সুরেশ ডি. পিউরীফিকেশন

খ্রিস্ট হলেন রাজাধিরাজ আমাদের হৃদয়ের রাজা যিনি ভালবাসা দিয়ে মানুষের হৃদয়কে জয় করেছেন। তাঁর রাজত্ব হল ভালবাসার রাজত্ব। খ্রিস্টমণ্ডলিতে প্রতিবছর উপাসনা বর্ষের শেষ সপ্তাহে খ্রিস্টরাজার পর্ব পালন করা হয়। এই পর্বটি মণ্ডলি ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালনের করে খ্রিস্টরাজাকে বিশেষ সম্মান দিয়ে থাকে। আগমনকালে প্রবেশের পূর্বে আমরা খ্রিস্টরাজার পর্ব পালন করি। কাথলিক মণ্ডলি সারা বছরই প্রার্থনা ও উপাসনায় খ্রিস্টকে রাজা রূপে প্রকাশ ও উপস্থাপন করেন। সেই বিশ্বরাজ খ্রিস্টকে সামনে রেখে মণ্ডলি আরম্ভ করে নতুন একটি উপাসনা বছর।

পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় যেকোন রাজার রাজত্ব স্থান, সময় ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকে কিন্তু খ্রিস্টমণ্ডলিতে আমরা দেখি, খ্রিস্টের রাজত্ব হল চিরকালীন রাজত্ব, যা যুগ যুগ ধরে স্থায়ী, স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে বিস্তৃত। প্রাচীনকাল থেকে ইস্রায়েল জাতি এক নতুন রাজার প্রতীক্ষায় ছিলেন যিনি হবেন মহাশক্তিশালী রাজা। নতুন নিয়মে সেই রাজাধিরাজ খ্রিস্ট প্রকাশিত হলেন মুক্তিদাতা ও পরিত্রাতা রূপে। আগমন কালে আমরা সেই রাজাধিরাজ খ্রিস্টকে বরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং বড়দিনে আমরা তাকে রাজাধিরাজ হিসেবে পাই। তিনি আবার আমাদের পাপের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করে রাজা হয়েছেন আর তৃতীয় দিনে পুনরুত্থান করে মৃত্যুবিজয়ী রাজারূপে আসেন। তিনি জগতের শেষ দিনেও মহাপরাক্রম প্রতাশালী রাজা হয়ে এই পৃথিবীতে আসবেন। তিনি খ্রিস্টরাজা, আমাদের প্রেমের রাজা। বিশ্বরাজ খ্রিস্টের পর্বদিনে মণ্ডলি আমাদের কাছে রাজাধিরাজ খ্রিস্টের আগমন বার্তা শোনান।

খ্রিস্টমণ্ডলিতে পোপ একাদশ পিউস ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বরাজ খ্রিস্টের মহোৎসবটি পালনের জন্য নির্দেশ দেন। এ পর্বটি পালনের উদ্দেশ্য হল খ্রিস্টরাজাকে রাজ বলে স্বীকার করা এবং তার রাজ্যের প্রজা হিসেবে তার সমস্ত নীতি নির্দেশ মেনে চলার জন্য প্রতিজ্ঞা নবায়ণ করা। পবিত্র বাইবেলের বিভিন্ন অংশে খ্রিস্টরাজার বিষয়ে ভাববাদীগণ ভবিষৎ বাণী করেন। নতুন নিয়মে স্বয়ং খ্রিস্ট এই পৃথিবীতে রাজা হয়ে আসেন তবে জাগতিক রাজা নয়, তিনি ঐশ্বরাজ্যের মহানরাজা রূপেই প্রকাশিত হন। পবিত্র বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় খ্রিস্টকে রাজা হিসেবে গ্রহণ করতে কারণ তিনি সত্যিই রাজা, রাজাধিরাজ খ্রিস্ট। এই রাজপদে স্বয়ং ঈশ্বর তাকে মনোনীত করেছিলেন।

খ্রিস্টরাজা রাজকীয় মহিমা ও ঐশ্বর্যে রাজত্ব করেন, পৃথিবীর রাজাদের চেয়ে ভিন্ন তাঁর রাজত্ব, মানুষের হৃদয়ে তাঁর রাজত্ব¡ এই ভালবাসার চরম নিদর্শন দিতে গিয়ে তিনি ক্রুশের উপর মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি নিজেকে রিক্ত করে ক্রুশের উপর প্রাণ ত্যাগ করেছেন। ক্রুশে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি সমগ্র সৃষ্টিকে মুক্তির আলোয় আলোকিত করেছেন। খ্রিস্টের প্রেম ও সেবার পথে চলার জন্য খ্রিস্টরাজ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে আহ্বান করেন। তিনি পৃথিবীতে ভালবাসা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করতে চেয়েছেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বকালের দীনতম রাজা তাঁর রাজত্বে ক্ষমতার কোন আস্ফালন নেই, তাঁর রাজত্বে ভৌগলিক বা রাজনৈতিক কোন গন্ডিসীমা নেই, তাঁর রাজ্যের সংবিধান হল ভালবাসা, ন্যায্যতা ও সেবা এবং তার প্রশাসন হল ক্ষমা।

দীক্ষাস্নানের গুণে আমরা সবাই রাজকীয় ভূমিকায় অংশীদার। ক্ষমতা আধিপত্য বা কর্তৃত্বপরায়ণ না হয়ে বরং দুঃখী অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের প্রেম শান্তি ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করে প্রতিদিনকার জীবনে আমরা খ্রিস্টের রাজকীয় মর্যাদার ভূমিকায় অবর্তীণ হই। খ্রিস্টের রাজকীয় মর্যাদা পেতে হলে খ্রিস্টের মত বিনয়ী নিঃস্বার্থ হতে হবে। খ্রিস্টের সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। কাথলিক মণ্ডলি সারা বছর ধরে প্রার্থনা ও উপাসনায় যিশুকে রাজা হিসেবে সম্মান, ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। তিনি প্রকৃত পক্ষে সেই বিশ্বরাজ খ্রিস্ট। তিনি প্রতিনিয়িত আমাদের আহ্বান করেন যেন আমরা অভাবী মানুষের পাশে থেকে সমাজে প্রেম ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে প্রতিদিনকার জীবনে আমরা খ্রিস্টের রাজকীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারি। খ্রিস্টের রাজকীয় মর্যাদা পেতে হলে খ্রিস্টের মত বিনয়ী, নিঃস্বার্থ হতে হবে। এভাবে খ্রিস্টের অনুসারীদের আত্মত্যাগ ও অপরীসিম সেবায় শক্তিশালী রাজা খ্রিস্টের আদর্শ ফুটে উঠবে তাঁরই বিশ্বরাজ্যে।

খ্রিস্ট হলেন আমাদের হৃদয়ের রাজা এ কথাটি আমরা যেন অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি। খ্রিস্টরাজার পর্ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় রাজা হিসেবে আমরা তাকে হৃদয়াসনে বরণ করতে কতটুকু প্রস্তুত আছি। তিনি রাজা রাজা হিসেবে আমাদের হৃদয় মন্দিরে বাস করতে চান। আামদের জীবনে দয়া, মায়া, ভালবাসা, ক্ষমা, নম্রতা, সহৃদয়তা সহভাগিতার মধ্য দিয়ে আমরা খ্রিস্টরাজাকে আমাদের মধ্যে রাজত্ব করতে দিতে পারি। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের আহ্বান হল প্রথমে নিজের অন্তরে খ্রিস্টের রাজত্ব সুদৃরভাবে প্রতিষ্ঠা করে খ্রিস্টকে রাজা হিসেবে গ্রহণ করা।

Please follow and like us: