ফাদার প্যাট্রিক গমেজ
পূর্বকথা : আগষ্ট মাসের ১৫ তারিখে ক্যাথলিক মণ্ডলি ধন্যা কুমারী মারীয়ার স্বর্গোন্নয়ন মহাপর্বটি সমাসমারোহে পালন করে। এই বছর ১৫ আগষ্ট রবিবার ; সাধারণ কালের বিংশ রবিবার ; তবে আদিষ্ট দিন হিসেবে পালন করার নিদের্শ রয়েছে ক্যাথলিক মণ্ডলির পোপীয় উপাসনা ও সাক্রামেন্ত বিষয়ক পোপীয় দপ্তর থেকে। ক্যাথলিক পুঞ্জিকায় এইভাবেই উল্লেখ রয়েছে।
এই উপলক্ষ্যে এই বছর আমার মনে কিছু চিন্তা (thoughts) জমা হল কিছু প্রশ্ন (questions) জমাট হল অনেক সময় অনেকের মারীয়ার উপর মন্তব্য জেনে অন্যেদো মাধ্যমে, যেমন, “মারীয়া নয় যীশুই আসল!” “ক্যাথলিকরা মারীয়াকে পূজা করে!” এবং এমন আরো। তাই মনে করলাম মারীয়া ও মারীয়ার এই মহাপর্বটিকে ঘিরে একটি পর্যালোচনা, সুস্পষ্ট ধারণা তথা ক্যাথলিক মণ্ডলি পবিত্র ঐতিহ্য ও সুদৃঢ় শিক্ষা এবং আমাদের জীবনে ধন্যা কুমারী মারীয়া যে একটি অনুকরণীয় Role Model তা আধ্যাত্মিক অনুধ্যান ঢংএ সবার সামনে তুলে ধরা। আমার এই লিখনী প্রচেষ্টা-পর্যালোচনা ও অনুধ্যানটির চারটি ধাপ রয়েছে: প্রথম ধাপ: কুমারী মারীয়ার প্রতি ক্যাথলিক বিশ্বাসগত ধর্মীয় আচরণ। দ্বিতীয় ধাপ: কুমারী মারীয়ার স্বর্গোন্নয়নের উপর ক্যাথলিক অভ্রান্ত সত্য ও মহাপর্ব হিসাবে উদ্যাপন। তৃতীয় ধাপ: মহাপর্বে আমাদের জীবনের জন্য শিক্ষা ও সাধনা ও চতুর্থ ধাপ: মারীয়ার প্রতি ভক্তি-প্রার্থনা ও মারীয়া তীর্থ ।
প্রথম ধাপ: কুমারী মারীয়ার প্রতি ক্যাথলিক বিশ্বাসগত ধর্মীয় আচরণ-স্পষ্ট কথা
(ক) ক্যাথলিকরা কি মা মারীয়াকে পূজা করে?
প্রথমেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে যে, ক্যাথলিক খ্রীষ্টবিশ্বাসীগণ ধন্যা কুমারী মারীয়াকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে; সন্মান প্রদর্শন করে। কিন্তু কখনই পূজা করে না। কুমারী মারীয়ার মূর্তি বা ছবি সামনে সাজিয়ে রেখে স্বর্গীয় মাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে; তাঁর কাছে প্রার্থনা করে। ভক্তি-শ্রদ্ধা হিসাবে মূর্তিও সামনে বাতি জ্বালিয়ে দেয়; প্রতিকী মূর্তি যা স্বর্গীয় মায়ের দিকে মন চলে যায়, তার পা চুম্বন করে ; স্পর্শ করে এবং আরো বহুরূপেই স্বর্গীয় মায়ের আশীর্বাদ গ্রহণ করে এবং স্বর্গীয়া মা মারীয়া আশীর্বাদ করেন। আবারও বলি, মূর্তি ক্রুশটি প্রতীক বা মাধ্যম ; আমাদের নিয়ে যায় বাস্তবে স্বর্গে যে কুমারী মারীয়া নিত্য বিরাজমান, আমাদের মধ্যস্থতা করেন যিনি তাঁর কাছে। মূর্তির সামনে ভক্তি-শ্রদ্ধার এই ধর্মীয় আচরণ সেই স্বর্গীয় মাকে ঘিরে; মূর্তি বা ছবি মাত্র ক্রুশটি মাধ্যম; সহায়ক। তাই স্পষ্ট কথা: ক্যাথলিকগণ মূর্তিপূজা করেন না। তারা কাকে পূজা করে ? কার উপাসনা করে?
পূজা একমাত্র ঈশ্বরকে পূজা করে (একেশ্বরবাদ)। এবং সেই এক ঈশ্বরের পূর্ণ প্রকাশ তাঁর পুত্র যীশুখ্রীষ্টকে যিনি মন্ত্রপূত রুটির আকারে বাস্তবে উপস্থিত যীশুকে। (প্রত্যেক ক্যাথলিক গীজায় দেখতে পাই পবিত্র সিন্দুক যার মধ্যে পবিত্র সাক্রামেন্তে উপস্থিত যীশু)।
গীর্জায়/উপাসনালয়ে প্রবেশ করে প্রথমে আমরা সাক্রামেন্তে উপস্থিত যীশুকে হাটু দিয়ে বা পঞ্চাঙ্গ বা আনত মস্তকে পূজা করি। এরপর মা মারীয়ার মূর্তির কাছে যাই; প্রকাশ করি ভক্তি শ্রদ্ধা বিভিন্ন আচরণ দিয়ে।
স্পষ্ট কথা: ক্যাথলিকরা মারীয়াকে পূজা করে না; ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। মারীয়ার কাছে প্রার্থনা করে।
(খ) মারীয়ার মূর্তিকে ধূপ দেওয়া যাবে? মালা পরানো যাবে? ফুল দেওয়া যাবে?
অবশ্যই; সন্মানের, ভক্তি-শ্রদ্ধার চিহ্ন। ধুপ দেওয়া যাবে? ধূপদানী দিয়ে দুইবার দুইবার করে ছয়বার বা ধূপ জ্বালিয়ে রাখা। মারীয়া ও সাধু-সাধ্বীদের প্রতি এমন শ্রদ্ধা-ভক্তি করা যাবে। ফলে আমরা মা মারীয়ার আশীর্বাদ লাভ করি।
(মৃত্যুর পর বাবা-মায়ের ছবি আমরা বাঁধিয়ে রাখি; ফুল দিয়ে সাজাই; বাতি জ্বালাই স্মরণ করি আমার সেই জীবন্ত বাবা-মাকে! আবেগভরা অন্তরে কতকিছুইনা বলি বাবা-মাকে বিড়বিড় করে !)
তবে, সাবধান! কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজ সেবক, কোন কল্যাণমূলক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব , তিনি যত বড়ই কাজ করুক না কেন, তাঁর সামনে কখনই ধুপ জ্বালানো যাবে না। গীর্জা ঘরে না রেখে গীর্জার বাইরে কোন এক সুন্দর-সন্মানযোগ্য ও সজ্জিত অবস্থায় সেই ব্যক্তির ‘ফ্রেমবন্দী ছবি’ স্থাপন করা যায় এবং উপাসনার পর সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা সন্মান করা যায়; প্রাসঙ্গিক গান, কবিতা ইত্যাদি করা যায়। তবে, খ্রীষ্টযাগ বা প্রার্থনা সভায় সেই মহান ব্যক্তির/ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করা যায় (উদ্দেশ্য প্রার্থনা)।
স্পষ্ট কথা: মা মারীয়ার মূর্তি বা ছবির সামনে সাজানো যাবে: ভক্তি-শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ
(গ) মা মারীয়াকে কেন ক্যাথলিক খ্রীষ্টবিশ্বাসীরা এমন আন্তরিক ভক্তি-শ্রদ্ধা করে? এর উত্তর রয়েছে লুকের মঙ্গলসমাচারেঃ লুক ১:৩৯-৫৬ “মারীয়ার জয়গান বা প্রশংসাগীতি” বা ল্যাটিনে বলা হয় Magnificat ইংরেজীতে The Canticle of Mary.
মারীয়া তখনই এই জয়গানটি তথা এই কথাগুলো উচ্চারণ করেছিলেন যখন দূতসংবাদের (লুক ১:২৮-৩৮) পর মারীয়া তাঁর আত্মীয়া এলিজাবেথের বাড়ীতে গেলেন এবং আনন্দের আতিশয্যে আবেগভরা হৃদয়ে মারীয়াকে ‘প্রভুর মা’ হিসাবে উল্লেখ করেনঃ “সকল নারীর মধ্যে ধন্য তুমি, আর ধন্য তোমার গর্ভফল। আমার এমন সৌভাগ্য হল কী করে যে, আমার প্রভুর মা আমার কাছে এলেন !” (লুক ১:৪২-৪৩)। অর্থাৎ মারীয়া প্রভু যীশুর মা; তাই গর্ভে থেকেও এই সত্যে দীক্ষাগুরু যোহন আনন্দে নেচে উঠে (লুক ১ঃ৪৪)।
এই মারীয়ার প্রতি ঈশ্বরের এই মনোনয়ন ঘটনাটিকেই মারীয়া ঈশ্বরের মহান কাজ হিসাবে ব্যক্ত করেছেন।‘ প্রভুর জয়গানে’ আমরা পাই মারীয়া বলছেনঃ “আজ থেকে যুগে যুগে সকলেই ধন্য ধন্য বলবে আমায় ! আহা, আমার জন্যে সর্বশক্তিমান কত মহান কাজই না করেছেন ! পুণ্য, আহা, পুণ্য তাঁর নাম! ”
মা মারীয়া যীশুর মা হিসাবে মনোনীত। তাই আন্তরিক ভক্তি-শ্রদ্ধা।
(ঘ) দুইবার মা মারীয়া পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়েছেন (filled with the Holy Spirit): (১) গাব্রিয়েল দূতের আশ্বাসবাণীঃ “পবিত্র আত্মা এসে তোমার উপর অধিষ্ঠান করবেন, পরা’পরের শক্তিতে আচ্ছাদিত হবে তুমি” (লুক ১:৩৫)। (২) তাঁরা (শিষ্যেরা) সবাই তখন একপ্রাণ হয়ে নিবিষ্টচিত্তে প্রার্থনায় দিন কাটাতে লাগলেন—শুধু তাঁরা নয়, তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন নারী, যীশুর মা মারীয়া নিজে এবং যীশুর ভাইয়েরাও” (শিষ্যচরিত ১:১৪)। তাই আন্তরিক ভক্তি-শ্রদ্ধা।
(ঙ) মারীয়া প্রসাদ-পূর্ণা (লুক ১: ২৮) full of grace, embodiment of all virtues in her. সব গুণই তাঁর মধ্যে, তাঁকে ঘিরে। তাই আন্তরিক ভক্তি-শ্রদ্ধা।
(চ) মারীয়া, সহমুক্তিদায়িনী (coredemptor) : মুক্তি পরিকল্পনায় মারীয়া পূর্ণ সম্মতি দান করেছেন (Fiat) ; পুত্রের সাথে জন্ম থেকে ক্রুশের তলা পর্যন্ত মানবমুক্তি কাজে সহযোগিতা করেছেন। দুজনেই দুঃখ ব্যথা গ্রহণ ও সহণ করেছেন: যীশু শারিরীক মারীয়া অধিকতর মানসিক যন্ত্রণা। তাই আন্তরিক ভক্তি-শ্রদ্ধা।
স্পষ্ট কথা: ক্যাথলিকরা মা মারীয়াকে পূজা করে না; মারীয়ার প্রতি তাদের রয়েছে আন্তরিক ভক্তি-বিশ্বাস-শ্রদ্ধা।
দ্বিতীয় ধাপ: কুমারী মারীয়ার স্বর্গোন্নয়নের উপর ক্যাথলিক অভ্রান্ত সত্য ও মহাপর্ব হিসাবে উদযাপন।
১। পোপ ১২শ পিউস তাঁর সার্বজনীন পত্র Munificentissimus Deus (Most Bountiful God সবচেয়ে উদার ঈশ্বর) উল্লেখ করেছেন যে, “মারীয়া জীবনান্তে ঈশ্বর-জননী অমলোদ্ভবা মারীয়া সশরীরে স্বর্গে উন্নীত হন” এই ধর্মতত্ত্ব বহু শতক ধরে খ্রীষ্টানেরা বিশ্বাস সহকারে মেনে আসছে। এবং প্রাচীন উপাসনায় এই ধর্মতত্ত্বটি উদযাপিতও হয়েছে। ১৯৫০ খ্রীষ্টাব্দে স্বর্গোন্নয়নের উপর এইধর্মতত্ত্বটি অভ্রান্ত সত্য ক্যাথলিক অভ্রান্ত সত্য (Dogma) ব’লে ঘোষণা করেন। ঐশতাত্ত্বিক কারণগুলো হল:
২। সাধারণ মানুষের, বেশকয়েকজন প্রেরিত শিষ্যদেরও কবর রয়েছে; মারীয়ার এমন তেমন শারিরীক কবর (bodily tomb/grave) নেই।
৩। পুরাতন নিয়মে স্বর্গে উঠে যাচ্ছে এমন ঘটনার উল্লেখ আছে: বিশেষভাবে প্রবক্তা এলিয়।
৪। ঐশতাত্ত্বিক কারণ: (ক) আদি পাপের ফলে মানুষের মৃত্যু, তার মৃতদেহের সমাধি, ধীরে ধীরে শরীর ক্ষয় হতে থাকে, মাটির সাথে মিশে যায়। কিন্তু মারীয়া তো আপন অস্তিত্বেও প্রথম মুহূর্ত থেকেই আপাপবিদ্ধা, পূর্ণ-পাপমূক্ত; মারীয়া নির্মলগর্ভাগমন (Immaculate Conception) ।
(খ) তিনি প্রসাদে পূর্ণা। তিনি তাঁর পুত্রের মত তিনিও মৃত্যুর বন্ধন থেকে পূর্ণ মুক্ত হবেনই। তিনি সকল মানুষের মধ্যে প্রথম সর্ববন্ধন-শূন্য। মুক্তি-কাজে পুত্রের সহযোগী। তাই তাঁর স্থান স্বর্গে পুত্রেরই সাথে।
স্পষ্ট কথাঃ মা মারীয়ার স্বর্গোন্নয়ন হল একটি অভ্রান্ত সত্য Dogma। ক্যাথলিকগণ মারীয়ার স্বর্গোন্নয়ন বিশ্বাস করে আবশ্যিকভাবে, সুদৃঢ়ভাবে, বিশ্বাস করতে বাধ্য।
তাই ক্যাথলিকগণ ১৫ আগষ্ট মা মারীয়ার স্বর্গোন্নয় স্বর্গেন্নিয়ন ঘটনাটি মহাপর্ব হিসাবে মহাসমারোহে উদ্যাপন করে।
তৃতীয় ধাপ: মারীয়ার স্বর্গোন্নয়ন মহাপর্বে আমাদের জীবনের জন্য শিক্ষা-বাণী এবং আমাদের সাধনা
আজ ১৫ আগষ্ট। আজ আমরা এই মা মারীয়ার স্বর্গোন্নয়ন মহাপর্ব পালন করছি। আজকের এই মহাপর্বে আমাদের জন্য যে বাণী Life Message তা হল: মা মারীয়া আমাদের জন্য Role Model.
মারীয়া ঈশ্বরের পরিকল্পনার প্রতি বাধ্য, তিনি নম্র, তিনি ধ্যাণী, তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী; সর্বপরি মারীয়া পবিত্র। তিনি শোকান্বিতা, তিনি যীশুর মা, মাতৃত্বে ভরা। এইভাবেই মা মারীয়া আমাদের সবার জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ বা Role Model.
আমাদের সাধনা হবে:
– মা মারীয়া পবিত্রা; নির্মলা; নিস্কলংকা। আমরা যেন প্রত্যেকেই নিজের দেহকে পবিত্র রাখি, বিশুদ্ধ রাখি। দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গ তথা কথা, কাজ, শব্দচয়ন, আচরণ যেন পবিত্র ও বিশুদ্ধ হয়। ব্যঙ্গ তামাসা, অশোভনীয় কথা, বাক্যালাপ, ক্রিয়াকলাপ, বেশভূষা বর্জন করি। নিজেকে এমনিভাবেই পরিশুদ্ধ ও শোভনীয় রাখি।
পরম বিশুদ্ধা মাতা; আমাদের মঙ্গল প্রার্থনা কর।
– যাজকগণের উপাসনিক পবিত্রতা: খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করার সময় যাজকগণ যেন যাজকীয় পোষাক পরিধান করেন : সার্টের উপর শুধু স্টোল পরা উপাসনার সৌন্দর্যকে ব্যহত করে; বা আল্ব পরিধান না করে Religious Habit পরিধান করা উপাসনার পরিশুদ্ধতাকে নষ্ট করে।
– খাওয়ার টেবিলেও যেন আমাদের আচরণগত ও শিষ্টাচারগত দিকগুলো যেন পবিত্রতা, বিশুদ্ধতাকে ক্ষুন্ন না করে।
– আমরা সকলেই পবিত্র উপাসনালয়ের পবিত্রতা যেন বজায়ে রাখি। অভিষিক্ত ব্যক্তিগণ যাজকীয় বা উপাসনার পোষাক নিয়েই যেন খ্রীষ্টযাগ শেষে কোন ধন্যবাদ বা বিদায় অনুষ্ঠানের মত কার্যক্রমে যুক্ত না হই; উপাসনালয় ; যাজবীয় উপাসনার জিনিসপত্র ও পোষাক sacred vessels and sacred vestments সবই পবিত্র। । জনগণ আমাদের বাহ্যিক কিন্তু authentic পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা দ্বারা আকর্ষিত হবার কথা। পক্ষান্তরে অপ্রীতিকর কোনকিছু দিয়ে যেন বিঘ্ন না ঘটাই।
– আমাদের মন, আত্মা মনোভাব যেন পবিত্র রাখি: সাধু পল বলেন যে, আমাদের আত্মা হল পবিত্র আত্মার মন্দির।
– মারীয়ার জীবনে চ্যালেঞ্জ: পুত্রের জন্মের জন্য জায়গা না পাওয়া; মিশরে পলায়ন; ক্রুশের তলায় দাঁড়িয়ে ক্রুশবিদ্ধ পুত্রকে দেখা; মৃতদেহ কোলে নেওয়া; শোকান্বিতা মারীয়া ভেঙ্গে পড়েন নি। মারীয়ার জীবন আমাদের দুঃখ-শোকে শক্তি জোগায়; নিরাশায় আশা আনে। আমরাও একে অন্যের বিপদে-আপদে শক্তি হইয়ে দাঁড়াই।
– মারীয়ার নম্রতা: মারীয়ার মুখের জবাব নম্রতায়, বাধ্যতায়: দেখ আমি প্রভুর দাসী, তোমার বাক্য অনুসারেই আমার গতি হউক।” বর্তমানকালে মানুষের আত্মঅহম প্রবণতাই অধিক এবং তার প্রকাশ বিচিত্র। মারীয়া বিনম্র হয়েছেন। প্রভুর মা ! প্রশংসা করেছেন ঈশ্বরের, নিজেকে নয়। আমরা যেন নম্র হই কথা কাজে আচরণে, মনোভাবে।
– মারীয়ার বিশ্বস্থতা: যা সম্মতি দিয়েছিলেন, তাতে পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন। আমরা যেন নিজ নিজ জীবন আহবানে বিশ্বস্ত থাকি।
– পূর্ণ মুক্তি: মারীয়ার জীবন পূর্ণ-মুক্ত জীবন (total liberation): আমাদের বন্দী করে রাখে আমাদের পাপ তথা ঘৃণিত ক্রিয়াকলাপ; অশ্লীল কথাবার্তা, মন্দ কামনাবাসনা, মন্দ অনৈতিক কামনা-বাসনা; জৌলুশ জীবন; মদ্যপান, জুয়া খেলা ; তথ্য প্রযুক্তির অনৈতিক ব্যবহার: নীল ছবি বা পর্ণগ্রাফী, বিকৃত যৌন আচরণ; আরো হাজারো বদ্ অভ্যাস (evil habits) দ্বারা একজন বন্দী হয়ে থাকতে পারে। আমরা প্রতিদিন সাধনা করতে পারি এমন দাসত্ব থেকে নিজেকে/নিজেদের মুক্ত রাখতে। মা মারীয়ার পূর্ণ-মুক্তি ; আমাদের চেতনা ও শক্তি!
– মা মারীয়ার কাছে প্রার্থনা: মারীয়া আমাদের মা; আমরা তাঁর সন্তান: সন্তান হিসাবে আমরা মায়ের জীবন ধ্যান করি, অনুকরণ করি। মায়ের কাছে অনুনয় করি, প্রার্থনা করি। ঐতিহ্যগত প্রার্থনা: রোজারীমালা প্রার্থনা; দূতের বন্দনা প্রার্থনা (তিন প্রণাম মারীয়া); “স্মরণ কর” The Memorare প্রার্থনা; ভক্তিপুস্প বইয়ে মা মারীয়াকেন্দ্রিক অনেক প্রার্থনা রয়েছে।
অনেক মানুষ মারীয়ার কাছে বা মারীয়ার মধ্যস্থতায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে অনেক ফল পেয়েছে।
Marian Shrine/Grotto and Marian Pilgrimage মারীয়ার কাছে উৎসর্গকৃত তীর্থস্থান visit করতে পারি, তীর্থে যোগদান করতে পারি মানত দিতে পারি। এগুলোর দৃশ্যগত বা অদৃশ্যগত ফল আছেই।
মা মারীয়ার তীর্থ স্থানগুলো:
(১) রক্ষাকারিণী মা মারীয়া তীর্থস্থান ; নবাই বটতলা ধর্মপল্লী, রাজশাহী
(২) বারোমারী মারীয়ার তীর্থস্থান, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ
(৩) দিয়াং মা মারীয়ার আশ্রম ও তীর্থস্থান; চট্টগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশ।
(৪) মা মারীয়ার তীর্থস্থান, রাজারামপুর, দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশ।
আরো থাকতে পারে।
====================================
সবাইকে জানাই মা মারীয়ার স্বর্গোন্নয়ন মহাপর্বের আন্তরিক শুভেচ্ছা।