ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস সম্প্রতি সমাজকে স্বাস্থ্য সংকট থেকে সুস্থ করে তোলার জন্য সবাইকে সহায়ক ভুমিকা পালনের নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সামাজিক সংগঠনগুলোর সহায়ক ভুমিকা পালনের কাজটি হলো, সামাজিক বা রাজনৈতিক ইস্যু থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে সহায়ক কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাবনা থাকতে হবে। পোপের মতে, সমাজের সকল শ্রেণি, সরকার এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় দায়িত্বে সমাজ সুস্থতার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। পোপ মনে করেন, সবার হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পদ থাকতে হবে যাতে সুন্দর ভবিষ্যত ও বিশ্ব গড়ার কাজে তা নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে সমাজে যারা উচু-আসনে রয়েছেন, ব্যক্তি ও সমাজ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সম্পদ তাদেরই জোগান দিতে হবে। পোপ, করোনা ভাইরাসের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এই মহামারির কারণে, জনগণ, পরিবার ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা মারাক্তক সংকটের মধ্যে পড়েছে- যার থেকে উদ্ধারের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমাজের নেতা, এমনকী চার্চের উচিত হলো নিম্নশ্রেণির প্রতি সম্মান দেখানো- যদিও প্রায়ই দেখা যায় প্রকৃত অবস্থা হতাশাজনক।
ধর্মগুরু পোপ বলেন, সমাজের নিম্ন শ্রেণিকে ক্ষমতায়ন ক’রে তাদেরকে সমাজ উন্নয়নে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। এই কারণে প্রথম উদ্যোগ হলো- গরিবদের কথা শোনা, তারা কীভাবে জীবন ধারণ করছে, তাদের কী প্রয়োজন, সব জেনে শুনে সহায়ক কাজে অংশ নিতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ, তাদের জ্ঞান, কোনোভাবেই দূরে সরিয়ে রাখতে হবে না। পোপ দুঃখ প্রকাশ করে বালেন, “এমন সব স্থানে অন্যায্যতা বিরাজ করছে যেখানে উন্নত অর্থনীতির পাশাপাশি ভূ-রাজনীতির স্বার্থ বিরাজ করছে।” এছাড়া বাস্তবে এটাও দেখা যায়, সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায় জনগণের কথা না শুনে, তাদের অবস্থা না বুঝে, বড় বড় বহুজাতিক সংস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কথা শুনতে অভ্যস্থ। অন্য কথায়, দুর্বলদের কথা না শুনে শাক্তিমানদের কথা শোনা কিছুতেই মানবিক কাজ নয়। যিশু এইভাবে আমাদের শিক্ষা দেননি আর এইভাবে সহায়তা করার নীতি প্রর্বতন করা সম্ভব নয়। পোপ জোর দিয়ে বলেন, সমস্যার সমাধান এবং মহামারির পর বিশ্ব কীভাবে দাঁড়াবে, তা ঠিক করার জন্য আপামর জনগণের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
পোপের ভাষায়, এটাও একটা পরিতাপের বিষয় যে, বিশ্বজুড়ে এই স্বাস্থ্য সংকটময় মুহুর্তে আমরা বড় বড় ঔষধ কোম্পানির কথা শুনতে বেশি ব্যস্ত, অন্যদিকে উপেক্ষা করছি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী, শরণার্থী শিবিরের লোকজনের মতামতকে। পোপ বলেন, “এটা উপযুক্ত পথ নয়। যারা উঁচুতে অবস্থান করছে এবং যারা নিচুতে অবস্থান করছে- সবার কথা শুনতে হবে।” আসলে সহায়তা করার নীতিটা হলো, সমাজের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য প্রত্যেকের ভূমিকা নির্ণয় করা। সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হওয়া মানে একটা পরিবর্তনে প্রবেশ করা। আর এই সত্যিকার পরিবর্তনটা সবার অংশগ্রহণের কারণে হতে হবে। অন্যথায় ফলাফল হবে সারশুন্য। ভ্রাতৃত্ববোধ সহায়তার কারণে গড়ে ওঠে এবং সার্বিক সহায়তার কারণে বিশ্বের অনেক অকল্যাণ অবস্থা সংশোধন রূপ নিয়ে কল্যাণকর হয়ে ওঠে। বিশ্বটা সবদিক দিয়ে গড়ে তোলার জন্য তিনি সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। সবশেষে পোপ বলেন, “অতীতকে পুর্নগঠনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অতীত শুধুই অতীত। আসুন আমরা নতুন ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি।”