“ভালোবাসা ও সেবার বীজ বুনি, শান্তিময় বিশ্ব গড়ি” (Sow seeds of love and service for a peaceful world) এ মূলসুরকে কেন্দ্র করে গত ২৭ মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দে কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক অফিসের ফাদার চেস্কাতো সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘কারিতাস দিবস’। উক্ত দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি, ডিডি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, চ্যাপ্লেইন, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল এবং ভিকার জেনারেল রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ; ফাদার উইলিয়াম মুর্মু, সদস্য, আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন কমিটি এবং চ্যাঞ্চেলর, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ এবং ফাদার হেনরী পালমা, পাল-পুরোহিত, পবিত্র পরিবার ধর্মপল্লী, কলিমনগর এবং ফাদার বাবলু সি. কোড়াইয়া, পরিচালক, খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্র, রাজশাহী। আরও উপস্থিত ছিলেন মো. আব্দুস সামাদ মন্ডল, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ, রাজশাহী; অংশগ্রহণকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশের সাধারণ পরিষদ ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য-সদস্যা, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক ও মাঠ পর্যায়ের কর্মী/কর্মকর্তাগণ, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিসহ ১১০ জন। উক্ত কারিতাস দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মি. দীপক এক্কা, কর্মসূচি কর্মকর্তা (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।
আসন গ্রহণ ও তিন ধর্মের আলোকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম শুরু করা হয়। অত:পর স্বাগত শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন মি. দীপক এক্কা অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং কর্মসূচি কর্মকর্তা (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল। এছাড়া “ভালোবাসা ও সেবার বীজ বুনি, শান্তিময় বিশ্বগড়ি” এ মূলসুরের উপর বক্তব্য প্রদান করেন ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। তিনি তাঁর বক্তব্যে ভালোবাসা ও সেবা কাজ কীভাবে বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বিশ্বগড়া যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত ও সুন্দর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি এছাড়াও বলেন, “আমরা যেন ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে পারি”। কারিতাস দিবস পালন অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে- রেভা. ফাদার উইলিয়াম মুর্মু এবং মো. আব্দুস সামাদ মন্ডল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ভালোবাসার জন্য। তাই, যারা অবহেলিত তাদের ভালোবাসতে হবে। সেটাই হবে প্রকৃত ভালোবাসা। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ধর্মে ভালোবাসা যে অভিন্ন তা বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে তুলে ধরেন। যে সকল কর্মীরা আজ কারিতাসে দীর্ঘ সময় সেবাদানের জন্য সম্মাননা পাচ্ছেন তা ধরে রেখে ভালো কাজ অব্যাহত রাখার পরামর্শ রাখেন। ত্যাগ ও সেবাকাজের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। পরিশেষে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা যেন ন্যায্যতা ও ভালোবাসপূর্ণ শান্তির মানুষ হতে পারি। সেজন্যই ভালোবাসার অনুশীলনটা প্রথমত: আমার নিজের মধ্য থেকেই শুরু করতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও তার বক্তব্যে বলেন- আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূবর্ণজয়ন্তী পার করে ৫১ তম বছরে আছি। যুদ্ধ বিগ্রহ জীবনে শান্তি আনে না বরং সম্পর্ক ও পরিবেশকে নষ্ট করে। বর্তমান বাস্তবতায় ও আমরা যুদ্ধ বিগ্রহ, সংঘাত দেখতে পাই। আমি, আপনি আমরা প্রত্যেকেই এই বাস্তবতাকে নিয়েই এগিয়ে চলছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি দর্শক শ্রোতা হয়ে এ বাস্তবতাকে মোকাবেলা করব নাকি সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি হওয়ার মধ্যদিয়ে ভালোবাসার ও সেবার অনুশীলন করে শান্তিময় বিশ্ব গড়ব। এখন ভালোবাসা ও সেবা কী? এ দুটোকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাকে মনে রাখতে হবে। একজন প্রকৃত কৃষকের কথা। যিনি জমিতে বীজ বপনের আগে জমিকে ভালমত চাষ করে নেন; ঠিক একইভাবে ভালোবাসা ও সেবা কাজের মধ্যদিয়েই আমরা কেবল ভালোবাসার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে পারি। তাই, আমাদেরকে হয়ে উঠতে হবে ভালোবাসার মানুষ এবং সেই ভালোবাসা অনুশীলনের মধ্যদিয়েই আমাদের সেবাদায়িত্বগুলোকে পালন করতে হবে আর সেগুলো অনুশীলনের মধ্যদিয়ে আমরা শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে পারি।
অপরদিকে কারিতাস দিবস পালনে “ভালোবাসা ও সেবার বীজ বুনি, শান্তিময় বিশ্ব গড়ি” এ মূলসুরের উপর তিন ধর্মের আলোকে তিনজন বক্তা তাঁদের সহভাগিতা তুলে ধরেন। তাঁরা হলেন যথাক্রমে- খ্রিস্ট ধর্মের আলোকে রেভা. ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, চ্যাপ্লেইন, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল এবং ভিকার জেনারেল রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ; ইসলাম ধর্মের আলোকে আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মোঃ রফিকুল ইসলাম, প্রভাষক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, হাজী জমিরউদ্দিন-শাফিনা মহিলা ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী; হিন্দু ধর্মের আলোকে ড. হরিপ্রসাদ সিংহ, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়, রাজশাহী। বক্তারা সকল ধর্মের আলোকে ভালোবাসা ও সেবা কাজের প্রকৃত দিক তুলে ধরে নিজেদের মধ্য হতে ভালোবাসাপূর্ণ সেবা কাজ শুরু করার কথা ব্যক্ত করেন।
এছাড়া কারিতাস দিবস পালনে ৩০ জন কর্মীকে ১০ বছরের, ৬ জন কর্মীকে ১৫ বছরের এবং ২০ জন কর্মীকে ২০ বছরের লং সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। অত:পর সভাপতি মি: দীপক এক্কা অদ্যকার দিনের সভাপতি, আঞ্চলিক পরিচালকের পক্ষে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন- আজকের এই অনুষ্ঠানের জন্য আপনাদের উপস্থিতি ও পরামর্শ দিয়ে যারা সার্বিকভাবে সহভাগিতা দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ইতিমধ্যে আপনারা সবাই অবগত আছেন এ বছর আমরা কারিতাসের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি আপনারা আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন, যেন আমাদের প্রচেষ্টা ও কর্ম ইচ্ছার মধ্যদিয়ে কারিতাসের ভালোবাসা ও সেবার কাজ করে যেতে পারি এবং ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে পারি।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার: অসীম ক্রুশ