গত ২৮ আগষ্ট ২০২১ খ্রিস্টাব্দ রোজ শনিবার বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীতে পরিবারের রাণী মারীয়া’র নামে নির্মিত গ্রটো শুভ উদ্বোধন করা হয়। গ্রটো উদ্বোধনের শুরুতে পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও এসটিডি, ডিডি। সহার্পিত খ্রিস্টযাগে আরও উপস্থিত ছিলেন বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফা: ফাবিয়ান মারান্ডী, সহকারী পাল-পুরোহিত ফা: বাপ্পী এনরিকো ক্রুশ, ফা: হেনরী পালমা ও ফা: সিজার কস্তা। খ্রিস্টযাগে আরও উপস্থিত ছিলেন বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীতে কর্মরত শান্তিরাণী সিস্টার সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ এবং বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ৫০০ শত’র অধিক খ্রিস্টভক্ত। খ্রিস্টযাগের পরপরই গ্রটো আশির্বাদ ও শুভ উদ্বোধন করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও এবং তাকে সহায়তা করেন পাল-পুরোহিত ফা: ফাবিয়ান মারান্ডী। আশির্বাদ প্রার্থনার পর প্রথমে লিপি ফলক উন্মোচন করেন ও পরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও ও ফা: ফাবিয়ান মারান্ডী।

পরিবারের রাণী মারীয়া গ্রটো উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশপ মহোদয় তার বক্তব্যে বলেন- আমাদের প্রতিটি পরিবারের ন্যায় বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীতেও মা মারীয়াকে পেয়েছি এবং তার জন্য একটি নতুন গ্রটো নির্মাণ করেছি। মায়ের প্রতি আমরা যেমন শ্রদ্ধা দেখাই, তার সান্নিধ্য পেতে ভালোবাসি ও গল্প করি; তেমনি এই নতুন গ্রটোর মা মারীয়া আমাদের বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর প্রতিটি গ্রামের সকল খ্রিস্টভক্তের মা হিসেবে লাভ করেছি। তাই মাকে যেন শুধু ঘরে রেখে না দেই বরং মার কাছে এসে প্রার্থনা করি। কারণ, মা মারীয়া হচ্ছেন আমাদের সকলের মা। তার কাছে আমরা যে কেউ নির্দিধায় আসতে পারি এবং তার একান্ত সান্নিধ্যে থেকে সময় কাটাতে পারি। মা মারীয়াকে আমরা রাণীও বলে থাকি; তবে পবিত্র পরিবারের রাণী মারীয়া জগতের রাণীদের মতো নয়। মা মারীয়া হচ্ছেন স্বর্গীয়া রাণী এবং তার কাছে সকলেই আসতে পারে, তার ভালোবাসার চরণ স্পর্শ করে আশির্বাদও লাভ করতে পারে। তাই, আমরা প্রার্থনা করব বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি খ্রিস্টভক্তকেই পরিবারের রাণী মারীয়া যেন তার নিরাপদ আশ্রয়ে ঘিরে রাখেন।

পবিত্র পরিবারের রাণী মারীয়ার গ্রটো নির্মাণ করার পেছনে পাল-পুরোহিত ফা: ফাবিয়ান মারান্ডী যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা হলো- মারীয়া হলেন আমাদের যিশু খ্রিস্টের মা এবং স্বর্গারোহণের আগে মা মারীয়াকে দেখিয়ে তার প্রিয় শিষ্য যোহনকে বলেছিলেন, “ঐ দেখ তোমার মা”- অর্থাৎ এরই মধ্য দিয়ে যিশু তার মা মারীয়াকে আমাদের মা হিসেবে দান করেছেন। মা মারীয়া যেভাবে তার নিজ সন্তান যিশুকে রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন, বিপদে-আপদে যে ভাবে তার পাশে থেকেছেন, কালভেরী পথে যাত্রা করেছেন, ক্রুশ মৃত্যুর সহযাত্রী হয়েছেন, এমনকি পুনরুত্থানের আনন্দও পেয়েছেন। তেমনি, মা মারীয়াও যেন বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর সকল খ্রিস্টভক্তের সকল দুঃখ-কষ্ট, আনন্দের সহভাগী হন এবং পরিবারের মারীয়া আমাদের বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর এই বৃহত্তর পরিবারের সবাইকে রক্ষা করেন ও তার ছত্রছায়ায় রাখেন। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই গ্রটো নির্মাণ করতে আমাদের মোট টাকা ব্যয় হয়েছে ৮,১০,৮৬৩/- (আট লক্ষ দশ হাজার আটশত তেষট্টি টাকা) টাকা। আর সত্যিই আমি আনন্দিত ও ধন্যবাদভরা হৃদয়ে কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের বেনীদুয়ার মিশনের সকল খ্রিস্টভক্তকে। কেননা, আপনারাই নিজেরা এই গ্রটো নির্মাণ কাজে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি অর্থ যোগান দিয়েছেন অর্থাৎ ৩,০৪,৩২০/- (তিন লক্ষ চার হাজার তিনশত বিশ) টাকা, যা আমাদের অন্যান্য খ্রিস্টভক্তদের কাছে একটা আদর্শ স্বরূপ। আপনারা যে মা মারীয়াকে ভালোবাসেন  এবং মারীয়া নিজ নিজ পরিবারে রাণীর আসনে বসিয়েছেন। তারই একটি বাস্তব প্রমাণ এই গ্রটো নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে পারস্পারিক সহযোগীতার মধ্য দিয়ে মণ্ডলির কাজে আরও সক্রিয় হয়ে উঠবেন। পরিশেষে, পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়, ফাদার-সিস্টারগণ ও সকল খ্রিস্টভক্তদেরকে বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

গ্রটো আশির্বাদ ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী সকলের জন্যেই জলযোগের ব্যবস্থা করা হয়।

 

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

 

Please follow and like us: