গত ১৬ মে, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের আয়োজনে খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে ‘৫৫তম বিশ্ব সামাজিক যোগাযোগ দিবস ২০২১’ উদযাপন করা হয়। এতে রাজশাহীর শহরে ও তার আশে-পাশের ৪টি ধর্মপল্লী থেকে মোট ৪৫ জন যুবক-যুবতী অংশগ্রহণ করেন। সকাল ৮:০০-৯:০০ টার মধ্যে সকল অংশগ্রহণকারী তাদের নাম নিবন্ধন করেন। সকাল ৯টায় খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। দিনের মূলভাব হিসেবে বেছে নেয়া হয়, ‘এসো দেখে যাও’, “যোগাযোগ হলো, মানুষ যেখানে যে অবস্থায় আছে-তার মুখোমুখি হওয়া।” এ মূলভাবের উপর সহভাগিতা উপস্থাপন করেন ফাদার সুনীল ডানিয়েল রোজারিও। তিনি তার আলোচনায় শুরুতেই বলেন, পোপ মহোদয় উক্ত ধারণাটি নিয়েছেন যোহন রচিত মঙ্গলসমাচারে বর্ণিত ১:৪৬ পদ থেকে। “… তখন ফিলিপ বললেন, আহা, এসো না, একবার দেখেই যাও না।” তার বাণীর সার কথা হলো, যোগাযোগ করো- যে যেখানে- সেখানে সেভাবেই মুখোমুখি হও।” পোপ ফ্রান্সিস তাঁর বাণীর উপশিরোনামে উল্লেখ করেছেন, “পরের দিন যিশু গালিলেয়ায় যাবেন ব’লে ঠিক করেছেন। এখানেই ফিলিপের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। তিনি তাঁকে বললেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে চল।’ এই ফিলিপ ছিলেন আন্দ্রিয় ও পিতরের মতোই বেথসাইদা শহরের লোক। তিনি তখন গিয়ে নাথানায়েলের সঙ্গে দেখা করলেন। তাঁকে বললেন, ‘যার কথা মোশী বিধানগ্রন্থে লিখে গেছেন- আবার প্রবক্তারাও যাঁর কথা লিখে গেছেন- সেই তাঁরই দেখা পেয়েছি আমরা। তিনি যোসেফের ছেলে যিশু, তিনি নাজারেথের লোক।’ নাথানায়েল উত্তরে বললেন, ‘নাজারেথের! সেখান থেকে ভাল-কিছু কখনো কি আসতে পারে ?’ তখন ফিলিপ বললেন, ‘আহা, এসো না, একবার দেখেই যাও না (যোহন ১:৪৩-৪৬)?” তিনি পোপ মহোদয়ের উদ্ধৃত্তি আরো বলেন, “অভিজ্ঞতা ছাড়া সত্যকে জানা সম্ভব নয়। মানুষের সঙ্গে আনন্দ ও বেদনা সহভাগিতা করতে না পারলে মানুষকে জানাও সম্ভব নয়। আমরা যেখানে- সেখানেই ঈশ্বর আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং এটাই হতে পারে চার্চের যোগাযোগ ব্যবস্থাপত্র। যিশু যেমন তাঁর শিষ্যকে অনুসরণ করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি- আজকের গণমাধ্যমের জন্য একটা আমন্ত্রণ হলো, মানুষ যেখানে যে অবস্থায় আছে সেখানে সে অবস্থায় তাদের মুখোমুখি হওয়া।”
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও, বিশ্ব সামাজিক যোগাযোগ দিবসে তার দেওয়া ভিডিও বার্তায় বলেন, প্রতি বছরই প্রভু যিশুর স্বর্গারোহন পর্ব দিনে খ্রিস্টমণ্ডলিতে বিশ^ সামাজিক যোগাযোগ দিবস পালন করা হয়। সংবাদ বা গণমাধ্যম কর্মীগণ, আমাদের মানব জীবন গড়ে তোলার জন্য কী ভূমিকা রাখছেন; আমরা যদি পোপ মহোদয়ের বাণীর আলোকে একটু অনুধ্যান করি তাহলে তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারব। তিনি তাঁর বাণীতে বলেছেন যে, আমাদের গণমাধ্যম কর্মীগণ যেন সত্যের অনুসন্ধ্যান করেন এবং সে সত্য যেন হয় মানব জীবনের একটি গল্প । যে গল্প মানুষের জীবনকে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। তাই তো দেখি, গণমাধ্যম কর্মীগণ বা সংবাদ কর্মীগণ জীবনের ঝুকি নিয়ে বিভিন্ন বাস্তবতা বা অবস্থার মধ্যেও সংবাদ সংগ্রহ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যম ব্যক্তিরা সত্য গল্প উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে মঙ্গলসমাচারই প্রচার করে থাকেন। যিশু নিজেই হচ্ছেন মঙ্গলসমাচরের সত্য। তবে অনেক সংবাদকর্মী আছে, যারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা গল্প রচনা করেন, যা মানব জীবনের ক্ষতি সাধন করে থাকেন। তাই আমরা যেন মিথ্যাকে বাদ দিয়ে সত্য প্রচারের সংবাদ কর্মী হয়ে উঠতে পারি। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই বিভিন্ন ধরণের গল্প আছে: আমরা যেন তা শুধুমাত্র আমাদের নিজেদেরই জন্য রেখে না দেই। বরং আমরা এমনভাবে জীবন যাপন করব যেন আমরা, আমাদের জীবনের গল্প অন্যদের কাছে তুলে ধরতে পারি। অন্যেরাও যেন আমাদের গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়। এভাবে, আমরা প্রত্যেকই যেন হয়ে উঠি এক এক জন সংবাদ কর্মী। পরে তিনি রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে কর্মরত সকল গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বিশ্ব সামাজিক যোগাযোগ দিবসের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
মুশরইল ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার উইলিয়াম মুরমু ‘বিশ্ব সামাজিক যোগাযোগ দিবস’ উপলক্ষে তার অনুভূতি তুলে ধরেন এভাবে, আমাদের ধর্মপ্রদেশে সামাজিক যোগাযোগ কমিশন আজ দৃশ্যমান তার অনেক কিছু নিয়ে। যেমন আমাদের আছে জ্যোতি স্টুডিও, অনলাইন রেডিও জ্যোতি, বরেন্দ্রদূত পত্রিকা ও বরেন্দ্রদূত অনলাইন, নিউজ লেটার ও সান্তালী আরং। হাটি হাটি পা পা করে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি।
বিশ^ সামাজিক দিবস ২০২১ খ্রিস্টাব্দ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে, কলিমনগর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার ইম্মানুয়েল কে. রোজারিও বলেন, আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মানব কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের প্রত্যেককেই ঈশ্বর বিভিন্ন দানে ধন্য করেছেন। আমরা যেন আমাদের সময় (স্বেচ্ছাশ্রম), সামর্থ (বুদ্ধি-পরামর্শ) ও সম্পদ (টাকা পয়সা ) ব্যবহার করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করি।
পরে সামাজিক যোগোযোগ কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া অংশগ্রহণকারীদের সাথে ধর্মপ্রদেশের সামাজিক কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে মুক্ত আলোচনা করেন এবং যারা ভবিষ্যতে ধর্মপ্রদেশীয় সামাজিক কমিশনের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক সে সমস্ত অংশগ্রহণকারীগণ স্বেচ্ছায় তাদের নাম, মোবাইল ও ইমেল নম্বর দিয়ে তাদের কমিটমেন্টে স্বাক্ষর করেন।
-ফাদার বাবলু কোড়াইয়া

Please follow and like us: