কলাম : জন-জীবনের কথা

ফাদার সাগর কোড়াইয়া

সুবল এল. রোজারিও’কে নিয়ে লেখার আগ্রহ অনেকদিন থেকেই ছিলো। তার বিষয়ে লেখা অভিজ্ঞতার অভাবে হয়ে উঠছিলো না। এসএসসি পরীক্ষা লিখে রাজশাহী খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্রে পোস্ট এসএসসি কোর্সে অংশগ্রহণ করে প্রথম সুবল এল. রোজারিওকে দেখি। ক্লাস দিয়েছিলেন তিনি। ভুলে গিয়েছি ক্লাসের বিষয়বস্তু। তবে তার প্রাণবন্ত ও চমকপ্রদ ক্লাস নেবার ভঙ্গিমা বেশ আকর্ষণ করেছিলো। সে সময় আমরা ১৬৪ জন কোর্সে অংশগ্রহণ করি। যৌবনে পদার্পণ আমাদের মন বুঝতে পেরেছিলেন সুবল এল. রোজারিও। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো অর্ধদিনব্যাপী তার ক্লাসে অংশ নিয়েছি। মনে আছে- কোন ছাত্র বিরক্তবোধ করেনি সেদিন। তিনি আমাদের ধরে রাখতে পেরেছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় আর সুবল এল. রোজারিওকে দেখিনি। পরবর্তীতে বোর্ণীতে যখন দেখি তিনি অসুস্থ্যপ্রায়। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চলেন। বিবাহ প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের ক্লাস নিতে এসেছিলেন। সেখানেও তার মধ্যে দেখেছি কাল ও মূহুর্তকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা অসম্ভাবী। শিক্ষার্থীদের চাহিদা কি তা তিনি বুঝতে পারতেন এবং সে অনুসারেই ক্লাস দিতেন।
শুনেছি- বাড়িতে তিনি বিছানাগত। সময় করে বনপাড়াতে দেখতে যাই একদিন। আরেকটি উদ্দেশ্য- গল্পোচ্ছলে কিছু সংগ্রহ করা। হয়তো অনেক কিছু পাইনি; তবে যা পেয়েছি তার মূল্য মাপকাঠিতে পরিমাপ অযোগ্য। মণ্ডলি ও মণ্ডলির বাইরে এক নামে সবাই চিনে সুবল এল. রোজারিওকে। তার বর্ণিল জীবনে আনন্দোপলব্ধিটা বেশী। সেখানে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন অবলীলায়। জানার এবং জানানোর অলিগলিগুলো আপনি উন্মোচিত করেছেন। সম্পর্কের নতুন দিগন্ত তার মহানুভতা প্রকাশ করেছে। সবাই একাগ্রে বলবে তার দেবার অভিনবত্ব। তিনি একনিষ্ঠ এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী। নিজের সত্ত্বা যা ভালো বুঝেছে তাই তিনি অকপটে করেছেন। পাকিস্তানের করাচী সেমিনারীতে থাকাকালীন তার নিজ হাতে লেখা দিনপঞ্জিকাগুলো পড়ে বলতে পারি- বহুগুণে গুণান্বিত সুবল এল. রোজারিও দেশ-মাটি-মাকে নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে ভালোবাসেন।
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সুবল এল. রোজারিও’র দাদু কানাই রোজারিও ভাই-বোন ও সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে ঢাকার হারবাইদ গ্রাম থেকে বনপাড়াতে আসেন। দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করে কানাই রোজারিও বনপাড়াতে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন। সুবল এল. রোজারিও ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। আন্তনী রোজারিও এবং মারীয়া গমেজের ৬ সন্তানের মধ্যে সুবল এল. রোজারিও সর্বকনিষ্ঠ। পিতামাতা শখ করে নাম রেখেছিলেন সুবল লুইস। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সুবল জমিতে বাবাকে সাহায্য করতেন। লক্ষ্য পরিবারের অভাব-অনটন নিরসনে পিতাকে সহায়তা প্রদান। ইতিমধ্যে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে বালক সুবল সাধু যোসেফের প্রাথমিক বিদ্যালয়, বনপাড়াতে যেতে শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই সুবলের মধ্যে সংস্কৃতির প্রতি একটা টান জেগে উঠেছিলো। বালক বয়সেই সুবল যিশুর পালায় অংশগ্রহণ করতেন। অভিনয়ে তিনি বালক যিশু হতেন। এছাড়াও ফিলোমিনার পালায় সুবল ফিলোমিনা এবং যিশুর দুঃখভোগের পালায় শয়তানের ভূমিকায় অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন। সুবলের অভিনয় দক্ষতা দেখে বাবা চাইতেন সুবল যাত্রাদলে অভিনয় করে অর্থ উপার্জন করুক। কিন্তু মায়ের ইচ্ছা ছিলো ভিন্ন; মা চাইতেন সুবল পড়াশুনা করে জীবনে উন্নতি করবে। তাই মা সুবলের নামে ক্রেডিটে বই করে দেন। একদিন ফাদার ভেরপেল্লী ও পিনোস, পিমে বাড়ির পাশে রোগীকে কমূনিয়ন দিতে এসে সুবলকে কাজ করা অবস্থায় দেখতে পান। সেদিন ফাদারদ্বয় সুবলের মধ্যে হয়তোবা ভবিষ্যত যাজকের ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন; তাই ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সুবল মাত্র দেড় টাকা পুঁজি নিয়ে সাধু ফিলিপের উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুরে যান। নতুন পরিবেশ, স্কুল এবং সেমিনারীর গঠন জীবনের নিয়ম-কানুনে সুবল নিজেকে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছিলেন। ১৯৬২-১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর সেন্ট ফিলিপস উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যান।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করার পর সুবল ম্যাথিস হাউজে অবস্থান করে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করছিলো। সুবল এল. রোজারিও তখন টগবগে যুবক। রক্তে আগুন ঝরে। সমস্ত সত্ত্বায় দেশপ্রেম জাগ্রত। নটর ডেমে ডিগ্রীতে ভর্তিও হন। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে ক্লাস হতো না বললেই চলে। পরে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বেই পশ্চিম পাকিস্থানের করাচীর ক্রাইস্ট দ্য কিং সেমিনারীর কলেজ থেকে ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন শাস্ত্র পড়াশুনা করার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। সুবল এল. রোজারিও তখন পশ্চিম পাকিস্থানে; সাথে অন্যান্য বন্ধু বিশেষভাবে ফাদার জ্যোতি গমেজ, ফাদার যোসেফ মারান্ডী, জন মারান্ডী, বার্থলোমেও সাহাসহ আরো অনেকেই একসাথে সেমিনারীতে ছিলেন। নিয়মিত দেশের খবরা-খবর পান। মন পড়ে থাকে দেশের মাটিতে দেশমাতৃকার টানে। দেশপ্রেমের রূপ স্পষ্ট প্রকাশিত হয় সুবল এল. রোজারিও’র লেখা বেশ কয়েকটি ডায়েরী থেকে। সুবল এল. রোজারিও গান লিখতেন আর বার্থলোমেও সাহা সে গানে সুরারোপিত করতেন। সে সময় থেকেই তিনি প্রচন্ড সিগারেট খেতেন। সুবল এল. রোজারিও’র দেশপ্রেম এতটাই গভীর ছিলো যে, পণ করেছিলেন বাংলাদেশে না আসা পর্যন্ত মাথার চুল কাঁটবেন না; তিনি সেই পণ রেখেছিলেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্থানের কাবুলের খাইবার গিরিপথ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং কলকাতা হয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের তেজগাঁও বিমান বন্দরে নেমে প্রথমেই দেশের মাটি চুম্বন করে মাটি মাথায় মাখেন। বিমান বন্দর থেকে চলে যান বর্তমান ম্যাথিজ হাউজে। সেখানে পৌঁচ্ছে জানতে পারেন যে, বেশ আগেই বাবা মারা গিয়েছেন। পরবর্তীতে রমনা সেমিনারীতে অবস্থান করে নটর ডেম কলেজে ডিগ্রী পড়েন। ডিগ্রী পড়াকালীন তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন যে , তিনি ব্রতীয় জীবনে প্রবেশের জন্য আর অগ্রসর হবেন না। তৎকালীন দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের বিশপ মাইকেল রোজারিও’র সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। রমনা সেমিনারী ত্যাগ করার সময় আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস গাঙ্গুলীর সাথে দেখা। আশীর্বাদ নিতে গেলে আর্চবিশপ গাঙ্গুলী বলেন, “আবার যখন তোমার ফাদার হতে ইচ্ছা হবে চলে আসবে। ঢাকা ধর্মপ্রদেশ তোমার জন্য খোলা”।
সুবল এল. রোজারিও’র জীবনটা ছিলো বর্ণিল অভিজ্ঞতায় ভরপুর। সেমিনারী থেকে বের হয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে সবাই অর্থকষ্টে দিনানিপাত করছে দেখে তিনি নটর ডেম কলেজে ফিরে ফাদার আমোস হুইলার, সিএসসির সাথে দেখা করেন। ফাদারের বদান্যতায় নটর ডেম কলেজে চাকুরী পান এবং বিকালে ইংরেজী কোর্সে শিক্ষকতা করতেন। এভাবে দুই বছর পড়ানোর পর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুন দড়িপাড়ার কানন লুসি গমেজকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। এরই মধ্যে তিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে বাংলায় মাষ্টার্স পড়াশুনা শুরু করেন। কিন্তু মায়ের অসুস্থ্যতার কারণে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেননি। তবে পশ্চিম পাকিস্থানে থাকাকালীন সময়ে তার লেখালেখির যে অভ্যাস গড়ে উঠেছিলো তা এখানে এসেও অব্যাহত ছিলো। এছাড়াও তিনি ঢাকা কলেজ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সের প্রভাষক ও ঢাকা, ওয়াইএমসি-তে চাকুরী করেন। ওয়াইএমসির চাকুরী থেকে ইস্তেফা দিয়ে আবার বাড়িতে এসে বসেন। এ সময় তিনি ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট যোসেফ প্রাথমিক বিদ্যালয়, বনপাড়ার প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এরই মধ্যে সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর তৎকালীন পরিচালক ফাদার জ্যোতির অনুরোধে তিনি সাপ্তাহিক প্রতিবেশীতে যোগদান করেন। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কলকাতায় চিত্রবাণী, আকাশ বাণীতে রেডিও ও সিনেমা প্রোডাকশনে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৮-৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুবল এল. রোজারিও সাপ্তাহিক প্রতিবেশী পত্রিকা, বাণীদীপ্তি স্টুডিও এবং রেডিও ভেরিতাসের প্রোগ্রাম প্রোডাকশন কর্মে জড়িত ছিলেন। এই কাজও তাকে বেশীদিন আটকে রাখতে পারেনি। এরপর তিনি তৎকালীন কারিতাস রাজশাহীর কর্মকর্তা পল রোজারিও’র পরামর্শে কারিতাসে যোগদান করেন। ১৯৮১-১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কারিতাসের সাংবাদিকতা, উন্নয়ন শিক্ষাকর্মকর্তা, স্বাস্থ্যশিক্ষার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক এবং খন্ডকালীন ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। সুবল এল. রোজারিও একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। তিনি কাজের মাঝে সুখানন্দ খুঁজতেন। কিন্তু সুখানন্দ না পেলে নির্ধিদ্বায় সে কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতেন। কারিতাসের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে তিনি ১৯৯৯-২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ‘শাপলা’ ও ‘আভা’ নামক সংস্থার সহকারী পরিচালক এবং পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন। সমাজ ও মণ্ডলির জন্য তার রয়েছে ব্যাপক অবদান। সভা-সেমিনারে তার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ছিলো সত্যিই আকর্ষণীয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে সুবল এল. গোপালপুরে নিজস্ব প্রাইভেট কনসালটেন্সী “ডেভেলপমেন্ট এসিস্ট্যান্স সেন্টার” পরিচালনা করেছেন। তৃতীয় লিঙ্গ হিজরাদের সামগ্রিক উন্নয়নে তার রয়েছে ব্যাপক অবদান। আর এই সময়ের মধ্যেই তিনি মটরসাইকেল দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। মাসাধিককাল ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে যন্ত্রণাময় চিকিৎসায় ব্যস্ত ছিলেন। বর্তমানে বাড়িতে বিছানাগত অবস্থায় রয়েছেন।
সুবল এল. রোজারিও’র লেখার হাত অসম্ভব মেধাসম্পন্ন। সব্যসাচী লেখক বললে কোনভাবেই অত্যুক্তি হবে না। সাহিত্যের সকল ধারায় তিনি বিচরণ করেছেন। কবিতা, গান, ছড়া, নাটক-নাটিকা, কলাম, প্রবন্ধ ও গল্পই লেখাই ছিলো তার সাহিত্যপ্রেম। সুবল এল. রোজারিও’র ৩ জুন ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘সত্যবাক’ বইয়ের পটভূমির একটি অংশ থেকে নেওয়া, “সেই সময় থেকেই সাংবাদিকতার সুবাদে বাংলাদেশের ক্যাথলিক সব ধর্মপ্রদেশ ও পল্লীগুলোতে পরিচিত হওয়া এবং বাঙালী আদিবাসী-উপজাতি মানব সমাজের জীবন ঘনিষ্ঠ হতে সক্ষম হই। তাদের সাথে মিশতে গিয়েই লক্ষ্য করি প্রত্যেক সমাজের মাঝে সত্য-সুন্দর ও ন্যায্যতার প্রকট অভাব। বিভিন্ন সমাজ ও পরিবার জীবনযাত্রার ‘সত্য’ প্রতিষ্ঠার বড্ড অভাব। তাই, জাতি-ধর্ম-বর্ণ সব মানুষের কাছে ‘সত্যবাণী’ সাহিত্য নিয়ে হাজির হওয়ার সাধ জাগে। আর, শুরু করি ছদ্ম নামে “সত্যসুবচন” কলাম নিয়ে লেখা”। নির্ধিদ্বায় বলতে পারি, পাকিস্থানের করাচী সেমিনারীতে থাকাকালীন সুবল এল. রোজারিও’র লেখা ডায়েরীগুলোর প্রতিটি পৃষ্ঠায় রয়েছে সাহিত্যের পরশমণি। বাংলা ভাষা জ্ঞান, শব্দচয়ন, বাক্য গঠন, হাতের লেখা ও অন্যান্য অনুসঙ্গ সত্যিই অনন্য ও অসাধারণ। দেশছাড়া একজন সত্যিকার প্রেমিকের রূপ ডায়েরীর পাতায় ফুটে উঠেছে। মা-মাটি ও মাতৃভূমির প্রতি হাহাকার তার কলমের খোঁচায় উঠে এসেছে অবলীলায়।
মানুষ যত সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসে ততই মনে হয় কিছুই হলো না। সব্যসাচী সুবল এল. রোজারিও’র ঠিক তাই উপলব্ধি। যিনি কাল ও মূহুর্তকে বুঝেন তিনি মানুষের মনের তরঙ্গে ভাসতে জানেন। তরী কোন তীরে ভিড়বে তার অদম্য দক্ষতা আপনি তখন এসে যায়। সুবল এল. রোজারিও’র বিষয়ে বলতে পারি- তিনি যেখানেই সভা-সেমিনার চালিয়েছেন তার অভিনবত্ব ও ধরে রাখার ক্ষমতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। মূহুর্তে তিনি সবার মন পাঠ করে ফেলতে পারতেন। তপ্ত দুপুরের ঘুম ঘুম ভাবও তার কথার মাধুর্যে দূর হয়ে যেতো। আজ তিনি শয্যাগত। কিন্তু মন শয্যাগত নয়। এখনো পর্যন্ত মনের যে জোর ও শুদ্ধতা তা কথার মাঝে প্রকাশ পায়। তিনি দৃঢ়তা নিয়ে বলেন, “মানুষকে কোনদিন কুবুদ্ধি দিইনি। আলোতে ছিলাম আলোতেই থাকতে চাই”। সুবল এল. রোজারিও’র সবলতা ছিলো যে, তিনি কখনো কাউকে ‘না’ বলতে পারতেন না। শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, মধ্য বয়ষ্ক, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আপনার কথা এতো পছন্দ করেন কেন; জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, “আমি নিজেই মিডিয়া, আমার ভাষা যদি তারা না বুঝে তাহলে লাভ কি। আমি আগে এডুকেটেড হতাম তারপর অন্যকে এডুকেশন দিতাম- সবার মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করতাম”। আরো নানাবিধ কথার ফাঁকে তিনি জানালেন যে, “আমার জীবনে আপসোস বলতে কিছুই নেই-ঈশ্বর যা করেছেন তাই ঠিক। তবে পরজীবন যদি থাকে তাহলে “সন্ন্যাসী” হওয়ার ইচ্ছা আছে”। সুবল এল. রোজারিও’র সে ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা জানি না; কিন্তু এটা সত্য তিনি সমাজ ও মণ্ডলির প্রতি অবদান রেখে ও মানুষের মন বুঝে হয়ে উঠেছেন কাল ও মূহুর্তের নায়ক।

Please follow and like us: