গত ৪ সেপ্টেম্বর, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে মধ্য ভিকারিয়ার স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে দিনব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় শিক্ষা কমিশন ও কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল। প্রার্থনার মাধ্যমে প্রোগ্রামের কার্যক্রম শুরু করা হয়। কর্মসূচীর শুরুতেই ছিল আসনগ্রহণ পর্ব। প্রধান অতিথি হিসেবে আসন অলংঙ্কৃত করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও এসটিডি, সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী কারিতাস অঞ্চলের পরিচালক মি: সুক্লেশ জর্জ কস্তা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফা: ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, ফা: দিলীপ এস.কস্তা, ফা: বাবলু সি.কোড়াইয়া এবং মধ্য ভিকারিয়ার বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত ৫৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন ধর্মপ্রদেশের নামে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়, কারিতাসের পক্ষে আঞ্চলিক পরিচালক মি: সুক্লেশ জর্জ কস্তা এবং অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের পক্ষে হতে মিসেস সবিতা মারান্ডী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক মি: সুক্লেশ জর্জ কস্তা। তিনি বলেন- দীর্ঘ সময় পর যেহেতু বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে এজন্য প্রথমেই শিক্ষক সভা করে তাঁদের মতামত নিয়ে এসএমসি সভার মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু করা। এছাড়া বিদ্যালয়ে করোনা সচেতনতার জন্য ব্যানার/পোস্টার ব্যবহার করা, অভিভাবকদের সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সুসম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংলাপ করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আবশ্যকীয়ভাবে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করা, প্রতিটি বিদ্যালয়ে সৃজনশীল ও আনন্দমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা এবং সৃষ্টিশীল কাজের জন্য পুরষ্কৃত করা, মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা, প্রতিটি শিক্ষককে বাধ্যতামূলকভাবে করোনা টিকা গ্রহণ করতে হবে।
বিশপ মহোদয় তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন- ক্যাথলিক চার্জ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মানসে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তিনি বলেন যে, শিক্ষার্থী শুধু জ্ঞান অর্জন করবে তা নয় সে জ্ঞানের সাথে সাথে প্রজ্ঞাও অর্জন করবে। মণ্ডলি পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থীদের গন্তব্য হবে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো। অর্থাৎ স্রষ্টার সাথে মিলনের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পূর্ণ করে তোলা। আর এই শিক্ষাই আমাদের শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ প্রজ্ঞাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
ভিকার জেনারেল ফা: ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক ঘোষিত ‘ফ্রাতেল্লি তুত্তি’ এর আলোকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে ৭টি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করতে বলেন। ১. মানুষের মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেওয়া, ২. ভালবাসা দেওয়া, ৩. সংলাপ করা, ৪. সেতু বন্ধন গড়ে তোলা, ৫. নিজ নিজ ধর্মের আধ্যাত্মিকতার আলোকে সেবাকাজ পরিচালনা করা, ৬. অন্তর উন্মুক্ত করা, ৭. মন পরিবর্তন ও নবায়ন করার মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তাদের জীবন লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ব বা কাজ।
বনপাড়া সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফা: শংকর গমেজ বলেন: কোভিড-১৯ চলাকালীন সময় ও তার পরবর্তীকালীন সময় বিবেচনা করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যালয় পরিচালনা ক্ষেত্রে আমাদের আরো বেশি আন্তরিকতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। ছুটি কমিয়ে সিলেবাস শেষ করতে হবে। কুইজ পরীক্ষা নিতে হবে। কুইজ পরীক্ষা নেওয়া বিশেষভাবে ক্লাসের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে যারা দূর্বল ছাত্র-ছাত্রী তাদের যত্ন নিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সহশিক্ষা কার্যক্রম সীমিত করার পাশাপাশি ছুটি কমিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম বাড়ানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
এই শিক্ষক সেমিনারের আয়োজক মি: সুক্লেশ জর্জ কস্তা তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন-আজকের এই অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত করতে যারা বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগীতা দিয়েছেন তাদের মধ্যে আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও; ধর্মপ্রদেশীয় শিক্ষা কমিশনের সেক্রেটারি শ্রদ্ধেয় ফা: দিলীপ এস.কস্তাসহ অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন- দেড় বছর অতিক্রান্ত হলো শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না এবং ঘরে থেকে দ্রুত উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। ফলে মানসিক অশান্তিতেও রয়েছে। তাই বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করার মুহুর্ত থেকেই চেষ্টা করবেন ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে সুশিক্ষা দান করতে। আপনাদের আত্মত্যাগের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা সকলেই আলোকিত মানুষ হয়ে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করুন। সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। উল্লেখ্য, সেমিনারটির সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন মি. অসীম ক্রুশ, জেপিও (এফওয়াইটিপি), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।
-বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার