গত ২২শে নভেম্বর ২০২১ খ্রি: খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহীতে “সাধু যোসেফ মণ্ডলির পালক ও খ্রিস্টীয় পরিবারের পিতা” এই মূলসুরের উপর ভিত্তি করে উদযাপন করা হয় ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজ জাতীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা-২০২১ খ্রি:। বিকেলে রেজিস্টেশন ও সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্যদিয়ে জাতীয় কর্মশালার কার্যক্রম শুরু করা হয়। খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন শ্রদ্বেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ। তার সহার্পিত খ্রিস্টযাগে আরো ১০ জন ফাদার অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মপ্রদেশ থেকে উপস্থিত ৭৫ জন অংশগ্রহণকারীগণ ভক্তি-বিশ্বাসে অংশগ্রহণ করেন। বিশপ মহোদয় তার উপদেশে বলেন-অন্তরে আমরা যেন আরো উদার হই। দান করতে আমরা যেন নিজেদের বন্ধ করে না রাখি। হৃদয়ের দুয়ার যেন খোলা রাখি। অন্যকে যেন বাইরে না রাখি।
একই সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল জের্ভাস রোজারিও, সিসিপির প্রধান ফা: স্ট্যানিসলাউস গমেজ এবং বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশের প্রতিনিধিগণসহ অংশগ্রহণকারী সবাইকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর বিশপ জের্ভাস রোজারিও ও ফা: স্ট্যানিসলাউস গমেজ সহ ৮টি ধর্মপ্রদেশ এর ৮ জন প্রতিনিধি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।
জাতীয় সিসিপি টিমের প্রধান ফাদার স্ট্যানিসলাউস সবাইকে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেন- ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজ পরিচালনা করতে আমাদের যেন কমিটমেন্ট থাকে। সাধু যোসেফ যিনি নীরব কর্মী, যিনি নীরবতায় কাজ করেছেন আমরাও যেন আমাদের কাজে বিশ্বস্ত থাকতে পারি।
এরপর রাজশাহীর ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল অংশগ্রহণকারী সকলের হাতে “পবিত্র বাইবেল” তুলে দেন। তিনি তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন- ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজে কাজ করতে আমরা যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই। পবিত্র আত্মার দান ব্যবহার করে আমরা যেন সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারি। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেন বাইবেল নিয়ে বসার চেষ্টা করি। পোপ-মহোদয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন-‘মণ্ডলি হলো অংশগ্রহণকারী মণ্ডলি’ আমরাও চেষ্টা চেষ্টা করব সক্রিয় অংশগ্রহণকারী মণ্ডলি হয়ে উঠার।
জাতীয় কর্মশালার একটি বিশেষ দিক ছিল প্রতিদিন সকালে সপ্তধাপ পদ্ধতিতে প্রার্থনা করার মধ্যদিয়ে দিনের কর্মযাত্রা শুরু করা। এজন্য ৯টি দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিদিন সকাল ৬:৩০ মিনিটে প্রার্থনা করেন।
পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ কর্মশালার মূল বিষয় “সাধু যোসেফ মণ্ডলির পালক ও খ্রিস্টীয় পরিবারের পিতা” সম্পর্কে তার সহভাগিতা তুলে ধরে বলেন- সাধু যোসেফ তার ব্যাক্তি জীবনে একজন বিশ্বস্ত সেবকের ভূমিকা পালন করেন। পোপ ৯ম পিউস ১৮৭০ খ্রি: সাধু যোসেফকে মণ্ডলির পালক রূপে ঘোষণা করেন। পারিবারিক বিশ্বাসের জীবন উল্লেখ করে বিশপ মহোদয় তার ছোট বেলার স্মৃতি তুলে ধরেন। যারা বিশ্বাস চর্চা ধরে রেখেছে তারাই ফল দান করতে পারছে। তাই সাধু যোসেফের দিকে তাকিয়ে আমরা যেন সাধু যোসেফের জীবনের গুণাবলী আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে গ্রহণ করি।
“ক্ষুদ্র খ্রিস্টিয় সমাজ ও পরিবারে শিশু সুরক্ষা ” এ বিষয়ের উপর অনলাইনের মাধ্যমে চন্দন জেট গমেজ ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, তার বক্তব্য তুলে ধরেন। এতে অংশগ্রহণকারী সবাই বেশ মনোযোগ সহকারে তার উপস্থাপনায় যোগদান করেন। পবিত্র বাইবেলের আলোকে শিশু সুরক্ষা আলোচনা শুরু করেন। আদিতে স্বয়ং ঈশ্বর এ পরিবার গঠন করেন যা ১ম প্রতিষ্ঠান, ২য় মণ্ডলি ও ৩য় রাষ্ট্র। অনেক কিছু ধ্বংস হতে পারে কিন্তু এ তিনটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হবার নয়। পরিবার – যেখানে যিশু নিজেই বড় হয়েছে। মারীয়া যোসেফ শিশু যিশুকে রক্ষা করেছেন। শিশুদের কোন রুপ বাধা দিয়ে বড় করা যাবে না এবং শিশুদের সাথে আমাদের আচরণ কি হবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করে বলেন- ১) শিশুদের কোন বৈষম্য তৈরী করা যাবে না, ২) শিশুদের মতামত গুরুত্ব দিতে হবে, ৩) তাদের বেঁচে থাকার অধিকার সৃষ্টি করতে হবে ( তারা কে কি কি হতে পায়), ৪) শিশুদের কথা শুনতে হবে।
ফাদার আলবিল গমেজের তার উপস্থাপনায় তুলে ধরেন ‘ক্ষুদ্র খ্রিস্টিয় সমাজের বৈশিষ্ট । তিনি তার সহভাগিতায় আলোচনা করেন- সিনডাল্ মণ্ডলির তিনটি বিষয় ১। মিলন ২। অংশগ্রহণ ৩ । প্রেরণ। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজের রক্ষণা-বেক্ষণ ও চ্যালেঞ্জ ১০ টি পয়েন্ট আকারে তুলে ধরেন।
ক্ষুদ্র খ্রিস্ট মণ্ডলির অগ্রগতির ৫টি ধাপ উপস্থাপনা করেন সিস্টার ক্লারা, এলএসসি ও ফাদার আলবিন গমেজ । ১। সরবরাহকারী মণ্ডলি, ২। পালকীয় পরিষদ কেন্দ্রিক মণ্ডলি, ৩। সচেতন মণ্ডলি / ধর্মপল্লী ( সহ-দায়িত্বশীল হয়ে উঠা), ৪। কর্মীদল মণ্ডলি / ধর্মপল্লী (যারা বিভিন্ন দলে যুক্ত হয়ে মণ্ডলির কাজে যুক্ত হয়), ৫। ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজের সমন্বয়ে ধর্মপল্লী ( সবার অংশগ্রহণে মণ্ডলি কেন্দ্রে বাইবেল)।
ফাদার বাবলু কোড়াইয়া ও ফাদার আনসেলমো মার্ডী, ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় নেতৃত্ব এর উপর তাদের আলোচনা তুলে ধরেন। শুরুতে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয় যেখানে দেখানো হয় নেতৃত্ব নিজে আগে এগিয়ে আসতে হবে। এরপর বিভিন্ন উপায়ে নেতা-নেত্রী সংগ্রহের দিক সমূহ তুলে ধরা হয়।
ফা: পল গমেজ ধর্মপ্রদেশভিত্তিক বাৎসরিক পরিকল্পনা ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ এর উপর দিক নির্দেশনা দান করেন। ধর্মপ্রদেশভিত্তিক প্রতিবেদন পাঠ করার পর ফাদার স্ট্যানিসলাউস গমেজ সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজ জাতীয় কর্মশালা-২০২১ এর সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। তিনি তার উপদেশে ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজের মূল বিষয় বাইবেলের বাণী কেন্দ্রিক জীবন ও বাণীর শক্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন। এ কাজটি চ্যালেঞ্জিং হলেও নিজ নিজ ধর্মপল্লীতে ফিরে গিয়ে ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজভিত্তিক মণ্ডলি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার- ফা: উত্তম রোজারিও