কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী যে মহাতান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে তাতে বিশ্বের মানুষ ও প্রতিষ্ঠান কম বেশি প্রভাবিত হয়েছে এবং ফল ভোগ করতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। অন্যান্য দেশের খ্রিস্টমণ্ডলির মত আমাদের মণ্ডলিও এই করোনা ভাইরাসের দ্বারা সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে যখন কোভিড-১৯, বৈশ্বিক মহামারি সংক্রমণ শুরু হয় তখন অন্যান্য সকলের মত খ্রিস্টবিশ্বাসীরাও আতঙ্কিত ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল- এখনও সেই ভয় কাটেনি। বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল প্রতিষ্ঠানের মত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আলাদা থাকা, কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া, লক ডাউন, সাট ডাউন, ইত্যাদির কবলে পড়ে গীর্জা ও ধর্মপল্লীগুলোতে লোক সমাগম বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাথলিক গীর্জায় খ্রিস্টযাগ, প্রার্থনা-উপাসনা অনুষ্ঠান, সাক্রামেন্ত প্রদান, ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে বলে তার প্রয়োজনে ঈশ্বরকে ডাকে; সঙ্কট মুক্তির জন্যও ঈশ্বরের কাছে মানুষ অনুনয় বিনয় করে, কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করে ও মানত করে। করোনাকালের এই মহাসংকটেও মানুষ প্রার্থনা করেছে ঘরে বসে। ঘরে এক সাথে প্রার্থনা করতে পারলেও সমাজের অন্যদের সাথে মিলে প্রার্থনা করার সুযোগ হয়েছে কম; গীর্জায় আসা তো দূরেই থাকুক। কিন্তু তার পরেও ধর্মপল্লীর যাজকগণ, ধর্মব্রতীগণ, কাটেখিস্টগণ ও অন্যান্য পালকীয় কর্মীগণ সীমিত পরিসরে, সীমিত আকারে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ধর্মশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও তা-ই হয়েছে।

মহামারির এই সময় সরকারিভাবে ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনের কারণে মানুষ গীর্জায় বা ধর্মপল্লীতে আসতে পারেনি বলে, খ্রিস্টভক্তদের আধ্যাত্মিক ক্ষুধা মিটাবার জন্য ধর্মপল্লী ও ধর্মপ্রদেশের উদ্যোগে সীমিত আকারে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে অনলইন, ইউটিউবে খ্রিস্টযাগ ও ধর্মপোদেশ, অনলাইনে ধর্মশিক্ষার ক্লাশ, জুম সেমিনার, ইত্যাদিসহ বিভিন্ন পালকীয় কর্মকান্ড। তবে আমাদের খ্রিস্টভক্তদের আর্থিক অবস্থা সীমিত থাকায় এন্ড্রয়েট টাচ্ মোবাইল নাই ফলে অনলাইন খ্রিস্টযাগ ও ধর্মোপদেশসহ অন্যান্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণ পুরো সম্ভব হয়নি। তাছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক জটিলতার কারণে তাদের পক্ষে এইসব আধুনিক প্রযুক্তির সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। পালকীয় পত্র ও আরও অন্যান্য ধর্মীয় পত্রিকা অনলাইনে দেওয়া হয়েছে, তবে তা-ও সীমিত সংখ্যক খ্রিস্টভক্ত এই সেবা গ্রহণ করতে পেরেছে। তাই প্রযুক্তি নির্ভর পালকীয় সেবার উপর এখনও নির্ভর করা যাচ্ছে না। অনেকের আবার এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ঘোর আপত্তি রয়েছে।

তার পরেও যারা পালকীয় কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, বিশেষ করে যাজকগণ, ধর্মপল্লীগুলোর খ্রিস্টভক্তদের সেবাদানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে খ্রিস্টভক্তদের সহায়তা পেলে, তাদের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণে আরও বেশি পালকীয় সেবাদান সম্ভব। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, করোনাকালে খ্রিস্টভক্তদের অনেকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের সৎকার করার জন্য অনেকেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছে। তবে কিছু সাহসী খ্রিস্টভক্ত এই সৎকার কাজে যাজকদের সহায়তা করেছে। এখন টিকা বেড়িয়েছে, অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই টিকা গ্রহণ করেছে এবং করছে। সরকারের উদ্যোগে হয়তো এক সময় সকলেই টিকা গ্রহণ করে ফেলবে। তব নানা সীমাবদ্ধতার কারণে টিকারদানের গতি খুব বেশি নয়। তাই বাংলাদেশে সকলের টিকা গ্রহণ কবে যে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া কোভিড পরবর্তী সময়ের বহুমুখী সংকট আমাদের পিছনে টেনে ধরবে সে কথাও ভুলে গেলে চলবে না।

তাই এই সময়ের জন্য আমাদের ধর্মপল্লীগুলোর পালকীয় পদ্ধতি কেমন হবে, তা এখনই ভেবে দেখতে হবে। তাই নিন্মোক্ত পালকীয় নির্দেশনাগুলো আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

(১) স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সকলকে অনুপ্রাণিত করুন : করোনা ভাইরাস এখনও তার মহামারিরূপ তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও মানুষ তাদের জীবীকার তাগিদে হোক বা অন্য কোন কারণে হোক তারা এখনও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন। তাই এই সময় যাজকদের ও সকল পালকীয় কর্মীদের উচিত সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য খ্রিস্টভক্তদের শিক্ষা দেওয়া ও অনুপ্রাণিত করা। মানুষকে বলতে হবে ‘নিজে নিরাপদ থাকুন; অন্যকেও নিরাপদ রাখুন’। আর তা পালকীয় কর্মীদের অনুশীলন করতে হবে নিজের জীবনে। এই কাজে যাজকদের ও পালকীয় কর্মীদের হতে হবে একেকজন মডেল, যাদের দেখে অন্যেরা অনুপ্রাণিত হবে।

(২) মাথা ঠান্ডা রাখুন ও শান্ত থাকুন : মহামারির এই ভীতিকর অস্থিরতার সময় পালকীয় কর্মীদের স্থির শান্ত থাকতে হবে। এই অবস্থায় নিজের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও ভয় দমন করে তাদের উচিত অন্যদের সাহস জোগানো ও সহায়তা প্রদান। বাস্তবতা থেকে তারা পালিয়ে যাবে না বা পিছ পা হবে না, মানুষের প্রয়োজনে যাজক ও পালকীয় কর্মীরা ঝুঁকি নিবে- এটা সবাই আশা করে। এরই নাম হলো ‘পালকীয় ভালবাসা’।

(৩) স্ব-শরীরে না হলেও, যাদের প্রয়োজন তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই আমরা এই কথা শুনে আসছি, “দূরত্ব বজায় রাখুন” বা “সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন”। এর ফলে আমাদের সমাজে, এমন কি পরিবারেও, অন্যদের এড়িয়ে চলার একটা অভ্যাস গড়ে উঠছে। যাজকদের ও পালকীয় কর্মীদের জানা দরকার যে, এই সময়ও আমাদের পালকীয় সাক্ষাতের প্রয়োজন রয়েছে। পরিবারের যারা অসুস্থ্য বা প্রবীণ ব্যক্তি তাদের কাছে গিয়ে হাত ধরে কথা বলা বা সান্ত্বনা দেওয়ার নিশ্চয় কোন তুলনা নেই; কিন্তু তা হয়তো এখন সম্ভব নয়, তবে এখন তো ডিজিটাল মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সেই কাজটি কিছুটা হলেও করা যায়। তাই সেই উপায়টি ব্যবহার করুন বিচক্ষণভাবে।

(৪) ভালবাসা দিয়ে অপরের কথা শুনুন : মহামারির এই কঠিন মূহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার অন্যদের প্রতি মনোযোগী ও সংবেদনশীল হওয়া। আর কিছু করতে না পারলেও আমরা একটা টেকসই ও শক্তিশালী উপহার মানুষকে দিতে পারি, আর তা হলো মনোযোগ দিয়ে ও সংবেদনশীল হয়ে কারো ‘কথা শোনা’। যাজকগণ ও ধর্মপল্লীর পালকীয় কর্মীরা এই কোভিডের সময় মনোযোগ দিয়ে মানুষের কষ্টের ও দুঃখের কথা শুনতে পারে। এই ভালবাসাপূর্ণ শ্রবন একটি ফলপ্রসূ পালকীয় কাজ হতে পারে।

(৫) সমাজ গঠনের পথ দেখান : অপরকে সাহায্য করার মানবিক ইচ্ছা আমাদের প্রত্যেকেরই আছে, কারো কারো সেই ইচ্ছাটা প্রবল। কিন্তু বড় ধরণের অসুবিধা ও কঠিন চ্যালেঞ্জ দেখলে আমাদের অনেকের সেই ইচ্ছাটা দমে যায়। কিন্তু পালক ও পালকীয় কর্মীদের মনে রাখতে হবে যে, এটা কিন্তু পরস্পরকে বা একে অপরকে কাছে টেনে ও সমর্থন ক’রে শক্তিশালী সমাজ গড়ে তোলার একটা সুযোগও হতে পারে। যে সকল যাজকগণ সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করতে পারেন, তাঁরা এই কাজটি ভাল করতে পারেন।

(৬) দূরদর্শী হতে মানুষকে সাহায্য করুন : সকল মানুষকে, বিশেষভাবে খ্রিস্টভক্তদের স্মরণ ক’রে দিন যে ঈশ্বর আমাদের জগত সৃষ্টির সময় থেকেই ভালবেসে আসছেন, তিনি আমাদের ভবিষ্যতেও একইভাবে ভালবাসবেন। এই ভালবাসার উপর আমরা আশা বা ভরসা রাখতে পারি। এই করোনা কালে ঈশ্বর কিভাবে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন আমরা যেন তা বুঝতে চেষ্টা করি। এটা আমাদের জন্য একটি সুযোগ ঈশ্বরের কাছে আসার জন্য ও তাঁর উপর নির্ভর করার জন্য। আমাদের জীবনে সুখের বা দুঃখের সময় ঈশ্বর আমাদের মাঝেই থাকেন- কখনও ছেড়ে যান না। তাই শুধু এখন যা ঘটছে তা নয়, পালকীয় কর্মীদের কাজ হলো মানুষকে ভবিষ্যতের জন্য একটি আশার বার্তা বহন করে আনা। শুধু ঈশ্বরই সেই আশার উৎস ও লক্ষ্য।

(৭) নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিন : হাসপাতাল চ্যাপলেইন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের বলে থাকেন যে, যারা যেভাবে জীবন যাপন করে তারা সেইভাবেই মৃত্যুবরণ করে। সব সংকটই যে মারাত্মক তা নয়, কিন্তু আমরা তো জানি সবাইকে একদিন বিদায় নিতে হবে। চাইলেও আমরা কেউ চিরকাল জীবিত থাকব না। মানুষের জন্য যখন চরম সংকট, যখন তারা ভীতির মধ্যে পড়ে। তখন পালক ও যাজকদের কাজ হলো অনুপ্রেরণা দেওয়া যেন তারা তাদের সর্বোত্তম মূল্যবোধগুলো রক্ষা করে চলতে পারে। সংকট বা ভীতি মানুষের জীবনে আসতেই পারে, যেমন করোনা ভাইরাস এসেছে। কিন্তু এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়, বরং ঈশ্বরের উপর নির্ভর ক’রে মানুষকে ভালবেসে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া এবং এই উদ্দেশ্যেই আমাদের জীবনের মুখোমুখী হতে হয়।

(৮) মৃত্যু সম্পর্কে কথা বলতে ভয় করবেন না : যে সমস্ত মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত, তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমরা প্রায়ই মৃত্যু ভয়ের কথা বলে থাকি। কথা প্রসঙ্গে যদি সে ধরণের কথা এসে যায় তা বন্ধ করা উচিত নয়। মানুষের শোকের সময় বা তার আগে ও পরে তাদের সাহায্য করা উচিত যেন তারা ভাল মত জীবন কাটাতে পারে ও জীবনের সব কিছুই উপভোগ করতে পারে। মৃত্যুর বিষয় আলাপ- জীবনের সব দিক ভাল মত কাটাতে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যাজক ও পালকীয় কর্মীদের এই কঠিন কাজটি দক্ষতার সাথেই করতে হবে, পিছিয়ে যাওয়া তাদের কাজ নয়।

(৯) প্রার্থনা করুন : পবিত্র শাস্ত্র পাঠ করা ও প্রার্থনা করা যাজকদের ও পালকীয় কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধু জন মেরী ভিয়ান্নী শিক্ষা দিয়েছেন যে খ্রিস্টানদের প্রধান কাজই হলো ‘প্রার্থনা করা ও ভালবাসার কাজ করা’। ত্যাগস্বীকার করা ছাড়া তা সম্ভব নয়। যারা উদ্বিগ্ন বা যাদের অভাব অনটন বেশি তাদের মুখের ভাষায় প্রার্থনা করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ; এতে তারা পরিস্থিতির বিষয় সচেতন হতে পারে। কিন্তু মানসিক আঘাত ও কঠিন সমস্যার সময় বেশি কথা বলা অর্থহীন মনে হতে পারে। এখানে অংশগ্রহণ প্রার্থনা মত সহায়ক হতে পারে। আমরা এরূপ প্রার্থনায় ঈশ্বরের জীবনে ও পরস্পরের জীবনে অংশগ্রহণ করি- প্রার্থনা সভায় উপস্থিত হয়ে এটাই প্রমান করি। সেই সময় নীরব ও অনুধ্যানমূলক প্রার্থনাও অর্থপূর্ণ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যাজক ও পালকগণ তাদের জীবন সাক্ষ্য বহন করতে পারেন।

(১০) অন্যদেরও সঙ্গে নিন : যাজক বা পালক হিসেবে আপনাকে একাই যে সব করতে হবে তা নয়। আপনারাও অন্যদের মত দূর্বল- আপনার জীবনেও ক্লান্তি ও মৃত্যু আসবে। তাই সমাজের বা ধর্মপল্লীর অন্যদেরও আহ্বান করুন যেন তারা আপনার সঙ্গে করোনা কালের এই সংকটে পালকীয় সেবা কাজে অংশ গ্রহণ করে। তাদের সঙ্গে পালা পালা করে কাজ করুন। নিজের দিকেও খেয়াল রাখুন; নিজের প্রয়োজনের দিকেও মনোযোগী হোন। এই কোভিডের সংক্রমণ কতদিন থাকবে তার কোন নিশ্চিয়তা নেই। সামনের দিনগুলোতে পালকীয় সেবাকাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখুন। ঈশ্বরের সঙ্গে সর্বদা যুক্ত থাকুন; কারণ তাঁর সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারব না।

করোনা ভাইরাস বা কোভিডের এই সময়টা ধর্মপল্লী ও ধর্মপ্রদেশের পালকীয় জীবনে একটি কঠিন ও কষ্টকর অভিজ্ঞতা। এই অবস্থায় যাজকদের ও পালকদের জীবনেও বিপুলভাবে প্রভাব ফেলেছে। তাদের জীবনধারা ও সেবাকাজের ধরন পাল্টে গেছে। কিন্তু তাদের পালকীয় কাজ বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। করোনাকালে জীবন যাপনের পদ্ধতি পাল্টেছে, কাজের গতি কমেছে, মানুষে মানুষে দূরত্ব বেড়েছে, মৃত্যুর ভীতি বেড়েছে, ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েছে, দরিদ্রদের ক্ষুধার হাহাকার বেড়েছে, বিভিন্ন কারণে মানুষ বেপরোয়া হয়ে পড়ছে, ইত্যাদি। পরিবারের সংকট ও বিপদের সময় বাবা তো নিশ্চুপ ও অলস বসে থাকতে পারে না। যাজকগণ ধর্মপল্লীর খ্রিস্টভক্তদের বাবারই মত। ধর্মীয় ও পালকীয় কাজের মাধ্যমে যাজকগণ সেই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ভালবাসা ও ত্যাগস্বীকার ছাড়া এই পালকীয় কাজ করা সম্ভব নয়। ভালবাসা ও ত্যাগস্বীকার আছে বলেই এই পালকীয় কাজ সুন্দর ও বেশি গ্রহণযোগ্য । এই করোনাকালে ও করোনা পরবর্তী সময়ে পালকীয় সেবা হতে হবে “সৃজনশীল ভালবাসায়” মন্ডিত। এজন্য যাজকদের হতে হবে “সৃজনশীল নেতা” যে প্রতিদিনই রূপান্তরিত ও নতুন হয় আর রূপান্তরিত সমাজ ও স্থানীয় মণ্ডলি গঠনের জন্য নব উদ্যমে পালকীয় সেবার নতুন নতুন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। এর জন্য তাঁদের সদিচ্ছা ও মনোবল থাকা চাই। ঈশ্বরের আর্শীবাদে সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। পাঠকদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা।

বিশপ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী ক্যাথলিক ডাইয়োসিস, বাংলাদেশ।

 

Please follow and like us: