খ্রিস্টেতে প্রিয় ভাই-বোনেরা,
আপনাদের মনে আছে যে, গত বছর আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পালকীয় কর্মশালার মূলভাব ছিল, “আমরা হলাম দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক”। সেই মূলভাব অনুসরণ ক’রে আমরা আমাদের ধর্মপ্রদেশের প্রতিটি ধর্মপল্লী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি ও আমাদের নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। যদিও কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস মহমারি আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধাগ্রস্ত করেছে- তা সত্ত্বেও আমরা পিছু পা হই নি। আমরা পালকীয় কর্মশালাটি ভিন্ন আঙ্গিকে ও প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করেছি। আর তারপর আমাদের ধর্মপল্লী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় কর্মশালার আলোকে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছি। দেখতে দেখতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেই বছর শেষ হতে চলেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেক কিছুই আমরা করতে পারিনি। সেই কারণে আমরা গত বছরের মূলভাবের সঙ্গে মিল রেখে এই বছরের মূলভাব নিয়েছি “দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবকের আহ্বান ঃ ‘কৃতজ্ঞ হও’।” আমরা প্রার্থনা করি যেন ঈশ্বরের আর্শীবাদে আমরা এই বছর দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবকের প্রকৃত মনোভাব লাভ করতে পারি আর ঈশ্বর ও মণ্ডলির জন্য সেবাকাজ করতে পারি। আমাদের ধর্মপল্লীগুলিকে তথা আমাদের ধর্মপ্রদেশকে একটি স্বাবলম্বী স্থানীয় মণ্ডলি হিসেবে গড়তে আমরা গত ২০১০ খ্রিস্টাব্দে পালকীয় মূলভাব নিয়েছিলাম “আমার ধর্মপল্লী আমার দায়িত্ব।” এখন ১০ বছর পর মূল্যায়ন করে দেখি আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত খ্রিস্টবিশ্বাসী হিসেবে সেই অঙ্গীকার কতটুকু পালন করেছি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক হলো যিশুর একজন বিশ্বস্ত শিষ্য বা অনুসারী- যার উপর সবকিছু দেখা শোনা ও রক্ষা করার দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। যিশুই সেবকের উপর এই দায়িত্বভার দিয়েছেন। সে স্বীকার করে যে, আমাদের জীবন ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে এবং তিনিই হচ্ছেন আমাদের মানবীয় স্বাধীনতা প্রদানকারী। আমরা যা, আমাদের যা কিছু আছে ও হবে- তার সব কিছুর উৎস ঈশ্বর নিজেই। ঈশ্বরের অনুগ্রহদান আর যিশুর জীবন ও ভালবাসার কথা বলতে গিয়ে সাধু পল লিখেছেন, “আমি ঈশ্বরের অনুগ্রহদানকে ব্যর্থ হ’তে দিতে পারি না (গালা ২:২১)।” খ্রিস্টীয় জীবন হচ্ছে ঈশ্বরের ভালবাসা ও অনুগ্রহদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা নিয়ে জীবন যাপন করা। ঈশ্বরের দানের প্রতি আমাদের প্রত্যুত্তর হ’তে হবে সর্বদাই আরও বেশি উন্মুক্ত ও কৃতজ্ঞতাপূর্ণ। ঈশ্বরের দান কার্যকর হয় পবিত্র আত্মার প্রভাবে। আর এইভাবেই ঈশ্বর অব্যাহতভাবে দান করেন আমাদের জীবন, সকল সৃষ্টি-কৃষ্টি, বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড, সমাজ ও মণ্ডলির মধ্যে অবস্থিত সমস্ত কিছু।

কিভাবে আমরা এই দান গ্রহণ করবঃ
ঈশ্বরের অনুগ্রহদানের প্রত্যুত্তর আমরা কিভাবে দিতে পারি? আমাদের কথা ও কাজ ছাড়া আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহদানের কোন প্রতিদান দিতে পারি না। সাধু পল খ্রিস্টানদের লিখেছেন, “তোমরা কৃতজ্ঞ হয়ে থেকো (কলসীয় ৩:১৫)।” আমরা কৃতজ্ঞতাভরা অন্তরে ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রার্থনা জানাই। আমাদের প্রতি ঈশ্বরের আহ্বান হলো কৃতজ্ঞ হয়ে থাকা। কারণ ঈশ্বরের যে মহান অনুগ্রহ আমরা লাভ করেছি তার কোনই তুলনা হয় না। আমাদের যে ‘সময়’, ‘সামর্থ্য বা প্রতিভা’ ও ‘সম্পদ’ রয়েছে তাতো ঈশ্বরেরই দান। আমরা যদি সত্যই ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ হই, তাহলে ঐ সকল দান আমরা তাঁর জন্যই ব্যবহার করব। মধ্য যুগে ডমিনিকান সন্ন্যাসী মাইস্টার একহার্ট বলেছেন, “যদি আমাদের প্রার্থনায় আমরা শুধু বলি ‘ধন্যবাদ’, তা-ই যথেষ্ঠ।” তবে এই ধন্যবাদ উঠে আসতে হবে অন্তর-গভীর থেকে- যা সম্ভব ক’রে তোলে ঈশ্বরের বাণীর সফলতা। ঈশ্বরের বাণী আমাদের মন পরিবর্তন ঘটায়; আমরা হয়ে উঠি রূপান্তরিত মানুষ। আমরা তখন স্বীকার করি যে, ঈশ্বরের দানের কোন শুরু বা শেষ নেই- তা চলে অব্যাহতভাবে যুগের পর যুগ ধরে।

‘কৃতজ্ঞতা’ হলো প্রকৃত খ্রিস্টীয় জীবনের ভিত্তি। যখন আমরা স্বীকার করি যে, ঈশ্বরই হচ্ছেন আমাদের জীবনের উৎস- আমরা যা বা আমাদের যা আছে সব কিছুরই মালিক তিনি- তখন আমাদের হৃদয় স্বাভাবিকভাবেই কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে; আমরা তখন ঈশ্বরকে বলতে পারি ‘ধন্যবাদ’। এই কৃতজ্ঞতার মনোভাবটিই আমাদের জীবনকে বহুরূপে রাঙ্গিয়ে তোলে। আমরা তখন ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি, ও আমাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া, দানের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে উঠি। আমরা যে ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের জীবন লাভ করেছি আর সেই সঙ্গে লাভ করেছি তাঁর সকল আশীর্বাদ তা আমরা কৃতজ্ঞতাভরে গ্রহণ করি। সেই সঙ্গে আমরা ঈশ্বর ও মানুষের জন্য কিছু ভালকাজ করতে আগ্রহী হই। কোন কৃতজ্ঞপ্রাণ মানুষ তা না ক’রে থাকতে পারে না। কৃতঘ্ন মানুষ বরং ঈশ্বরের দান অবহেলা ও তুচ্ছ করে, অবমূল্যায়ন করে এবং অকৃতজ্ঞ ও অহংকারী মানুষ হয়ে থাকে। ঈশ্বর যে দান তাদের দিয়েছেন তার জন্য তারা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে পারে না। তারা বরং উল্টো ঈশ্বর বিরোধিতাই করে।

পোপ ফ্রান্সিস তাঁর “ভালবাসার আনন্দ” (Amoris Laetitia) লিখেছেন যে ঈশ্বর আমাদের জীবন দিয়েছেন যেন আমরা মানব জীবন সৃষ্টিতে ঈশ^রের সহযোগী হতে পারি। কিন্তু আমরা সেই জীবনের জন্য ঈশ্বরের কাছে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই? এখনতো মানব জীবন ভ্রুণ অবস্থায় মাতৃগর্ভে যেমন তেমনি বার্ধক্যে অযত্ন-অবহেলা, হুমকি, ও মৃত্যুঝুঁকিতে থাকে মানুষেরই স্বেচ্ছাচারীতার কারণে (ভালবাসার আনন্দ-৩২১-৩২২)। মানব জীবন অমূল্য ও স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানব জীবনের মর্যাদা ও সম্মান সকল অবস্থাতেই অতি উচ্চ। ঈশ্বর চান যেন আমরা কৃতজ্ঞপ্রাণ হয়ে জীবন গ্রহণ করি ও যত্ন করি, আমরা যেন কোনভাবেই জীবন-বিরুদ্ধ কোন কাজ না করি।

আমরা কৃতজ্ঞ হলে ও আমাদের মানব জীবনের দুঃখ-বেদনা ও কষ্ট-যন্ত্রণার কথা বিস্মৃত হতে পারি না। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বেদনা ও কষ্ট রয়েছে। পৃথিবীতে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অনেক রকম হতাশা, ব্যর্থতা, দুঃখ-কষ্ট রয়েছে; পৃথিবীতেও অনেক ব্যর্থতা, হতাশা ও দুঃখ-কষ্ট রয়েছে। কিন্তু এগুলোর কারণ কি? এগুলোর জন্য অনেকাংশে আমরাই দায়ী। আমাদের ন্যায্যতা ও শান্তি স্থাপনের কাজ করতে হবে- কারণ পৃথিবীতে অনেক অন্যায্যতা, বঞ্চনা, অশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ত্রাস, শোষণ, রয়েছে। আমাদের রোগ বালাই ও অসুস্থতা রয়েছে, অভাব অনটন ও দরিদ্রদের আর্তনাদ রয়েছে। সমাজে ও পরিবারে বৈষম্য, আক্রোশ ও প্রতিহিংসা রয়েছে। করোনা ভাইরাসের মত মহামারি ও আরো বৈশ্বিক মহামারি রয়েছে। পৃথিবীতে মানুষের অনেক অশান্তি রয়েছে। ঈশ্বর চান যেন আমরা সুখে শান্তিতে থাকি, যেমনটি সামসঙ্গীতে আছে “ধর্মপ্রাণ মানুষ আনন্দেই থাকবে (সাম ৬৪:১০)।” এই জন্যই তিনি বিশ্ব জগত সৃষ্টি ক’রে তা রেখেছেন মানুষেরই তত্ত্বাবধানে (আদি পুস্তক: ১-৩ অধ্যায়, সৃষ্টি কাহিনী)। ঈশ্বরই সব কিছুর মালিক, আমরা মাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক বা ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী। ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী মনিবের দেওয়া কাজ বিশ্বস্তভাবে ক’রে থাকে- যেন মনিব ফিরে এসে সব ঠিকঠাক দেখতে পান (মথি ২৪:৪৫-৫১)।

কিভাবে ধন্যবাদ দিতে হবেঃ
খ্রিস্টান দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক বা ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি জানে যে- সে কোন কিছুরই মালিক নয়, সে মাত্র ঐগুলোর তত্ত্বাবধায়ক। সে তার ব্যক্তিগত জীবনে ঈশ্বরের যে দান বা প্রতিভা, জ্ঞান-বুদ্ধি, শক্তি-সামর্থ্য, ইত্যাদি পেয়েছে তার জন্য তাকে একদিন ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহী করতে হবে। তারা যে ঐশ্বদান বা প্রতিভা পেয়েছে, তা তারা নিজের উন্নতি ও মঙ্গলের জন্য এবং একই সঙ্গে পরস্পরের উন্নতি ও মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করার জন্যে। কারণ একজন কৃতজ্ঞপ্রাণ ঈশ্বরভক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক, ঈশ্বরের কাছে এভাবেই তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তার অন্তর গেয়ে ওঠে, “সকল জাতির মানুষ, ভগবানের স্তুতিগান গাও; সকল দেশের মানুষ, গাও তাঁর গৌরব গাঁথা! আহা, আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা কতই না গভীর; তাঁর বিশ্বস্ততা, সে তো চিরন্তন (সাম ১১৭:১-২)।” কৃতজ্ঞতাভরে সে সকলকে আহ্বান ক’রে বলে “ভগবানের স্তবগান কর, মঙ্গলময় তিনি; তাঁর দয়া, সে তো চিরকালেরই দয়া (সাম ১১৮:১)।”

যিশু বলেছেন, “আমি এসেছি যেন তোমরা জীবন পাও আর তা পাও পরিপূর্ণভাবে (যোহন ১০:১০)।” মঙ্গলসমাচারে আমরা দেখি যে, প্রেরিত শিষ্য পিতর-এর মত কয়েকজন, যারা যিশুকে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন কিন্তু পরে যিশুকে অস্বীকার করেছেন (লুক ২২:৫৪-৬২)। আবার কেউ কেউ যিশুর আহ্বানে সাড়া দিতে অস্বীকার করে (মথি ১৯:১৬-২২; মার্ক ১০:১৭-২২)। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে- শিষ্য হওয়া সহজ বিষয় নয়। যিশুই বলেছেন, “যদি তুমি আমার অনুসরণ করতে চাও, তাহলে নিজেকে অস্বীকার ক’রে প্রতিদিন তোমার নিজের ক্রুশ বহন ক’রে আমার অনুসরণ কর। কেন না যদি তুমি তোমার জীবন রক্ষা করতে চাও, তাহলে তুমি তা হারাবে; কিন্তু যদি তুমি আমার কারণে তোমার জীবন হারাও, তাহলে তুমি তা বাঁচাবে (লুক ৯:২৩-২৪)।”

আমাদের জীবনে ঈশ্বরের ডাক একই সঙ্গে একটি অনন্য আশীর্বাদ ও কঠিন চ্যালেঞ্জ। ঈশ্বরের অনুগ্রহ ছাড়া আমরা এই ডাকে সাড়া দিতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিভা আছে, আছে দুর্বলতাও। ঈশ্বর আমাদের একেকজনকে বিশেষভাবে আহ্বান করেন যেন আমরা তাঁকে জানি, ভালবাসি ও সেবা করি; তা যেন করি খ্রিস্টের সেবা কাজে ও মণ্ডলির সেবা কাজে অংশগ্রহণ করে। আমরা প্রত্যেকে ঈশ্বরের কাছ থেকে যে অনুগ্রহদান ও প্রতিভা পেয়েছি তার উন্নয়ন ও যথাযথ ব্যবহার করে খ্রিস্ট মণ্ডলির ও প্রতিবেশীদের সেবা করাই আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা এইভাবে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে পারস্পারিক আশা ও স্বপ্ন সহভাগিতা করতে পারি। আমরা যদি তা না করি তাহলে তার জন্য আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহী করতে হবে। একমাত্র এইভাবেই আমরা আমাদের স্বার্থপরতা ও পাপের বন্ধন ছিন্ন করতে পারি। আর আমরা তখনই সত্যিকারের ‘স্বাধীন’ হয়ে উঠব। আমরা তো স্বাধীনই হতে চাই, হতে চাই মুক্ত মানুষ, তাহলে আর দ্বিধা কেন?

ঐশ অনুগ্রহদানকে পদদলিত করো নাঃ
বিশ্বস্ত কর্মচারী বা ভারপ্রাপ্ত কর্মী নিজের সীমাবদ্ধতা জানে ও সেই অনুসারে অন্যের সম্পত্তি, যা তার কাছে ন্যাস্ত করা হয়েছে, তা যত্ন করে, রক্ষা করে, বাড়িয়ে তোলে, আর মনিব বা মালিক ফিরে এলে তাঁকে তা ফিরিয়ে দেয়। মালিক তার উপর যে আস্থা রেখেছেন, সেই আস্থা সে বিশ্বস্তভাবে রক্ষা করে। যিশুই বলেছেন, “কে তাহলে বিশ্বস্ত বিচক্ষণ নায়েব, যার ওপর মনিব তাঁর সমস্ত লোকজনের ভার দিয়ে যাবেন, যাতে সে ঠিক সময় তাদের খোরাকের ব্যবস্থা করে? … ধন্য সেই কর্মচারী, যার মনিব ফিরে এসে তাকে সেই কাজেই ব্যস্ত থাকতে দেখবেন। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তিনি এবার তাঁর সমস্ত সম্পত্তির ভার তারই হাতে তুলে দেবেন (লুক ১২:৪২-৪৪)।”
‘শিষ্যত্ব’ হলো যিশুর আহ্বান আর দায়িত্বপ্রাপ্ত বা ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী – অর্থ হলো- আমাদের সাড়াদান বা প্রতি-উত্তর। খ্রিস্টের একজন শিষ্য যিশুখ্রিস্টের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকেই অনুসরণ করে এবং নিজের জীবন গড়ে তোলে। আর খ্রিস্টীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক বা ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী হলো সে-ই, যে ঈশ্বরের অনুগ্রহদান কৃতজ্ঞতাভরে ও খুশি মনে গ্রহণ ক’রে তা রক্ষা করে ও বাড়িয়ে তোলে এবং হিসাব দেওয়ার মনোভাব নিয়ে নিজের ও অন্য মানুষের প্রতি ন্যায্যতা, শান্তি ও ভালবাসার জন্য ব্যবহার করে। আমাদের প্রত্যেকেরই তা করতে হবে আনন্দিত মনে ও উদারভাবে।

যিশু মঙ্গলসমাচারে যেমন বিশ্বস্ত কর্মচারীর কথা বলেছেন, তেমনি তিনি অবিশ্বস্ত কর্মচারীর কথাও বলেছেন। কর্মচারী যদি অপরিনামদর্শী হয়ে মনিবের সম্পদ ধ্বংস করে, নষ্ট করে, নেশাগ্রস্ত হয়ে মাতলামো করে, সহকর্মীদের মারধর করে, অলসতা ও অনৈতিক জীবন যাপন করে, তাহলে “সেই কর্মচারীর মনিব এমনই দিনে এসে পড়বেন, যখন সে তাঁর আসবার কথা ভাবতেও পারেনি; তিনি আসবেন এমনই এক সময়ে, যে সময়ের কথা তার জানাই ছিল না। ফিরে এসে তিনি তাকে টুকরো টুকরো করবেন; তার স্থান তিনি ঠিক করে দেবেন অবিশ্বাসীদেরই মধ্যে (লুক ১২:৪৬)।”

আমাদের ধর্মপ্রদেশের মূল স্তম্ভ ও সম্পদ হলো আমাদের খ্রিস্টভক্ত সমাজ। তাদের আমরা পেয়েছি ঈশ্বরের দান হিসেবে। তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও খ্রিস্টীয় নৈতিকতায় গঠন দিয়ে সুন্দরভাবে বর্তমান যুগের দাবি অনুসারে গড়ে তোলা ধর্মপ্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাদের অধিকাংশ খ্রিস্টভক্ত দরিদ্র এবং বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ভূক্ত। তাদের দরিদ্রতা জয় করার ও কৃষ্টি-সংস্কৃতি রক্ষা করা ও যুগোপযোগী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই উদ্দেশ্যে আমরা বিগত বছরগুলোতে অনেক চিন্তাভাবনা ও আলোচনা করেছি। কিন্তু কাজ খুব একটা এগুয়নি। আমাদের খ্রিস্টভক্তদের অনেকেই এখনো মঙ্গলসমাচারের শিক্ষায় সমৃদ্ধ না হয়ে দায়িত্বহীন, স্বেচ্ছাচারী, মাতাল ও অলস কর্মচারীর মত জীবন যাপন করছে। তাদের জীবনে যেন কোন দায়িত্বজ্ঞান নেই, জীবন মান উন্নয়নের ভাবনা নেই, নেই উন্নতি করার কোন স্বপ্ন। ততটা আলস্যে না হলেও, তাদের সঞ্চয় বিহীন অপরিনামদর্শীতায় তারা দারিদ্র্যের শিকল ভাঙ্গতে পারছে না। ঋণদান সমিতির মাধ্যমে কেউ কেউ উন্নতি করতে পারলেও, অনেকেই তা পারছে না। আবার অনেকেই এই বিষয় একেবারেই উদাসীন; তাদের অন্তর গভীরে প্রোথিত হয়ে আছে ভিক্ষা, দয়া ও অনুদান লাভের প্রত্যাশা। নিজেরা উন্নতির চেষ্টা না ক’রে, নিজেদের দারিদ্র্যপূর্ণ দুর্দশার জন্য অন্যদের দোষারোপ করে। তারা নিজেরা দারিদ্র্য ও মর্যাদাহীন এক শৃঙ্খলে বন্দি করে রেখেছে, আর তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতও রেখেছে অনিশ্চিত করে। তারা ভাল করতো যদি তাদের আলস্য, স্বেচ্ছাচারীতা, অপচয়, মাতলামো, ইত্যাদি বন্ধ ক’রে পরিশ্রম ও সঞ্চয় করে বিচক্ষণভাবে তাদের এবং সন্তানদের জন্য একটা সুন্দর উন্নত ভবিষ্যত গড়তে পারতো। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও করণীয় কাজ হলো এইসব খ্রিস্টভক্তদের সচেতন করে তোলা, যেন তারা তাদের দারিদ্র্য ও মর্যাদাহীন জীবন থেকে উন্নত ও সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে পারে।

আমরা ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাদের ধর্মপ্রদেশে যথেষ্ঠ ভূ-সম্পত্তি ও অবকাঠামো দান করেছেন। আমাদের ধর্মপ্রদেশ নতুন হওয়ায় আমাদের এই স্থানীয় মণ্ডলি একটি বর্ধিষ্ণু মণ্ডলি। এখানে বাণী প্রচারের কাজ ও পালকীয় সেবাদানের কাজ করতে গেলে আমাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। ধর্মপ্রদেশ ও ধর্মপল্লীগুলোর পালকীয় কাজ, শিক্ষা ও গঠন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যও বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে এই কাজ করার দায়িত্ব শুধু বিশপ ও যাজকদেরই নয়। এই দায়িত্ব স্থানীয় মণ্ডলির সকল খ্রিস্টভক্তের। আসল কথা হলো যে, মণ্ডলি পরিচালিত হয় খ্রিস্টভক্তদের অংশগ্রহণে ও অনুদানে। তারা তা করতে পারে তাদের ‘সময়’ (স্বেচ্ছাশ্রম), ‘সামর্থ্য’ (বুদ্ধি-পরামর্শ) ও ‘সম্পদ’ (টাকা-পয়সা) মণ্ডলির জন্য দান করে। তাহলেই আমাদের ধর্মপ্রদেশ প্রকৃত অর্থেই স্থানীয় মণ্ডলি হয়ে উঠবে।

ঈশ্বরের দয়ায় আমাদের ভূ-সম্পত্তি যা রয়েছে তা থেকে আয় করে আরও ভূ-সম্পত্তি বাড়ানো আমাদের দায়িত্ব। এই ভূ-সম্পত্তি আমরা নষ্ট করতে পারি না বা অপচয় করতে পারি না। সকল ধর্মপল্লীর সমান ভূ-সম্পত্তি নেই, অর্থাৎ কিছু ধর্মপল্লীতে বেশি জমি-জমা রয়েছে, আর কিছু ধর্মপল্লীতে খুবই কম। পুরাতন ধর্মপল্লীগুলো যেখানে বেশি জমি রয়েছে সেইসব ধর্মপল্লী থেকে নতুন নতুন ধর্মপল্লী গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে কিছু ধর্মপল্লী রয়েছে সেখানে জমি-জমা খুব কম, নিজস্ব কোন আয়-রোজগার নেই। এই বিষয়টিও সমন্বয় হতে হবে, যেন সম্পদের সুষম বন্টন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে ওঠে। আবার কিছু কিছু ধর্মপল্লীর অনেক জমিতে আর কয়েকটি ধর্মপল্লীর প্রায় সব জমিতেই বহু বছর থেকেই খ্রিস্টভক্তরা বসবাস করে আসছে। আগে তারা নিঃশ্ব-দরিদ্র ছিল তাই তাদের আবাসনের জন্য স্থানীয় মণ্ডলি নিজস্ব জমি তাদের সাময়িক বসবাসের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। তবে তারা একদিন অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করবে এবং নিজস্ব জমিতে গিয়ে তাদের বাড়ি নির্মান করবে- এটাই স্থানীয় মণ্ডলির প্রত্যাশা। এইসব জমির জন্য প্রতি বছর খাজনা ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য খাতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হয়। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের জন্য এটি একটি বড় মাথা ব্যথার কারণ। এই জমি-জমাগুলো ধর্মপ্রদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রয়োজন মিটানোর জন্য- অপচয় বা অপরিনামদর্শীভাবে ব্যবহারের জন্য নয়। এই জমি বিলিয়ে দিয়ে সুনাম কুড়ানোর জন্য ঈশ্বর আমাদের দেন নি। এই সবকিছুর জন্য আমাদের তাঁর কাছে অবশ্যই জবাবদিহী করতে হবে।

হিসাব দিতে হবে, জবাবদিহী করতে হবেঃ
আধ্যাত্মিক ও জাগতিক- যা কিছু আমাদের আছে তার সবই ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। একদিন ঈশ্বর এই সব কিছুর হিসাব চাইবেন। আমরা কিভাবে আমাদের কাছে দেওয়া তাঁর বিশেষ বিশেষ দানগুলো ব্যবহার করেছি, তার জন্য ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে আমাদের হিসাব দিতে হবে। সাধু মথির লেখা মঙ্গল সমাচারে (২৫:১৪-৩০) আমরা দেখি যে ভাল, দায়িত্বশীল ও বিশ্বস্ত কর্মচারী মনিবের কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবসায় খাটিয়ে লাভ করে, আর মনিব ফিরে আসলে তা মনিবকে প্রদান করে; আর অপরিনামদর্শী, দায়িত্বহীন ও অলস কর্মচারী মনিবের কাছ থেকে পাওয়া সম্পদ মাটির নীচে লুকিয়ে রেখেছে, মনিবকে সে কোন লাভ দেখাতে পারেনি। “আমি তোমাকে যে সকল অনুগ্রহ, সুযোগ, সামর্থ্য ও প্রতিভা তোমাকে দিয়েছিলাম তুমি ঐগুলো দিয়ে কি করেছ?” মঙ্গলসমাচারে বর্ণিত সেই অযোগ্য কর্মচারীর মত আমাদের প্রত্যেককের কাছ থেকেই ঈশ্বর এইভাবে হিসাব চাইবেন।

বিগত বছরগুলোতে পালকীয় সম্মেলনে বা কর্মশালায় যে সকল মূলভাব নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে সেগুলোতে অঙ্গীকার ছিল- আমাদের ধর্মপ্রদেশকে একটি অংশগ্রহণকারী মণ্ডলি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের দীক্ষা গ্রহণের ফলে আমরা মণ্ডলির জীবনে ও সেবাকাজে অংশগ্রহণ করার দায়িত্ব পেয়েছি; সেই দায়িত্ব আরও পাকাপোক্ত হয়েছে হস্তার্পন সাক্রামেন্তে। প্রতি নিয়ত খ্রিস্টযাগে অংশ নিয়ে ও খ্রিস্টপ্রসাদ গ্রহণ করে আমরা খ্রিস্টীয় জীবনে চালিকাশক্তি লাভ করি। মিলন ও ভ্রাতৃসমাজ হিসেবে আমরা মণ্ডলির প্রতি সম্মিলিত দায়িত্ব পালন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। খ্রিস্টভক্তদের সম্মিলিত সমাজই মণ্ডলি, অর্থাৎ আমরা সকলে মিলেই মণ্ডলি। এই মণ্ডলির জীবন ও সেবাকর্মও সকলের দায়িত্ব- বিশপ, যাজক সমাজ, ধর্মব্রতীগণ, খ্রিস্টভক্ত সমাজ, সকলেরই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব রয়েছে। তবে এই দায়িত্ব আমরা নিজেদের শক্তিতে বা ক্ষমতায় করতে পারব না। এই কাজে পবিত্র-আত্মা আমাদের সহায়, তাই আমাদের পবিত্র আত্মার দান ও প্রেরণার জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। আমরা ঈশ্বরের নিকট কৃতজ্ঞ হলে, আমরা তা করব স্বত:স্ফুর্তভাবেই।

ঈশ্বর যে আমাদের বহুদান ও আশীর্বাদে ধন্য করেছেন, তার প্রমাণ হলো ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন এই পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থ সকল প্রাণি, গাছপালা, পশু-পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিনি তা দিয়েছেন আমাদেরই জন্য। তবে তিনি চান যেন আমরা এই সবের যত্ন করি, রক্ষা করি আর আমাদের ও ভবিষ্যত বংশধরদের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করি। আমরা যদি তা না করি তাহলে ঈশ্বর আমাদের দায়ী করবেন, আর আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদেরকে অভিযুক্ত করবে। এই বিষয় সচেতন ও সতর্ক করতে পোপ ফ্রান্সিস “তোমার প্রশংসা হোক” (Laudato Si) নামক সর্বজনীন পত্র লিখেছেন। সুতরাং আমরা যত শীঘ্র এই বিষয় সচেতন ও সতর্ক হবো, ততই আমাদের মঙ্গল হবে।

বিশ্বাসের ফল – বিশ্বাস নিষ্ফল নয় ঃ
দায়িত্বপ্রাপ্ত বা ভারপ্রাপ্ত সেবক (কর্মচারি) হিসেবে খ্রিস্টভক্তগণ সকলেই তাদের ‘সময়’, ‘টাকা-পয়সা’ ও ‘ব্যক্তিগত অন্যান্য সম্পদ’ দিয়ে আন্তরিকভাবে খ্রিস্ট মণ্ডলির সেবা করবে এটাই যিশু চান। তাছাড়া মণ্ডলির সদস্য হিসেবে আমরা যে বিশ্বাস স্বীকার করি তার প্রেরণায়ও আমরা এই কাজ করে থাকি। এটা বিশ্বাসেরই ফল। পোপ ১৬শ বেনেডিক্ট তাঁর “ঈশ্বরই ভালবাসা” (Deus Caritas Est) নামক সর্বজনীন পত্রে লিখেছেন, “প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা ঈশ্বরের ভালবাসার মধ্যেই প্রোথিত; এটি মণ্ডলির সদস্য হিসেবে খ্রিস্টভক্তদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব; সব সময় ও সর্বত্র তাদের এই দায়িত্ব পালন করতে হবে; স্থানীয় মণ্ডলি ও বিশ্বমণ্ডলির সদস্য হিসেবে আমাদের অন্যান্য মণ্ডলির সঙ্গেও সেই ভালবাসা সহভাগিতা করতে হবে। খ্রিস্টসমাজ হিসেবে মণ্ডলিকে ভালবাসার চর্চা করতে হবে (ঈশ্বরই ভালবাসা- ২০)।” স্বার্থপরতা ও লোভ থাকলে আমরা তা করতে পারবো না।

কথায় আছে, “ভালবাসা পরিবারেই শুরু হয়।” সেইজন্য ভালবাসায় পরিবারের গঠনদান একান্ত আবশ্যক। পিতামাতা তাদের পারস্পরিক ভালবাসা দিয়ে সন্তানদের গঠন দান করে। আর সন্তানেরাও তাদের পিতামাতা ও ভাইবোনদের সাথে ভালবাসার চর্চা করে, প্রতিবেশীদের ভালবাসতে শিখে। আর এই প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশিত হয় আমাদের দরিদ্র ও অসহায় প্রতিবেশীদের প্রতি দয়ার কাজের মধ্যদিয়ে। প্রতিবেশীদের প্রতি ভালবাসার ভিত্তিতেই শেষ বিচারের সময় যিশু আমাদের পুরস্কার বা শাস্তি দিবেন (মথি ২৫:৩১-৪৬)। বিভিন্ন অভাব অনটন ও দুর্যোগের সময় খ্রিস্টমণ্ডলি দয়া, খাদ্য বিতরণ ও গৃহ আশ্রয়নের মত ত্রাণকার্য করে থাকে। এইবার কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির সময় রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ ও কারিতাস যৌথভাবে সেই রকম ত্রাণকর্ম করেছে ও এখনও করে যাচ্ছে। সুখের বিষয়, এই ধরণের দয়া ও ত্রাণকার্যে অন্যদের মত আমাদের স্বচ্ছল খ্রিস্টভক্তরা উদারভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। আমরা বিশ্বাস করি এইভাবেই আমরা একটি ‘ভালবাসার সভ্যতা’ গড়ে তুলতে পারবো।
সমাজে ন্যায্যতা স্থাপন ছাড়া মিলন ও ভ্রাতৃসমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ন্যায্যতা ও শান্তি স্থাপনের কাজ ক’রে আমরা মূলতঃ ঐশ্বরাজ্য স্থাপনের কাজই করি। উল্লেখিত মঙ্গলসমাচার আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। “আমরা কেউ নিজের জন্য বাঁচিনা, … যদি বাঁচি তবে প্রভুর জন্যই বাঁচি (রোমীয় ১৪:৭)।” সাধু পল এইভাবেই আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন আর অনুপ্রাণিত করেছেন যেন আমরা “সকলের সঙ্গে শান্তি ও সদ্ভাব বজায় রেখে চলি (রোমীয় ১২:১৮)।” আমরা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতাকে জয় ক’রে অন্যদের, বিশেষভাবে দরিদ্রদের জন্য আমাদের হৃদয় উন্মুক্ত রাখব ও তাদের প্রয়োজনে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিব- ঠিক ঈশ্বর যেমন আমাদের জন্য করে থাকেন।

পোপ ফ্রান্সিস তাঁর “আমরা সকলে ভাইবোন” (Fratelli Tutti) সর্বজনীন পত্রে লিখেছেন, “ভ্রাতৃসমভাবে বিনা মূল্যে দান বা আদান-প্রদান না থাকলে আমাদের জীবন শুধুই একটা উন্মত্ত ব্যবসায় পরিণত হয়, তখন আমরা কি দিলাম আর কি পেলাম সেই মানদন্ডেই শুধু বিচার করা হয়। অন্যদিকে ঈশ্বর কিন্তু আমাদের সব কিছু দেন বিনা মূল্যে, এমন কি যারা অকৃতজ্ঞ তাদেরও তিনি দেন একইভাবে; “… কারণ সৎ-অসৎ সকলেরই জন্য তিনি ফুটিয়ে তোলেন তাঁর সূর্যের আলো…(মথি ৫:৪৫)।” যিশু আমাদের এই কারণেই বলেছেন, ‘যখন তুমি কাউকে ভিক্ষা দাও, তোমার ডান হাত যে কী করছে, তোমার বাঁ হাত যেন তা জানতে না পারে। তোমার এই ভিক্ষাদান বরং গোপনই থাকুক (মথি ৬:৩-৪)।” আমরা জীবন পেয়েছি বিনা মূল্যে, এর জন্য আমরা তো কোন মূল্যই দেই নি। তাই আমরাও প্রত্যেকে প্রতিদান আশা না ক’রে দান করতে সক্ষম। অন্যদের কাছ থেকে ভাল ব্যবহার আশা না করেও আমরা তাদের জন্য ভাল কাজ বা দয়ার কাজ করতে পারি। এই জন্যই যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছেন, “… বিনা মূল্যে যা পেয়েছ, বিনা মূল্যেই তা দিয়ে যাও (মথি ১০:৮)।”

সন্তানদের কাছে পৌঁছে দাওঃ
আমাদের যা আছে তার সর্বোত্তমগুলো সন্তানদের বা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সেই জন্য আমাদের শিশুদের ও যুবকদের শিক্ষা ও গঠনদানের দিকটা নজর দিতে হবে। তাদের শিক্ষা ও গঠনদানের মাধ্যমে আমরা তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাবো আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তাদের সক্ষম করে তুলবো। পিতামাতাগণ যেন তাদের নিজেদের স্বপ্ন তাদের সন্তানদের উপর চাপিয়ে না দেন। সন্তানদের স্বপ্ন দেখতে শিখাতে হবে আর তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে শিশু ও যুবক যুবতীদের পাশে থাকতে হবে। খ্রিস্ট মণ্ডলি এই কাজে ব্রতী হয়ে নিজের ভবিষ্যত টেকসই ও মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে চেষ্টা করে। তবে মনে রাখতে হবে- সন্তানদের গঠন প্রশিক্ষণের প্রধান ও প্রথম বিষয় হলো ‘ধর্মবিশ্বাস’। ধর্মবিশ্বাস মানুষকে দান করে মর্যাদা ও নৈতিক জীবনের ভিত্তিসমূহ। সেইজন্য আমাদের ধর্মপল্লীগুলোর পালকীয় কাঠামো ও কার্যক্রমে ধর্মশিক্ষা যেন হয় একটি আবশ্যকীয় ও স্থায়ী বিষয়- সেই দিকে পাল-পুরোহিতদের খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের শিক্ষা ও গঠনদানের কাজ প্রধানতঃ পিতামাতাদেরই; সেই কাজ করার জন্য পিতামাতারা যেন যথেষ্ঠ সহায়তা পায়, সেই দিকেও নজর দিতে হবে।

তবে এই কাজে ধর্মপল্লীর পালকগণ, ধর্মব্রতীগণ, কাটেখিস্টগণ সকলকেই আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। মানব সভ্যতা বা ভালবাসার সভ্যতা গড়ে তোলা কারো একার দায়িত্ব নয়। ধর্মশিক্ষাকে জোরদার করতে উগ্র আধুনিকতা, বস্তুবাদ, ভোগবাদ, আপেক্ষিকতাবাদ (তুলনাবাদ), গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আমাদের আধুনিক বা বর্তমানের সাথে সঙ্গতি রেখে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এগুলোর দরকার আছে- কিন্তু আমাদের সন্তানদের শিখাতে হবে কিভাবে তারা এগুলোর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ক’রে তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। এইজন্য আমাদের সকলেরই ‘মন পরিবর্তনের’ প্রয়োজন রয়েছে।

পোপ ফ্রান্সিস সামসঙ্গীতের কথা উদৃত করে বলেছেন, “বৃদ্ধ বয়সে ওগো দূরে ঠেলে ফেলে দিও না আমায়; ক্রমে শক্তিহীন আমি; আমায় একলা ছেড়ে যেও না কো দূরে” (সাম ৭১:৯)! “বৃদ্ধ মানুষ এইভাবেই কেঁদে ওঠে যেন তাকে আমরা ভুলে না যাই বা প্রত্যাখান বা পরিত্যাগ না করি। ঈশ্বর যেমন আমাদের কাছে চান যেন আমরা দারিদ্রদের আর্তনাদ শুনি, তেমনি তিনি এটাও চান যেন আমরা বৃদ্ধদের আর্তনাদ শুনি” (ভালবাসার আনন্দ – ১৯১)। সেই সঙ্গে আমাদের পরিবারে ও সমাজের অবহেলিত, হত দরিদ্র, প্রান্তিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, অভিবাসী, ইত্যাদি মানুষের কান্না ও আর্তনাদ যেন আমরা শুনি- পোপ মহোদয় আমাদের সেই আহ্বানও জনান। আমাদের পরিবারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পিতামাতাগণ, অসুস্থ ব্যক্তি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা কেমন আছেন? তাঁরা কেমন সেবা যত্ন পাচ্ছেন? আমাদের জীবনে তাদের অবদান রয়েছে তা কি আমরা স্বীকার করি? তাঁদের যত্ন করার মাধ্যমে কিন্তু আমরা পরিবারে ও সমাজে ভালবাসার সংস্কৃতি ও নতুন ঐতিহ্য গড়ে তুলতে পারব। তাতে করে আমাদের সন্তানগণ আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ও যত্নশীল হয়ে বেড়ে উঠবে।

পরিবারের সন্তানদের এমন গঠন দিতে হবে, যেন তারা ‘কৃতজ্ঞ’ হতে শিখে। প্রথমত: তারা তাদের জীবনে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সকলের অবদানের কথা স্বীকার করে ও তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ দেয়। এর মধ্যদিয়ে তারা তাদের জীবনে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও অনুগ্রহের কথাও স্বীকার করতে পারবে। বৃদ্ধ পিতামাতাকে সম্মান করে, যত্ন নিয়ে ও ভরণ-পোষণ করে তারা তাদের পিতামাতার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে- যদিও তাদের অবদানের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়।

বাণী প্রচার ও ঐশ্বরাজ্য বিস্তারঃ
বাণী প্রচার করা প্রত্যেক খ্রিস্টভক্তেরই দায়িত্ব। আমরা যারা দীক্ষিত আমরা সকলেই খ্রিস্টের বাণী প্রচার করতে আহূত- তবে তার আগে সেই বাণী আমাদের নিজেদেরই অনুশীলন করতে হবে। কৃতজ্ঞপ্রাণ খ্রিস্টসেবক ঈশ্বরের কাছ থেকে যেসব অনুগ্রহদান পেয়েছে, তা সকলের কাছে ঘোষণা করতে ও পরিবেশন করতে অন্তর থেকেই তাগিদ অনুভব করবে। কারণ সে জানে যীশুখ্রিস্ট “আমাদের জন্য ধর্মিষ্ঠতা, পবিত্রতা ও পরিত্রাণের প্রজ্ঞা (১করি ১:৩০)” এনে দিয়েছেন। সেই কারণে সাধু পল বলেছেন,“হায়রে আমি, যদি মঙ্গলসমাচার প্রচার না করি (১করি ৯:১৬)।” আমরা কারো কাছ থেকে কোন উপকার পেলে কৃতজ্ঞ হই আর তা সকলের কাছে প্রচার করি। যিশুর কাছে একজন কালা ও তোত্লা লোককে আনা হলে, যিশু তাকে শোনার ও কথা বলার ক্ষমতা দিলেন। তারপর সেখানকার লোকদের এই কথা কউকে জানাতে নিষেধ করে দিলেন। কিন্তু তিনি যতই তাদের নিষেধ করেন, এইসব কথা তারা ততই রটাতে লাগলো (মার্ক ৭:৩১-৩৭)। আমরাও যিশুর কথা প্রচার না করে থাকতে পারি না, কারণ যিশু আমাদের জন্য তাঁর জীবন দিয়েছেন, পরিত্রাণ দিয়েছেন।

আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পালকীয় অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে বাণী প্রচার করা বা ঐশ্বরাজ্য ঘোষণা করা অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। যারা ইতিমধ্যেই খ্রিস্টে দীক্ষা নিয়েছে, তাদের কাছে ঐশ্ববাণীর ‘নব ঘোষণা’ করা আবশ্যক। তবে আমাদের ধর্মপ্রদেশ এলাকায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা এখনও খ্রিস্টের বাণী শোনেনি তাদের কাছে খ্রিস্টবাণী প্রচার করার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ গ্রহণ করে যদি আমরা বাণী প্রচার কাজ না করি, তাহলে আমাদের ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহী করতে হবে। দীক্ষিত হয়ে আমরা পরিত্রাণের আশা পেয়েছি, পেয়েছি স্বর্গে যাওয়ার অধিকার। কিন্তু তার পূর্বে এই মহান সুসমাচার প্রচার করা আমাদের আহ্বান ও দায়িত্ব। খ্রিস্টমণ্ডলির মিশন (প্রেরণ) বা সেবাকাজ করে আমরা সেই আশা ও অধিকারের পূর্ণতা লাভ করব। এই কাজ সহজ নয়, যথেষ্ঠ ত্যাগস্বীকার ও মন পরিবর্তন দাবি রাখে। এই কঠিন যাত্রায় খ্রিস্টভক্তদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব যাজকদের ও ধর্মব্রতীদের।

উপসংহার: ঃ
‘কৃতজ্ঞ প্রাণ’ দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক হিসেবে আমরা জানি যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান আবার একই সঙ্গে আমরা সৃষ্টিকাজে তাঁর সহকর্মী বা সহযোগী। ঈশ্বর তাঁর কাজ আমাদের মধ্য দিয়েই করে থাকেন। ঈশ্বর আমাদের মধ্যদিয়ে তাঁর সৃষ্টির কাজ, পবিত্রীকরণের কাজ ও পরিত্রাণের কাজ করেন। তিনি আমাদের একেক জনকে একেক কাজ ও দায়িত্ব দিয়েছেন, যেন আমরা সমাজের ও মণ্ডলির কল্যাণে কাজ করতে পারি। তাই আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক বা ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী হিসেবে ঈশ্বরের দেওয়া দায়িত্ব পালন ক’রে তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা প্রকাশ করতে পারি। ঈশ্বরের কাছ থেকে আমরা যে দান ও অনুগ্রহ পেয়েছি তার সঠিক ও বিচক্ষণ ব্যবহারের মাধ্যমে তা বাড়িয়ে তুলে বা বৃদ্ধি করে মানুষের কল্যাণে ও আমাদের সন্তানদের কল্যাণে কাজে লাগানোর মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি।

যখন আমাদের প্রতি উদারভাবে দান করার আহ্বান আসে, তখন আসলে আমরা ঈশ্বরের দান ও অনুগ্রহের প্রতিদান দেওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে যাই। ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন অজস্র-অমেয়ভাবে, যা তাঁকে কখনোই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ আমরা আমাদের সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে এই সামান্য দান দরিদ্র-অসহায়দের দিয়ে ঈশ্বরের দানের প্রতিদান দিতে পারি। আমরা তাহলে এই সুযোগ হারাবো কেন? তাহলে আসুন আমরা আমাদের যা কিছু আছে তা শুধু নিজের জন্য স্বার্থপরের মত ব্যবহার না করে, নিজের জন্য যেমন, তেমন অন্যদের কল্যাণের জন্যও ব্যবহার করি। আমরা যেন এইভাবে কৃতজ্ঞ অন্তরে ঈশ্বর ও খ্রিস্টমণ্ডলির সেবা করতে পারি- আর সেবা করতে পারি যিশুকে। কলসীয়দের কাছে পত্রে সাধু পল খ্রিস্টবিশ্বাসীদের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, “তোমরা পরমেশ্বরের প্রতি সর্বদাই কৃতজ্ঞ হয়ে থাক (৩:১৫)।” আমরা তো ঈশ্বরের কাছ থেকে অজস্র আশীর্বাদ পেয়েছি। তবে “পাওয়ার চেয়ে দেওয়াতেই আনন্দ বেশি (প্রেরিত ২০:৩৫)।” “কেন না পরমেশ্বর তাকেই বেশি ভালবাসেন, যে আনন্দের সঙ্গেই দান করে (২করি ৬:৭)।” এইভাবেই খ্রিস্টবিশ্বাসী দায়িত্ববান সেবক তার অন্তরের কৃতজ্ঞতা ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করে।

পরিশেষে আমরা যিশুর স্নেহময় পিতা, মারিয়ার দায়িত্বশীল ও প্রেমময় স্বামী বিশ্ব মণ্ডলির প্রতিপালক সাধু যোসেফের কথা স্মরণ করি। তিনি কেমন কৃতজ্ঞহৃদয় ও দায়িত্বশীল মানুষ ছিলেন সেই বিষয় ধ্যান করি; ধ্যান করি তিনি কেমন যত্ন করে পবিত্র পরিবারকে প্রতিপালন ও রক্ষা করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন বলেই নম্র, যত্নশীল ও দায়িত্বশীল হয়েছিলেন। তিনিই আমাদের শিখাবেন কিভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারি। পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস গত ৮ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে আগামী ৮ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়টিকে “সাধু যোসেফের বর্ষ” ঘোষণা করেছেন। তাই আসুন আমরা এই বছর সাধু যোসেফের সঙ্গে যাত্রা করি যিনি আমাদের নিয়ে যাবেন যিশু ও মারিয়ার কাছে, অর্থাৎ পবিত্র পরিবারের কাছে। পবিত্র পরিবারের আদর্শে জীবন যাপন করে আমরা যেন নম্র, কোমল প্রাণ, পরিশ্রমী ও কৃতজ্ঞপ্রাণ মানুষ হতে পারি।

ইতি
আপনাদের সেবায়

+ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ

অনুধ্যানের জন্য প্রশ্ন:

১। খ্রিস্টবিশ্বাসীদের ঈশ্বরের কাছে কেন কৃতজ্ঞ থাকতে হবে? কৃতজ্ঞ-অন্তর হওয়া মানে কি? কৃতজ্ঞতাই যদি খ্রিস্টীয় জীবনের ভিত্তি হয়, তাহলে আমাদের জীবনে আমরা কিভাবে এই কৃতজ্ঞতার চর্চা করতে পারি?

২। কখন আমরা ঈশ্বরের কাছে, মণ্ডলির কাছে, পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও প্রতিবেশীদের কাছে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি? কিভাবে তাদের নি:স্বার্থ ভালবাসার দান ও আশীর্বাদ পদদলিত করি?

৩। ঈশ্বরের কাছে একদিন সবাইকেই জবাবদিহী করতে হবে বা হিসাব দিতে হবে, এই কথা মনে রেখে যিশুর শিষ্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক বা ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী হিসেবে আমাদের কি করা উচিত এবং আমরা এখন কি কি করতে পারি?

৪। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বাস্তবতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক হিসেবে আমাদের- সময় (Time), সামর্থ বা সক্ষমতা (Talents) ও সম্পদ (Treasure) ব্যবহার ক’রে কিভাবে আমরা মণ্ডলির সেবাকাজ ও বাণী প্রচার করব?

Please follow and like us: