ফাদার সুরেশ পিউরীফিকেশন
পবিত্র বাইবেলে যোসেফের বিষয়ে খুব বেশি কিছু লেখা না থাকলেও ঐশ পরিকল্পনায় সাধু যোসেফের ভুমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর মানব মুক্তি পরিকল্পনায় সাধু যোসেফকে বেছে নিয়েছিলেন মুক্তিদাতা যীশুর পালক পিতা হিসেবে। তিনি নম্রতার সাথে ঈশ্বরের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বিশ্বস্তভাবে পালন করেছেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মনিষ্ঠ মানুষ। তিনি নীরব সাধক ও প্রার্থনার মানুষ ছিলেন। তিনি নীরব কর্মী হিসেবে ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। পবিত্র বাইবেলে আমরা যোসেফকে কথা বলতে শুনিনি কিন্তু তিনি নীরবে ঈশ্বরের কথা শুণে তা পালন করে যিশু ও মারিয়াকে নিয়ে মিশরে যাত্রা করেন এবং তাদেরকে রক্ষা করেন। সাধু যোসেফের এই নীরবতা আমাদের জীবনের জন্য এক উজ্জ্বল আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।
একজন প্রকৃত বিনয়ী স্বভাবের মানুষ ছিলেন সাধু যোসেফ। তিনি সকল প্রকার লোভ-লালসা, আরাম-আয়েশ ,ভোগ-বিলাস ইত্যাদিকে তুচ্ছ করে নিজের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে সম্পূর্ণরূপে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। সাধু যোসেফ যদি বিনম্র ও ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাসী ও আস্থাশীল না হতেন তাহলে তাঁর পক্ষে প্রভুর দূতের আদেশ কোন ভাবেই মানা সম্ভব হতো না। সাধু যোসেফের জীবন দেখে বুঝা যায় বিনম্রতা ব্যক্তিকে বিনয়ী হতে সাহায্য করে এবং সকল প্রকার স্বার্থপরতা, অহংকার ও ভোগবাদমূলক মনোভাব থেকে দূরে রাখে। সাধু যোসেফ আপন ইচ্ছার উপর প্রাধান্য না দিয়ে বিনম্রতার সহিত ঐশ আদেশ মেনে নিয়েছিলেন এবং মারীয়াকে সদা অন্তকরণে গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি পরিবারে ও সমাজের কাছে যেমন বাধ্য ছিলেন তেমনি ঈশ্বরের প্রতিও ছিলেন একান্ত বাধ্য। ঈশ্বরের প্রতি সাধু যোসেফের একান্ত বাধ্যতা ও দায়িত্বশীলতার গুণটি বিশেষভাবে প্রকাশ পায়। কারণ তিনি দূতের কথায় কোন সন্দেহ বা কালবিলম্ব না করেই বিনম্র সেবকের মত তখনি ঈশ্বরের আদেশ পালন করার জন্য মিশরের অভিমুখে যাত্রা করলেন। তিনি সেখানে যিশু ও মারিয়ার যত্ন নেন ও রক্ষা করেন। তিনি নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব পালনে ছিলে বিশ্বস্ত সেবক।
একজন পরিপূর্ণ পবিত্র মানুষ হিসেবে তিনি সারা জীবন পবিত্রভাবে জীবন যাপন করেছেন। একইভাবে তিনি মারীয়ার পবিত্রতা ও কুমারীত্বকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি একজন ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ ছিলেন। তিনি কোন প্রকার মন্দতাকে গ্রহণ করতেন না । জীবনে সব সময় সৎ পবিত্র ও ন্যায়বান হিসেবে আর্দশ দেখিয়েছেন। যিশু ও মারিয়াকে নিয়ে একটি পবিত্র পরিবার গড়ে তোলেছেন। পবিত্র পরিবারকে পালন ও রক্ষা করতে সবর্দা তিনি ভালবাসা সেবা দিয়ে গেছেন পরিবারের কর্তা এবং আদর্শ পিতা হিসেবে তিনি যীশুকে সবসময় রক্ষা করেছেন। পিতার যত্নে শিক্ষা ও ভালবাসায় যিশু জ্ঞানে, বয়সে ও বুদ্ধিতে বেড়ে উঠেন। পেশায় ছিলেন তিনি একজন সাধারণ মিস্ত্রী। বার বার স্থান পরিবর্তন করার ফলে তার পেশার কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা আমরা স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারি। কিন্তু তার দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হননি। হতাশ হননি। সাধারণ মিস্ত্রী হিসেবে যে আয় হত তা দিয়েই তিনি তার পরিবারের ভরণ-পোষণ করেছেন। যিশুকে জ্ঞানে বুদ্ধিতে প্রজ্ঞায় মানুষ করে তুলেছেন। যিশুকে প্রস্তুত করেছেন মানব মুক্তির জন্য। বিশ্ব সৃষ্টির পরিত্রাণের জন্য। আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল না হলেও, তাদের মধ্যে ক্ষমা ভালবাসা আধ্যাত্মিকতার কোন কমতি ছিল না। আদর্শ পালক পিতা হিসেবে যোসেফ যিশুকে হাতের কাজ শিখিয়েছিলেন। তিনি যিশুকে প্রার্থনা করতেও ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের শিক্ষাও দান করেন। একাধারে তিনি ছিলেন পরিবারের পিতা, কর্তা ও শিক্ষক ।
সাধু যোসেফকে ভরা হয় বিশ্বমণ্ডলির প্রতিপালক কারণ তিনি হলেন সকল গুণের আধার ও অনুপ্রেরণা। তিনি ছিলেন ঈশ্বরের মনোনীত মানবমুক্তির কাজে সহায়ক ও ঈশ্বরের বিনম্র সেবক। তিনি মুক্তিদাতা যিশুর পালক পিতা, মারিয়ার ম্বামী শ্রমিকদের প্রতিপালক এবং সকলের আধ্যাত্মিক পিতা হিসেবে আর্দশ রেখেছেন। আমরা তার জীবনের গুণাবলী আমাদের প্রত্যেকের জীবনের জন্য প্রেরণা হিসেবে নিতে পারি। আসুন আমাদের জীবনকে সাধু যোসেফের আদর্শে গড়ে তুলতে বিশেষভাবে যত্নবান হই।