গত ১ জুলাই রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ফাদার লিংকু লেনার্ড লরেন্স গমেজ, ভাটিকান রাষ্ট্র থেকে সেন্ট্রাল আমিরেকার পানামাতে ভাটিকান দূতাবাসের সেক্রেটারি হিসেবে কুটনৈতিক সেবাদায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ পান। তিনিই বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম পুরোহিত যিনি কোন ভাটিকান দূতাবাসে এই কুটনৈতিক সেবাদায়িত্ব পালন করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ফাদার লিংকু, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বোর্ণী মারীয়াবাদ ধর্মপল্লীর কৃতি সন্তান। তার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত:
পূর্ণ নাম: ফাদার লিংকু লেনার্ড লরেন্স গমেজ
পিতা: প্যাট্রিক গমেজ
মাতা: যোয়ান্না সরু গমেজ
জন্ম: ১৭ নভেম্বর, ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ।
ভাইবোন: ৬ ভাই ২ বোন
ধর্মপল্লী: শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার ধর্মপল্লী, বোর্ণী, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ।
প্রাইমারী স্কুল: সেন্ট মেরীস প্রাইমারী স্কুল ১৯৮৭-১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ।
হাইস্কুল: সেন্ট লুইস হাই স্কুল ১৯৯৪-১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ।
এসএসসি: সেন্ট লুইস হাই স্কুল ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ (রাজশাহী বিভাগ)
এইএসসি: দিনাজপুর সরকারী কলেজ, দিনাজপুর ২০০১ খ্রিস্টাব্দ (সুইহারী সেমিনারী, ১৯৯৯-২০০১ খ্রিস্টাব্দ)
বিএসএস: নটরডেম কলেজ, ঢাকা, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ(রমনা সেমিনারী২০০২-২০০৫ খ্রিস্টাব্দ)
দর্শনশাস্ত্র ও ঐশতত্ত্ব: পবিত্র আত্মার উচ্চ সেমিনারী, বনানী, ঢাকা ২০০৬-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
ডিকন অভিষেক: বনানী সেমিনারী ২৮ জুন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
যাজকীয় অভিষেক: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
যাজক হিসেবে পালকীয় কর্মক্ষেত্র: আন্ধারকোঠা, চাঁনপুকুর ধর্মপল্লী।
উচ্চ শিক্ষা: উর্বানীয়ানা ইউনিভারসিটি, রোম (মাণ্ডলিক আইনের উপর licensecate degree লাভ) ২০১৬-২০১৯ খ্রিস্টাব্দ।
ডক্টরেট ডিগ্রী: মাণ্ডলিক আইনের উপর- লাতেরান পন্টিফিক্যাল ইউনিভারসিটি রোম ২০১৯-২০২১ খ্রিস্টাব্দ।
ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ: ১৪ জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দ।
দূতাবাসের সেক্রেটারি পদে নিয়োগ: সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ পানামা, ভাটিকান থেকে ১ জুলাই ২০২১ খ্রিস্টাব্দ।
তার এ নিয়োগ প্রাপ্তির পর টেলিফোন মাধ্যমে তার অনুভূতি সম্বন্ধে জানতে চাইলে, তিনি বরেন্দ্রদূত অনলাইনকে জানান যে, “আমি সর্বপ্রথমে নম্র হৃদয়ে আমার এই আহ্বানের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বলব, আমি প্রভুর দাস, তার ইচ্ছানুসারে আমার জীবনের গতি হোক। তাই বলতে চাই, আমার কোন যোগ্যতার কারণে ঈশ্বর আমাকে বেঁছে নেননি বরং আমি অযোগ্য হওয়া সত্বেও তিনি আমাকে বেঁছে নিয়েছেন এবং মনোনীত করেছেন: যেন আমি তার রাজ্যের জন্য কাজ করতে পারি। তাই আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ জানাই আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজরিও’কে তিনি আমাকে রোমে পাঠিয়েছেন এ লাইনে পড়াশুনা করতে এবং পড়াশুনার শেষ মূর্হুত পর্যন্ত আমাকে বিভিন্ন পরামর্শদানে সার্বিকভাবে সহায়তা দান করেছেন। সেই সাথে আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সকল ফাদার-সিস্টার, খ্রিস্টভক্ত, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের আন্তরিকতা ও প্রার্থনাপূর্ণ সহযোগিতার জন্য, যার কারণে আমি আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। সবশেষে বলব, ‘প্রাণ আমার পরমেশ্বরের মহিমা গান গায়।’ সকলের কাছে প্রার্থনা ও আর্শীবাদ চাই ঈশ্বরের একজন অযোগ্য সেবক হওয়া সত্ত্বে তিনি আমাকে যে সেবাদায়িত্ব দিয়েছেন। আমি যেন তা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যেতে পারি। বিশ্বের ছোট-বড় যেকোন দেশেই আমাকে পাঠানো হোক না কেন আমি যেন আমার ধর্মপ্রদেশ রাজশাহী তথা গোটা বাংলাদেশের সকল মানুষকে তাদের কাছে বয়ে নিয়ে যেতে পারি।”
বোর্ণী, শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার সুশান্ত কস্তা, গত ১ জুলাই ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ফাদার লিংকু গমেজ সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ পানামাতে ভাটিকানের দূতাবাসের সেক্রেটারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “ফাদার লিংকুর এই সাফল্যের জন্য আমি ও আমাদের বোর্ণীবাসী সকলেই গর্বিত ও আনন্দিত। নি:সন্দেহে এটি একটি আনন্দময় ও ঐতিহাসিক ঘটনা। বোর্ণীর সকল ফাদার, সিস্টার, তার আত্মীয় স্বজন ও মিশনবাসীর পক্ষ থেকে ফাদার লিংকু কস্তাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল শ্রদ্ধেয় ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও ফাদার লিংকু গমেজে এই গৌরবময় অর্জনে তার আনন্দ অনুভূতি ও অভিব্যক্তি তুলে ধরে বলেন, “এই নিয়োগ প্রাপ্তির পর পরই ফাদার লিংকু গতকাল আমাকে ফোন করেছিল। আমি তাকে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এই শুভ সংবাদটা পাওয়ার পর মনে অনেক আনন্দ পেয়েছি এবং গর্ববোধ করেছি এই ভেবে যে আমাদেরই ধর্মপ্রদেশের একজন ভ্রাতৃযাজক আজ ভাাটিকানের হয়ে বিশ্বজনীন মণ্ডলিতে তথা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য কুটনৈতিক সেবাদায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের ধর্মপ্রদেশ তথা আমাদের বংলাদেশ মণ্ডলিকেও বিশ্বের মাঝে তুলে ধরবে। বাংলাদেশ মণ্ডলির জন্য নি;সন্দেহে এটা একটি বড় আর্শীবাদ। ডিপ্লোমেটিক লাইনে পড়ালোখার জন্য ধর্মপ্রদেশের পক্ষ থেকে যখন আবেদন করা হয় তখন আমি পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর পরিচালক ছিলাম। বিধায়, বংালাদেশস্থ ভাটিকান দূতাবাসের পক্ষ থেকে ফাদার লিংকুর সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি নির্দিধায় সুপারিশ করেছিলাম। তাই আজ আমার আনন্দটা একটু বেশীই বলা যায়। প্রাথমিকভাবে ফাদার লিংকু তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। তবে এখানেই শেষ নয়। সবে মাত্র শুরু। আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। জীবনের দীর্ঘ পথযাত্রায় যাজকীয় জীবনে ও কর্মে সদা বিশ্বস্ত থাকতে পারলে ও সফল হলেই আনন্দটা পূর্ণতা পাবে। সেই লক্ষ্যেই ফাদারের জন্য প্রার্থনা ও শুভকামনা।”
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, যিনি ফাদার লিংকু গমেজকে নিয়ে আজকের এই দিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ফাদার লিংকু গমেজকে এ লাইনে পড়ালেখা করানোর জন্য সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাঁর দেখা সেই স্বপ্ন পূরণের আনন্দ অনুভূতি তুলে ধরে বিশপ মহোদয় বলেন, “আমি এই সংবাদ শুনে আমার মনে আজ অনেক আনন্দ, অনেক তৃপ্তি অনুভব করি। আমি ফা: লিংকু লেনার্ড গমেজ-এর এই সাফল্যে সত্যিই গর্বিত। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী যাজক যিনি ভাটিকান রাষ্ট্রের অর্থাৎ আমাদের পুণ্যপিতা পোপ মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসাবে কোন দেশের ভাটিকান দূতাবাসে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে নিয়োগ পেলেন। পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে পানামায় তাঁর প্রতিনিধি নিয়োগ করে আমাদের ধন্য করেছেন। আমি মনে করি বংলাদেশের জন্য এটা তাঁর একটি মূল্যবান উপহার। বংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলির আমরা সকলেই ফা: গমেজ-এর জন্য গর্বিত।
এই নিয়োগ নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলির পরিপক্কতা অর্জনের একটি চিহ্ন। আমি মনে করি এই পরিপক্কতা অর্জনের পথে আমাদের আরও অনেকদূর যেতে হবে। মিশনারীগণ আমাদের দেশে খ্রিস্টের বাণী বহণ করে নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁদের কাছ থেকে খ্রিস্টবিশ্বাসসহ অনেক কিছুই লাভ করেছি। এখন আমাদের সময় এসেছে দেওয়ার। আমাদের ফাদার, ব্রাদার, সিষ্টারগণ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে মিশনারী কাজ করছে। আমাদের ধর্মপ্রদেশের বেশ কয়েকজন ধর্মপ্রদেশীয় যাজক আমেরিকা ও ইউরোপে মিশিনারী হয়েছেন। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো এইভাবে আমাদের মিশনারী দায়িত্ব পালন করা। ভবিষ্যতে সুযোগ হলে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ থেকে আমরা পোপ মহোদয়ের কাজের জন্য আরো বেশী কর্মী দিয়ে তাঁেক বিশ্বমণ্ডলির সেবাদায়িত্ব পালেনে সহায়তা করব। ”
পরিশেষে, আমরা আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধেয় ফাদার লিংকু গমেজকে তার এই গৌরবময় অর্জনের জন্য আবার জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও স্বাগত। ফাদার লিংকু গমেজ প্রথম ফাদার যিনি ভাটিকানের একজন ডিপ্লোমেট্রিক হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছেন। তারই মধ্য দিয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ তথা গোটা বাংলাদেশের পরিচয় বিশ্ব মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। তাই, আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি। শুভ হোক তার এই নতুন কর্মজীবন ও পথ চলা।
ফাদার বাবলু সি. কোড়াইয়া, বরেন্দ্রদূত অনলাইন, রাজশাহী