ফাদার সুনীল রোজারিও
সাধু আন্তনীর নিকট অলৌকিক প্রার্থনা :-
হে পূণ্যময় সাধু আন্তনী,
সাধুগণের মধ্যে তুমি মহীয়ান ও কোমলপ্রাণ,
ঈশ্বরের প্রতি তোমার জ্বলন্ত ভালোবাসা,
তোমার উত্তম গুণাবলী,
বিশ্বের আপন প্রাণিজগতের প্রতি তোমার রয়েছে অগাধ প্রেম।
সাধুগণের মধ্যে অলৌকিক কর্ম সাধনের ক্ষমতা
মাত্র তোমাকেই দেওয়া হয়েছে।
বিপদগ্রস্ত মানুষের অনুরোধে তোমার অলৌকিক কন্ঠবাণী
যা নিয়ত ধ্বনিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
তীক্ত পরীক্ষার সময় তোমার নিকট অসহায়ের প্রার্থনা কখনো বৃথা যায় না।
মুমূর্ষ রোগীদের তুমি সুস্থতা দান করেছো,
দুঃখীজন তোমার সহানুভূতির লক্ষ্যসমূহ।
মর্মাহত যন্ত্রণায় কাতর,
আহত হৃদয়ের কান্না শুনে তুমি তাকে জীবন দিয়েছো।
সহানুভূতির অভাবে দৈন্য-দুর্দশা ও দুঃখ যন্ত্রণায় জর্জরিত এই বিশ্বে-
তোমার কাছে অসম্ভব বলতে কিছুই নেই।
এই চিন্তায় মগ্ন ও উৎসাহিত হয়ে,
তোমার ফলপ্রদানে সক্ষমতা ও পূণ্যকারী মধ্যস্থতায় আশ্বস্থ হয়ে
পূর্ণ বিশ্বাসে তোমার প্রতিকৃতির প্রতি নত হয়ে যাচনা করি …
-আমরা যেন এই আশির্বাদ / বর লাভ করতে পারি।
আমরা তোমার কাছ থেকে অলৌকিক পূণ্যফল লাভের আশা করছি।
হে ভালোবাসার কোমলপ্রাণ সাধু আন্তনী,
তোমার অন্তর মানবিক করুণায় পরিপূর্ণ।
আমাদের এই মিনতি সকল-
তোমার বাহুতে আশ্রিত শিশুযিশুর শ্রবণে পৌঁছে দাও।
তোমার কন্ঠস্বরেই আমাদের প্রার্থনা পূর্ণ হয়ে উঠবে।
আমাদের অন্তরের কৃতজ্ঞতা সর্বদা তোমার তরে পরিপূর্ণ। আমেন-
প্রভুর প্রার্থনা/ দূতের বন্দনা এবং ত্রিত্বের জয়…।
সাধু আন্তনীর পবিত্র বাণী :-
১. কথার চেয়ে কর্ম অধিক শক্তিশালী: তোমার বাণী প্রচার করো আর কর্ম কথা বলুক।
২. শয়তান আমাদের ভয় করে যখন আমরা প্রার্থনা ও ত্যাগস্বীকার করি। শয়তান আমাদের আরো ভয় করে যখন আমরা নম্র ও নির্মল থাকি। শয়তান বিশেষভাবে ভয় করে যখন যিশুকে ভালোবাসি। শয়তান দৌঁড়ে পালায় যখন আমরা ক্রুশের চিহ্ন করি।
৩. দেহের প্রাণ হলো আত্মা আর আত্মার প্রাণ হলেন ঈশ্বর।
৪. প্রেম-প্রীতি হলো বিশ্বাসের প্রাণ- যা যাকে জীবিত রাখে। প্রেম ছাড়া বিশ্বাস মৃত।
৫. মানবতা মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং যারা নিজেকে মধুর মতো লালন-পালন করে তারা মিষ্টিফল উৎপন্ন করে।
৬. বিনীতভাবে ভালোবাসতে শিখো- যা তোমার পাপ নির্মূল করবে। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সব পাপই ঘৃণারযোগ্য। তবে সবচেয়ে ঘৃণারযোগ্য পাপ হলো হৃদয়ের গর্ব। তুমি নিজেকে জ্ঞানী এবং শিক্ষিত মনে করো না, তাহলে সব কর্মই ধ্বংস হবে এবং তোমার তরী বন্দরে ভিড়বে শূন্য হয়ে। তুমি যদি অধিক ক্ষমতাশালী হও তবে মানুষকে মৃত্যুর হুমকি দিবে না। মনে রেখো প্রকৃতির নির্মম নিয়মে তুমিও মৃত্যুর অধীনে এবং প্রতিটি দেহের সর্বশেষ আবরণ হলো তার আত্মা।
৭. সে-ই উত্তমভাবে প্রার্থনা করে, যে জানে না যে সে প্রার্থনা করছে।
৮. একজন খ্রিস্টানকে অবশ্যই ক্রুশের উপর নির্ভর করতে হবে যেমন ভ্রমণকারি তার দীর্ঘ ভ্রমনকালে কর্মীদের উপর নির্ভর করেন।
৯. তুমি যে প্রতিটি ভালো কিছু লাভ করছো, তা ঈশ্বরকে নিবেদন করো। তুমি যদি কোনো কিছুর জন্য নিজেকে বাহ্বা দেও তাহলে তুমি চোরের মতো অভিযুক্ত হবে।
১০. আমরা প্রকৃতি এবং আশির্বাদ, রাজনীতি এবং প্রার্থনা, মণ্ডলি এবং বিবেক দিয়ে গঠিত হচ্ছি। ঈশ্বরের সৃষ্ট সমস্ত প্রাণীজগত আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে- যেমন আমাদের প্রতিবন্ধকতা, আমাদের বাকরুদ্ধতা, আমাদের উত্তোলন এবং আমরা যে উত্তোলিত হচ্ছি- সবই।
১১. যা অতীত হয়ে গেছে তা নিয়ে আক্ষেপ করো না এবং নিজে সবসময় যে সঠিক, তা বিশ্বাস করবে না।
১২. দার্শনিকগণ যেনো সাধারণ শ্রমিকদের কথায় অবজ্ঞা না করে। তেমনিভাবে বুদ্ধিমান যেন মূর্খ; শিক্ষিতগণ যেন অশিক্ষিত; রাজকুমার যেনো ক্ষেতমজুরকে অবজ্ঞা না করেন।
১৩. মারীয়ার কোলে আশ্রয় খুঁজুন কারণ তিনি আশ্রয়ের নগরী। প্রভু মারীয়ার মধ্যে দয়ার আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছেন- এমনকি যারা পাপী তাদেরও তিনি শক্তি সঞ্চয়ের জন্য অভয় আশ্রয় দিয়ে থাকেন।
১৪. পার্থিব ধনী যারা তারা নলখাগড়ার মতো, যেগুলোর শিকড় জলে ডুবে থাকে আর উপরটুকু দৃশ্যমান- কিন্তু নলের ভিতরটা ফাঁপা। এই ধরণের ব্যক্তি নিজের অন্তরটা নিজেই বিদীর্ণ করে।
১৫. মানুষকে সময়ের লক্ষণের প্রতি আত্মসমর্পণ করতে হয়। মণ্ডলিকে অবশ্যই সময়ের মধ্যে প্রবেশ করতে হয় এবং সময়ের সমস্যাগুলো অর্থবহ করে তুলতে হয়।
১৬. পাখিরা হলো সাধু যারা ধ্যান সাধনার ডানায় স্বর্গের পথে উড়ে যায়, তারা পৃথিবী থেকে আলাদা যেন পৃথিবীতে তাদের কোন কাজ নেই। তারা পরিশ্রম করে না কিন্তু আত্ম-ধ্যানের মধ্যদিয়ে স্বর্গে বসবাস করে।
১৭. বিশ্ব প্রকৃতি কতোই সুন্দর, তবে তিনি না কতো সুন্দর যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কর্মীর জ্ঞান প্রকাশিত হয় তার তৈরি শিল্পের মধ্যদিয়ে।
১৮. যে কেউ যিশুখ্রিস্টের নামে কৌমার্য পালনে ইচ্ছুক, সে ক্ষুধার্ত ইঁদুর থেকে শুধু দূরে নয় কিন্তু তাকে ইঁদুরের গন্ধ থেকেও দূরে থাকতে হবে।
১৯. একজন সন্যাসী কখনোই সম্পূর্ণ সিদ্ধ নন, যতক্ষণ সে নিজেকে চিনতে না পারে বা তার প্রার্থনার উদ্দেশ্য কার সমীপে- বুঝতে না পারে।
২০. সাধুগণ হলেন নক্ষত্রের মতো। খ্রিস্ট তাদের রেখেছেন গোপন স্থানে যেন অপ্রয়োজনে অযথা আলোকিত না হোন, কিন্তু তারা প্রয়োজনে উজ্জ্বল ও দৃশ্যমান হয়ে ওঠেন।
২১. অর্থ হলো অনর্থ, কত নিবেদিত প্রাণ অন্ধভাবে সেসব আকড়ে থাকেন, প্রতারণা করে থাকেন। অর্থ হলো পাখির বিষ্ঠার মতো, যা তোবিতের চোখ অন্ধ করে দিয়েছিল।
২২. লোভীদের দাঁত তরবারির ফনার মতো, যা তারা গরিবের বিরুদ্ধে উদ্ধত ক’রে তাদের স্বল্প সম্বলও কেড়ে নেয়। তারা পৃথিবীর সন্তান তবে নিজেদের আলোর সন্তান ও স্বজ্জন মনে করে। আসলে তারা মৃত্যুর দিকে ধাবিত।