পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বন্ধ করার জন্য সেখানকার নাগরিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি পেশোয়ার শহরে খ্রিস্টান পালক উইলিয়াম শিরাজকে হত্যার প্রতিবাদে করাচি প্রেস ক্লাবের সামনে খ্রিস্টান সংস্থাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে এই বিক্ষোভ প্রতিবাদের আয়োজন করেন। তারা হত্যাকারি ও সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য দাবি করেন। এই প্রসঙ্গে খ্রিস্টান নেতারা বলেন, “দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার কোনো বিচার হয়না।” পাকিস্তানে ‘মুত্তাহিদি মশিহী পরিষদের’ নেতা নোয়েল ইজাজ বলেন, “পাকিস্তানে এইসব ঘটনার কারণে সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমরা একাকী, অরক্ষিত ও অনবরত বিপদের মধ্যে পড়ছি।” তিনি বলেন, পাকিস্তানে বারবার খ্রিস্টানদের হয়রাণি, হামলা ও হত্যা করা হয়- তবুও তারা আশাহীন নন। খ্রিস্টান মানবাধিকার দলের নেতা আসিফ বাস্তিয়ান বলেন, “খ্রিস্টানরা বারবার ইসলামিক উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিগৃহিত হলেও সন্ত্রাসীরা দন্ড থেকে অব্যাহতি পেয়ে যাচ্ছে।” তিনি পেশোয়ার শহরে খ্রিস্টান পালককে হত্যার ন্যায্য বিচারের জোর দাবি জানান এবং পাকিস্তানে শান্তি ও সংহতি রক্ষার জন্য প্রার্থনা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি খ্রিস্টান পালক প্যাট্রিক নায়িম ও উইলিয়াম শিরাজ যখন চার্চের কাজ সেরে গাড়িতে চড়ে ঘরে ফিরছিলেন তখন দুইজন মটরসাইকেল আরোহী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে করে পালক উইলিয়াম শিরাজ নিহত হোন এবং প্যাট্রিক নায়িম আহত হোন। বিক্ষোভকারিগণ, হিন্দু ব্যবসায়ী সত্তেন লালকে হত্যারও সু-বিচারের দাবি জানান। ব্যবসায়ী সত্তেন লাল গত ৩১ জানুয়ারি সিন্ধু প্রদেশের ডাহারকি শহরে আততায়ীর হাতে নিহত হোন।
পাকিস্তানের জাতীয় শান্তি ও ন্যায় কমিশন এবং করাচির আর্চবিশপ বেন্নী মারীও ত্রাবাস, পাকিস্তানের খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীকে একতাবদ্ধ হয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও প্রার্থনার আহ্বান জানান। আর্চবিশপ ত্রাবাস, সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খ্রিস্টান পালক হত্যাকারিদের বিচারের আওতায় এনে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।
পাকিস্তানে খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের উপর অহরহ ঈশ্বর নিন্দাসহ নানা অজুহাত এনে, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এই কারণে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। বিক্ষোভকারিগণ সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে পাকিস্তানে খ্রিস্টান সংখ্যা ২৬ লাখ, ৪২ হাজার ৪৮জন, যা মোট জনসংখ্যার ১.২৭ শতাংশ মাত্র।
ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার।