গত ১৯ শে মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দে প্রার্থনাপূর্ণ পরিবেশে কুমুল্লতে সাধু যোসেফের পর্ব পালন করা হয়। পর্বের প্রস্তুতিস্বরূপ তিনদিনব্যাপী নভেনা ও খ্রিস্টযাগ করা হয়। পর্বীয় খ্রিস্টযাগের পুরোহিত্য করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার দিলীপ এস. কস্তা এবং ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ ও ফাদার পিউস গমেজ উপস্থিতি ছিলেন। পর্বীয় খ্রিস্টযাগে প্রায় ১,১০০ জন খ্রিস্টভক্তগণ উপস্থিত ছিলেন।

শ্রদ্ধেয় ফাদার দিলীপ এস. কস্তা তাঁর উপদেশ বাণীতে বলেন, কাদেরকে সাধু-সাধ্বী বলা হয়? তাঁরাই সাধু-সাধ্বী যারা ‘বিশ্বাসী মানুষ’। আমরা যদি ক্যালেন্ডার দেখি, সেখানে প্রায় সাধু-সাধ্বীদের পর্ব পাওয়া যায়। তাঁর মধ্যে বিখ্যাত সাধু-সাধ্বীগণ হলেন- সাধু ইগ্নাসিউস, সাধু আগষ্টিন, সাধু আমব্রোস, সাধু বেনেক্টিড, সাধু লিও, সাধু টমাস আকুইনাস, আলবার্ট দ্যা গ্রেট, সাধ্বী তেরেজা, সিয়েনা ক্যাথরিন, ডন বস্কো এদের মত হওয়া খুব কঠিন। কারণ সাধু আগষ্টিন, টমাস আকুইনাস, ইগ্নাসিউস লয়ালা তাঁরা ছিলেন অনেক শিক্ষিত, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান মানুষ এবং অনেক বড় বড় কাজ করেছেন। তবে সাধু যোসেফ এবং সাধু আগষ্টিনের মধ্যে তুলনা বা পার্থক্য করি না। কিন্তু বিশ্বাস ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে ভাল থাকার সেটা সাধু যোফেস করে দেখিয়েছেন। অবশ্যই সাধু আগষ্টিন ও টমাসকে বাদ দিব না। কারণ, তারাও অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু সাধু যোসেফ হওয়ার মত আমাদেরও গুণাবলিও আছে। তিনি যে বড় বড় বই লিখেছেন, বিচার শালিসে বসেছেন, এ ধরনের কোন তথ্য নেই। কিন্তু যেটুকু করেছেন বিশ্বস্ততার ও ভালবাসার সাথে এবং স্বপ্নের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনা পেয়েছেন তা গ্রহণ করেছেন।

তাঁর জীবন বিশ্লেষণ করলে দু’টি বিষয় পাওয়া যায়। ‘কর্মে বিশ্বাসী ও ধর্মে বিশ্বাসী’। যারা মাঠে কাজ করে, ভ্যান চালায়; তারা কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করে কিভাবে বেশী টাকা উপার্জন করা যায়? তাই, একজন খ্রিস্টবিশ্বাসী হিসেবে ঈশ্বরে ভরসা রাখি এবং সাধু যোসেফের যে গুণাবলি রয়েছে তা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। আমরা দেখেছি পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক থাকা দরকার সেটা হচ্ছে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও ক্ষমা। যে পরিবারে অনবরত ঝগড়া হয়; সে পরিবারে সন্তাদের উপর প্রভাব পড়ে। যে শিশুটির পরিবার নেই; সে শিশুটি বিভ্রান্ত। অন্যদিকে সাধু যোসেফ মা-মারিয়াকে ভালবেসেছেন ও শ্রদ্ধা করেছেন। এমনকি যিশুকে লালন-পালন করেছেন।

সাধারণত প্রায়শ্চিত্তকালে পর্ব পালন করা হয় না। কিন্তু মণ্ডলি মহাপর্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে নবম পিউস সাধু যোসেফকে সার্বজনীন ‘ মণ্ডলি রক্ষক’ এবং ‘শ্রমিকদের রক্ষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পোপ এয়োদ্বশ লিও ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে সাধু যোসেফকে শ্রমিকদের আর্দশ বলা হয়। আর একটি পর্ব পালন করা হয় সেটি হলো ‘পবিত্র পরিবার’। তাই, সাধু যোসেফের পরিবারকে ‘বিশ্বাসের পরিবার’ বলা হয়। দ্বিতীয় জন পোল পরিবার বিষয়ে বলেন, “মানব সভ্যতার উন্নয়ন এগিয়ে যায় পরিবারের হাত ধরে”।

শেষে তিনি বলেন, আমরা নিজে নিজে প্রশ্ন করি যে, সাধু যোসেফের মত সৎ ও ধার্মিক হওয়ার জন্য পথ বেছে নিয়েছি, নাকি অসৎ পথ বেছে নিয়েছি? সক্রেটিস বলেছেন যে, “মানুষের সততা এই পৃথিবীতে প্রয়োজন ও মরার পরও প্রয়োজন”। আসুন, আমরা একসাথে পথ চলতে একের অপরকে সাহায্য করি। শহর পরিষ্কারের জন্য লোক দরকার নেই; আপন আপন পরিবার আঙ্গিনা পরিষ্কার করলেই গোটা শহর পরিষ্কার হয়। তাই, আসুন আমরা আমাদের জীবনের দিকে তাকাবো এবং আপন আপন হৃদয়-মন-আত্মা পরিশুদ্ধ করি যেন সাধু যোসেফের আর্দশগুলো আমরাও আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার: জের্ভাস মুরমু

Please follow and like us: