……………) জয়ন্ত পিছন পানে তাকিয়ে দেখতে থাকবে; আর একজনের পায়ের ছাপ দেখে মনে কষ্ট পাবে)
গান থামলে——–জয়ন্ত পিছন পানে তাকাবে।
জয়ন্ত: এটা কেমন হলো যীশু?
যীশু: কি হয়েছে জয়ন্ত?
জয়ন্ত: কেন আপনি বুঝতে পারছেন না?
যীশু: নাতো…………স্পষ্ট করে বলো তো কি হয়েছে।
(গানের পরের লাইন বেজে উঠবে-জয়ন্ত গানে ঠোঁট মেলাবে।…. যখন দেখেছি শুধু চিহ্ন দু’টি বিষাদের ছবি…………..)। যীশু আর জয়ন্ত আবারো হাঁটতে থাকবে। গান থামবে)
জয়ন্ত: এবার বুঝেছেন।
যীশু: ও তুমি এই কথা বলছো? তাহলে শোন…
(দু’জনে সমুদ্রতীরে একসাথে বসবে)
(গানের পরের অংশ বেজে উঠবে- যীশু বলেন ছেড়ে যাইনি কো হায় তোমার বিষাদে…………)
জয়ন্ত: যীশু তুমি আমার কষ্টের জীবনে এসেছ। আমি যে এই জীবনের বোঝা বইতে পারছি না। আমার তো কেউ নেই যে এই জীবন সমুদ্র পাড়ি দিতে একটু সাহায্য করবে?
যীশু: তুমি চিন্তা করো না। তোমার জীবন সমুদ্র পাড়ি দিতে আমি সব সময় তোমার সাথে রয়েছি। তোমার হাঁটতে কষ্ট হলে আমি তোমাকে কাঁধে নিয়ে চলেছি এবং চলবো।
(নেপথ্যে গানের প্রথম অংশ বেজে উঠবে- (একদিন আমি স্বপ্নে দেখেছি……….)। যীশুর প্রস্থান- জয়ন্ত মঞ্চে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। গান চলতে থাকবে এবং জয়ন্ত ধীরে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করবে। ধীরে ধীরে মঞ্চের আলো নিভে যাবে)।

Please follow and like us: