ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক

‍ভূমিকা : প্রতিবারের মতো ২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, সংগঠন এবং গ্রাম থেকে বড়দিন উপলক্ষে সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সাময়িকী ইতিমধ্যেই বরেন্দ্রদূত দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। এবারই সম্ভবত প্রথম খ্রিস্টজ্যোতি মিডিয়া সেন্টার এসব সাময়িকী নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে এই পর্যালোচনার দ্বিতীয় পর্ব তুলে ধরা হলো।

মথুরাপুর দর্পণ
সাধ্বী রীতা ধর্মপল্লী, মথুরাপুর, চাটমোহর, পাবনা থেকে গত ৩৪ বছর ধরে ধর্মপল্লীর পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মথুরাপুর দর্পণ’ প্রকাশিত হচ্ছে। চলতি সংখ্যায় সবমিলে নয় ফর্মা গ্যাটআপে ঝকঝকে ছাপা- বিষয়ের ভিন্নতা এবং ধর্মপ্রদেশের পালকীয় অগ্রাধিকার ও প্রেরণ বিবৃতি চমৎকারভাবে বিন্যাস করা হয়েছে। সেই দিক থেকে সম্পাদক মণ্ডলির দূরদর্শীতা, মুঞ্চিয়ানা ও অভিনব চিন্তাধারা প্রকাশ পেয়েছে। এবারের সাময়িকী উৎসর্গ করা হয়েছে প্রাক্তন পাল-পুরোহিত দিলীপ এস. কস্তার সমীপে। পরের পাতায় স্মরণ করা হয়েছে প্রয়াত দুই যাজক কর্ণেলিউস মুর্মু এবং বিকাশ হিউবার্ট রিবেরুকে।
মূল পত্রিকা শুরু হয়েছে ফা. শিশির নাতালে গ্রেগরীর লেখা “বড়দিন: ঈশ্বরের মানব-দেহ ধারণের মহোৎসব” শিরোনামে প্রবন্ধের মধ্যদিয়ে। ফাদার শিশির তার লেখায় বাইবেলের আলোকে বড়দিনের তাৎপর্য তুলে ধরেছেন- যা পত্রিকার জন্য প্রাসঙ্গিক ছিলো। ফা. সাগর কোড়াইয়া লিখেছেন, “ফাদার দিলীপ এস. কস্তা: সাহিত্যের নবধারায় খ্রিস্টপথিক যিশু বাউল” শিরোনামে ফাদারের জীবন ও সাহিত্য কর্ম নিয়ে। ফাদার দিলীপ মেজর সেমিনারির শিক্ষক এবং খ্রিস্টীয় সাহিত্যিক। তিনি একজন খ্রিস্টীয় ইতিহাসবিদ বললে আরো যুক্তিযুক্ত মনে হবে। সম্প্রতি তার লেখা খ্রিস্টীয় ইতিহাস গ্রন্থ “বাংলাদেশে খ্রিস্টমণ্ডলি পরিচিতি” এক অনবদ্য সৃষ্টি। খ্রিস্টীয় সমাজকে নিয়ে লিখেছেন তার্সিসিউস পালমা, “করছি কি; যাচ্ছি কোথায়: প্রসঙ্গ খ্রিস্টিয় সমাজ” নামে। নামেই রয়েছে মূল লেখার মর্মকথা। সাগরী গমেজ লিখেছেন “করোনা ভাইরাস: মানব জীবনে আর্শীবাদ-অভিশাপ” শিরোনামে। মহামারির জন্য মানুষ অনেকাংশে দায়ি। তবে ভাইরাসটি যতো মহামারি হয়ে ছড়িয়েছে মানুষকে ততোই ঈশ্বরের দিকে টেনে এনেছে। পরের তিনটি রচনা- “প্রেরণকর্মী হিসেবে খ্রিস্টভক্তদের ঐশবাণী প্রচারের উপায় বা পদ্ধতি” লিখেছেন ফা. উত্তম রোজারিও; রত্না কস্তা লিখেছেন, “দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবকের আহ্বান: কৃতজ্ঞ হও” এবং রত্না গমেজ লিখেছেনে “ঈশ্বরের সৃষ্টি-কৃষ্টি রক্ষায় খ্রিস্টভক্তগণের অংশগ্রহণ”। উল্লেখিত তিনটি রচনাই রাজশাহী ডাইয়োসিসের পালকীয় কর্মশালার ভাবধারায় মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে করে খ্রিস্টভক্ত ও পাঠকগণ রাজশাহী ডাইয়োসিসের পালকীয় দিকনির্দেশনগুলো বিশদভাবে জানতে পারবেন।

অলিন্দ পালমা লিখেছেন “পরিবার জীবন: ঐশরাজ্যের মূর্ত প্রকাশ” নামে আদর্শ পরিবার হয়ে উঠার কথা। “ছেলেবেলার সোনালী স্মৃতিময় বড়দিন” আলোকে লিখেছেন, নয়ন যোসেফ গমেজ, সিএসসি। বাল্যকালে বড়দিনের স্মৃতি তিনি তুলে ধরেছেন। লেখক অন্য একটি সাময়িকীতে একই বিষয়ে লিখেছেন বলে মনে হয়েছে। “শিক্ষক-শিক্ষার্থী: অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত” শিরোনাম দিয়ে লিখেছেন, আগষ্টিন রোজারিও। তিনি শিক্ষার সেকাল একাল বদলে যাওয়ার বিষয়টি লেখায় উল্লেখ করেছেন। আত্মোপলব্ধি বিষয়ে লিখেছেন, অরুণ থিয়োটনিয়াস কোড়াইয়া, দিগন্ত গমেজ এবং টুটুল টমাস গমেজ “আমরাও হতে পারি রাজকুমার”, “লাজে ভরা যুবা” এবং “আত্মমূল্যায়ন কর: কৃতজ্ঞ হও” শিরোনামে। মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে পালকীয় অভিজ্ঞতা করছেন, রিজেন্ট মাইকেল হেম্ব্রম (সেমিনারিয়ান)। তার কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, “প্রেরণকার্যের অভিজ্ঞতা: যাজকীয় জীবনের পূর্বাস্বাদ” শিরোনামে। ইগ্নাসিউস গমেজ (ইনু মাস্টার), বীর মুক্তিযোদ্ধা লিখেছেন, “নরকে হরতাল” শিরোনামে একটি ব্যঙ্গ রচনা। রচনাটি যে একটা গভীর বাস্তবতার তাৎপর্য বহন করে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে তার মধ্যে অনেক আশা এখনো জমা হয়ে আছে। আপনাকে অভিনন্দন।

বিড়ালের পায়ে নুপুর পড়িয়ে আনন্দ করা নিয়ে ছোট পরিসরে “নুপুরের ছন্দ” লিখেছেন ইমি পালমা। প্রার্থনার গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন, চন্দ্রা গমেজ “মৃত্যু নদীর ওপারে”। শিক্ষামূলক গল্প লিখেছেন, লিসি মারীয়া গমেজ এবং দিশা আগ্নেশ কস্তা, যথাক্রমে “পরিবর্তন” এবং “চিৎপটাং” নাম দিয়ে। “শিক্ষার বাতিঘর অরুণ থিয়োটনিয়াস কোড়াইয়া ও মারীয়া ঝিনু পালমা” শিরোনামে ফা. সাগর কোড়াইয়া তাঁদের দু’জনের শিক্ষকতা জীবন চমৎকারভাবে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ। এই ধরনের তথ্য সংগ্রহে থাকা উচিত বলে মনে করি।

বছরব্যাপী মথুরাপুর বিসিএসএম ইউনিটের কার্যক্রম তুলে ধরেছেন যুথিকা রোজারিও সেই সঙ্গে ধর্মপল্লীর সারা বছরের কাজের খতিয়ান লিখেছেন, রিজেন্ট মাইকেল হেম্ব্রম। মথুরাপুর দর্পণ পরিষদের ইতিহাস সাময়িকীতে স্থান পেয়েছে। এছাড়া রয়েছে মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে “উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল খ্রিস্টান অভিবাসন শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদসমূহ।

উপসংহার : সবদিক দিয়েই সাময়িকীটি গঠনমূলক হয়েছে। বিভিন্ন লেখায় অনেক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে- যা সংগ্রহ করে রাখার মতো। তবে পত্রিকার প্রচ্ছদটি আরো আকর্ষনীয় করা যেতে পারতো। বাংলা একাডেমিকর্তৃক প্রমিত বাংলা বানানের রীতি-নীতি সব সময় অনুসরণ করা হয়নি। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ রইলো। পরিশেষে নবীন লেখকদের প্রতি শুভেচ্ছা।

 

Please follow and like us: