শ্রদ্ধেয় ও স্নেহের খ্রিস্টভক্তগণ ও ভাই-বোনেরা,
এই বছর মার্চ মাসের ০২ তারিখ ভস্মবুধবার দিন থেকে শুরু হচ্ছে খ্রিস্টীয় প্রায়শ্চিত্তকাল বা উপবাসকাল। এই উপবাসকালে বা প্রায়শ্চিত্তকালে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের কি আহ্বান রয়েছে তা আমাদের চিন্তা ও ধ্যান করে দেখা দরকার। এই সময়টি ঈশ্বরই আমাদের দিয়েছেন- যেন আমরা আমাদের পাপ থেকে মন ফিরাতে পারি; যেন আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসতে পারি। তাই, প্রায়শ্চিত্তকাল হলো মন পবির্তন করার সময়- ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের সময়। তাই, আমাদের উচিত হবে যেন আমরা আমাদের অন্তর গভীরে অতি সন্তর্পনে প্রবেশ করি এবং ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য বা নতুন মানুষ হয়ে নিজেকে তাঁর কাছে উপস্থাপন করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি। এটা সেই প্রস্তুতিরই সময়। ভস্মবুধবার কপালে ছাই মেখে আমরা সেই উপবাসকাল আরম্ভ করি। এইবার ভস্মবুধবারে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস ইউক্রেইন দেশ ও সেই দেশের জনগণের জন্য প্রার্থনা ও উপবাস করতে আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া কর্তৃক অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হয়ে সেই দেশের মানুষ ভয় ও বিপদের মধ্যে রয়েছে।
এই সময় খ্রিস্ট মণ্ডলির ঐতিহ্য অসুসরণ করে আমরা তিনটি কাজ করি: প্রার্থনা, উপবাস, ভিক্ষাদান বা দয়ার কাজ। “তোমরা জেগে থাকো ও প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় বা প্রলোভনে না পড়ো (মথি ২৬:৪১; লুক ২২:৪০)।” তবে প্রার্থনা যেন আবার লোক দেখানো না হয় সেই কথাও যিশু আমাদের স্মরণ ক’রে দিয়েছেন: “যখন তোমরা প্রার্থনা করো, তখন ঘরের নিভৃতে গোপন স্থানে যাও আর প্রার্থনা করো (মথি ৬:৬)।” উপবাসও যেন লোক দেখানো না হয়: “যখন তুমি উপোস করো, তুমি বরং তখন মাথায় তেল মেখো, চোখ মুখ ধুয়ো, যাতে তুমি যে উপোস করছ, মানুষ যেন তা জানতে না পারে যেন জানতে পারেন শুধু তোমার পিতা সে গোপনেই থাকেন যিনি। তাহলে তোমার পিতা, যিনি গোপন সবকিছু দেখতে পান তিনি তোমাকে পুরষ্কৃতই করবেন (মথি ৬:১৬-১৮)।” তবে খ্রিস্ট মণ্ডলি এখন খ্রিস্টভক্তদের ভস্মবুধবার ও পুণ্যশুক্রবার ব্যতিত আর পূর্বের ন্যায় উপবাস করতে বাধ্য করে না; তবে খ্রিস্টকে ভালবেসে এই দৈহিক সংযমটি পালন করতে খ্রিস্টভক্তদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া আমরা যারা সক্ষম, আমরা চেষ্টা করবো যেন ৪০দিন ধরেই উপবাস করতে পারি। আর এই উপবাসের সংযম পালন করে আমরা যা সঞ্চয় করবো তা থেকে আমরা যেন আমাদের গরীব প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে পারি। তবে তা যেন আবার নিজের আত্মগরিমা বা অহংকার বৃদ্ধির জন্য না হয়। যিশু বলেছেন: “যখন তুমি ভিক্ষা দাও, তখন তোমার ডান হাত যা করছে তা যেন তোমার বাঁ হাত জানতে না পারে (মথি ৬:৩)।” এইভাবে আমরা পোপ ফ্রান্সিস যে আমাদের “যত্নের সংস্কৃতি” গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন তা পূরণ করতে পারি – আমরা যেন আমাদের দরিদ্র ও অসহায় প্রতিবেশীদের ভালবাসি ও যত্ন করি।
শুধু মানুষই নয় আমাদের যত্ন করতে হবে আমাদের পৃথিবীকে, গাছ-পালা ও জীব-জন্তুকে, প্রকৃতি ও পরিবেশসহ সব কিছুকেই। তা করতে হবে আমাদেরই স্বার্থে বা সমগ্র মানব জাতির মঙ্গলার্থে। ঈশ্বরের দান এই পৃথিবী, অর্থাৎ পোপ ফ্রান্সিসের কথায় যা নাকি আমাদের অভিন্ন বাসগৃহ, তার যত্ন করা মানে হলো আমাদের নিজেদের ও আমাদের ভাবি-প্রজন্মের ভবিষ্যতকে টেকসই করা। তাদের জন্য একটি সুন্দর ও টেকসই পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। তাছাড়া এ বছর আমরা ধ্যান করছি দায়িত্ব প্রাপ্ত সেবকের আহ্বান ‘কৃতজ্ঞ হও’। একই সাথে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস আমাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন আমরা একসঙ্গে পথ চলি বা সহযাত্রী মণ্ডলি হয়ে উঠি। আর এই সহযাত্রী মণ্ডলি হয়ে উঠার জন্য কৃচ্ছতা সাধন হতে পারে একটি অন্যতম উপায়। যেখানে শুধু আমার নয়, বরং অন্যকে নিয়ে পথ চলারও সুযোগ রয়েছে। তাই, এই পরিত্রাণদায়ী মুক্তির কাজে আমরা সকলে মিলে যাত্রা করি, সহযাত্রী মণ্ডলি হয়ে উঠারই প্রত্যাশায়।
প্রায়শ্চিত্তকালের আত্ম সংযম আর উপবাস-ত্যাগস্বীকার শেষে যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান পর্ব পালন করব এবং আমরা লাভ করব পুনরুত্থিত নব জীবন। আমি আমাদের ধর্মপ্রদেশের সকল উপকারী বন্ধু, দাতা সংস্থার সদস্য, সহযোগী ও পাঠক-পাঠিকাদের পুনরুত্থান পর্বের শুভেচ্ছা জানাই।
আপনাদের সেবায় খ্রিস্টেতে
+ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ