ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।

তপস্যা হলো- বিশ্বাস, আশা এবং ভালোবাসায় নবীকরণের সময় ঃ তপস্যাকাল হলো অনুতপ্ত হৃদয়ে নতুন জীবনে প্রবেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা। তপস্যাকাল হলো আশার অভিজ্ঞতা, যা আমরা লাভ করি খ্রিস্টের কাছ থেকে- যিনি ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছেন। তপস্যাকাল হলো বিশ্বাসের যাত্রাকাল, যে যাত্রাকালে ঈশ্বরকে আমাদের জীবনে আহ্বান জানাই- যেনো তিনি আমাদের জীবনে আবাসন লাভ করতে পারেন। পোপ বলেন, তপস্যার মধ্যদিয়ে খ্রিস্টের পুনরুত্থানের পথে যাত্রায় আমাদের স্মরণ করতে হবে, যিনি ছিলেন নম্র এবং যিনি বাধ্যতার উদাহরণ দেখিয়ে ক্রুশীয় মৃত্যুবরণ করেছেন। পোপ শুধু এই বিষয়টি আমাদের স্মরণ ক’রে দেওয়ার জন্য বলছেন শুধু তা নয়, কিন্তু পোপ আজকে আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন একটা উপযুক্ত সময় হিসেবে যেনো আমরা আমাদের বিশ্বাস, আশা এবং সেবা নবায়ন করতে পারি। এই মর্মে পোপ আমাদের বেড়ে উঠার আহ্বান জানিয়ে বলছেন, “আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে, খ্রিস্টের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন কালের সাক্ষ্য হয়েছি, যেখানে ঈশ্বর সবকিছুকে নতুন করে তুলছেন।

পোপ ফ্রান্সিস গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর সান্ধ্যকালীন প্রার্থনার সময় বলেন, “এই তপস্যাকালীন যাত্রাপথে আমাদেরও পবিত্র আত্মা বহন করে নিয়ে যান- যেমন খ্রিস্টকে মরুভূমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।” তিনি বলেন, “আসলে এই যাত্রা কোনো ভূমির দিকে যাত্রা নয় কিন্তু আমাদের বর্তমান অবস্থানে থেকেই নীরবে ঈশ্বরের কন্ঠ-বাণী শুনতে পারা।”

তপস্যাকাল হলো ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের উদ্দেশ্যে যাত্রা ঃ পোপ বলেন, “তপস্যা” হলো আমাদের সমস্ত জীবনব্যাপী, আমাদের সমস্ত সত্ত্বাব্যাপী। এই সময়টা হলো- আমরা যে পথে চলছি, আমাদের চলার সে পথ পুর্নবিবেচনা করা, যেনো আমরা সঠিক সড়কপথ খুঁজে পেতে পারি- যে সড়কপথ আমাদের আপন গৃহে নিয়ে যাবে, যেনো আমরা পুনঃআবিস্কার করতে পারি ঈশ্বরের সঙ্গে সুহৃদ সম্পর্ক- যার উপর সবকিছু নির্ভর করে। তপস্যা শুধু আমরা যা করে থাকি, সেই সামান্য কিছু ত্যাগস্বীকার নয়। কিন্তু তপস্যা হলো আমাদের হৃদয়ের উপলব্ধি ও উপযুক্ত নির্দেশনা এবং এটাই হলো তপস্যার মর্মবিষয়।

তপস্যাকাল হলো মঙ্গলবার্তায় পুনঃপুনঃ বিচরণ ঃ তপস্যা হলো একটি উপযুক্ত সময়, যে সময়ে আমরা ঈশ্বরের বাণীর গৃহ নির্মাণ করতে পারি। এই সময়টায় টেলিভিশন বন্ধ রেখে বাইবেল খুলতে পারি। এই সময়ে আমরা মোবাইল ফোন বিচ্ছিন্ন করে বাইবেলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। তিনি বলেন, “আমি যখন শিশু ছিলাম তখন টেলিভিশন ছিলো না এবং রেডিও শোনারও অভ্যাস ছিলো না। সুতরাং তপস্যা হলো মরুভূমির মতো। সমস্ত কোলাহল থেকে অবসর। সুতরাং এটা এমনই সময় যখন আমরা অনেক কিছুর সঙ্গে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি ক’রে- মঙ্গলবাণীর সঙ্গে ঘনিষ্টতা তৈরি করতে পারি।” এটা এমনই এক সময়, যখন আমরা অর্থহীন বাক্য, কথার চর্চা, অপবাদ বর্জন করতে পারি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে পারি। এটা হলো সেই সময়, যখন আমরা পরিচ্ছন্ন হয়ে হৃদয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি।

প্রয়োজনের দিকে মনঃসংযোগ ঃ আমাদের বাস করতে হবে খ্রিস্টের আহ্বানের আলোকে। পোপ বলেন, “আমাদের, নিজেদের বিতাড়িত করতে হবে- ভোগবাদ ও স্বার্থপরতা থেকে, সব সময় বেশি লাভের তাগিদ থেকে, সব সময় অতৃপ্তির মনোভাব থেকে- যেনো আমাদের হৃদয় গরিবের প্রয়োজনের কাছে আসতে পারে। কারণ খ্রিস্ট কাঠের ক্রুশে ঝুলে জ্বলন্ত ভালোবাসায় আমাদের তাঁর প্রতি অনুকম্পা হওয়ার জন্য ডেকেছিলেন, যা পৃথিবীতে পুড়ে ছাই হয়ে বিনষ্ট হওয়ার জন্য নয়- কিন্তু সেবার জীবনে জ্বলে উঠতে, কিন্তু নিভিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। পোপ বলেন, সেই মতে জীবন যাপন করা আসলেই কী কঠিন ? আসলেই কঠিন, কিন্তু এটাই তো জীবন পরিচালনা করে এবং তপস্যা এটাই আমাদের দেখায়।

তপস্যাকাল হলো বিরতি- কিন্তু দেখার এবং ঈশ্বরের আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া ঃ পোপ বলেন, তপস্যাকাল হলো বিরতি, একটা বিরতির সময়। কারণ যেনো দেখতে পারি এবং ধ্যান করতে পারি- সবাইকে ভালোবাসার মধ্যে খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ মুখমন্ডল। কোনো ব্যতিক্রম নয়, ফিরে আসতে হবে অভয়হীনভাবে, যেনো নিরাময় হওয়ার অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে ঈশ্বরের ভালোবাসার আশ্রয়ে পুর্নমিলিত হতে পারি।

Please follow and like us: