গত ২৫-২৯ অক্টোবর ২০২১ খ্রিস্টাব্দ রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় ভ্রাতৃ যাজক সংঘের বার্ষিক নির্জন ধ্যান অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ ভবনে। এতে বিশপ জের্ভাস রোজারিওসহ মোট ৪১ জন ফাদার অংশগ্রহণ করেন। তাদের সঙ্গে ১জন হলিক্রস ফাদারও অংশগ্রহণ করেন। বার্ষিক নির্জনধ্যানের মূল বিষয় ছিল The Priestly Mission in the Church “খ্রিস্টমণ্ডলিতে যাজকীয় প্রেরণ কাজ”।

বার্ষিক নির্জন ধ্যানটি পরিচালনা করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার ফ্রান্সিসকো রাপাচেল্লি, পিমে। তিনি প্রতিটি উপদেশে কোন একজন বিশেষ ব্যক্তির যারা মণ্ডলিতে সাধু-সাধ্বী হয়েছেন তাদের জীবন দৃষ্টান্ত সহভাগিতা করার মধ্যদিয়ে এবং বাইবেলের আলোকে যাজকীয় জীবনের প্রেরণকর্ম কী তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন- পুরোহিত হিসেবে আমাদের প্রেরণ কাজকে বুঝতে হলে ত্রি-ব্যক্তি পরমেশ্বরের যে প্রেরণ কাজের দৃষ্টান্ত আছে তা ভালভাবে বুঝতে হবে। কেননা খ্রিস্টের মধ্যদিয়েই মণ্ডলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান খ্রিস্টমণ্ডলির পূর্ণতা। পবিত্র আত্মার মধ্যদিয়ে মণ্ডলির কাজ চলমান। তাই বলতে পারি, যিশু হচ্ছে খ্রিস্টমণ্ডলির আলো। তাই, খ্রিস্টকে সূর্যের সাথে তুলনা করা যেতে পারে এবং মণ্ডলি হলো চাঁদের মতো। খ্রিস্টের আলো ছাড়া মণ্ডলির কোন আলো নেই। আমরা চাঁদের মতো আর আমরা যে আলো জ্বালাই সেই আলো হচ্ছে খ্রিস্টেরই আলো।

একজন পুরোহিতের প্রেরণ কাজ হচ্ছে পূণর্মিলনের সেবাকাজ। তিনি সাধু জন মেরী ভিয়েন্নীর জীবন ও আধ্যাত্মিকতা নিয়ে বলেন যে, তাঁর জীবনের বিশেষ গুণ ছিল পাপস্বীকার বা পূণর্মিলন সংস্কারীয় সেবাদান করা। এমনকি তিনি দিনে ১৮ ঘন্টা পাপস্বীকার শুনতেন। সেই সাথে তিনি বিশ্বস্ততার সাথে প্রতিদিন মিশা উৎসর্গ করতেন এবং উপদেশ দিতেন। কথিত আছে যে, প্রতি বছর আর্চ নগরীতে যে তীর্থ হতো তাতে প্রায় বিশ হাজার তীর্থ যাত্রী অংশগ্রহণ করতো।

যিশুর সেবা কাজ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ফাদার ফ্রান্সিসকো বলেন- তিনি ভালোবাসার ও প্রেমের সেবাকাজের মধ্যদিয়েই মহান হয়ে উঠেছিলেন। ঈশ্বর তাঁকে যে প্রেরণ কাজ দিয়েছিলেন তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। অর্থাৎ সকল মানুষের মুক্তির জন্য তিনি নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন এবং ক্রুশ কাষ্ঠের উপরে তার ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রমাণ দিয়েছেন। তাই, আমাদের জীবনে যিশুর মতো সেই ভালোবাসার ও প্রেমের সেবাকাজের মানুষ হয়ে উঠতে হবে। তবেই, আমরা আমাদের প্রেরণকার্যকে খ্রিস্টের প্রেরণকার্যে রূপায়িত করতে পারবো।

২৯ তারিখের সান্ধ্য খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে বার্ষিক নির্জনধ্যানের সমাপ্তি হয়। সমাপনী খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। খ্রিস্টযাগের সময় তিনি বলেন- আমি সত্যিই আন্তরিকভাবে ফাদার ফ্রান্সিসকোকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কেননা তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সহজ-সরল ভাষায় বিগত ৫ দিনের নির্জন ধ্যানে আমাদের জীবনের প্রেরণ কাজ কী হবে, কীভাবে করা যেতে পারে তার সুন্দর দিক-নির্দেশনা দেন। আর আমি মনে করি ফাদার ফ্রান্সিসকো আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশেরই একজন। কেননা বাংলাদেশে এসে প্রথমে তিনি রাজশাহীতেই তার সেবা দায়িত্ব পালন করেন। আশা করি ভবিষ্যতেও তিনি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং কাজ করবেন। একই সঙ্গে প্রার্থনা করি, ফাদার ফ্রান্সিসকো যে গুরুদায়িত্ব পালন করছেন সে যেন সুস্থ দেহে থেকে তা সুষ্ঠু ভাবে পালন করে যেতে পারেন।

Please follow and like us: