গত ১৩ জুলাই ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, রোজ মঙ্গলবার, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ ভবনে বোর্ণী মারীয়াবাদ ধর্মপল্লীর সন্তান প্রয়াত শ্রদ্ধেয় ফাদার পৌল ডি’রোজারিও (জয়গুরু)-এর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। সকাল ৬ টার সময় শ্রদ্ধেয় ফাদার পৌল ডি’রোজারিও (জয়গুরু)-এর আত্মার চিরশান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। প্রার্থনার পর পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় জের্ভাস রোজারিও। তিনি পবিত্র খ্রিস্টযাগের শুরুতেই ফাদারের আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন এবং রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ তথা বাংলাদের খ্রিস্টমণ্ডলিতে ফাদারের রেখে যাওয়া অবদানের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও, প্রয়াত আর্চবিশপ মজেস মন্টু কস্তা’র আত্মার চিরশান্তি কামনায় পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রার্থনা করা হয়। খ্রিস্টযাগের উপদেশে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ বলেন যে, ‘আর্চবিশপ মজেস মন্টু কস্তা এবং ফাদার পৌল ডি’রোজারিও মাতা মণ্ডলির জন্য অনেক অবদান রেখে গেছেন। তারা ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়ে মাতা মণ্ডলির প্রয়জনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের রেখে যাওয়া জীবনাদর্শ যেন আমরা আমাদের জীবনেও বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি।’ পবিত্র খ্রিস্টযাগে শ্রদ্ধেয় ফাদার পৌল ডি’রোজারিও-এর রচিত গীতাবলী’র গান গাওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, শ্রদ্ধেয় ফাদার পৌল ডি’রোজারিও (জয়গুরু)-এর জন্ম হয় ৩ নভেম্বর ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে মঠবাড়ী ধর্মপল্লীর বাশবাড়ি গ্রামে। তিনি যাজক পদে অভিষিক্ত হন ৩ জানুয়ারি ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বোর্ণী ধর্মপল্লীতে। গত ১৩ জুলাই ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে রাত ৮:৫০ মিনিটে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী বিশপ ভবনে মৃত্যুবরণ করেন। ১৫ জুলাই তাকে সমাহিত করা হয় বোর্ণী ধর্মপল্লীর কবরস্থানে। গান, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নিয়মিত কলামসহ বাংলা সাহিত্যের নানা শাখায় ছিল তার বিচরণ। তার রচিত ও প্রকাশিক বইগুলো হলো: মৌলিক খ্রিস্টিয় সমাজ (১৯৯৯), জয়গুরু (২০০৩), ধর্মপ্রদেশীয় যাজক (২০০৩), স্পন্দিত হৃদয়ের বন্দিত কাহিনী (২০০৭), ছন্দে পদে জীবন চেতনা (২০১০), উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র খ্রিস্টিয় সমাজের ইতিবৃত্ত (২০১০), মৃন্ময় পাত্র-বিবর্ণ কাহিনী (২০১৬), এবং জীবনের শেষ দিকে এসে রচিত ‘গুরু সাধনা:সুরে গানে’ (১৯ মার্চ ২০২০)। এছাড়াও, আমাদের ধর্মীয় গানের বই “গীতাবলীতে” বেশ কয়েকটি গান লেখেন এবং নিজেও সুর করেন। তিনি নিয়মিতভাবে প্রতিবেশীতে ‘মৃন্ময় পাত্র-বিবর্ণ কাহিনী’ কলামে লেখালেখি করতেন। ‘জয়গুরু যিশুর’ নাম সাধনা ছিল তার ধ্যান ও জ্ঞান। জয়গুরু যিশুকে নিয়ে তাই তিনি বেশ কয়েকটি গান লিখেছেন এবং সুরুও দিয়েছেন। তার অনেক ইচ্ছা ছিল তার গানের একটা সিডি বের করার। জয়গুরু যিশু তার এই শিষ্যকে চিরশান্তি দান করুন। (বি.দ্র.: বোর্ণী ধর্মপল্লীতে ফাদারের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। পরে ফাদারগণ, সিষ্টারগণ এবং খ্রিষ্টভক্তগণ কবরস্থানে গিয়ে তার আত্মার চিরশান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন এবং ফুল ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন।)

-বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: