শ্রদ্ধেয় ও স্নেহের খ্রিস্টভক্ত ভাইবোনেরা,
আমি আনন্দ সহকারে আপনাদের সাথে একটি সুখের বিষয় সহভাগিতা করছি। পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এবছরের জুলাই মাসের ৪র্থ রবিবারকে প্রথমবারের মত বিশ্ব দাদু–দীদা বা নানা–নানী দিবস (World Day of the Grand Parents) হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যা আগামী ২৫শে জুলাই ২০২১ খ্রি: পালন করা হবে। আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে পরিবারগুলোতে বৃদ্ধ দাদু–দীদা ও নানা–নানীদের একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। বিশেষভাবে একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে দাদু–দীদারা বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার স্থান দখল করে থাকেন। নাতি–নাতনীদের নিয়ে পরিবারে তারা আনন্দে ও নিশ্চিন্তে থাকতেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে বর্তমানে আমাদের দেশেও পশ্চিমা কৃষ্টির হাওয়া লেগেছে আর তাই এখন আর একান্নবর্তী পরিবার বেশী দেখা যায় না। ছেলেরা এখন বিয়ে করার পরেই আলাদা পরিবার গঠন করে ও বাবা–মাকে ত্যাগ করে। ভাগ্য ভাল হলে যে কোন একটি ছেলের সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা ও মা থাকার সুযোগ পান। মেয়েরা অবশ্য বিয়ে হলে অন্য পরিবারে চলে যায় এবং সেখানে স্বামী ও শশুর–শাশুড়ীর সঙ্গে বসবাস করার সুযোগ পায়। তবে তার স্বামী যদি বা যখন পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা তাদের বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ছেড়ে আলাদা থাকে। এখন আমাদের দেশে অনেক দাদু–দীদা ও নানা–নানী রয়েছেন যারা সন্তানদের কাছ থেকে অবহেলার শিকার হন এবং যথেষ্ঠ সেবা যত্ন পান না। তারা আর্থিক ও মনোকষ্টে জীবন যাপন করেন। যদিও তাদের ছেলে মেয়েরা ভাল অবস্থায় থাকে। দেখা যায় সম্পন্ন পরিবারেই বৃদ্ধ মা বাবাদেরর কষ্ট বেশী হয়; দরিদ্র পরিবারেই বরং তুলনামূলকভাবে প্রবীণগণ ভাল থাকেন।
এই প্রেক্ষাপটে “বিশ্ব দাদু–দীদা দিবসে” আমি রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরিবারগুলোতে যে দাদু–দীদা ও নানা–নানী রয়েছেন তাঁদের স্মরণ করি। পোপ ফ্রান্সিস এই দিবস উপলক্ষে যে বাণী দিয়েছেন সেখানে তিনি নিজেকে একজন দাদু বা নানা হিসেবে বলেছেন, “আমি সর্বদা তোমাদের সাথে আছি” (মথি ২৮:২০)। আমরা যারা প্রবীণ বা বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা হয়েছি, তাদের ভাগ্য ভাল যে ঈশ্বর আমাদের সুদীর্ঘ একটি জীবন দিয়েছেন যেন আমরা আমাদের পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের সংস্পর্শ লাভ করতে পারি। নাতি–নাতনীদের সঙ্গে আনন্দে জীবন কাঠাতে পারি। আর সন্তানদের উন্নয়ন দেখে গর্ব ও সুখ লাভ করতে পারি। ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ তাঁর এই অনুগ্রহের জন্য। সন্তানদের ও নাতি–নাতনীদের ঈশ্বরের কাছে ও তাদের বৃদ্ধ পিতা মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তাদের ভাগ্য কত ভাল যে তারা তাদের জীবনে তাদের বাবা মা পরিণত বয়স পর্যন্ত থাকছেন ও তাদের আশীর্বাদ করে যাচ্ছেন। অনেক হতভাগ্য সন্তান রয়েছে যাদের পিতামাতাগণ অপরিণত বয়সে তাদের দুঃখ–কষ্টের মধ্যে রেখে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। অথচ আমাদের পিতামাতারা এখনো আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমরা যেন তাদের বোঝা মনে না করি। তারা আমাদের ভালবাসা ও যত্ন দিয়ে মানুষ করেছেন, এখন আমাদের সুযোগ হয়েছে যেন আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাদের সেবা যত্ন করতে পারি। আমি রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সকল পরিবারের দাদু–দীদা ও নানা–নানীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই; তাদের সন্তানদের জন্য জীবনভর ভালবাসা ও ত্যাগস্বীকারের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের ফাদার, ব্রাদার ও সিষ্টারদের মধ্যেও প্রবীণগণ রয়েছেন আমি তাঁদের কথাও স্মরণ করি ও তাঁদের প্রতি ও তাঁদের সকল অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আসুন আমরা মণ্ডলিতে ও পরিবারের সকল প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদান করি এবং তাঁদের ভালবাসি ও যত্ন করি।
+বিশপ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, বাংলাদেশ।