উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার দেশ সফরের জন্য ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং ভাটিকান সিটি প্রধান পোপ ফ্রান্সিসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ‘ব্লু হাউজ’ থেকে বার্তা সংস্থা রয়টারের বরাত দিয়ে গত ৯ তারিখে বলা হয়েছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন আগামী সপ্তাহে যখন ভাটিকান সফর করবেন তখন তিনি উত্তর কোরিয়ার এই আমন্ত্রণপত্র পোপের কাছে পৌঁছে দিবেন। গত মাসে দুই কোরীয় নেতার বৈঠকের সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা মি. কিম পোপকে পিয়ংইয়াং আমন্ত্রনের কথা উল্লেখ করেন। ভাটিকান ও সিউলের মুখোপাত্রগণ জানিয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট মুন অক্টোবরের ১৩ থেকে ২১ তারিখ পযর্ন্ত তার ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে ১৭ তারিখ ভাটিকান সফর করবেন। এছাড়াও তিনি বেলজিয়াম, প্রান্স, ইটালি এবং ডেনমার্ক সফর করবেন। তার ভাটিকান সফরের উদ্দেশ্য হবে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও সহযোগীতা ও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করা। ভাটিকানে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির জন্য এক প্রার্থনা সভায় মি. মুনের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুন একজন ক্যাথলিক। সেন্ট পিটারস বাসেলিকায় সেই শান্তি ও সম্প্রীতির খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করবেন ভাটিকান সিটির বিদেশ সচিব কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন।
এদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, পোপের উত্তর কোরিয়া সফরের আমন্ত্রণ লোক দেখানো এবং বিশ্বকে বোকা বানানোর একটা প্রোপাগান্ডা বা ধান্দা মাত্র। কারণ সেখানে কোনো ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই- যদিও সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা উল্লেখ রয়েছে। ১৯৮০ সালে পিয়ংইয়াং দু’টি গির্জা এবং ২০০৬ একটি রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জা নির্মান করলেও সেগুলো এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বর্তমান নেতার ঠাকুরদাদা যখন উত্তর কোরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন তখন সেখানে প্রচুর ক্যাথলিক ছিলো। সেই কারণে পিয়ংইয়াংকে এক সময় বলা হতো ‘পূর্বের জেরুশালেম।’ এমন কি ১৯৫০ সালে যখন কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ বাঁধে তখন উত্তর কোরিয়াতে ৫৫ হাজার ক্যাথলিক ছিলেন। আর এখন, অনেকের মতে মাত্র ৪ হাজার ক্যাথলিক রয়েছে- যারা গোপনে ধর্ম পালন করে। বর্তমান নেতার বাবা কিম জং ইল ২০০০ সালে পোপ ২য় জন পলকে উত্তর কোরিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখন ভাটিকান থেকে বলা হয়েছিলো যে, উত্তর কোরিয়া যদি সে দেশে ক্যাথলিক ধর্মযাজক থাকার অনুমতি দেয় তবে পোপের সফর ভেবে দেখা হবে।
অন্যদিকে পোপ ফ্রান্সিস ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্টের ১৪ থেকে পাঁচ দিন দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। সেই সফরের প্রধান উপাসনায় যোগদানের জন্য উত্তর কোরিয়ার একটি ক্যাথলিক প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানালেও কোনো অনুমতি মিলেনি। পোপ তার সফর শেষ করে সরাসরি রোম নগর ফেরার পথে বিমানে বসেই বলেছিলেন, দুই কোরিয়া কোনো একদিন এক হবে এবং তাদের ভাষাও এক। কিন্তু মনে রাখার বিষয় হলো পোপ যেদিন সিউলে অবতরণ করেন তার কিছুক্ষণ আগে উত্তর কোরিয়া তার এক সামদ্রিক সীমান্ত থেকে পর পর পাঁচটি স্বল্প পাল্লার রকেট ছুড়েছিলো। দক্ষিণ কোরিয়া ছিলো পোপ ফ্রন্সিসের প্রথম এশিয়া সফর। দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যা পাঁচ কোটি আট লক্ষ্য। যার মধ্যে সব মিলে ২৭.৬ শতাংশ খ্রিস্টান এবং ক্যাথলিকের সংখ্যা প্রায় ৫৫ লক্ষ্য বা ১০.৫ শতাংশ।
উত্তর কোরিয়ার রয়েছে বিশ্বের ৪র্থতম শক্তিশালী সেনাবাহিনী। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমস্ত আদেশ নির্দেশ অমান্য করে তার পরমানু কর্মসূচি পশ্চিমা বিশ্বের কোনো কোনো দেশের সমকক্ষ্য করে তুলেছিলো। অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলো- কোরীয় উপদ্বীপে আর একটি যুদ্ধ আসন্য। কিন্তু ইদানীং পিয়ংইয়াং তার সুর নরম করে সিঙ্গপুরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গত জুনে বৈঠক করেন। ইতিমধ্যে আবার দুই কোরিয়ার নেতারা তিন দফায় বৈঠকে বসে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি স্থাপনের বার্তা দিয়েছেন। গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন তার প্রতিনিধিদের নিয়ে পিয়ংইয়াং সফর করেন। সেই প্রতিনিধি দলে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার আর্চবিশপ হেইজেনুস কিম হে জং। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের ডিনারের সময় প্রেসিডেন্ট মুন তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর আর্চবিশপ পোপের দেওয়া শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা উত্তর কোরিয়ার জনগণকে উপহার দেন। সেই সময়ই কিম পোপের উত্তর কোরিয়া সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ভাটিকানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। আর এযাবৎ কোনো পোপ উত্তর কোরিয়া সফর করেননি। তবে প্রেসিডেন্ট মুন নিজেও চান পোপ উত্তর কোরিয়া সফর করুক। তার মতে, এতে করে এই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের পথ আরো সুগম হবে। পোপ আদৌ উত্তর কোরিয়া সফর করবেন কিনা বা কখন সফর করবেন তা এখনো বলা সম্ভব নয়- আর পুরো বিষয়টি পোপের নিজের উপরও নির্ভর করে না। তবে আগামী বছর পোপের জাপান সফরের কথা রয়েছে।
সংবাদদাতা: ফাদার সুনীল রোজারিও, রেডিও জ্যোতি, বগুড়া সিটি।
উত্তর কোরিয়া সফরে পোপকে আমন্ত্রণ
Please follow and like us: