গত ৬ মার্চ, ২০২২ খ্রি: রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে কর্মরত শান্তি রাণী সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ; বিশেষভাবে রাজশাহী বিশপ হাউজ, পালকীয় কেন্দ্র, ক্যাথিড্রাল (বাগানপাড়া) ও স্নেহনীড় কমিউনিটির সিস্টারগণ বাগানপাড়া কমিউনিটিতে শান্তি রাণী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় বিশপ যোসেফ ওবের্ট এর ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে এক বিশেষ প্রার্থনা সভার (পবিত্র ঘন্টার) আয়োজন করেন। এই বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানে সিস্টারদের সঙ্গে প্রার্থনায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভক্তির সময় ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হওয়াতে নতুন দেশের অংশ হিসেবে দিনাজপুর একটি ভিন্ন ধর্মপ্রদেশ হিসেবে জন্মলাভ করে। এর ফলে কৃষ্ণনগরের ভগ্নীসংঘগুলোর পক্ষে আর দিনাজপুর অঞ্চলের কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়াতে এখানে খ্রিস্টীয় সন্ন্যাসী জীবন-সাক্ষ্যের অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং স্থানীয় ভগ্নী-সংঘ প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা জরুরী হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় ধর্মপ্রদেশের প্রৈরিতিক সেবাকাজ, জনগণের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন, বিভিন্ন পর্যায়ের জনগণের কাছে ঐশবাণী পৌঁছে দেওয়া, খ্রিস্টীয় জীবন সাক্ষ্য-ইত্যাদি সার্বিক প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে তৎকালীন সময়ে দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল শ্রদ্ধেয় যোসেফ ওবের্ট, পিমে, “দূতগণের রাণী মারীয়ার নির্মল হৃদয়ের ক্যাটেখ্রিস্ট সন্ন্যাস সংঘ” প্রতিষ্ঠা করেন। নব প্রতিষ্ঠিত সংঘটিকে তিনি আধ্যাত্মিক প্রতিপালিকা “মারীয়ার নির্মল হৃদয়” এর নিকট উৎসর্গ করেন।

১৯৫১ খ্রি: ৩ অক্টোবর দিনাজপুর বিশপ ভবন সংলগ্ন “সিস্টারস্ অব চ্যারিটি” সম্প্রদায়ের ভগ্নীদের দ্বারা পরিচালিত ক্ষুদ্র পুষ্প ছাত্রীবাসের ৫ জন যুবতী-আগ্নেশ মিঞ্জ, আঞ্জেলা হেম্ব্রম, এম্মা দাস, তেরেজা মার্ডী ও শিশিলিয়া মুর্মুকে নিয়ে সংঘটি প্রাথমিক যাত্রা শুরু করে। শ্রদ্ধেয় ধর্মপাল “সিস্টারস্ অব চ্যারিটি” সম্প্রদায়ের শ্রদ্ধেয়া সিস্টার এনরিকেত্তা মত্তা, এসসি-এর হাতে নব প্রতিষ্ঠিত সংঘটির প্রথম নব্যামাতা ও পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ের নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা ও বিশেষ তত্ত্বাবধানের জন্য শ্রদ্ধেয় ফা: ফ্রান্সিস গেৎসি, পিমে, ধর্মপালের নামে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ শ্রদ্ধেয় ধর্মপাল যোসেফ ওবের্ট, পিমে, কর্তৃক সংঘের প্রথম সংবিধান ও নিয়মাবলী অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংঘের শুভ সূচনা করেন। উক্ত খ্রিস্টাব্দেই দিনাজপুর বিশপ-ভবন সংলগ্ন শান্তিরাণী আশ্রমে উপরোক্ত ৫ জন এবং কৃষ্ণনগরের স্থানীয় ভগ্নী-সংঘ থেকে আগত আরও ৬ জন (মোট ১১ জন) প্রার্থীকে নিয়ে প্রথম নব্যালয় শুরু হয়। ১৯৫৩ খ্রি: ৩০ এপ্রিল এই দলটি প্রথম সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেন ও সংঘের পবিত্র পোষাক পরিধান করেন।

শান্তি রাণী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা বিশপ ওবের্ট, পিমে-তাঁর সিস্টারদের উদ্দেশ্যে বলতেন- তোমরা গুণে মহৎ হও, সংখ্যায় নয়। এই স্বর্গীয় বিশপের ৫০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও তার সহভাগিতায় বলেন- আমি স্বর্গীয় বিশপ ওবের্টকে জীবিত অবস্থায় দেখেছি এবং তার সান্নিধ্য লাভ করেছি। এমনকি তার বেদী সেবকও হয়েছি। তিনি ছিলেন একজন ধার্মিক ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তার মধ্যে ছিল নম্রতা। তিনি কখনো রাগ করতেন না। তার মুখে সব সময় ফুটে থাকতো মিষ্টি হাসি। তিনি সত্যিই একজন ভাল মানুষ ছিলেন। বলতে পারি তিনি খ্রিস্টের মতই জীবন-যাপন করেছেন। এমনকি তিনি সর্বদা তার নম্রতার গুণটি নিয়েই সব মানুষের কাছে তার নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের মাঝে পালকীয় সেবাদায়িত্ব পালন করেছেন। তাই, স্বর্গীয় বিশপ ওবের্টের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন স্বর্গ থেকে আমাদেরকে ঈশ্বরের আশির্বাদে পূর্ণ করেন। আমরাও যেন বিশপ ওবের্টের মতো সর্বদা হাসিমুখে খ্রিস্ট নাম প্রচারে ব্যাপৃত থাকতে পারি।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: