সিনোডাল (মিলন-ধর্মী) মণ্ডলি : “মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ”

প্রিয় খ্রিস্টভক্ত ও ভাই-বোনেরা,
পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস আগামী ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিতব্য সিনোড (Synod) বা বিশপগণের ধর্মসভার মূলভাব বেঁধে দিয়েছেন, “সিনোডাল মণ্ডলিঃ মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ”। প্রতি দুই বছর পর পর কাথলিক মণ্ডলিতে বিশপগণের এই ধর্মসভা বা সিনোড হয়ে থাকে এবং প্রত্যেক সিনোডেরই একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু থাকে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে সারা বিশ্বের স্থানীয় মণ্ডলিগুলোর কাছে প্রেরিত সেই সিনোড প্রস্তুতির পথরেখা (Vademecum) প্রেরণ করা হয়েছে। সেই অনুসারে স্থানীয় মণ্ডলিগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ক’রে সেখানকার বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে বলা হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন যেন কাথলিক মণ্ডলি তৃতীয় সহ জন্য উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারে। সেইজন্য সারা বিশ্বের কাথলিক খ্রিস্টভক্তদের প্রস্তুত করা হচ্ছে যেন তারা মণ্ডলির জীবনে মিলন, অংশগ্রহণ ও সকলের কাছে সাক্ষ্য বহনে সাধনা করতে পারে। সেই নির্দেশনা মেনে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ একটি কমিটি গঠন করেছে ও ধর্মপল্লীগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করেছে। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপল্লীগুলোতে ইতিমধ্যেই সিনোডের বিষয়বস্তু ও স্থানীয় বাস্তব অবস্থা আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। এখন ধর্মপ্রদেশ পর্যায়ে সিন্থেসিস্ বা সংশ্লেষণ তৈরির জন্য আমরা খুব শীঘ্রই কর্মশালায় মিলিত হবো।

প্রস্তুতি দলিলে বেশ কিছু সমস্যার কথা আলোচনা করা হয়েছে- যেমন বৈশিক মহামারি, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বৈরিতা, সংঘর্ষ ও যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিপর্যয়, অভিবাসীদের সমস্যা, সামাজিক বৈষম্য, বর্ণবাদ বা রেসিজম্, সহিংসতা ও নির্যাতন, শোষণ ইত্যাদি। তবে আমাদের সমাজে ও দেশে আরও অনেক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের সকলকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে- যার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, কুসংস্কার, সামাজিক অন্যায্যতা, প্রান্তিক ও অসহায় মানুষের সমস্যা, নারী-পুরুষের বৈষম্য ও নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক ও সামাজিক হঠকারীতা ও প্রতারণা এবং এরূপ আরও অনেক বিষয়। স্থানীয় মণ্ডলির এইসব দুষ্ট ক্ষতগুলো নিরাময় ক’রে আমরা যেন বিশ্ব মণ্ডলির মধ্যে আবদান রাখতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে- যা আমাদের জন্য সহজ হবে না। আমরা কি সেই কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি? খ্রিস্টেতে ভাই-বোনেরা, আসুন আমরা আমাদের স্থানীয় মণ্ডলিকে এমন করে গড়ে তুলি, যেন তা হয়ে ওঠে সত্যিকারভাবেই জীবন্ত ও মিলন-ধর্মী খ্রিস্টদেহ। তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত?

১। একত্রে পথ চলা: পোপ ফ্রান্সিসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আসুন আমরা একসঙ্গে একই মণ্ডলির পথে যাত্রা করি। কেউ আগে নয়, কেউ পিছনে নয়, সকলেই এক সঙ্গে পথ চলা- ভিন্ন ভিন্ন পথে নয়, একই মণ্ডলির পথে। আমরা একসঙ্গে একই পথে পাশাপাশি পথ চ’লে এবং পরস্পরকে সহযোগিতা ও সমর্থন ক’রে যেন একটি সুসংগঠিত ও সমন্বিত খ্রিস্টমণ্ডলি গড়ে তুলতে পারি। ধনী বা গরীব, একই হোক আমাদের পথ; আর পদ পদবীর কারণে কেউ যেন বেশি সুবিধা না পায় আবার কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।

২। শ্রবণ: শ্রবণ করা হলো আমাদের প্রথম কাজ, যার দ্বারা আমরা সকল খ্রিস্টভক্ত অর্থাৎ বিশপ, যাজক, ধর্মব্রত ও ধর্মব্রতীগণ ও সকল স্তরের খ্রিস্টভক্তগণ পরস্পরের কাছে থাকব ও সমর্থন করব। আমরা অনেক সময় যাদের কথা শুনিনা বা গুরুত্ব দেইনা হয়তো ঈশ্বর তাদের মধ্যদিয়েই আমাদের কাছে কথা বলেন। আমরা কি পরিবারে ও সমাজে পরস্পরের কথা শুনি? আমরা কি স্বামী-স্ত্রীরা পরস্পরের কথা ও ছেলে-মেয়েদের কথা শুনি? আমরা কি স্থানীয় মণ্ডলিতে সকলের কথা শুনি? যারা সমাজের বাইরে বা প্রান্তসীমায় পড়ে আছে, যেমন দরিদ্র, শ্রমিক, বেকার, কম শিক্ষিত, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ ব্যক্তিগণ, সংখ্যালঘু, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যুবা-শিশু, ইত্যাদি, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি? আমরা কি পৃথিবী ও প্রকৃতির কান্না শুনি? আর দরিদ্রদের কান্না কি আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে? সকল স্তরের সকল মানুষের কথা না শুনে আমরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছুলে তা নিশ্চয়ই ভারসাম্যপূর্ণ হবে না।

৩। কথা বলা: আমরা পরিবারে, সমাজে ও মণ্ডলির সকলেই কি কথা বলি? নাকি মাত্র একজন বা মাত্র কয়েকজন সব সময় কথা বলে আর অন্যরা শুধু চুপ করে থাকে আর হুকুম মেনে চলে? মনে রাখতে হবে যে সবাইকে মণ্ডলির সর্বস্তরে অংশগ্রহণ ও কথা বলার সুযোগ থাকতে হবে। বিশেষভাবেই খ্রিস্টমণ্ডলি সকলের এবং সকলকেই আলোচনার সুযোগ দিতে হবে; কাউকেই বাদ রাখা যাবে না- কোন অজুহাতেই নয়। গণমাধ্যমের কাছে কে কথা বলে? সেখানে কি সকলের মতামত ফুটে ওঠে? খ্রিস্টমণ্ডলির প্রয়োজনে সকলকেই কথা বলতে হবে সাহস, স্বাধীনতা, সত্য ও সৌজন্য নিয়ে। ঈশ্বর আমাদের কথা শুনতে চান; আমরা কি তাঁর সঙ্গে কথা বলি?

৪। উৎসব উদযাপন: একসঙ্গে পথ চলা তখনই সম্ভব- যখন সমাজের সকলেই ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করে ও খ্রিস্টপ্রসাদীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। আমাদের উপাসনা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানগুলো আমাদের কিভাবে পরিচালনা করে? কিভাবে আমরা খ্রিস্টযাগের পবিত্র ভোজ ও পরিবারের ভোজসভায় উৎসব উদযাপন করি? সেখানে কি সমতা ও সহভাগিতার পরিবেশ থাকে? নাকি আমরা আমাদের উৎসব থেকে কিছু মানুষকে বাদ দিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতি-নীতি টেনে আনি? ভালবাসায় ভ্রাতৃমিলনের উৎসব ও আনন্দ উদযাপন করা আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। তাই, আমরা যেন মিলনের জন্য কাজ করি- বিভেদের জন্য নয়।

৫। দায়িত্বের সহভাগিতা: খ্রিস্টমণ্ডলির মিশন বা প্রেরণ দায়িত্বে আমরা সকলেই আহুত- সকলেই অংশগ্রহণ করবে যার যার অবস্থান থেকে- যখন ও যতটুকু সম্ভব। এই দায়িত্ব পালন থেকে যেমন কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না, তেমনি সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াও উচিত নয়। খ্রিস্টমণ্ডলির মিশন বা প্রেরণ দায়িত্ব পালন করা সকলেরই উচিত- স্বেচ্ছায় সকলের সঙ্গে সংহতিপূর্ণভাবে। এই ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সময় (Time), সম্পদ (Treasure) ও সামর্থ্য (Talent) দিয়ে মণ্ডলির প্রচারকাজ, পালকীয় কাজ, ও দয়ার কাজে অংশ নিতে পারি। মণ্ডলির প্রেরণ ও সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব মুষ্টিমেয় কয়েকজনের শুধু নয়, এই দায়িত্ব দীক্ষাপ্রাপ্ত সকল খ্রিস্টভক্তেরই। এই প্রসঙ্গে আমি আমার ২০১০ খ্রিস্টাব্দের পালকীয় পত্র “আমার ধর্মপল্লী আমার দায়িত্ব”, ২০২০ খ্রিস্টাব্দের পালকীয় পত্র, “আমরা হলাম দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক” এবং ২০২১ খ্রিস্টাব্দের পালকীয় পত্র, “দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবকের আহ্বান: কৃতজ্ঞ হও” বিষয় স্মরণ ক’রে দিতে চাই।

৬। খ্রিস্টমণ্ডলি ও সমাজে সংলাপ: সংলাপ করতে গেলে প্রয়োজন সহনশীলতা ও ধৈর্য্য, তবেই এই সংলাপ পারস্পরিক সমঝোতা এনে দিতে পারে। আমরা যদি শান্তিতে থাকতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই সংলাপ করতে হবে। সংলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা। খ্রিস্টমণ্ডলিতে আমাদের খ্রিস্টভক্তদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সংলাপ হতে হবে; ধর্মীয় ও সামাজিক পদ পদবীর বাইরে গিয়ে সকলের সঙ্গে সকলের সংলাপ স্থানীয় মণ্ডলিতে ভ্রাতৃত্ব ও মিলন স্থাপনে সহায়ক হবে। ধর্মপ্রদেশের সকল ধর্মপল্লী ও প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় কাঠামোগত সংলাপ যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন অন্যান্য ধর্মপ্রদেশের সঙ্গে সংলাপ। তাছাড়াও সংলাপ হতে হবে অন্য ধর্মের মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। আদিবাসী ও বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গেও সংলাপ হতে হবে উদারভাবে। আমরা কি বৈষম্যহীনভাবে সকলের সঙ্গে সংলাপ করি বা মিলনের সাধনা করি? আমরা কি ঈশ্বরের সকল সৃষ্টির সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি দরিদ্রদের সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি অন্য ধর্মের ভাই-বোনদের সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি দেশীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি প্রবীণ ও শিশুদের সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি বিধবা ও অসহায়দের সঙ্গে সংলাপ করি? আমরা কি পরিবারে সকলের সঙ্গে সংলাপ করি?

৭। বিভিন্ন খ্রিস্টমণ্ডলির মধ্যে ঐক্য প্রচেষ্টা: কাথলিক মণ্ডলি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, দীক্ষাস্নানের দ্বারা যারা আমাদের মতই খ্রিস্টের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান ও সংলাপের মধ্যদিয়ে ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা করতে হবে। সেইজন্য এই সিনোডের যাত্রায় “ঐক্য প্রচেষ্টা” খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আশেপাশে অন্য খ্রিস্টমণ্ডলি বা প্রটেষ্টান্ট মণ্ডলির সদস্যদের সঙ্গে আমাদের কাথলিক খ্রিস্টভক্তদের সম্পর্ক কেমন? আমরা কিভাবে তাদের সঙ্গে আদান প্রদান ও যাত্রা করি? একসঙ্গে চলে আমরা কি ফল লাভ করতে পারি? তাদের সঙ্গে পথ চলতে আমাদের বাধা ও চ্যালেঞ্জগুলো কি কি? কিভাবে আমরা খ্রিস্টের প্রার্থনা “তারা যেন এক হয়” (যোহন ১৭:২১) পূর্ণ করতে পারি?

৮। কর্তৃত্ব ও অংশগ্রহণ: সিনোডাল চার্চ বা মিলন-ধর্মী মণ্ডলি হলো অংশগ্রহণমূলক ও দায়িত্ব পালনে সহযোগী। আমাদের স্থানীয় মণ্ডলি, ধর্মপ্রদেশ ও ধর্মপল্লীগুলো কিভাবে তার লক্ষ্য নির্ধারণ করে? বা কিভাবে সেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা চালায়? দেশের সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের মণ্ডলির সঙ্গে কিরূপ আচরণ করে? আমরা তাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করি? ধর্মপল্লী ও ধর্মপ্রদেশে কিভাবে দলীয় মনোভাব নিয়ে কাজ করে, বা আদৌ করে কি না? আমরা সেইসব কাজ বা কর্মপ্রচেষ্টা কিভাবে মূল্যায়ন করি? আমাদের ধর্মপ্রদেশে ও ধর্মপল্লীতে আমরা কি মিলন-ধর্মী মণ্ডলি গড়ে তুলতে চেষ্টা করি? আমরা যে সেই চেষ্টা করি, তা কিভাবে বুঝা যাবে?

৯। নির্ণয় করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা: সিনোডাল চার্চ বা মিলন-ধর্মী মণ্ডলিতে খ্রিস্টভক্তদের সঙ্গে আলাপ ক’রে সকল সম্ভাবনা যাচাই বাছাই ক’রে পবিত্র আত্মার প্রেরণায় যা করণীয় তা নির্ণয় করা হয়। আমরা পরিবারে, সমাজে ও স্থানীয় মণ্ডলিতে কিভাবে সিদ্ধান্ত নেই বা করণীয় নির্ধারণ করি? নাকি শুধু পরিবারের কর্তা বা সমাজ প্রধান একা সিদ্ধান্ত নেয়? ধর্মপল্লীতে পাল-পুরোহিত কী একা সিদ্ধান্ত নেন? ধর্মপ্রদেশের বিশপ কী একা সিদ্ধান্ত নেন? ধর্মীয় সম্প্রদায়ে বা কনভেন্টে সুপিরিওর কী একা সিদ্ধান্ত নেন? সেখানে কি সততা ও স্বচ্ছতার নীতি অনুসরণ করা হয়? কিভাবে আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা করণীয় নির্ধারণে অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছতা আনতে পারি? আমরা ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে কী স্বেচ্ছাচারীতার আশ্রয় গ্রহণ করি? আমরা কী আমাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করি? আমরা কী আমাদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে স্বচ্ছভাবে জাবাবদিহি করি?

১০। আসুন আমরা সিনোডাল হই: সিনোডাল বা মিলন-ধর্মী হওয়া মানে হলো খোলা মনে পরিবর্তন গ্রহণ করা, গঠনলাভ করা ও শিক্ষাগ্রহণ করা। আমাদের স্থানীয় মণ্ডলি, ধর্মপ্রদেশ ও ধর্মপল্লী, “এক সঙ্গে যাত্রা করার” শিক্ষা ও গঠনদান ক’রে, পরস্পরকে শ্রবণ করতে শিক্ষা দেয়, প্রচার কার্যে নিয়োজিত হ’তে গঠন দেয় ও সংলাপ করতে প্রশিক্ষণ দেয়? আমরা কি আমাদের পরিবারে, সমাজে ও স্থানীয় ধর্মপল্লীর সর্বত্র মিলনের চর্চা করি? মনে রাখতে হবে- মিলন-সাধনা ছাড়া আমরা কেউ ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে সিনোডাল হ’তে পারব না। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে সিনোডাল না হয়, তাহলে তার পরিবারে সে মিলন গড়তে পারবে না। তাই, আসুন আগে আমি বা আমরা সিনোডাল হই! আসুন আমরা পরিবারে, সমাজে, মণ্ডলিতে, সর্বত্র মিলন, ঐক্য ও সমঝোতা গড়ে তুলি! আসুন, আমরা মিলন-ধর্মী হই ও শান্তিতে জীবন যাপন করি!

আমি জানি যে, আপনারা ইতিমধ্যেই ধর্মপল্লী ও ভিকারিয়া পর্যায়ে উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন। তা সত্বেও আমি মনে করি বিষয়টির যেহেতু স্থায়ী গুরুত্ব ও আবেদন রয়েছে- সেহেতু আমাদের উচিত এর গভীরে প্রবেশ করা। তাই, আমরা আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সর্বত্র এই ‘সিনোডাল’ বিষয়টি নিয়ে আরও ধ্যান-প্রার্থনা করব ও অনুশীলনের চেষ্টা করে যাব। আমরা যেন আমাদের পরিবার, সমাজ ও ধর্মপল্লীতে মিলন- সাধনা চর্চা ক’রে সত্যিকারের একটি সক্রিয় স্থানীয় মণ্ডলি হতে পারি; হতে পারি খ্রিস্টের সেই জীবন্ত দেহটি- যা প্রেম দিয়ে গড়া!

উপসংহারে আমি আমাদের ধর্মপ্রদেশে ‘সিনোডাল মণ্ডলি’ সংক্রান্ত আলোচনা ও প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য যে কমিটি নিরলসভাবে কাজ করেছেন- সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির আহ্বায়ক সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। যারাই এই প্রক্রিয়ায় অবদান রেখেছেন ও অংশগ্রহণ করেছেন আমি তাদের সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ। এর মধ্যদিয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টভক্তগণ আমরা সকলেই আগামী ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের বিশপগণের সিনোডে সামান্য অবদান রাখতে পেরেছি বলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। ঈশ্বর আমাদের সকলকেই আশীর্বাদ করুন।

ইতি,
খ্রিস্টেতে- আপনাদের সেবায়,
বিশপ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশ।

Please follow and like us: