গত ৬ নভেম্বর রাজশাহী শহরে অবস্থিত পবিত্র পরিবার ক্যাথলিক ধর্মপল্লী, কয়েরদাঁড়াতে (কলিমনগরে), ধর্মপল্লী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় পালকীয় কর্মশালা ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। পালকীয় কর্মশালার মূলসুর ছিল “আমরা হলাম দায়িত্ব প্রাপ্ত সেবক।” এতে ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রামের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে কর্মশালার কার্যক্রম শুরু হয়। পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌর্যহিত্য করেন ফাদার উইলিয়াম মুরমু। তার সহার্পিত খ্রিস্টযাগে সহযোগিতা দেন ফাদার ইম্মানুয়েল কে. রোজারিও, পাল-পুরোহিত পবিত্র পরিবার ধর্মপল্লী এবং ফাদার বাবলু কোড়াইয়া, পরিচালক খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র। খ্রিস্টযাগের পর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মশালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন ফাদার উইলিযাম মুরমু।
“আমরা হলাম দায়িত্ব প্রাপ্ত সেবক- এই মূল বিষয়ের উপর আলোচনা উপস্থাপন করেন, পবিত্র পরিবার ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ইম্মানুয়ের কে. রোজারিও। তিনি বলেন, “ঐশতাত্ত্বিক ও মন্ডলির এতিহ্য অনুসারে সেবক হয়ে উঠা” প্রতিটি ভক্তের প্রথম কাজ। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবককে যেমন গৌরব করতে হবে ঈশ্বরের, তেমনি লালন-পালন করতে হবে তাঁর সৃষ্টিকে। তিনি আরো বলেন, “এই পৃথিবীর সম্পদ সবই দিয়েছেন ঈশ্বর, আর তা দিয়েছেন সকল যুগের, সকল দেশের, সকল জাতিগোষ্ঠী মানুষের জন্য। পোপ ফ্রান্সিস তাঁর “তোমার প্রশংসা হোক” সর্বজনীন পত্রের মধ্যদিয়ে বিশ্বের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন, “আমাদের অভিন্ন বসত-বাটী” এই ধরিত্রী মাতার যত্ন করার জন্য। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, এই সর্বজনীন পত্রটি বিশ্বসৃষ্টি ও ঈশ্বরের অন্যান্য দানের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে। আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা কেমন পৃথিবী রেখে যেতে চাই ? কঠোরভাবে মানব সমাজকে ঝাকুনি দেওয়া প্রশ্নটি মানুষের দায়িত্বের কথাই বলে আর এই দায়িত্ব প্রকাশ পায় মানুষের সেবায়। আবার এই দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক হচ্ছে একজন ‘ব্যবস্থাপক’, যাকে অন্যের গৃহ এবং বিষয়-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধিত্বমূলক কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যারা বিশ্বাস করে ঈশ্বর বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন, তারাই বিশ্বাসী এবং তারাই সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। ঈশ্বর চান, তাঁর দেওয়া বিভিন্ন দান- মানুষ তার প্রতিভা, প্রজ্ঞা, সামর্থ্য-শক্তি দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাক, বিশ্বকে বসবাসের আরো যোগ্য করে তুলুক, আর এইভাবে হয়ে উঠুক ঈশ্বরের কাজের সহযোগী, ঈশ্বরের সহকর্মী। আর এইভাবে, এই অর্থেই সমগ্র সৃষ্টির উপর আইনসম্মত অধিকার ঈশ্বর মানুষের উপর ন্যাস্ত করেছেন। আর এইভাবেই মানুষ লাভ করে- ঈশ্বরে সেবা, সৃষ্টির সেবা এবং মানুষের সেবা করার দায়িত্ব।
দায়িত্বশীলতার মধ্যদিয়ে মানুষ প্রভুর প্রকৃত সেবক হয়ে উঠতে পারে। মানুষ দাযিত্বপ্রাপ্ত, তাই তার কাছে ঈশ্বরের প্রত্যাশা, পৃথিবীতে তিনি মানুষের হাতে যা কিছু ন্যস্ত করেছেন- মানুষ যেনো তা নিয়ে “উৎপাদনশীল, দায়িত্বশীল, দায়বদ্ধ ও বিশ্বস্থ হয়ে উঠে।” কলসীয়দের কাছে সাধু পল লিখেছেন, “তোমাদের যা-কিছু করার থাকুক না কেনো, মনপ্রাণ দিয়েই তা করো, কেনো না তোমরা যা করছো তা মানুষের জন্যে তো নয়- প্রভুরই জন্যে। জেনে রাখো, ঈশ্বর সন্তানদের জন্যে সঞ্চিত রাখা সেই যে সম্পদ, তোমরা একদিন পুরষ্কার হিসেবে প্রভুর কাছ থেকে পাবেই” (৩:২৩-২৪)। একজন বিশ্বস্থ সেবক মনিবের সম্পদ নিয়ে যখন মনিবের ইচ্ছা পালন করে, তখন তার জন্য পুরষ্কার সঞ্চিত হয়ে থাকে। তখন এই দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবকের হাতে মনিব পুরষ্কার হিসেবে তুলে দেন আরো অনেক কিছুর দায়িত্বভার।
দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক যেমন সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল তেমনি শ্রদ্ধাশীল প্রতিবেশী ভাইবোনদের ভালোবাসায়। যিশু বলেছেন, প্রধান দু’টি আজ্ঞা হলো, ‘তোমরা প্রভু ঈশ্বরকে ভালোবাসো আর তোমার প্রতিবেশীকে ভালোবাসো। ঈশ্বর শুধু আমাদের হোম্ বা যজ্ঞবলীতে সন্তুষ্ট নন- সন্তুষ্ট মানুষকে ভালোবাসায়। মানুষ যদি মানুষকে ভালোবাসে, তবে সেই ভালোবাসা মানুষের মধ্যদিয়ে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে। কারণ, মানুষ হলো মানুষের প্রকৃত রক্ষক ও পরস্পরের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা।
চা বিরুতির পর শুরু হয় প্যানেল আলোচনা। এতে সমাজ ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও জনগণের দাযিত্ব ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন মি: মাইকেল মারান্ডী, অভিভাবক হিসেবে পরিবারিক দায়িত্ব করনীয় বিষয়ের উপর আলোচনা করেন মিসেস মঞ্জু বিশ্বাস ও ধর্মপল্লীতে যুব সমাজের করনীয় ক) পরিবার, খ) সমাজ, গ) ধর্মপল্লী বিষয়ে আলোচনা করেন থমাস বাস্কে। প্যানেল আলোচনার পরপরই শুরু করা হয় মুক্ত আলোচনা। অত:পর দলীয় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মপল্লীর কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সহায়তা এবং কর্মশালার সমাপনী ঘোষণা দেন পাল-পুরোহিত ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও।
-ফাদার বাবলু কোড়াইয়া
পবিত্র পরিবার ক্যাথলিক ধর্মপল্লীতে পালকীয় কর্মশালা- ২০২০
Please follow and like us: