ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
গত ৬ জানুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, দিনাজপুর সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে শান্তিরাণী সিস্টার সম্প্রদায়ের ১২জন ভগ্নী তাদের প্রথম ব্রত, আজীবন ব্রত এবং ব্রতীয় জীবনের রজত জয়ন্তী ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করেছেন। ১২জনের মধ্যে চারজন প্রথম সন্ন্যাস ব্রত, তিনজন আজীবন ব্রত, তিনজন রজত জয়ন্তী এবং দুইজন সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করেছেন। প্রথম সন্ন্যাস ব্রত ঃ সি. মর্জিনা মার্টিনা হাঁসদা, সি. প্রভাতী প্রিসিল্লা টপ্য, সি. অমিতা হেমব্রম ও সি. শিশিলিয়া দেওয়া। আজীবন ব্রত ঃ সি. দীপা বার্থলোমেয়া মন্ডল, সি. এমিলিয়া খালকো ও সি. ললিতা লুসি তির্কী। রজত জয়ন্তী ঃ সি. যোসপিনা সরেন, সি. সন্ধি তেরেজা ক্রুশ ও সি. বীনা আনাস্তাসিয়া রোজারিও। সুবর্ণ জয়ন্তী ঃ সি. এনরিকা রোজারিও ও সি. লেটিশিয়া লুসি কস্তা। এই ১২জনের মধ্যে একজন দিনাজপুর, একজন খুলনা, দুইজন ঢাকা, একজন ময়মনসিংহ এবং সাতজন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে এই সম্প্রদায়ে নিবেদিতা।
সকাল ৮টায় প্রধান পৌরহিত্যকারি দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও, ৪০জন যাজক, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সিস্টার, ব্রাদার ও খ্রিস্টভক্তদের সঙ্গে নিয়ে সান্তালি গান ও নৃত্যের তালে শোভাযাত্রা ক’রে গির্জায় প্রবেশ করেন। বিশপ সেবাস্টিয়ান ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের বিধান অনুসারে উদ্যাপনকারিদের নিয়ে রীতি-নীতি সম্পন্ন করেন। একই সঙ্গে উদযাপনকারিগণ সংঘের সুপেরিয়র জেনারেল, সি. রেবেকা কিসপট্রার সামনে এসে তাদের ব্রতীয় বাণী উচ্চারণ করেন।
খ্রিস্টযাগের উপদেশ বাণীতে বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, “ব্রতীয় জীবনের সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় অন্তরের সৌন্দর্য থেকে।” তিনি বলেন, সন্ন্যাস জীবন-পথ সব সময়ের জন্য সরল নয়। হাসি-বেদনার মধ্যদিয়ে তাকে এগিয়ে যেতে হয়। মাঝে-মধ্যে মনে হতে পারে ‘বৃথাই জীবন’। কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যে যারা নিবেদিতা, জীবনের হাসি-কান্নার পরে তাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে ‘আনন্দ’। বিশপ বলেন, “জীবন সুখের হয় তখনই, যখন কেউ দুঃখকে জয় করতে পারেন।”
“দূতগণের রাণী মারীয়ার নির্মল হৃদয়ের কাটেখিস্ট সন্ন্যাস সংঘ” (Immaculate Heart of Mary Queen of Angels- CIC) যারা শান্তিরাণী সিস্টার হিসেবে পরিচিতা- সংঘের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ৩ অক্টোবর। দিনাজপুর বিশপ ভবন সংলগ্ন “সিস্টারস্ অব চ্যারিটি” সম্প্রদায়ের ভবনটি ছিলো শান্তিরাণী সিস্টারদের গঠনগৃহ। তৎকালীন বিশপ যোসেফ অবের্ট, পিমে; নবগঠিত এই সংঘের পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন, চ্যারিটি সিস্টার সম্প্রদায়ের মাদার এনরিকেত্তা মত্তা’র হাতে। মাদার মত্তা ১৯৫১ থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মাতৃস্নেহে এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে সি. ফ্রান্সিস্কা মারান্ডী শান্তিরাণী সন্ন্যাস সম্প্রদায়ের প্রথম দেশীয় সংঘকর্ত্রী নিবর্িিচত হন। আরোও যারা এই সম্প্রদায়ের সুপেরিয়র জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা হলেন, সি. গাইতানিনা কোড়াইয়া এবং সি. যাচিন্তা দেশাই। বর্তমানে এই শান্তিরাণী সম্প্রদায়ের সংঘকর্ত্রী হলেন সি. রেবেকা কিসপট্রা। অন্যদিকে শান্তিরাণী সংঘের আধ্যাক্তিক পরিচালকের দায়িত্ব যারা পালন করেছেন তারা হলেন, বিশপ যোসেফ অবের্ট, পিমে; স্বর্গীয় আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও, বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ, সিএসসি; স্বর্গীয় আর্চবিশপ মজেস কস্তা, সিএসসি এবং বর্তমানে আধ্যাক্তিক দায়িত্ব পালন করছেন দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু।
“দূতগণের রাণী মারীয়ার নির্মল হৃদয়ের কাটেখিস্ট সন্ন্যাস সংঘ” বা শান্তিরাণী সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ বর্তমানে ইটালিসহ দেশের অভ্যন্তরে- দিনাজপুর, রাজশাহী, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ, খুলনা এবং ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশে কর্মরতা রয়েছেন। তাদের সেবাকাজের মধ্যে- ধর্মপল্লীর পালকীয় কাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, এতিমখানা ও হোস্টেল পরিচালনা এবং স্বাস্থ্যসেবা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এই সম্প্রদায়ে রয়েছেন মোট ১৭১জন সদস্যা এবং স্বর্গনিবাসিনী হয়েছেন আরোও ২৪জন। এছাড়া গঠনগৃহে রয়েছেন আরোও আটজন প্রার্থী। শান্তিরাণী সিস্টারদের প্রতি রইলো আমাদের শুভেচ্ছা।

Please follow and like us: