গত ২৫ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দ সিবিসিবি’র খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ কমিশনের আয়োজনে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ-সম্প্রীতি : কাথলিক মণ্ডলির দৃষ্টিভঙ্গি এই মূলভাবের উপর ভিত্তি করে গত ২৫ থেকে ৩০ এপিল পর্যন্ত এক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ ও সিবিসিবি’র খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ কমিশনের সভাপতি আর্চবিশপ বিজয় এনডি’ ক্রুজ, ওএমআই। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাগতিক ধর্মপ্রদেশ রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জেভার্স রোজারিও। সেই সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন সিবিসিবি’র খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ কমিশনের সেক্রেটারী শ্রদ্ধেয় ফাদার প্যাট্রিক গমেজ, অফিস সহকারী সিস্টার সবিতা এম কস্তা, সিআইসি। সেই সাথে বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশ থেকে আগত ধর্মপ্রদেশীয় মোট ৭২ জন প্রতিনিধি। বিকাল ৫:৩০ মিনিটে সকল অংশগ্রহণকারীদেরকে পালকীয় কেন্দ্রের গেটের সামনে থেকে নাটোরের বিখ্যাত কাচাগোল্লা দিয়ে মিষ্টি মুখ করে আদিবাসী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এবং প্রত্যেকের কপালে তিলক চন্দন দিয়ে তাদেরকে বরণ করে নেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠানে সভাপতি এবং ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এনডি’ ক্রুজ, ওএমআই তাঁর স্বাগত ও উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের খ্রিস্টমণ্ডলি খুবই ছোট। তবে ছোটই আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠে এবং এটার মধ্য দিয়ে একটা পরিবর্তন বা রূপান্তর ঘটে। সেই সাথে ব্যক্তি জীবনে চিন্তা-ভাবনার ও ধ্যান ধারণার পরিবর্তন আসে। কেননা, যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থান করেছেন। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র মণ্ডলি ছোট হলেও এর একটি শক্তি আছে। কারিতাস ইন্টারন্যাশনাল এর সেক্রেটারি জেনারেলের এর একটি কথা আমার খুব ভাল লেগেছে । তিনি বলেছেন, খ্রিস্টিয়ানগণ সংখ্যালঘু কিন্তু খুবই শক্তিশালী সংখ্যালঘু ( Chrisrtian’s are  small minority but very  strong minority )। এই আত্মবিশ্বাস যেন আমাদের মধ্যে সবসময় থাকে।” তবে সেই সাথে আমরা এটাও জানি এবং উপলব্ধি করি যে, আমাদের দেশের শিক্ষিত জনগণ একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চায়। তারা দেখতে চায় বাংলাদেশের সব ধরণের, সব ধর্মের মানুষরা যেন একত্রে বসবাস করে।

স্বাগতিক ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও তার স্বাগতিক বক্তব্যে সকলকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমি খুবই আনন্দিত এই জন্য যে, উক্ত প্রশিক্ষণটি আমাদের ধর্মপ্রদেশের পালকীয় কেন্দ্রে হচ্ছে। সেই সাথে সকলকে আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমি আরো বেশী খুশি হব ভবিষ্যতে প্রতিটি শিক্ষা সেমিনার যেন আমাদের ধর্মপ্রদেশে করা হয়। সংলাপ বিষয়ে তিনি তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন- আমার মতে খ্রিস্টভক্তরাই আমাদের চেয়ে বেশী সংলাপ করে থাকেন। তবে এই প্রশিক্ষণের আসল উদ্দেশ্য হলো আমরা কী মনোভাব নিয়ে একে-অপরের সাথে মেলা-মেশা করব। তাছাড়া আমরা কী অর্জন করতে চাই; সেটাই হল এই প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য। সেই সাথে সকল ধর্মের বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে হবে এবং একে-অপরের সম্মান রক্ষা করতে হবে।”

সিবিসিবি’র খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ কমিশনের সেক্রেটারী শ্রদ্ধেয় ফাদার প্যাট্রিক গমেজ সবাইকে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জানানোর পর প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেন, “এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা শিখতে চেষ্টা করব, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বিষয়ে খ্রিস্টমণ্ডলির শিক্ষা, ধ্যান-ধারণা, কর্মকান্ড, কর্মপন্থা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করা। সেই সাথে আন্তঃধর্মীয় পরিবেশে, সমাবেশে ও জনগণের মধ্যে যারা নিয়োগকৃত কর্মী তাদের খ্রিস্টীয় দৃষ্টিভঙ্গি, ভূমিকা ও কর্তব্য সম্বন্ধে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে চেতনা বৃদ্ধি করা। সেই সাথে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য গঠন, দক্ষতা অভিজ্ঞতা লাভ করা।”

খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক, শ্রদ্ধেয় ফা: বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া সকলকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেন- আমাদের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্রে আপনারা এসেছেন সংলাপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে। সেই জন্য আপনাদেরকে জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সংলাপ হল বর্তমান সময়ে একসঙ্গে পথ চলার একটি অন্যতম উপায়। যার মধ্যদিয়ে আমরা পারস্পারিক দূরত্ব কমাতে পারি এবং একতায় বা সহমর্মিতায় বসবাস করতে পারি। তাই, সংলাপ প্রশিক্ষণ সপ্তাহ আপনাদের সকলের জন্য পুনরুত্থিত খ্রিস্টের আলোয় আলোকিত করুক এবং পুনরুত্থিত খ্রিস্টের জ্যোতি আপনাদের সব সময় আলোর পথে পরিচালিত করুন এই শুভ কামনা করি।

(আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ কমিশনের প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনা নিয়ে পরবর্তী সংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকুন)

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: