(প্রয়াত ফাদার জয়গুরুর ১ম মৃত্যু বার্ষিকী স্মরণ)
–ফাদার দিলীপ এস. কস্তা
ফাদার পল ডি’রোজারিও; যিনি বাংলাদেশ মণ্ডলিতে ‘জয়গুরু’ নামে সমধিক পরিচিত এবং তিনি নিজেও জয়গুরু সাধক ও অনুসারী হিসাবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। ৩৮ বৎসরের যাজকীয় জীবনের অবসান ঘটিয়ে রোগ-শোকে ভুগে প্রাণবন্ত, রসিক, জনগণের যাজক ফাদার জয়গুরু ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়েছেন ১৩ জুলাই ২০২০ খ্রীষ্টাব্দে। একই দিনে সকাল বেলায় তারই সমসাথী আর্চবিশপ মজেস কস্তা, সিএসসি ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দেন।
ফাদার জয়গুরু আমাদের চাইতে ১৫ বছরের বড় এবং যাজকীয় জীবনে ১৪ বছর এগিয়ে ছিলেন। বলা যায় বৎসরের ব্যবধানটা একটু বেশীই। আমার যাজকীয় জীবনের পালকীয় কাজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে বেণীদুয়ার ধর্মপল্লীতে সহকারী পালক হিসাবে। তৎকালীন সময়ে বেণীদুয়ার ধর্মপল্লীর পালক ছিলেন ফাদার লুইজি স্কুকাতো, পিমে এবং ফাদার জয়গুরু। বয়স ও অভিজ্ঞতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে জয়গুরু হয়ে উঠলেন আমার বন্ধুসাথী। তার সাথে আলোচনা হতো- ধর্ম, সাহিত্য-সংস্কৃতি, খ্রিস্টমণ্ডলির সমাজসহ আরো অনেক বিষয়ে। উদার মনোবৃত্তির সাহিত্যপ্রেমিক মানুষটি ছাত্র জীবনে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। খুব সম্ভবত তিনি বাংলাদেশ মণ্ডলির একমাত্র যাজক যিনি বিএসসি পাশ করে যাজক হয়েছিলেন। খাবার টেবিল, টিভি রুম, ক্ষেত-খামার, অবসরকালীন সময়ে তার সাথে কথা হতো, আলাপ-আলোচনা হতো, কখনো কখনো তর্ক-বির্তক হতো। যুক্তি ও বিশ্বাসে তিনি ছিলেন অনড়। সব কিছুর ঊর্ধ্বে তিনি আমাকে ‘দাদা’ বলে ডাকতেন। প্রতিটি বড়দিনে তিনি নিজ হাতে ‘দাদা’ লিখে বড়দিনের কার্ড দিতেন। পালকীয় জীবনের প্রথম তিন বছর ফাদার জয়গুরুর সাথে থেকে অভিজ্ঞতার অনেক কিছুই শিখেছি, বুঝেছি ও অভিজ্ঞতা করেছি।
তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন মানুষটির জীবন সাধনায় ছিল মানুষ, খ্রিস্টমণ্ডলি ও উদার বিশ্বপ্রকৃতি । তার লেখা ভক্তিগীতি, কবিতা-গান, জীবন অভিজ্ঞতার স্ফূরণ ঘটেছিলো তার লেখা ৮টি বইয়ের মধ্য দিয়ে। অসুস্থতাকালীন তার সাথে কথা হয়েছে অনেকবার; কিন্তু বৈরী বাস্তবতার কারণে যথা সময়ে জয়গুরুর কাছে যেতে পারিনি। রাজশাহী মেডিকেলে যখন তাকে শেষবারের মতো দেখেছি তিনি বাকহীন, নিথর দেহে বেঁচে থাকার যুদ্ধে রত। যাজকীয় জীবনের রজত জয়ন্তীর খ্রিস্টযাগে তিনি আমাকে উপদেশ দানে বাধ্য করেছিলেন। আবার জয়গুরুর অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বিশপ মহোদয় উপদেশের সুযোগ দিয়েছিলেন যা আমার জীবনের স্মরণীয় একটি ঘটনা জয়গুরুকে ঘিরে। ফাদার জয়গুরু দেশজ চিন্তাধারায় স্থানীয় মণ্ডলি গড়ে তোলার পরিশ্রমী এক সেবক; যিনি আজ বোর্ণী ধর্মপল্লীর কবরভূমিতে মহা-নিদ্রায় চিরশায়িত। ঈশ্বর তার এই ভক্ত সেবককে চিরশান্তি ও বিশ্রাম দান করুন।