ফাদার সুশীল লুইস পেরেরা
বিশপালয় সেতো ধর্মপ্রদেশের মাতৃপ্রতীম ঠিকানা, হৃদয়, স্বপ্নের আশ্রয়-ধর্মবাড়ী
যাকে ঘিরে ধীরে কর্মের জাল ফেলে ধর্মপ্রদেশের কাছে দূরের সকল কর্মপল্লী।
ইতিহাস চুপে চুপে কথা বলে:
নিপেন নামক লোকের একদিনের আখের ক্ষেত, ফাঁকা মাঠ, উচু নিচু কাশবন,
আজ হল ধর্মপুরী-বিশপবাড়ী, সবার ঠাঁই।
১৯৯১ এ ওমরপুরে সড়কপাশে ৪ বিঘা জমি ক্রয়, ১৯৯২, ৫ জানুয়ারি নব ইমারতের জমি আশীর্বাদ,
১ ডিসেম্বর নবালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন।
স্বর্গীয় ফা. জুলিয়ান চৌধুরী নির্মাণ কোম্পানীর সাথে পরম মমতায় তিলে তিলে গড়েন এ বিশপধাম।
ধর্মপ্রদেশ শুরুর ২ বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ পুণ্যপিতার প্রতিনিধি আর্চবিশপ আন্দ্রিয়ানো বার্নাডিনির উদ্বোধনে
রাজশাহী বিশপপুরীর ঐতিহাসিক পথচলা শুরু।
এদিন এ গৃহ পরম মমতায় মহা নম্রতায় সানন্দে বরণ করেছিল
সুদূর পাদ্রীশিবপুর থেকে নবাগত তার প্রথম গৃহস্বামী পূজ্যপাদ ধর্মপাল প্যাট্রিককে ।
ধর্মপাল হলেন ধর্মপ্রদেশের ছোট বড়, সবল-দুর্বল সবার পালক, দীননাথ, পিতা, বন্ধু, ভাই
সবে মোরা সব ফেলে বার বার ফিরে আসি আপন এ গেহে তাই।
ত্রিতল বিশপ ভবন হল মোদের প্রেরণার নিলয়, মিলনের আলয়, কর্মের বলয়
হেথায় এসে ক্লান্তি, হতাশা, ভয়, সন্দেহ, দুঃশ্চিন্তা সব হয় ক্ষয়।
একইভাবে ১৯৯৬ এর ২৬ এপ্রিল এ গৃহ মহানন্দে অভ্যর্থনা করেছিল
তার দ্বিতীয় গৃহপতি ঢাকার রাঙামাটিয়া থেকে সদ্যাগত মান্যবর বিশপ পৌলিনুসকে।
সময় গতিতে পথচলায় ২০০৭ এর ২২ মার্চ এ সদন অন্তর খুলে
জানিয়েছিল সাদর সম্ভাষণ-শুভেচ্ছা, করেছিল আপ্যায়ন
তার তৃতীয় গৃহকর্তা স্বধর্মপ্রদেশের বনপাড়ার সুসন্তান প্রণম্য জের্ভাসকে।
এ ভবন অন্তর রিক্ত করে ইতিমধ্যে দান-সম্প্রদান করেছে তার দুই গৃহকর্তা:
প্যাট্রিক ও পৌলিনুসকে অগ্রজ দুই ধর্মপ্রদেশে।
এর উদারতার যেন নেই শেষ, নেই কোন সময়, দিন, ক্ষণ, বার ।
এ কুঞ্জবাটী হতে ইতিমধ্যে মৃত্যু-পদ্মা অতিক্রম করেছেন, চিরতরে…
অদৃশ্য হয়েছেন কত জন নিবেদিত, উদারপ্রাণ বিশপ, যাজক, বন্ধু, ভাই: ২য় ধর্মপাল রাঙামাটিয়ার পৌলিনুস, সুদূরের মিষ্টভাষী সন্ন্যাসী পিনুস গুরুজী, ফৈলজানার প্রথম যাজক সুবাস কস্তা, বেনীদুয়ারের ২১ বছরের পালক লুইজি স্কুকাতো, সুপরিচিত ভিকার জেনারেল জুলিয়ান রোজারিও, দক্ষিণের স্বনামধন্য মিশনারী ফা. কান্তন, দক্ষ পালক, সুবিদিত হিসাব রক্ষক নির্মল কস্তা, বরেন্দ্র পালক মার্কুশ মারান্ডী, অভিজ্ঞ জন যদু রায়, জয়গুরু পৌল রোজারিও।
সবার প্রার্থনা-প্রেম-কৃতজ্ঞতার চিরকালীন প্রণাম তাই-শান্তিতে থেকো তোমরা চির শান্তিধামে!
এ আলয় যেন সদা ব্যস্ত সরণীতে তাকিয়ে তার হলুদ দুবাহু খুলে মৃদু হেসে
নিত্য ডাকে সবে অন্তরে প্রবেশিতে, শান্তিতে, বিশ্রাম-প্রার্থনায় নবীন-সজীব হতে;
এভাবে এসেছে হেথায় দেশী বিদেশী কত যাজক, ব্রতধারিণী, বিশপ, কার্ডিনাল, ভক্ত যত, সুজন বন্ধু শত শত!
এখানে ছিল কত সভা, কত কথা, আনন্দ কোলাহল, পদচারণা, কত কাজ, ধর্মকর্ম, পরিকল্পনা বার বার;
বিশপ ভবন আজ তাই নীরব সাক্ষী সেসব ঘটনা, কথা, কাজ, মিলনমেলার, পথচলার, হিসাব-নথি-ইতিহাস রক্ষার।
হালের চৌতল, হলঘর উদ্বোধন নব কলেবরে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ খ্রীষ্টবছর তার প্রমাণ।
যুগে যুগে আসবে হেথায় আরো কত শত ভক্ত-বন্ধু, যাজক, বিশ্বাসী নর নারী সারি সারি!
এ বিশপপুরী যুগে যুগে দাঁড়িয়ে রাজশাহীর নওদাপাড়ার আমচত্বরে হবে বিজ্ঞ রূপকার, দীপ্ত সাক্ষী নব মণ্ডলী গড়ার।