ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক

ভূমিকা : প্রতিবারের মতো ২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, সংগঠন এবং গ্রাম থেকে বড়দিন উপলক্ষে সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সাময়িকী ইতিমধ্যেই বরেন্দ্রদূত দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। এবারই সম্ভবত প্রথম খ্রিস্টজ্যোতি মিডিয়া সেন্টার এসব সাময়িকী নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে রয়েছে তার প্রথম পর্ব।

সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ার ধর্মপল্লী, ফৈলজনা, চাটমোহর, পাবনা থেকে, ফৈলজনা খ্রিস্টান যুব সংঘকর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে চিক্নাই। ‘মিলনেই আনন্দ’ এই উদ্দেশ্য নিয়েই ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ফৈলজনা খ্রিস্টান যুব সংঘ স্থাপিত হয়েছিলো। গত ১৩ বছরে এই নিয়ে সাতবার চিক্নাই প্রকাশিত হলো। এবারের সাময়িকী উৎসর্গ করা হয়েছে রাজশাহী ডাইয়োসিসের দুইজন স্বর্গীয় যাজকের উদ্দেশ্যে। তারা হলেন ফা. কর্ণেলিউস মুর্মু এবং ফা. বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু। তারা দু’জনই ফৈলজনা ধর্মপল্লীতে পালকীয় সেবাদান করেছেন। এবারের চিকনাই সম্পাদনা করেছেন হেমন্ত গমেজ।

চিকনাই শব্দটি নেওয়া হয়েছে- ধর্মপল্লীর পশ্চিম দিকদিয়ে প্রবাহিত চিকনাই নদীর নাম থেকে। শতাব্দিকাল ধরে চিকনাই নদী দিয়ে বয়ে গেছে জলস্রোত। আর এই জলস্রোতের ধারায় উবর্ব হয়েছে অঞ্চলটি। একসময়কার দূর্গম এলাকাটি এখন শিক্ষা-সভ্যতায় বহুদূর এগিয়ে গেছে। ফৈলজনা ছিলো মথুরাপুর ধর্মপল্লী অর্ন্তগত উপ-ধর্মপল্লী। পরে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে এই উপ-ধর্মপল্লীকে পূর্ণমাণে ধর্মপল্লীতে উত্তীর্ণ করা হয়।

চিকনাই সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে সাড়ে পাঁচ ফর্মা কলেবরে। প্রচ্ছদ করা হয়েছে আবছা আলোয় গোশালা সাজিয়ে। ধারণা যদিও ঠিক কিন্তু ভিন্ন ধর্মের মানুষের পক্ষে বুঝতে একটু অসুবিধা হতে পারে। বড়দিন উপলক্ষে প্রকাশিত হওয়ার কারণে প্রথমদিকে বড়দিনের লেখা দিয়ে শুরু করলে ভালো হতো। শুরুর প্রবন্ধটি হলো, “সাধু যোসেফের বিদ্যালয়ে যিশু” আর লিখেছেন ফা. সুশীল লুইস পেরেরা। সাধু যোসেফ বর্ষ হিসেবে লেখাটি তথ্যবহুল। পূণ্য পরিবারে যিশুর জীবন এবং বাইবেলে বর্ণিত তাঁর কাহিনী ব্যাখা করা হয়েছে। ফা. দিলীপ এস. কস্তা লিখেছেন, “প্রভুর দিন: খ্রিস্টযাগে যোগ দিন” বিষয়ে তথ্যবহুল প্রবন্ধ। প্রাচীনকালের বিশ্রামবার বা সাব্বাৎ দিন থেকে শুরু করে লেখক ইতিহাস, মণ্ডলির আইন এবং আজকের বাস্তবতায় প্রভুরদিনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে ফা. দিলীপ বরাবরই খ্রিস্ট মণ্ডলির ইতিহাসের নানা অজানা তথ্য আমাদের উপহার দেন। নবীন লেখক ফা. উত্তম রোজারিও লিখেছেন, “ঈশ্বরের সেবক দীক্ষাগুরু সাধু যোহনের গুণাবলী” নিয়ে। ফৈলজনা ধর্মপল্লীর সহকারি পুরোহিত বিকাশ কুজুর সি.এস.সি. লিখেছেন, “আকাশে ধ্রুবতারা” নামে প্রবন্ধ একসময় নাবিকদের জন্য ধ্রুবতারা ছিলো দিক্ নির্ণয়ের উপায়। এখন প্রযুক্তির সাহায্যে চলে নাবিকদের দিকনির্দেশনা। খ্রিস্ট-যিশু যে সর্ব মানবের জন্য ধ্রুবতারা, লেখক সেটাই বুঝাতে চেয়েছেন। লিংকন কস্তা লিখেছেন ইটালি থেকে, “কাটাকুম্ব: অন্ধকারে আলোর সাক্ষী” শিরোনামে ভূ-গর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র নিয়ে। তিনি শুরুতেই লিখেছেন, রোম নগরের “কাটাকুম্বগুলো শুধুই সমাধিক্ষেত্র নয় বরং খ্রিস্টবিশ্বাসের চর্চা, রক্ষা, লালন-পালন ও বৃদ্ধির চারণক্ষেত্র।” আদি খ্রিস্ট মণ্ডলির অনেক বিশ্বাস ও স্মৃতি এখানে সমাহিত রয়েছে। যাদের সুযোগ হয়নি কাটাকুম্ব দেখার, তাদের জন্য একটি চমৎকার উপহার। “পবিত্র আত্মায় নিহিত খ্রিস্টীয় নবজীবন” নিয়ে লিখেছেন অনু যোয়াকিম গমেজ (মেজর সেমিনারিয়ান)। লেখক  দীক্ষাস্নান ও পবিত্র আত্মার দান সম্পর্কে লিখেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বাইবেলে উল্লেখিত জল, আগুন, মেঘ ও আলোর মধ্যদিয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতি তুলে ধরেছেন। নয়ন যোসেফ গমেজ, সিএসসি লিখেছেন তার বাল্যকালের বড়দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে, “সোনালী ছেলেবেলার স্মৃতিময় বড়দিন” শিরোনামে। পড়তে পড়তে অনেকেরই ছেলেবেলার বড়দিনের কথা মনে পড়বে। “নার্স, নার্সিং ও আমরা” শিরোনামে লিখেছেন হ্যাপী কস্তা। কোভিড- ১৯ মহামারির কবলে পড়ে আমরা নার্সদের গুরুত্ব নানাভাবে উপলব্ধি করেছি। নার্সিং একটি মহৎ পেশা। বেশ কয়েকটি গল্প সাময়িকীতে স্থান পেয়েছে যেমন- “প্রয়োজনে প্রিয়জন” লেখক, হিমেল রোজারিও, সাংবাদিক ও গল্পকার। শিল্পী এম. কস্তা লিখেছেন “অপেক্ষা,” সীমান্ত পিটার গমেজ লিখেছেন, “এক যে ছিল সোনার কন্যা”; সুষমা গমেজ লিখেছেন, “অসমাপ্ত ভালোবাসা”। মানুষের আত্মপোলদ্ধি নিয়ে লিখেছেন কুয়েত থেকে মি. লরেন্স কস্তা (নান্টু) “কষ্ট ফিরে আসে” শিরোনামে। “জীবনে সফলতা” নিয়ে লিখেছেন সুদিপ্ত রিবেরু (দশম শ্রেণী)। সবশেষে রয়েছে কিছু কবিতা।

উপসংহার : লেখালেখি একটা আর্ট- যা স্বল্প সময়ে অর্জন করা সম্ভব নয়। বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। ভাষার বিন্যাস, শব্দের ব্যবহার, শুদ্ধ বানান রীতিও গুরুত্বপূর্ণ। লেখায় বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রমিত বাংলা ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়- যা সাময়িকীর অনেক লেখায় অনুসরণ করা হয়নি। লেখকদের সাফল্য কামনা করছি। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ নতুন নতুন লেখক তৈরি করবে। তাদের লেখার অপেক্ষায় ও আশায় রইলাম।

Please follow and like us: