করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে শত বাধা-বিপত্তিকে পেরিয়ে পূর্ব-নির্ধারিত তারিখের এক সাপ্তাহ পরে ২৭-২৮ মে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল অভিবাসনের প্রবেশদ্বার সাধ্বী রীতা’র ধর্মপল্লী, মথুরাপুরের প্রতিপালিকা সাধ্বী রীতা’র পর্ব ও উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল খ্রিস্টান অভিবাসন শতবর্ষ (১৯২০-২০২০) পূর্তি উৎসব মহাসমারোহে উদ্যাপিত হয়ে গেল।
১৯২০ থেকে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। শীতলক্ষ্যা থেকে বড়াল নদ। একটি জনপদের ইতিহাস। পূর্বপুরুষদের ভিটামাটি ছেড়ে যাবার অব্যক্ত কান্না; নিভৃতে চক্ষুজলের ভূপাতিত হওয়া। অতঃপর যমুনা পাড়ি দিয়ে চলন নামক সমুদ্র সমতুল্য অববাহিকায় বসতি স্থাপন। ইতোমধ্যে ১০০ বছরে শীতলক্ষ্যা ও বড়ালের বুকে বয়ে গিয়েছে অগণিত ঢেউ। দু’পাড়ে গড়ে উঠেছে জনপদ। আবার সময়ের চাকায় ধসে গিয়েছে ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি। কিন্তু শীতলক্ষ্যার বুক বেয়ে বড়াল-চলনের অববাহিকায় ভাওয়ালবাসীর বসতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০০ বছর ধরে এই জনপদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে অবারিত। এই ১০০ বছর সংখ্যার হিসাবে একটি শতকের পূর্ণতা। ইতিহাসের অস্তিত্বে এটা একটি বিরাট কিছুর জানান দেওয়া। সময়ের হিসাবে এটা যে খুবই দীর্ঘ তা নয়। তবে এই ১০০ বছরের সাথে মিশে আছে ভাওয়ালবাসীদের আগমনের ইতিহাস, আবেগ, অনুভূতি ও সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা। উত্তরবঙ্গে ভাওয়ালবাসীদের আগমনের শুরুর দিক আর বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। ভাওয়ালবাসীরা ধীরে ধীরে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে আজ বিরাট মহিরূহতে পরিণত হয়েছে। পল গমেজের (পলু শিকারী) পথ অনুসরণ করে যে যাত্রার সূচনা হয়েছিলো তারই ফল আজ চাক্ষুস। মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে রোপিত গাছ আজ তার শিকড় ছাড়িয়ে বিশ^ব্যাপী বিস্তারিত।
ভিনসেন্ট গমেজ এবং রোজবেন রোজারিও স্বামী-স্ত্রী। বয়সের ভারে নূজ্যপ্রায় দু’জন! কিন্তু শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে যোগদান করতে পারায় বেশ আনন্দিত। ভিনসেন্ট গমেজের জন্ম রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর জয়রামবের গ্রামের চদরী বাড়িতে। পিতা জিমি গমেজ ও মাতা চামেলী কোড়াইয়া। ভিনসেন্ট গমেজের পিতামাতা ভিনসেন্ট যখন ৩/৪ বছর বয়সের তখন মাত্র ১৪ টাকা সম্বল করে যমুনা পাড়ি দিয়ে পাবনার মথুরাপুরে চলে আসেন। রোজবেন রোজারিও তৎকালীন তুমিলিয়া ধর্মপল্লীর দড়িপাড়া গ্রামের চহের বাড়ির আন্দ্রেজ রোজারিও ও ভির্জিনিয়া ক্রুজের সন্তান। রোজবেন রোজারিও’র মনে পড়ে যে, দড়িপাড়া স্কুলে তিনি পড়াশুনা করেছিলেন। পাঁচ কি ছয় বছরে তিনি দড়িপাড়া থেকে পিতামাতার সাথে উত্তরবঙ্গের মথুরাপুর মিশনে এসে বসতি গড়েন। এখনো ভিনসেন্ট গমেজ ও রোজবেন রোজারিও’র স্মরণে আসে সে অভিবাসনের স্মৃতিগুলো। শতবর্ষের পূর্তি উৎসব দেখতে পাওয়ায় নিজেদেরকে গৌরবান্বিত মনে করেন এই দু’জন বয়োবৃদ্ধ দম্পত্তি।

শতবর্ষ পূর্তি উৎসবকে কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছিলো। শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের কয়েক মাস পূর্বে মথুরাপুর ধর্মপল্লী প্রাঙ্গণ, কাতুলী গ্রাম ও লাউতিয়া কবরস্থানে ‘শতবর্ষ অনুগ্রহ’ ক্রুশ স্থাপন করা হয়। ১ মে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ২২ জন খ্রিস্টবিশ^াসীর দ্বারা আচ্ছাদিত উত্তরবঙ্গে খ্রিস্টানদের প্রথম জনবসতি লাউতিয়া কবরস্থানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিস্টভক্তের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির জন্য খ্রিস্টযাগ ও ‘শতবর্ষের অনুগ্রহ’ ক্রুশ গ্রামে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে শতবর্ষ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। প্রায় দু’সাপ্তাহব্যাপী জুবিলী ক্রুশ প্রতিটি গ্রাম ও পরিবার প্রদক্ষিণ করে ধর্মপল্লীতে ফিরে আসে। নয়দিনের নভেনা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে খ্রিস্টভক্তবিশ^াসী নিজেদের আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করার সুযোগ পান। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্র দিন।
২৭ তারিখ দুপুর ১২:৩০ মিনিটে লাউতিয়া গ্রামে খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে শতবর্ষের পূর্তি উৎসব শুরু হয়। বিকাল ৫:০০ ঘটিকায় ধর্মপল্লীতে পবিত্র সাক্রামেন্তের আরাধনা, মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, ভাওয়াল কৃষ্টি কষ্টের গান এবং শতবর্ষের ইতিহাস নির্ভর ডকোমেন্টারী প্রদর্শন করা হয়। ২৮ তারিখ সকাল থেকেই মথুরাপুর ও দক্ষিণ ভিকারিয়ার অন্যান্য ধর্মপল্লী থেকে খ্রিস্টভক্তগণ বাঙ্গালীর চিরাচরিত পোশাক পরিধান করে আসতে শুরু করেন। সবার মধ্যে আনন্দের বন্যা! শতবর্ষের পূর্তি উৎসবের সাক্ষী হতে চান সবাই। সকাল ৯:০০ ঘটিকায় গির্জার ঘন্টা বেজে উঠে। শুরু হয় ‘প্রভাসিত বিমোহিত আনন্দিত প্রাণ’ উপাসনা সংগীত। নৃত্যদলের নৃত্যের তালে শুরু হয় খ্রিস্টযাগের শোভাযাত্রা। ৩২ জন পুরোহিতের সহার্পিত খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। সাধ্বী রীতা’র প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও শতবর্ষের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তিনি তার উপদেশ বাণীতে বলেন, “উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল অভিবাসনের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ঘটনা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় একশত বছর পূর্বে। আমরা স্মরণ করি একশত বছর পূর্বে আসা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের। যাদের কারণে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের দক্ষিণ ভিকারিয়ায় বাঙ্গালী খ্রিস্টানদের আগমন ঘটে। এই মহতী অনুষ্ঠানে ঈশ^রকে শত অনুগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানাই”। এছাড়াও তিনি বলেন, “এই শতবর্ষ পূর্তিতে আনন্দের পাশাপাশি মূল্যায়ন করাও প্রয়োজন যে, সর্বক্ষেত্রে আমরা কতদূর এগিয়ে যেতে পেরেছি”। বিশপ জের্ভাস রোজারিও সবাইকে মাণ্ডলীক কাজে কথার বুলি পরিত্যাগ করে নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

খ্রিস্টযাগের পর বিশপ ও পুরোহিতগণ শতবর্ষে সাধ্বী রীতা’র স্মারক গ্রটো উন্মোচন করেন। সকাল ১১:০০ ঘটিকায় শুরু হয় ফিরে দেখা: আলোচনা-বক্তৃতা অনুষ্ঠান। শান্তির প্রতীক কবুতর উড়ানো, শতবর্ষের কেক কাঁটা, শতবর্ষের থিম সংগীত পরিবেশন, বৃক্ষরোপন ও অন্যান্য মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই পর্বে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে ভাওয়াল কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল খ্রিস্টানদের বর্তমান বাস্তবতা-অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও, পাল-পুরোহিত ফাদার দিলীপ এস. কস্তা, ভিকার জেনারেল ফাদার পল গমেজ, ফাদার কার্লো বুজ্জি, পিমে, বাংলাদেশ কারিতাসের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও, সাধ্বী রীতা’র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার মেরী মনিক, এসএমআরএ, পালকীয় পরিষদের সহ-সভাপতি ইগ্নাসিউস গমেজ, রাজশাহী কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক সুক্লেশ জর্জ কস্তা ও পলু শিকারীর পরিবারের পক্ষে পলু শিকারীর নাতি যোয়াকিম গমেজ।
ঈশ^রের শত অনুগ্রহে সিক্ত হয়ে শতবর্ষের এই ঐতিহাসিক উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে “শতবর্ষের অনুগ্রহ” স্মরণিকা প্রকাশের প্রয়াস অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করছে। গাজীপুরের ভাওয়াল ও পাবনা-নাটোরের ভাওয়াল জনপদের একই ধারায় প্রবাহিত ইতিহাস, খ্রিস্টবিশ^াস, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, লোকাচার, ভাওয়াল জীবনের একাল-সেকাল, পারিবারিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক চিত্রপট, শিক্ষা-ব্রতীয় আহ্বানের চিত্র, বিদেশে ভাওয়ালবাসীদের অবস্থা ও শতবর্ষের পূর্তিতে সামগ্রিক মূল্যায়ন-প্রস্তাবনা এই “শতবর্ষের অনুগ্রহ” স্মরণিকার পৃষ্ঠার পরতে পরতে উঠে এসেছে। “শতবর্ষের অনুগ্রহ” স্মরণিকা একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে রয়ে যাবে।
দুপুরের আহারের পর শুরু হয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ছিলো আকর্ষণীয়। এছাড়াও ঠাকুরের গীত, গ্রামভিত্তিক উপস্থাপনা, বৈঠকী গান, বিসিএসএম ও ওয়াইসিএসসের উদ্যোগে ভাওয়াল কৃষ্টি-সংস্কৃতিগত ফ্যাশন-শো ও উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল খ্রিস্টান অভিবাসনের চিত্র নাটিকার আকারে উপস্থাপন ছিলো যেন একশত বছর পূর্বে ফিরিয়ে নেবার প্রচেষ্টা। সন্ধ্যায় লাকী কূপন ড্রয়ের মধ্য দিয়ে শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সমাপ্ত হয়।
দক্ষিণ ভিকারিয়ার ইতিহাস: এক সময় পাবনা জেলা ছিলো উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। আর মথুরাপুর ধর্মপল্লী হচ্ছে উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল খ্রিস্টানদের প্রবেশদ্বার। পল গমেজ (পলু শিকারী) হচ্ছেন উত্তরবঙ্গে প্রথম ভাওয়ালবাসী। পলু শিকারী প্রথম চাটমোহর এলাকায় এসেছিলেন উথুলী ব্যাপ্টিস্ট পালকের বাবুর্চির নিমন্ত্রণে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। পরবর্তীতে তার দুই ভাই ডেংগরী ও ফেলু গমেজ মথুরাপুর ধর্মপল্লীর দক্ষিণে এবং লাউতিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তার আগমনের তারিখ বা নথিপত্রের কোন সঠিক দিন-তারিখ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। পলু শিকারীর নেশা ছিল শিকার করা। তিনি তার বসতি লাউতিয়া থেকে কাতুলীতে যান- কাতুলী থেকে বোর্ণী ধর্মপল্লীর মানগাছা এবং মানগাছা থেকে ফিরে কাতুলীতে পুনরায় বসতি স্থাপন করেন এবং আনুমানিক ৮০ বছর বয়সে তিনি ২৩ ডিসেম্বর ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সিরাজগঞ্জ, ঈশ^রদী, পাকশী রেলওয়েতে কিছু সংখ্যক এ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান লোক কাজ করতো। তাদের পালকীয় ও আধ্যাত্মিক যত্ন নেবার জন্য ঢাকা থেকে হলিক্রশ ফাদারগণ রেলযোগাযোগের মাধ্যমে আসতেন। হলিক্রশ ফাদারদের মধ্যে ফাদার মারিয়ার, সিএসসি এবং হামাসে কেয়ারসন, সিএসসি উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে ডেংগরী গমেজের সাথে নাগরী ধর্মপল্লী থেকে নাগর রোজারিওসহ কয়েকজন মথুরাপুরের লাউতিয়ায় বসতি গড়ে তোলেন। নাগর রোজারিও’র আত্মীয়-স্বজন দাকু বা দাগু, তারু রোজারিও চলনবিলের ধারে বোর্ণী ধর্মপল্লীর চামটা গ্রামে বসতি গড়ে তোলেন। ১৯২৪-১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে বোর্ণী ধর্মপল্লীর পারবোর্ণী গ্রামে খাকুরিয়া রোজারিও, আন্তনী রোজারিও (কানা), ফ্রান্সিস কস্তা (নকি), বিছান্তী কস্তা (বৈরাগী), মোংলা রোজারিও (স্যানাল), নিকোলাস কস্তা (বৈরাগী) বসতি গড়ে তোলেন। এছাড়াও বিশু ক্রুশ (মোয়ালী) দিঘইর, জন রোজারিও (ভক্ত) কাশিপুর এবং আদগ্রাম ও চামটা গ্রামে কিছু পরিবার স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে আরো অনেকেই ভাওয়াল থেকে এসে মথুরাপুর, বোর্ণী ও বনপাড়াতে বসতি গড়ে তোলেন।
ভাওয়াল থেকে উত্তরবঙ্গে খ্রিস্টভক্তদের আগমনের প্রথম কয়েক বছরের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে খ্রিস্টজনপদবহুল ৩টি ধর্মপল্লী মথুরাপুর (১৯২৫) বনপাড়া (১৯৪০) ও বোর্ণী (১৯৪৮)। পরবর্তীতে মাতৃস্বরূপা এই ধর্মপল্লীত্রয় থেকে আরো ৪টি ধর্মপল্লী গুল্টা, ভবানীপুর, ফৈলজানা, নাটোর ও গোপালপুরের জন্ম হয়েছে। যদিও গুল্টা ধর্মপল্লীতে ভাওয়ালবাসী খ্রিস্টান নেই তথাপি গুল্টা ধর্মপল্লী ও ধর্মপল্লীর অধিন্যস্ত কুমগ্রামের ভক্তবিশ^াসীগণের সাথে বোর্ণী ও অন্যান্য ধর্মপল্লীগুলো অতপ্রোতভাবে জড়িত। খ্রিস্টভক্তের সংখ্যা আজ হাজারে হাজার। ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও দলীয় কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। শুরুর দিককার সামগ্রিক অবস্থা আজ আর না থাকলেও নিজেদের ভাওয়ালবাসী পরিচয় কোনভাবেই বদলে ফেলা সম্ভব না। ১০০ বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে নিজেদের ভাওয়ালবাসী বলতে কোন দ্বিধা নেই। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের দক্ষিণ ভিকারিয়ার এ ধর্মপল্লীগুলো যেন শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের ভাওয়ালজনপদের আরেকটি খণ্ডিত দ্বীপ। যেখানে ভাওয়ালের একই বৈশিষ্ট্যগুলো স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।
অতীতের দিকে ফিরে তাকিয়ে নিজেকে ক্ষণিকের জন্য দেখে নেওয়ার সময় এই পূর্তি উৎসব। নিজের শিকড়ের সন্ধানে নেমে নিজেকে আবার নতুন করে খুঁজে পাবার মাহেন্দ্রক্ষণ। নিজের অস্তিত্ব ও সত্ত্বার সাথে মিশে গিয়ে আবার নবাবিষ্কারের ধারায় নিজেকে উৎসর্গ করার প্রীতিসম্ভাষণ এই উৎসব। বিশ্লেষণ-মূল্যায়ন ও খ্রিস্টের আলোকরশ্মিতে পথ চলে খ্রিস্টের মৌলিকত্ব নিজের মধ্যে ধারণ করে ভাওয়ালবাসী খ্রিস্টানুসারী মানুষ হয়ে উঠার আহ্বান জানায় উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল খ্রিস্টান অভিবাসন শতবর্ষ পূর্তি উৎসব। ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে নিজেকে একাত্ম করে দেখার সুযোগ এই শতবর্ষ। শতবর্ষ ধরে ঈশ^রের শত অনুগ্রহ উপলব্ধি করে ঈশ^রকে ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা জানানোর পরম উপহার ছিলো এই পুণ্য লগ্ন।
-ফাদার সাগর কোড়াইয়া

Please follow and like us: