ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
পোপ ফ্রান্সিস, এই করোনা ভাইরাস মহামারিকালে, শিশুরা যে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পোপ বলেন, এই কোভিড নাইনন্টিন সংকট যে শিশুদের উপর প্রভাব ফেলছে এবং যারা সঙ্গ-হীন হয়ে আছে আমরা কিছুতেই সে সবের ব্যর্থতা-দায় অস্¦ীকার করতে পারি না। পোপ, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের পূর্বে এক বাণীতে বলেছেন, “লক্ষ্য লক্ষ্য শিশু বর্তমানে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই চলমান অবস্থা- শিশুশ্রম বৃদ্ধি, শোষণ, তাদের অপব্যবহার এবং অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।” তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ফিলিপাইনে কমপক্ষে ২লক্ষ্য ৮০ হাজার শিশু গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে অশ্লীলবৃত্তির মতো অবৈধ ব্যবসার বলি হয়েছে। জাতিসংঘের বরাত দিয়ে পোপ বলেন, প্রতি বছর ১কোটি ২০লক্ষ্য শিশু বা ১৮ বছরের নিচে নাবালিকার বিবাহ হচ্ছে। এই ব্যাপারে জাতিসংঘ ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, এই মহামারির কারণে আগামী এক দশকে আরো বাড়তি ১কোটি ২৩লক্ষ্য বাল্য বিবাহের আশংকা রয়েছে। পোপ বলেন, শিশু নির্যাতন, অবৈধভাবে তাদের ব্যবহার এবং শিশুদের নিয়ে অশ্লীল চালচিত্র তৈরি সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পোপ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভারতের একটি শিশু সহায়তা সংস্থ্রা প্রতিবেদনা দেখা গেছে যে, সেখানে সরকারকর্তৃক মহামারি বিধি নিষেধ আরোপের কারণে মাত্র ১১দিনর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর দপ্তরে শিশু নিরাপত্তার জন্য ৯২ হাজার টেলিফোন অভিযোগ জমা পড়েছে।
যে সব শিশু তাদের অধীকার এবং বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য পোপ নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পোপ ফ্রান্সিস, পাকিস্তানের শিক্ষা অধিবক্তা মালালা ইউসুফজাইয়ের উদৃতি দিয়ে বলেন, “এক শিশু-এক শিক্ষক, একটি বই-একটি কলম, বিশ্বে পরিবর্তন আনতে পারে।”
জাতিসংঘের প্রতি পোপ তাঁর বাণীতে বলেন, যে সব দেশ ও আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান এই মহামারির মধ্যে গর্ভপাত একটি “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছেন, তাদের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, মা এবং মাতৃগর্ভে আগমনকৃত সন্তানের অধিকার বঞ্চিত ক’রে সমস্যার কোনো সমাধান হতে পারে না। তিনি বলেন, আধুনিক সমাজে “ফেলে দেওয়া সংস্কৃতি,” অতিরিক্ত পানাহার, বাড়তি উৎপাদিত পণ্যের আবর্জনা নিষ্কাষণ, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠছে। পোপ বলেন, “ফেলে দেওয়া” সংস্কৃতি মানুষের মর্যাদাকে যেমন অশ্রদ্ধা করে, তেমনি মানুষের প্রতি উন্নত ধারণাকে উৎসাহিত না করে মানবাধিকারকে অস্বীকার করে। এইভাবে বিশ্ব তার দায়িত্ব থেকে দায়মুক্ত হয়ে যে একটা ভয়ার্ত চিত্র তৈরি করছে তা আগামীদিনগুলোতে মানুষের মর্যাদা, আশা, স্বাধীনতার একটা “বেদনাদায়ক” পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হতে উৎসাহিত করবে।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, খ্রিস্টনগণও এই দীর্ঘ অন্যায় লঙ্ঘনের তালিকার বাইরে নয়। তিনি বলেন, বিশ্বে কতোশত ভাই-বোন কষ্টভোগ করছেন, তাদের পৈত্রিক আবাস থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন, এমনকী তাদের প্রাণের সংস্কৃতি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছেন- সে সবের একমাত্র কারণ হলো- ধর্মীয় বিশ্বাস।
সবশেষে পোপ বলেন, “আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, জীবনের প্রতি মানুষের অধীকার, মানুষের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আজকে আর নিশ্চিত নয়।”