ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
গত পাঁচ অক্টোবর থেকে নয়ই অক্টোবর, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের বাৎসরিক নির্জন ধ্যান অনুষ্ঠিত হয়েছে- রাজশাহী বিশপ ভবনে। কোভিড- ১৯ মহামারির কারণে এবছর জাতীয়ভাবে ধম্যপ্রদেশীয় যাজকদের নির্জন ধ্যান আয়োজন সম্ভব না হওয়ার কারণে ধর্মপ্রদেশভিত্তিক আয়োজন করা হয়। এবারের নির্জন ধ্যানের মূল বিষয় ছিলো, “যাজকত্ব হলো যিশু হৃদয়ের ভালোবাসার ফল।” এই শিক্ষাটি দিয়েছিলেন, ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ও পাল-পুরুহিতদের প্রতিপালক সাধু জন মেরী ভিয়ান্নী। ফরাসী দেশের আর্চ ধর্মপল্লীর যাজক সাধু ভিয়ান্নী তাঁর নি:স্বার্থ পালকীয় কাজের মাধ্যমে এলাকার বিপদগামী বাটপার ও মাতালদের জীবন পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই সাথে পাপ-স্বীকারের যাজক হিসেবে গোটা ইউরোপে খ্যতি অর্জন করেছিলেন। বার্ষিক নির্জন ধ্যান পরিচালনা করেন দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের ফাদার মার্কুস মুর্মু।
ফাদার মার্কুস বলেন, যাজক ও যাজকত্ব হচ্ছে “যিশু হৃদয়ের ভালোবাসার ফল।” একজন যাজক একাধারে ঈশ্বর প্রেমিক ও সাথে মানব প্রেমিক ব্যক্তি। যাজক হলেন ভক্তের জন্য ঐশ উপহার এবং ঈশ্বরের জন্য জনগণের উপহার। একজন যাজককে অবশ্যই হতে হবে “যিশু হৃদয়ের মতো- হৃদয়ের মানুষ।” যাজককে তার কাজকর্মের মধ্যদিয়ে মানুষের মধ্যে ঐশ ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। একজন যাজকের লক্ষ্য হলো তার সেবা, বিশেভাবে সংস্কারীয় সেবার মধ্যদিয়ে অপর খ্রিস্ট হয়ে ওঠা। খ্রিস্ট যেমন পাপীদের ঐশরাজ্যের সন্ধান দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে যাজকের কাজ হলো “ভক্তজনগণকে পবিত্রতাপর পথে পরিচালিত করা।” যিশুর হৃদয় হলো “কোমল ও পবিত্র,” তাই এই আদর্শকে জীবনে ধারণ করে একজন যাজককে হয়ে ওঠতে হয় “ঐশগুণের আধার ও ঐশ করুণায় ভরা হৃদয়ের মানুষ।” ফাদার মুর্মু বলেন, “যিশু হৃদয়ের ভালোবাসা সর্বজনীন ও পরিত্রাণদায়ী।” তাই যাজককে হতে হবে “উৎসর্গীকৃত, বলিকৃত, নিবেদিত, ক্ষমাশীল ও দয়ালু ব্যক্তি।” তাকে হতে হবে “পিতার ন্যায় স্নেহ-মমতা, পূর্ণ স্বার্থহীন একজন পরপোকারী ব্যক্তি” যে অন্যের মঙ্গলের জন্য নিজের এই জীবন স্বেচ্ছায় বেঁছে নিয়েছেন।
ফাদার মার্কুস মুর্মু তার নির্জন ধ্যান পরিচালনার শেষ দিনে পাল-পুরুহিতদের প্রতিপালক সাধু জন মেরী ভিয়ান্নীর পালকীয় জীবন সর্ম্পকে সহভাগিতা করেন। সাধু ভিয়ান্নী তাঁর ধমপল্লীর বিপদগামী মানুষকে যিশু হৃদয়ের ভালোবাসার অভিজ্ঞতা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি গির্জাকে পালকীয় সেবাকর্মের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আর তাই তো তিনি প্রতিদিন ১১-১২ ঘন্টা গির্জায় ধ্যান-প্রার্থনা ও পাপ-স্বীকার শুনে পালকীয় সেবা দিতেন। তিনি মানুষকে যিশুর উপস্থিতি এবং যিশুর হৃদয়ের ভালোবাসা উপলব্ধি করতে শিক্ষা দিতেন- নিজের জীবন দৃষ্টান্ত দিয়ে। এই কাজ করার জন্য তার মূল চালিকা শক্তি ছিলো “যিশু হৃদয়ের ভালোবাসা।” একইভাবে আজকের দিনেও যাজকের পালকীয় কাজের মূল লক্ষ্য হতে হবে, তার জীবনে ধারণকৃত “যিশু হৃদয়ের ভালোবাসা” থেকে।

Please follow and like us: