আর মাত্র কয়েকটি দিন, তারপরই উদ্যাপন করব প্রভু যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন বা বড়দিন। বড়দিন হলো আনন্দের দিন, মিলনের দিন ও উৎসবের দিন। বড়দিন হচ্ছ ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনের দিন। মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের জীবন এবং ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের তথা মানুষে সঙ্গে মানুষে জীবন সহভাগিতার দিন। খ্রিস্টের জন্মদিন যেন আমাদের সেই আহ্বানই জানায়। তাই করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশপ জের্ভাস রোজারিও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ভক্তজনদের আধ্যাত্মিক যত্ন নেবার পাশাপাশি তাদের বৈষয়িক দিকগুলোতেও যত্ন নেবার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কোভিট- ১৯ এর শুরু থেকে বিগত কয়েক মাস যাবৎ বিভন্ন সময়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ ও কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল যৌথভাবে সচেতনাতামূলক কর্মসূচি নেওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারগুলোতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে। কোভিট- ১৯, এখনোও চলমান থাকায় এবারের বড়দিন উপলক্ষ্যে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ মহোদয় দরিদ্রদের মধ্যে ১০০ লঙ্গী ও ১০০ শাড়িসহ ১০,২৬,০০০ টাকা বিতরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। প্রতিটি ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিতদের চাহিদা ভিত্তিতে এ ত্রাণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন এবং পাল-পুরোহিতদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিশপ মহোদয় নিজেই গত ১৯ ডিসেম্বর বিশপ ভবন থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেন। তার কাছে এ কাজের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বরেন্দ্রদূত অনলাইনকে জানান যে, “ঈশ^বের বাণীই হচ্ছে আমাদের খ্রিস্টিয় জীবনের মূল শিক্ষা ও কেন্দ্রবিন্দু। যেমন প্রবক্তা ইশাইয়া বলেছেন, “অন্যায়ের শেকল ছিঁড়ে ফেলা আর জোয়ালের বাঁধন খুলে দেওয়া, নিপীড়িতকে মুক্ত করে তাকে ছেড়ে দেওয়া আর সমস্ত জোয়াল ভেঙ্গে ফেলা একি কি সেই উপোস নয়?.. ক্ষুধার্ত মানুষের সঙ্গে তোমার খাবার ভাগ করে নেওয়া আর নিরাশ্রয় দরিদ্রকে নিজের ঘরে ঠাঁই দেওয়া; কাউকে বিবস্ত্র দেখলে তাকে পোশাক পরিয়ে দেওয়া, মানুষ হিসেবে যে তোমার আপনজন তাকে পোশাক পরিয়ে দেওয়া, মানুষ হিসেবে যে তোমার আপনজন, তার প্রতি তোমার কর্তব্য কখনো এড়িয়ে না চলা, এই কি সেই উপোস নয়? তবেই তোমার জীবনে ভোরের মতোই ফুটে উঠবে আলো: আর তবেই তো তোমার সেই ক্ষত শীঘ্রই সেরে ঊঠবে। তোমার সামনে এগিয়ে চলবে তোমার ধর্মনিষ্ঠা আর তোমার পিছনে জাগ্রত থাকবে পরমেশ^রের মহিমা। তখন তুমি ডাকলেই পরমেশ^র সাড়া দিবেন: তুমি ডেকে ঊঠলেই তিনি বলবেন- এই যে আমি (৫৮:১-১১)।”
বিশপ বলেন, “বর্তমান সময়টা আমাকে এই উদ্যোগ গ্রহণের বিশেষ আবেদন জানায়। তাছাড়া আমাদের ধর্মপ্রদেশের প্রতিটি মানুষই যেন আনন্দে বড়দিন উৎসব উদ্যাপন করতে পারেন- তাই এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আমি আমাদের সমাজে যারা বৃত্তশালী, তারাও যেন ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে বড়দিনের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তাদের প্রতিও আমি এ আহ্বান ও প্রত্যাশা রাখি।”
বড়দিন শুধুমাত্র মিলন ও আনন্দের উৎসবই নয় বরং বড়দিন আমাদের শিক্ষা দেয় ঐশ ভালবাসাকে মানুষের কাছে মূর্ত করে তুলতে। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে মানুষকে ভালবাসার মধ্য দিয়ে নিজ জীবনে বড়দিনের আনন্দকে সার্থক করে তুলি। সবার প্রতি রইল বড়দিনের প্রীতিপূর্ণ শুভেচ্ছা।
-ফাদার বাবলু কোড়াইয়া