গত ২২ মার্চ ২০২২ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী বিশপ ভবনে বিশপ জের্ভাস রোজারিও’র ১৫তম বিশপীয় অভিষেক বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের শহরের ও তার আশেপাশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, কনভেন্ট ও প্রতিষ্ঠান থেকে ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তগণ অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যা ৬.০০ টায় পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্যদিয়ে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপের জীবনের জন্য ঈশ্বরের নিকট ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়। বিশপ মহোদয় তার উপদেশে বলেন- আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ক্ষমার প্রয়োজন নেই। ক্ষমার প্রয়োজন সকলেরই আছে, তবে যারা অহংকারী তারা ক্ষমা করতেও পারে না, চাইতেও পারে না। আমরা ঈশ্বরের কাছে সবাই পাপী। কিন্তু সমস্যা হলো নিজের পাপ আমরা কেউই দেখতে পাই না; সেজন্য আমরা অন্যের পাপ বা অন্যের দোষ দেখি। কিন্তু আমি যদি অন্যকে ক্ষমা করি তাহলে আমিও ক্ষমা পাব, আর আমি যদি তা না করি তাহলে আমিও ক্ষমা পাব না। এটা হলো যিশুর একটি মৌলিক শিক্ষা যা তিনি প্রদান করেছেন, হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা প্রার্থনার শেখানোর মধ্যদিয়ে।

খ্রিস্টযাগের পর ঘরোয়া পরিবেশে বিশপ মহোদয়ের অভিষেক বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে কেক কাটা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান করা হয়। শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সকল যাজক, ব্রাদার ও সিস্টার এবং খ্রিস্টভক্তদের নামে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে ফাদার উইলিয়াম মুরমু বলেন- ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই কেননা, তিনি আমাদের ও আমাদের ধর্মপ্রদেশের জন্য বিশপ মহোদয়ের মত সুযোগ্য একজন পালককে দান করেছেন। তিনিই সত্যিই একজন নিবেদিত ও যোগ্য পালক। যার নেতৃত্বে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ এগিয়ে চলছে, এগিয়ে চলবে। আজকের দিনে আমরা তার সুদীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি এবং ধর্মপ্রদেশের সকলের নামে প্রতিশ্রুতি দেই যে, প্রার্থনায় একাত্ম হয়ে আমরা বিশপ মহোদয়ের সঙ্গে সহযাত্রী মণ্ডলি হয়ে উঠব।

বিশপ মহোদয়ের ক্লাসমেট শ্রদ্ধেয় ফাদার সুনীল দানিয়েল রোজারিও তার অনুভূতি প্রকাশ করেন ঠিক এভাবে- আজকের বিশেষ দিনে বিশপ মহোদয়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আজকে আমি সত্যিই আনন্দিত। বিগত ৫২ বছর ধরে আমরা একে অপরকে চিনি। তবে এই সুদীর্ঘ পথচলায় আমাদের একটি মাত্র কম্পিটিশন বা প্রতিযোগীতা হত আর তা হল কে কত বেশী লিখতে পারি।

মি: সেবাষ্টিয়ান পিউরীফিকেন, সিনিয়ন ম্যানেজার, রাজশাহী কো-অর্ডিনেশন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন- ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমি অনেক প্রার্থনাপূর্ণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি অত্যন্ত শিশু বান্ধব এবং তিনি শিশুদের নিয়ে কাজ করতে ভালবাসতেন। শুধু তাই নয়, তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সাথে সদ্বভাব রেখে কাজ করেন।

মি: সুক্লেশ জর্জ কস্তা রাজশাহী কারিতাস অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন- আজকের এই শুভ দিনে শুভক্ষণে বিশপ মহোদয়কে আমাদের পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। বিশপ জের্ভাস রোজারিও হলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের এই ভূমিজ্যর প্রথম বিশপ। উনি যখন বিশপ পদে অভিষিক্ত হন, তখন আমাদের অনেক আনন্দ ছিল, অনেক প্রত্যাশাও ছিল। আর সত্যিই ঈশ্বর আমাদের সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করে দিচ্ছেন; আমরা নানাভাবে বেড়ে উঠছি। সারা বছর বিশপ মহোদয় আমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন এবং আমাদের জন্য প্রার্থনাও করেন। বছরের দুটো দিন আমরা পাই, যেদিন আমরা বিশপ মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি এবং বিশেষ ভাবে প্রার্থনা করতে পারি। এটা হলো ২২ মার্চ তার অভিষেক বার্ষিকী এবং ১৫ই আগস্ট তার জন্মদিন। এ দুটো দিনই ঐত্যিহাসিক দিন। ২২ মার্চ হলো আন্তর্জাতিক পানি দিবস। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় দ্রাবণ হলো পানি। এই পানি পৃথিবীর সব ময়লা আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে। বিশপ মহোদয় তার প্রার্থনার মধ্যদিয়ে আমাদের পাপ-কালিমা ধৌত করেন। পানি ছাড়া কোন সৃষ্টি হতে পারে না। বিশপ মহোদয়ের উপস্থিতি আমাদের জীবনের প্রাণের সঞ্চার করে। তাই, আজকের দিনে আমরা বিশপ মহোদয়ের জন্য প্রার্থনা করি যেন তিনি সুস্থ্য থাকেন, নিরাপদে থাকেন এবং আমাদের সুযোগ্য পালক হিসেবে যত্ন নিতে পারেন।

অত:পর সান্ধ্যভোজের মধ্যদিয়ে বিশপ মহোদয়ের অভিষেক বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: