গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ধর্মপ্রদেশীয় যাজকীয় ও ব্রতধারী/ব্রতধারীনিদের জন্য কমিশনের উদ্যোগে ‘নিবেদিত জীবনে এক সঙ্গে পথ চলা’ মুলসুরকে সামনে রেখে ধর্মপ্রদেশে সেবাদানরত ফাদার-ব্রাদার ও সিস্টারদের জন্য নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপন করা হয় বিশপ ভবনে। এতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ মহোদয়সহ আরও ৯৪ জন ফাদার-ব্রাদার ও সিস্টার অংশগ্রহণ করেন। নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপনকারী সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, আপনারা যারা নিবেদিত জীবনে নিজের জীবন নিবেদন করেছেন আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ আমাদের এ ধর্মপ্রদেশ ও মণ্ডলি আপনাদেরকে পেয়েছে ঈশ্বরের দান হিসেবে। আপনারা আপনাদের নিবেদিত জীবন দিয়ে ও স্বেচ্ছায় জীবন নিবেদন করে মণ্ডলিতে মিলনধর্মী সমাজ গঠনে, অংশগ্রহণকারী মণ্ডলি হওয়ার মধ্যদিয়ে এবং প্রেরণকর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি আপনারা ঈশ্বরের কাজ করার জন্য আহ্বান পেয়েছেন এবং তাতে সাড়াও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আপনাদের সদিচ্ছা নিয়ে নিবেদিত জীবনের সেবাকাজ করে যাচ্ছেন। সেজন্যে এটাও মনে রাখতে হবে যে, আমাদের নিবেদিত জীবন ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা বা আরাম-আয়েশ অর্জনের জন্য নয় বরং ত্যাগস্বীকারের মধ্যদিয়ে কষ্টভোগী যিশুর জীবনটাকে অন্যদের কাছে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা। আমরা যারা নিবেদিত জীবনে রয়েছি আমাদের কাজ হচ্ছে মণ্ডলির জন্য, সমাজের জন্য, পৃথিবীর জন্য সাক্রামেন্ত হয়ে উঠা। যিশুকে আমরা নিয়ে বেড়াই, যিশুকে উপস্থিত করি মানুষের জীবনে এই মনোভাব যেন আমাদের প্রত্যেকের হৃদয় মন আত্মায় থাকে। আমরা নিজের জন্য না কিন্তু অন্য মানুষের জন্য ঈশ্বরের জন্য, মণ্ডলির জন্য আমরা নিবেদিত হয়েছি যেন আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছাটাকে আরও ভালভাবে পূর্ণ করতে পারি।
শুভেচ্ছা ও উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন উক্ত কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া। তিনি বলেন, ‘নিবেদিত জীবনে এক সঙ্গে পথ চলা’ মূলসুরকে সামনে রেখে এই বছর আমরা ধর্মপ্রদেশীয় পর্যায়ে নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপন করছি। ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করে প্রত্যেকে দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর সৃষ্টিকে সুন্দর করার ও সুষমামণ্ডিত করার। ঈশ্বরের সৃষ্টিকে সুন্দর ও সুষমামণ্ডিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার এক সাথে চলা। বিবাদ-বিভাজন, আমিত্বের অবসান ঘটিয়ে আমরা যখন এক সাথে নিবেদিত জীবনে পথ চলি তখন নিবেদিত জীবন সুন্দর হয় ও আমাদের সেবার মাধ্যমে অনেকে যিশুর জীবন্ত স্পর্শ লাভ করবে। মুলসুরের উপর সহভাগিতা রাখেন খুলনা ধর্মপ্রদেশের ফাদার বাবলু সরকার। তিনি বলেন, প্রতিটি খ্রিস্টভক্তই নিবেদিত ব্যক্তি। নিবেদিত-তাদের দীক্ষাস্নানের, হস্তার্পণের, অভিষেকের ও বিভিন্ন সংস্কার গ্রহণের মাধ্যমে। কিন্তু ধর্মব্রতী ও ধর্মব্রতীনিগণ বিশেষভাবে নিবেদিত আর তা হচ্ছে মঙ্গলসমাচারের সুমন্ত্রণা তিনটি দরিদ্রতা, কৌমার্য ও বাধ্যতা ব্রত গ্রহণের মাধ্যমে। নিবেদিত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো অন্যের মধ্যে ও অন্যের সাথে থেকে ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার কাজের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত করা এবং তার কাজের মধ্যদিয়ে নিজেকে নয় ঐশরাজ্য ঘোষণার দায়িত্ব পালন করা। তিনিই আরো বলেন-আমরা অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বর আমাদের তাঁর সেবায় আমাদের বেঁছে নিয়েছেন। যিশু যেমন তাঁর সর্বস্ব দিয়ে সর্বদাই পিতা ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য ও বিশ্বস্থ ছিলেন ঠিক তেমনি আমাদেরও হতে হবে। নিবেদিত জীবনে এক সাথে পথ চলা এটা যেন জীবন এবং পানির সাথে যুক্ততার মতোই। আমাদের জীবন ব্রত হবে এক সাথে পথ চলবো, যিশুর রাজ্য বিস্তার করবো। তোমার রাজ্য আসুক প্রভু সবার মাঝে এই বলে মঙ্গলবাণী প্রচার করতে হবে এক সাথে। এছাড়াও অনুষ্ঠানসূচীতে পরষ্পরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা প্রদান, পুনর্মিলন সংস্কার, পবিত্র আরাধনা ও শেষ দিনে পবিত্র খ্রিস্টযাগ।