গত ১৬-১৭ মার্চ ২০২২ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্র রাজশাহীতে, সীল বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত মাহালী ইয়থ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের মূল বিষয় হিসেবে বেঁছে নেওয়া হয় “Ambassadors for Change” বা “Be the Change Maker”। গত ১৬ মার্চ রেজিস্ট্রেশন ও পরিচয় অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এই সেমিনারের যাত্রা শুরু হয়। ১৭ মার্চ সেমিনারের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, মি: কর্ণেলিউস টুডু কান্ট্রি ডিরেকটর এসআইএল বাংলাদেশ, ফা: ফাবিয়ান মারান্ডী, পাল-পুরোহিত বেনীদুয়ার ধর্মপল্লী, ফা: পাউলুস মুরমু সহকারী পাল-পুরোহিত গোপালপুর ধর্মপল্লী এবং ফা: বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া পরিচালক খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্র, রাজশাহী ও আয়োজক মণ্ডলিসহ ২৩০ জন অংশগ্রহণকারী।
এ সম্মেলনের পেছনে মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- মাহালী সম্প্রদায়ের যুব সমাজকে একত্রিত করতে সহায়তা করা, তাদের জন্য একটি জাতীয় প্লাটফর্ম তৈরী করা, সামাজিক ইস্যুগুলো আলোচনা, মৌলিক অধিকার আদায় ও বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ধারণায় যুবদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন দলগুলোকে সংযুক্ত করা। তাছাড়াও সামাজিক ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করে যুব সমাজের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস। তাই, এই দিনকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার জন্যে সীল বাংলাদেশের যুব সেমিনারের উদ্বোধনের প্রাক্কালে যথাযথ মর্যাদার সাথে সকাল ৮:০০ টায় শপথ বাক্য পাঠ ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সেই সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কাটার মধ্যদিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জেভার্স রোজারিও। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০২ তম জন্মবার্ষিকী এবং আজকের দিনটিকেই জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজকের এই সম্মেলনেও অনেক শিশু উপস্থিত আছে তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। অবশ্যই আমাদের এ সম্মেলনের পেছনে একটি স্বপ্ন আছে। আমাদের স্বপ্ন হতে হবে উপরের দিকে উঠার জন্যে। স্বপ্ন দেখা ভাল তবে স্বপ্নের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ভাল না। স্বপ্নপূরণের দাবি শুরু করতে হবে নিজের দিক থেকে; অন্যেরা সেটা কখনোই পূরণ করতে পারবে না। তবে সেই স্বপ্নপূরণে অন্যেরা কেবলমাত্র সহায়তা দিতে পারে। তাই স্বপ্ন যে দেখে, তারই দায়িত্ব হলো তার নিজের স্বপ্নকে পূরণ করা বা বাস্তবায়িত করা।
এসআইএল-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মি: কর্ণেলিউস টুডু’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা মি: বেঞ্জামিন টুডু এবং এসআইএল-এর প্রজেক্ট লিডার সান্তা মারীয়া কস্তা। কান্ট্রি ডিরেক্টর মি: কর্ণেলিউস টুডু, শাহরুখ খানের স্বপ্নপূরণের উদাহরণ দিয়ে বলেন-আমাদের প্রতিটি মানুষেরই কোন না কোন সবল দিক আছে। আর সেই সবল দিকটি যদি আমরা আবিষ্কার করতে পারি এবং ঐ বিষয়টা নিয়েই লেগে থাকি এবং ওটাকে নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগুতে চাই; তাহলেই আমাদের জীবনে সবচেয়ে ভাল কিছু করতে সক্ষম হব। যুবক-যুবতী হিসেবে আমাদেরও প্রত্যেকের একেকটি স্বপ্ন আছে। সেই সাথে আমাদের জীবনের সবল দিকগুলো খোঁজে বের করে সে সবল দিকটাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তোমরাও একদিন প্রতিষ্ঠিত এবং বড় মাপের মানুষ হতে পারবে।
বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটিসি) জয়া মারীয়া পেরেরা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন-আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ১০২তম জন্ম বার্ষিকী। ২০৪১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশ হিসেবে পরিণত হবে আর সেই উন্নতশীল দেশ গড়ার কাজে আমাদের সবাইকে আত্ননিয়োগ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই যুব সম্মেলন করার মধ্যদিয়ে তোমরাও নিজেদের জন্য একটি লক্ষ্য স্থির করতে পারবে। যে লক্ষ্যে পৌছা সহজতর হবে না, তবে নিরাশ হতে হবে না। তোমাদের মাঝে উপস্থিত এসআইএল-এর কান্ট্রি ডিরেক্টরকে এমনি এমনি তার এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তার জন্য তাকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়েছে, কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে। এমনকি অনেক কাট-কয়লাও পোহাতে হয়েছে। তারপরেই অর্জিত হয়েছে তার এই স্থানটি বা পদ মর্যাদা।
পরিশেষে, এসআইএল-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মি: কর্ণেলিউস টুডু সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে উপহার প্রদান করে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি দুইদিনের এই সম্মেলনের সারসংক্ষেপ করে বলেন, আমাদের জীবনের সবল দিক কোনটি, সবার আগে সেইটাকে খোঁজে বের করতে হবে এবং তা নিয়ে জীবন লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য কাজ করতে হবে। তবেই, আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। তাই, সকলকে বলতে চাই আমরা যেন আমাদের স্বপ্নগুলোকে লালন করি, ধারণ করি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বদা চেষ্টা করি।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার