ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক

ভূমিকা : প্রতিবারের মতো ২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, সংগঠন এবং গ্রাম থেকে বড়দিন উপলক্ষে সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সাময়িকী ইতিমধ্যেই বরেন্দ্রদূত দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। এবারই সম্ভবত প্রথম খ্রিস্টজ্যোতি মিডিয়া সেন্টার এসব সাময়িকী নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে এই পর্যালোচনার ৬ষ্ঠ পর্ব তুলে ধরা হলো।

উত্তরবঙ্গের নাটোর জেলার, বনপাড়া খ্রিস্টান বহুমুখী সমবায় সমিতি ঢাকা- থেকে প্রকাশিত হয়েছে, মহান বিজয় দিবস ও বড়দিন সংখা “বনফুল”। প্রচ্ছদের উপরে, গৌরবময় বিজয়ের ৫০ বছর, সুবর্ণ জয়ন্তী লগো আকারে যুক্ত করা হয়েছে। সুন্দর ধারণা। প্রচ্ছদ পাতার মূল অংশ জুড়ে খ্রিস্টমাস ট্রি ছবিটি বালক বালিকার মাঝে ফুটে উঠেছে। এই সমিতির প্রতিষ্ঠাকাল ২০১০ খ্রিস্টাব্দ। সাময়িকীটি উৎসর্গ করা হয়েছে, ধর্মপল্লীর স্বর্গীয় পাল-পুরোহিত বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু’র উদ্দেশ্যে।

পত্রিকার মূল অংশের অনেকটা জুড়ে স্বর্গীয় ফা. বিকাশকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। “হৃদয়ে স্নেহের ফাদার বিকাশ” শিরোনামে ফাদার প্যাট্রিক গমেজ, তার নিজের ঢংয়ে ফাদারের গুণের দিকগুলো তুলে ধরেছেন। ফাদার বিকাশের কাকাতো বোন ম্যানিলা রিবেরু “স্মৃতিতে অমর আমার বিকাশ কাকা” নামে তাদের বাল্যকাল এবং জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে উল্লেখ করেছেন। ফাদার বিকাশকে নিয়ে এতো মানুষের স্মৃতিচারণ ও তাদের আবেগ প্রকাশ- ফাদারকে গৌরান্বিত করেছে। ফাদারদের শুধু ট্যালেন্ট থাকলেই চলবে না, মানুষের সঙ্গে তাদের ব্যবহার অমর হয়ে থাকবে। ফাদারদের জন্য ফা. বিকাশ উদাহরণ রেখে গেছেন।

এসএম লুৎফর রহমান লিখেছেন, “বঙ্গবন্ধু/ স্বাধীনতা/ সম্পূরক ও প্রেক্ষাপট” শিরোনামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সেই সঙ্গে অনেক প্রাসঙ্গিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। নতুন প্রজন্ম লেখাটি পড়ে অনেক উপকৃত হবেন। “পঞ্চ প্রজন্মের পাঁচালী-১০” নিয়ে লিখেছেন, বুরবক বাংগালী। লেখক মুক্তিযুদ্ধসহ আরো কিছু বিষয় লেখার বিভিন্ন অনুচ্ছেদে তুলে ধরেছেন। “সমিতি/ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী” নিয়ে লিখেছেন, ডমিনিক দিলু পিরিছ। “সমবায় সমিতিতে নারীর অংশগ্রহণ” নিয়ে আলোচনা করেছেন, প্রমিলা কোড়াইয়া (শিক্ষিকা)। সমবায় নিয়ে আরো লিখেছেন, কর্নেলিয়াস মিলন ডি’ ক্রুশ, “সমবায়ে একতা, সমবায়েই বিভেদ” শিরোনাম দিয়ে। “নারীর ক্ষমতায়নে নারী নেতৃত্ব” নিয়ে লিখেছেন, রীতা রোজলীন কস্তা। সমাজের প্রচলিত বাঁধা ভেঙ্গে দু’একজন নারীর পক্ষে ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা কিছুতেই সম্ভব নয়। নারী শিক্ষায় নারীরা যতোটা এগিয়ে গেছেন- নিজেদের ক্ষমতায়নের জন্য গঠনমূলক আন্দোলন নিয়ে ততোটা এগিয়ে আসেননি। নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে একটা উদারপন্থী পুরুষগোষ্ঠী বরং নারীদের চেয়ে বেশি এগিয়ে।

“ধর্মপ্রদেশ যাজকের মিশনারি যাত্রা” নিয়ে লিখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ফা. মিন্টু জের্ভাস রোজারিও। একসময় বাংলাদেশে ইউরোপ/ আমেরিকা থেকে মিশনারিরা আসতেন, আর এখন বাংলাদেশ থেকে মিশনারি যাচ্ছেন- শুনতে ভালোই লাগে। আমাদের রাজশাহী ডাইয়োসিস থেকে বেশ কয়েকজন ফাদার মিশনারি হয়ে বিদেশে পালকীয় কাজ করছেন। এক সময় হয়তো ঐ দেশগুলোই আমাদের জন্য হয়ে উঠতে পারে মিশন কান্ট্রি।

“কোভিড-১৯, স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতিমালা, প্রভাব, পদক্ষেপ/ করণীয়; গণটিকার প্রভাব” নিয়ে লিখেছেন কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মী- জেমস্ ডি’ কস্তা। আর ফাদার সাগর কোড়াইয়া লিখেছেন, করোনা ভাইরাসের বাস্তবতায় আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ বড়দিন” শিরোনামে। লেখা দু’টি প্রাসঙ্গিক। করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন এখনো বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই মহামারি নিয়ে এখনো শেষকিছু বলার সময় আসেনি। সুতরাং সচেতন থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সবচেয়ে বড় ওষুধ। মহামারির কারণে মানুষ আজ অসহায়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সভ্যতা- কোনোকিছুকেই করোনা ভাইরাস করুণা করছে না। অতএব, ঈশ্বরই একমাত্র ভরসা। সভ্যতা অকারণে সৃষ্টিকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। বিষয়টি অনেকে এখন উপলব্ধি করছেন। এই অতিমারি বিশ্বজুড়েই মানুষকে আবার ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসার পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। গল্পের ছলে “কৌশলী জীবন সত্যি, প্রার্থনাই শক্তি” নিয়ে মাইকেল গোমেজ বেশ ভালো লিখেছেন। “জল-অতল” নামে গল্প লিখেছেন অ্যান্থনি সজীব কুলেন্তুনু। বড়দিন নিয়ে- লিখেছেন, ফাদার সুরেশ পিউরীফিকেশন, “বর্তমান বাস্তবতায় বড়দিনের প্রস্তুতি ও আনন্দ উৎসব” শিরোনাম দিয়ে। লেখাটি পত্রিকার শুরুতে থাকলে বেশি ভালো হতো। আরো রয়েছে “যীশু বাউলের কবিতা” সমগ্রসহ আরো অনেকের কবিতা। তবে কবিতায় বর্ণমালা বিন্যাসের কারণে পড়তে একটু অসুবিধা হয়েছে। সবশেষে “সপ্তগ্রামের সুরসপ্তক” শিরোনামে, লিখেছেন ফাদার প্রদীপ পেরেজ এস.জে.। প্রারম্ভিকা ও সমাপিকার মাঝখানে লেখক কবি সাতটি গ্রামকে কথার মালা দিয়ে সাজিয়েছেন। গ্রামের গৌরবগাঁথা দিয়ে ইতিহাসের ইংগীত দিয়েছেন। কবিতার গাঁথুনী খুব ভালো লেগেছে।

উপসংহার : লেখাগুলোর মধ্যে বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা গেছে। শব্দ বিন্যাস ও বানানের দিকটা যত্নসহকারে সম্পাদনা করা হয়েছে। তবে “স্মৃতির পাতা থেকে” এবং “ফিরে দেখাঃ কার্যক্রম চিত্র” বিভাগে ছবির নিচে কোনো ক্যাপশন না থাকার কারণে পাঠকদের কার্যক্রম বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা। লেখার সঙ্গে লেখকের ছবি সংযোগটি উত্তম হয়েছে। লেখক ও পাঠকদের প্রতি শুভেচ্ছা।

Please follow and like us: