গত ২০ আগষ্ট আমাদের সকলের হৃদ- প্রিয়,বন্ধুপ্রতিম বনপাড়া ধর্মপল্লীর সকলের প্রিয় পাল-পুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু আমাদের সকলকে কাঁদিয়ে ইশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।আমাদের সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন আমাদের প্রিয় পাল-পুরোহিত। পরলোকগত ফাদার বিকাশের স্মরণে গত ২৩/৪/২১ খ্রিস্টাব্দ রোজ সোমবার বিকাল ৪.৩০ মিনিটে বনপাড়া ধর্মপল্লীতে “স্মরণ সভা” আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের সন্মানিত চেয়ারম্যান ডাক্তার সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বনপাড়া পৌরসভার সন্মানিত মেয়র কে এম জাকির হোসেন, নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি -২ এর চেয়ারম্যান ওয়াসেক আলী সোনার,অধ্যক্ষ ডক্টর ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ, ভবানীপুর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার যোসেফ মিস্ত্রি , বোর্নী ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার সুশান্ত ডি কস্তা,  পোপ ষষ্ঠ পল সেমিনারীর পরিচালক ফাদার লিপন প্যাট্রিক রোজারিও, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, বনপাড়া ধর্মপল্লীর সহকারী পাল-পুরোহিত ফাদার পিউস গমেজসহ অন্যান্য গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দ ও বনপাড়া ধর্মপল্লীর বেশ কিছু সংখ্যক খ্রিষ্টভক্ত।

স্মরনসভার শুরুতেই প্যারিশ কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান রতন পেরেরার উপস্থাপনায় অতিথিদের আসনগ্রহণ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় এবং এর পরপরই শ্রদ্ধেয় ফাদার সুশান্ত ডি কস্তা প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ফাদারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ও অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এরপর ফাদারের আত্মার কল্যানার্থে প্রার্থনা পরিচালনা করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার শৈবাল ফ্রান্সিস রোজারিও এবং ফাদার টিটু ডেভিড গমেজ।

স্মরণ সভার সভাপতি ডক্টর ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ তার বক্তব্যে বলেন যে,”শ্রদ্ধেয় ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু ছিলেন একজন আদর্শ মনুষ্যত্ব,অতিথিপরায়ন ,সৎ এবং বিনয়ী। তিনি ছিলেন একজন মানবপ্রেমী যিনি সবসময় মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন, সকল মানুষের প্রতি তার আলাদা শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিল। প্রয়াত ফাদার বিকাশের আত্মা যেন স্বর্গে চির শান্তি লাভ করেন।”

সভায় আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে তারা ফাদার বিকাশের গুণাবলীসমূহ তুলে ধরেন। তাদের অভিব্যক্তি গুলো ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলো-

  • কে এম জাকির হোসেন বলেন-” ফাদার বিকাশ ছিলেন একজন আদর্শ পালক। তিনি সকল ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করতেন এবং পৌরসভার যাবতীয় কাজে আন্তরিকতার সাথে সহায়তা করেছেন।আমরা তাকে হারিয়ে ব্যথিত।”
  • ডাক্তার সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন – “সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন, সবসময় সকল কাজে আমাদের পাশে ছিলেন।আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। “
  • ফাদার যোসেফ মিস্ত্রি  বলেন – “ফাদার বিকাশ ছিলেন আমাদের হৃদয়ের মানুষ। সবসময় অন্যের প্রশংসা করতেন। ভাই এবং দাদার সম্পর্ক ছিল আমাদের দুজনের। আমি একটা কথা বলতে চাই মানুষকে জীবিত থাকতে তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তি প্রদর্শন করুন।”
  • সুব্রত রোজারিও বলেন -“ভালবাসার মানুষকে হারিয়েছি।তার হাসি এখন ও চোখে ভাসে।”
  • মি. আতাউর রহমান মৃধা  বলেন – “অতি সহজে আপন করে নিতেন।যখন যে সাহায্যের জন্য এসেছি সবসময় সাহায্য করেছেন ।”
  • ফাদার লিপন রোজারিও বলেন – “অত্যন্ত আন্তরিক, মিশুক এবং অতিথিপরায়ন ছিলেন। “
  • মি.ওয়াসেক আলী সোনার বলেন – “আমরা মানুষেরা মৃত্যুর সারিতে দাঁড়িয়ে আছি। পাল-পুরোহিত ফাদার বিকাশের মৃত্যু আমরা সহজে মেনে নিতে পারছি না। তিনি সকলকে নিয়ে চিন্তা করতেন এবং সকলের মন জয়ও করেছিলেন। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে তার সাথে কাজ করে আমি অনেক সাহায্য পেয়েছি। “
  • ফাদার সুশান্ত ডি কস্তা বলেন -” প্রয়াত ফাদার বিকাশ  কথা না বলে থাকতে পারতেন না। শেখার আগ্রহ ছিল অনেক। তার বিনম্রতা আমার জন্য অনুকরণীয়। ধর্মপ্রদেশের জন্য ফাদারের অনেক অবদান ছিল যা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
  • মি.ক্লেমেন্ট কস্তা বলেন – “সবার অন্তরে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি। আমরা তার মতো নমনীয় হওয়ার চেষ্টা করব। তার ভালবাসায় আমরা যেন চলতে পারি এই প্রার্থনা করি “।
  • মি.বেনেডিক্ট গমেজ বলেন – “তার মতো ইউনিক ও মেধাবী সেমিনারয়ান তখনকার আমলে একজনও পাইনি। তিনি যেমন মেধাবী ছিলেন তেমনি মুখস্থ বিদ্যায় প্রখর ছিলেন। তিনি আমাদের বনপাড়া ধর্মপল্লীর জন্য সুন্দর একটি কবরস্থান করেছেন, কুমরুল উপ-ধর্মপল্লীর জন্য একটি সুন্দর স্কুল তৈরি করেছেন যা আদিবাসীদের প্রতি তার দরদ ও ভালোবাসার প্রকাশ পেয়েছে । তিনি কাউকে কষ্ট দিতে জানতেন না।”
  • শিবদাস স্যানাল স্যার বলেন – “ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন একজন আন্তরিক ব্যাক্তিত্ব। বিকাশ নামের অর্থের সাথে তার জীবনের পুরোপুরি মিল রয়েছে।”
  • মি. একরাম হোসেন বলেন – “তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে কখনো মানুষের ধৈর্য্যচুত্তি হতে দিতেন না । আমরা রক্তের ভাই না ঠিকই, কিন্তু আমাদের সম্পর্ক  ছিল ভ্রাতৃপ্রতিম। তিনি ছিলেন অল্পভাষী একজন ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ ।”
  •  মিসেস সুলেখা গমেজ বলেন – “তাঁকে কোনদিন কোন ব্যাপারে উত্তেজিত হতে দেখেনি। ফাদারের কথা গুলো এখনো শুধু কানে বাজে।”
  • সিস্টার নৈবেদ্য বলেন – “ফাদার ছিলেন একজন মানব ও প্রকৃতিপ্রেমী। তার উদারতা ছিল সীমাহীন। ঈশ্বররের সৃষ্ট জীবজন্তুকে অনেক ভালোবাসতেন ও যত্ন নিতেন। স্কুলের কোন কাজের জন্য তার কাছে গিয়ে কখনো তার মুখ থেকে না শব্দটি শুনতে পাই নি।”

পরিশেষে , বনপাড়া ধর্মপল্লীর সহকারী পাল-পুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার পিউস গমেজ এর প্রার্থনার মাধ্যমে স্মরণ সভার সমাপ্তি ঘোষণা করে সকলকে জলযোগে অংশ নিতে অনুরোধ করেন। স্মরণ সভা বাস্তবায়নে বনপাড়া ধর্মপল্লীর ফাদার সিস্টারগণ, ধর্মপল্লীর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য – সদস্যা এবং গ্রাম প্রধানগণ,বনপাড়া সেমিনারীর পরিচালকবর্গ, বনপাড়া কেন্দ্রীয় যুব সংগঠন ও বোর্ডিং এর ভাইয়েরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন । তাই তাদের সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সকলের প্রিয় পাল-পুরোহিত ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু’ র আত্মা স্বর্গে চির শান্তি লাভ করুন।

– ফাদার পিউস গমেজ

Please follow and like us: