গত ৯ অক্টোবর রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ ভবনে ধর্মপ্রদেশীয় যাজকবর্গের বার্ষিক নির্জন ধ্যান ২০২০ খ্রিস্টাব্দ শেষে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিশপ জের্ভাস রোজারিও কর্তৃক রচিত “Intorduction to Christianity.” অনুষ্ঠানে বিশপসহ ধর্মপ্রদেশে কর্মরত সকল পুরোহিত, ব্রাদার ও নির্জন ধ্যান পরিচালক ফাদার মার্কুশ মুরমু উপস্থিত ছিলেন।
বিশপ জের্ভাস রোজারিও তাঁর যাজকীয় জীবনের বেশির ভাগ সময় পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারিতে ও পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্ন্তজাতিক ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগে অধ্যাপনার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালীন সময়ে যে বিষয়সমুহ পড়িয়েছেন তার উপর ভিত্তি করে বইটি রচনা করেছেন। বইয়ের মুখবন্ধ পর্বে তিনি বলেছেন, “ “Intorduction to Christianity” বা খ্রিস্টধর্মের সূচনার উপর আমার লেখার মূল লক্ষ্য ছিলে- খ্রিস্টধর্ম কী, তা অখ্রিস্টানদের কাছে ব্যাক্ত করা।” বইটিতে উপসংহারসহ রয়েছে মোট ৭টি অধ্যায়। যেগুলোর শিরোনাম হলো; ১. যিশুখ্রিস্টের জীবন, ২. যিশুখ্রিস্টের শিক্ষা, ৩. খ্রিস্টধর্মের মূল বিশ্বাসসমূহ, ৪. খ্রিস্ট মন্ডলি, ৫. খ্রিস্টিয় নৈতিকতা, ৬. আধুনিক খ্রিস্টধর্ম এবং ধর্মীয় বহুত্ববাদ এবং ৭. উপসংহারে রয়েছে- সর্বজনীন ধর্ম ও মানবতাসহ তাত্বিক কিছু মূল শিক্ষা। “Intorduction to Christianity” বইটি শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত পাঠ করলে বোঝা যাবে, এটি শুধু অখ্রিস্টানদের জন্য জানার লিখিত নয়, খ্রিস্টভক্তদের কাছেও সমান আবেদন রয়েছে। খ্রিস্টধর্মের প্রকৃত অবস্থান কোথায়, খ্রিস্টভক্তকে খ্রিস্টধর্ম সর্ম্পকে জানতে হলে এবং প্রকৃত অনুসারী হতে হলে- গ্রন্থটি অবশ্যই তাদের উপকারে আসবে। আমরা বিশপ জের্ভাস রোজারিওর পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম।
অপরদিকে, দিলীপ স্টিফেন কস্তা, মা মারীয়াকে নিয়ে লিখেছেন তার সর্বশেষ বই। “প্রণাম মারীয়া : দয়াময়ী মাতা” শিরোনাম থেকে বুঝা যায় বইটি কোন্দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। “প্রণাম মারীয়া : দয়াময়ী মাতা” গ্রন্থটি রয়েছে মোট ৬টি অধ্যায়। মা মারীয়াকে ঘিরে প্রতিটি অধ্যায় আবর্তিত হয়েছে। যেমন, ১. মা মারয়ার পরিচয়, ২. মা মারীয়াকে জানার উৎস, ৩. মারীয়ার দর্শন দান, ৪. খ্রিস্টমন্ডলিতে মা মারীয়ার পর্ব, ৫. মারীয়া ভক্তি ও প্রসঙ্গ কথা এবং ৬. মারীয়ার জীবনালেখ্য ও বাংলাদেশে মারীয়ার ভক্তি। বইটি সুপাঠ্য এবং সেই সাথে মা মারীয়া সম্পর্কে রয়েছে অনেক অজানা তথ্য।
ফাদার দিলীপ কস্তার কস্তা জন্ম- বর্তমান নাটোর জেলার মারীয়াবাদ কাথলিক ধর্মপল্লীর পারবোর্ণী গ্রামে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে। পড়ালেখার হাতেখড়ি স্থানীয় সেন্ট মেরীস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যাজক হওয়ার দৃঢ় প্রত্যাশা নিয়ে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর সাধু যোসেফ মাইনর সেমিনারিতে প্রবেশ করেন। দিনাজপুর পাঠ শেষ করে তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাস্থ বনানী পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারিতে প্রবেশ করেন। যাজকীয় জীবনের প্রস্তুুতি, সাধনা, দর্শন ও ঐশতত্ত্ব অধ্যায়ন শেষে ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে নিজ ধর্মপল্লীতে যাজক পদে অভিষিক্ত হন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে রোমের গ্রেগরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘খ্রিস্টমন্ডলীর ইতিহাসে’ লাইসেন্সিয়েট ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীতে ‘খ্রিস্টমন্ডলীর ইতিহাস’ বিষয়টির উপর অধ্যাপনা করে আসছেন। যাজকীয় জীবন ও পালকীয় কাজের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ লেখকের মন ও সত্ত্বা।
গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা লেখকের সত্ত্বা জুড়ে এখনও গ্রামীণ ছবি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। লেখকের চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস-বোধ ও ভালোবাসায় খ্রিস্টমন্ডলী, মানুষ-সমাজ, মানব উন্নয়ন, মান্ডলীক শিক্ষা ও সমকালীন বাস্তব দিকগুলোই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। যাজকীয় জীবনের আধ্যাক্তিকতা ও পালকীয় কাজের পাশাপাশি তাঁর লেখালেখির কাজটি অনেকটা শখের, নেশার ও পরিতৃপ্তির। সত্ত্বার গভীর তাগিদ ও বোধ থেকে লেখকের লেখা উৎসারিত ও প্রবাহিত। লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হল : ১. জীবন ধ্যানে নিঃশব্দ পদাবলী ( কাব্যগ্রন্থ, ২০০৯) ২. খুঁজি তারে নীরবে নিভৃতে ( কাব্যগ্রন্থ, ২০১৫) ৩. বেঁচে আছি তাঁরই নিমগ্ন ধ্যানে (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৬) ৪. আলোকিত জীবন সন্ধানে (প্রবন্ধ সংকলন, ২০০৮) ৫. যাজকত্ব : ঐশ নিমন্ত্রণে আত্মসমর্পণ ( প্রবন্ধ সংকলন, ২০১০) ৬. বনলোকে বোর্ণী মারীয়াবাদ ধর্মপল্লী ( ইতিহাসগ্রন্থ, ২০১৯ )। আমরা লেখকের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।
-ফাদার বাবলু কোড়াইয়া
বিশপ জের্ভাস রোজারিও ও ফা. দিলীপ এস. কস্তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
Please follow and like us: